আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا
অর্থাৎ, এরূপে শয়তান মানুষ ও জিনদেরকে আমি প্রত্যেক নবী (সা.)র শত্রু করেছি, যারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অন্যকে চমকপ্রদ বাক্য দ্বারা প্ররোচিত করে থাকে। (সূরা আনআম ১১২ আয়াত)।
আল্লাহর হিকমত চেয়েছে যে, তিনি আম্বিয়া ও তওহীদের দাওয়াত পেশকারীদের বিরুদ্ধে কিছু শয়তান জিনকে শত্রু নির্ধারণ করেছেন যারা ভ্রষ্টতা, অমঙ্গল ও বাতিল কথা দ্বারা শয়তান মানুষদেরকে প্ররোচিত করে থাকে। যাতে তারা মানুষকে ভ্রষ্ট করে দেয় এবং তাদেরকে সেই তওহীদ হতে ব্যাহত করে; যার প্রতি আম্বিয়াগণ স্ব-স্ব সম্প্রদায়কে সর্বপ্রথম আহবান করেছেন। কারণ এই তওহীদ হল সেই আসল বুনিয়াদ, যার উপর ইসলামী দাওয়াত প্রতিষ্ঠিত।
কিন্তু আশ্চর্যের কথা যে, কিছু লোক তওহীদের দাওয়াতকে উম্মাহর মাঝে বিছিন্নতা সৃষ্টির কারণ বলে গণ্য করে। অথচ তওহীদই উম্মাহর মাঝে ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টির কারণ। তওহীদ (একত্ববাদ)এর নামই সেই কথার নির্দেশ করে।
পক্ষান্তরে মুশরিকদল যারা তাওহীদূর রবুবিয়্যাহ’ (প্রতিপালকের একত্ববাদ)কে স্বীকার করেছিল এবং মেনে নিয়েছিল যে, আল্লাহই তাদের সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ’ (উপাস্যত্বের একত্ববাদ)কে অর্থাৎ কেবলমাত্র আল্লাকেই ডাকতে অস্বীকার করেছিল এবং তারা তাদের আওলিয়াকে ডাকা ও তাদের নিকট প্রার্থনা করা বর্জন করেনি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাদেরকে দুআ ও ইবাদতে আল্লাহর তওহীদ (একত্ববাদ)কে স্বীকার করতে ও মেনে নিতে আহবান করলে তারা তার সম্পর্কে বলেছিল,
أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَٰهًا وَاحِدًا ۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ
অর্থাৎ, সে কি সমস্ত উপাস্যকে এক উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে ? এতো এক অত্যাশ্চর্য ব্যাপার! (সূরা স্বা-দ ৫ আয়াত)
পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
كَذَٰلِكَ مَا أَتَى الَّذِينَ مِن قَبْلِهِم مِّن رَّسُولٍ إِلَّا قَالُوا سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ * أَتَوَاصَوْا بِهِ ۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُونَ
অর্থাৎ, এরূপে এদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রসূল এসেছে ওরা তাকে বলেছে, (তুমি তো) এক যাদুকর অথবা পাগল! ওরা কি একে অপরকে এই মন্ত্রণাই দিয়ে এসেছে? বরং ওরা সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা যারিয়াত ৫২ আয়াত)
মুশরিকদের চরিত্র এই যে, তারা যখন এক আল্লাহকেই ডাকার কথা শোনে, তখন তাদের হৃদয় সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং অনীহ ও চকিত হয়ে উঠে। ফলে (তওহীদবাদীদেরকেই) কাফের বলে অভিহিত করে এবং তাদেরকে বাধা দিতে প্রয়াস পায়। পক্ষান্তরে যখন তারা শির্ক এবং আল্লাহ ভিন্ন অন্য কাউকে ডাকার কথা শোনে, তখন তারা উৎফুল্ল ও আনন্দিত হয়। আল্লাহ তাআলা ঐ মুশরিকদের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন,
وَإِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَحْدَهُ اشْمَأَزَّتْ قُلُوبُ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ ۖ وَإِذَا ذُكِرَ الَّذِينَ مِن دُونِهِ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ
অর্থাৎ, যখন আল্লাহ এক’ এ কথার উল্লেখ করা হয়, তখন যারা পরকালে বিশ্বাসী নয় তাদের অন্তর বিতৃষ্ণায় সংকুচিত হয় এবং আল্লাহর পরিবর্তে অন্যান্য বাতিল উপাস্যদের উল্লেখ করা হলে তারা আনন্দে উল্লসিত হয়। (সূরা যুমার ৪৫ আয়াত)
তওহীদ অস্বীকারকারী মুশরিকদের অবস্থা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন,
ذَٰلِكُم بِأَنَّهُ إِذَا دُعِيَ اللَّهُ وَحْدَهُ كَفَرْتُمْ ۖ وَإِن يُشْرَكْ بِهِ تُؤْمِنُوا ۚ فَالْحُكْمُ لِلَّهِ الْعَلِيِّ الْكَبِيرِ
অর্থাৎ, তোমাদের এ শাস্তি তো এজন্য যে, যখন আল্লাহ ছাড়া কেউ সত্য উপাস্য নেই’ বলা হয়েছে তখন তোমরা অবিশ্বাস করেছ এবং তার সহিত শরীক করা হলে তা বিশ্বাস করেছ, সুতরাং সুউচ্চ, সুমহান আল্লাহরই সমস্ত কর্তৃত্ব। (সূরা মু’মিনঃ ১২ আয়াত)
অত্র আয়াতগুলি কাফেরদের প্রসঙ্গে হলেও তা সেই ইসলামের দাবীদারদের উপরেও প্রযোজ্য যারা ওদের গুণে গুণান্বিত। যারা তওহীদের দাওয়াত পেশকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তাদের উপর মিথ্যা অপবাদ দেয় এবং ঘৃণ্য খেতাবে তাঁদেরকে অভিহিত করে; যাতে তাদের নিকট হতে মানুষকে দুরে রাখতে সক্ষম হয় এবং সেই তওহীদ হতে মানুষকে সাবধান করে ও দুরে রাখে, যে তওহীদের কারণেই আল্লাহ তার সমস্ত রসূল প্রেরণ করেছেন। ওদের মধ্যে এমনও ব্যক্তি আছে যারা আল্লাহর নিকট দুআ ও প্রার্থনা করতে শুনলে বিনত হয় না অথচ তিনি ছাড়া অন্য কারো নিকট দুআ ও প্রার্থনা করতে শুনলে; যেমন রসূল বা আওলিয়াদের নিকট মদদ চাইতে শুনলে বিনয়াবনত ও উল্লসিত হয়। সুতরাং তারা যা করে তা কত নিকৃষ্ট!