কিছু সহীহ হাদীস এবং সাহাবাগণের আমল আগন্তুকের প্রতি উঠে দন্ডায়মান হতে নির্দেশ করে। আসুন! আমরা সেই হাদীসগুলিকে বুঝিঃ
১। রসূল (সা.) এর কন্যা ফাতেমা তাঁর নিকট এলে তিনি তার প্রতি এবং তিনি ফাতেমার নিকট এলে তিনিও পিতার প্রতি উঠে দন্ডায়মান হতেন। যেহেতু তা হল মেহেমানের সাক্ষাৎ ও খাতিরের উদ্দেশ্যে তার প্রতি উঠে দন্ডায়মান। হওয়া। রসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে।” (বুখারী ও মুসলিম)। কিন্তু এই উদ্দেশ্যে কেবল মেজবান (আপ্যায়নকারী গৃহস্থ)ই উঠে দন্ডায়মান। হবে।
২। “তোমরা তোমাদের সর্দারের প্রতি উঠ।” (বুখারী ও মুসলিম) অন্য এক বর্ণনায় আছে, “--- এবং ওকে (সওয়ারী) হতে নামাও।”
এই হাদীসের পটভূমিকা এই যে, (খন্দকের যুদ্ধ শেষে) সা’দ (রাঃ) আহত ছিলেন। ইয়াহুদীদের ব্যাপারে বিচার করার উদ্দেশ্যে রসূল (সা.) তাকে আহূত করেন। তাই তিনি এক গর্দভের পৃষ্ঠে আরোহণ করে যখন তার নিকট পৌছলেন তখন রসূল (সা.) আনসারকে লক্ষ্য করে বললেন, “তোমরা তোমাদের সর্দারের প্রতি উঠ এবং ওঁকে নামাও।” সুতরাং (কিছু) সাহাবা উঠে গিয়ে তাঁকে গর্দভ থেকে নামালেন। এই দন্ডায়মান আনসারের সর্দার সা’দ (রাঃ) এর সাহায্যার্থে বাঞ্ছনীয় ছিল। কারণ তিনি গর্দভের পৃষ্ঠে আহতাবস্থায় বসে ছিলেন; যাতে (নামতে গিয়ে পড়ে না যান। পক্ষান্তরে রসূল (সা.) এবং অবশিষ্ট সাহাবাবৃন্দ উঠে দন্ডায়মান হননি।
৩। বর্ণিত যে, সাহাবী কা'ব বিন মালেক যখন মসজিদে প্রবেশ করলেন তখন সাহাবাগণ উপবিষ্ট ছিলেন। জিহাদে অংশ গ্রহণ না করার পর তার তওবা কবুল হওয়ার শুভসংবাদ নিয়ে তালহা তাঁর প্রতি উঠে ছুটে পৌছলেন। সুতরাং কোন দুঃখিত ব্যক্তির অন্তরে আনন্দ আনয়ন এবং আল্লাহর তরফ থেকে তার তওবা কবুল হওয়ার সুসংবাদ দান করার উদ্দেশ্যে উঠে দন্ডায়মান হয়ে তার নিকট যাওয়া বৈধ ছিল।
৪। সফর হতে আগন্তুক ব্যক্তির সহিত মুআনাকা (কোলাকুলি) করার উদ্দেশ্যে দন্ডায়মান হওয়া বৈধ।
৫। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, উক্ত হাদীসগুলির প্রত্যেকটিতে তোমাদের সর্দারের প্রতি, তালহার প্রতি, ফাতেমার প্রতি-- ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার হয়েছে এই হাদীসসমূহ (আগন্তকের প্রতি) উঠে দন্ডায়মান হওয়ার বৈধতা প্রমাণ করে। পক্ষান্তরে দন্ডায়মান হতে নিষেধকারী হাদীসগুলিতে ‘له’ (তার জন্য বা উদ্দেশ্যে দন্ডায়মান হওয়া) শব্দ ব্যবহার হয়েছে। আরاليه (তার প্রতি উঠা, অর্থাৎ তার সাহায্য ও খাতিরার্থে তার নিকট সত্বর উঠে যাওয়া) এবং ‘له’ (তার জন্য বা উদ্দেশ্যে উঠা, অর্থাৎ তার তা'যীম ও সম্মানার্থে স্বস্থানে উঠে দন্ডায়মান হওয়ার মাঝে বিরাট পার্থক্য।