(لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ) এর অর্থ আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য মাবুদ (উপাস্য) নেই। এতে রয়েছে সমস্ত গাইরুল্লাহ (আল্লাহ ব্যতীত সকল সৃষ্টি) হতে উপাস্যতার খন্ডন এবং তা কেবল আল্লাহরই জন্য প্রতিপাদন।
১- আল্লাহ তাআলা বলেন, (فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ) অর্থাৎ, সুতরাং তুমি জান যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই।” (সূরা মুহাম্মদ ১৯ আয়াত)
অতএব এই কলেমার অর্থ জানা ওয়াজেব এবং তা ইসলামের সমস্ত রুকন (স্তম্ভের) অগ্রে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
২। মহানবী (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি বিশুদ্ধ-চিত্তে (ইখলাসের সহিত) “লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহ মুসনাদে আহমদ)
আর মুখলিস (বিশুদ্ধ-চিত্ত) সেই হতে পারে যে তার অর্থ বুঝে, তার দাবী অনুযায়ী কর্ম (আমল) সম্পাদন করে এবং অন্যান্য আমলের পূর্বে তার প্রতি মানুষকে আহ্বান করে (দাওয়াত দেয়)। যেহেতু এতেই রয়েছে সেই তওহীদ যার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আল্লাহ বিশ্ব রচনা করেছেন।
৩। রসূল (সা.)-এর পিতৃব্য আবুতালেবের যখন মরণকাল উপস্থিত হয়, তখন তিনি তাকে বলেছিলেন, 'হে পিতৃব্য! আপনি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলুন - এটা এমন এক কলেমা যাকে আল্লাহর নিকট আপনার (মুক্তির) জন্য দলীল স্বরুপ পেশ করব। কিন্তু তিনি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে অস্বীকার করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
৪। রসূল (সা.) তের বছর মক্কায় অবস্থান করে আরববাসীদের এই বলে আহ্বান করেছেন যে, তোমরা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ সত্য উপাস্য নেই) বল। কিন্তু তারা বলেছিল, একটি মাত্র উপাস্য!? এরূপ তো আমরা কক্ষনো শুনিনি।
কারণ আরবরা এর অর্থ বুঝেছিল। আর এও বুঝেছিল যে, এই বাণী যে বলবে, সে আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কাউকে আহবান করতে পারে না। তাই তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং বলেওনি। তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ * وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُو آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَّجْنُونٍ * بَلْ جَاءَ بِالْحَقِّ وَصَدَّقَ الْمُرْسَلِينَ
অর্থাৎ, ওদের নিকট আল্লাহ ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই’ বলা হলে ওরা অহংকারে অগ্রাহ্য করত এবং বলত, আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের উপাস্যদেরকে বর্জন করব? বরং (মুহাম্মাদ) তো সত্য নিয়ে এসেছিল এবং সমস্ত রসূলের সত্যতা স্বীকার করেছিল। (সূরা সাফফাত ৩৫-৩৭ আয়াত)।
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া কোন। সত্য উপাস্য নেই) বলবে এবং আল্লাহ ব্যতীত পূজ্যমান যাবতীয় ব্যক্তি ও বস্তুকে অস্বীকার ও অমান্য করবে তার জান ও মাল অবৈধ হয়ে যাবে।” (মুসলিম)
হাদীস শরীফটির মমার্থ এই যে, সাক্ষ্যবাণী উচ্চারণ করণের সাথে সাথে প্রত্যেক গায়রুল্লাহর ইবাদত -যেমন মৃত কবরবাসীদের নিকট কিছু প্রার্থনা ইত্যাদি- প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকার করা একান্ত জরুরী। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যে, কিছু মুসলিম ঐ কলেমা তাদের মুখে আবৃত্তি করে। থাকে অথচ তাদের কর্মকান্ড ও আমল এবং গায়রুল্লাহকে ডাকা ও তার নিকট প্রার্থনা দ্বারা তারা ওর অর্থের বিরুদ্ধাচরণ করে!
৫। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তওহীদ ও ইসলামের মূল ভিত্তি এবং জীবনের এক পুর্ণাঙ্গ নীতি; যা সকল প্রকার ইবাদত ও উপাসনাকে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। আর তা তখন সম্ভব হয় যখন মুসলিম আল্লাহরই বিনীত আজ্ঞানুবর্তী হয়, একমাত্র তাঁকেই আহবান করে, তারই নিকট সবকিছু প্রার্থনা করে এবং সকল সংবিধানকে উপেক্ষা করে কেবল শরীয়তের সংবিধান ও কানুনকে বিচার-ভার সমর্পণ করে ও তারই মীমাংসাকে সাদরে মেনে নেয়।।
৬। ইবনে রজব বলেন, 'ইলাহ (উপাস্য) তিনিই, যার সম্ভ্রম ও সম্মানে, ভক্তি ও ভয়ে, যার অনুগ্রহের আশায়, যার উপর ভরসা রেখে, যার নিকট যাচনা করে ও যাকে আহ্বান করে আনুগত্য করা হয় এবং বিরুদ্ধাচরণ না করা হয়। আর এ সমস্ত একমাত্র আল্লাহ ভিন্ন আর কারো জন্য উপযুক্ত নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন সৃষ্টিকে উপাস্যের বৈশিষ্ট্য ঐ বিষয়গুলির মধ্যে যে কোন একটিতেও (আল্লাহর শরীক করবে তার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার বিশুদ্ধচিত্ততায় (ইখলাসে) ত্রুটি থেকে যাবে এবং তার মধ্যে সৃষ্টির দাসত্ব স্থানলাভ করবে। যে পরিমাণে ঐ শির্ক বৃদ্ধি করবে সেই পরিমাণে ঐ ত্রুটি এবং দাসত্ব ও বৃদ্ধি পেতে থাকবে।”
৭ কলেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তার পাঠকারীকে উপকৃত করবে; যদি সে শির্ক দ্বারা তা নষ্ট না করে। তা করলে কলেমা সেই ব্যক্তির জন্য ঐ ওযুর মতই হবে যা অপবিত্রতা (বাতকর্ম ইত্যাদির কারণে নষ্ট হয়ে যায়।
মহানবী (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তির (জীবনে) শেষ কথা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে সে জান্নাত লাভ করবে।” (হাসান, হাকেম বর্ণনা করেছেন।