ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ এবং বিনয়ের সবগুলো দিকই সচ্চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত। আর সচ্চরিত্র ঈমানের অন্যতম শাখা। আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা বলেছেন,

وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ

“হে রাসূল! আমি আপনাকে সর্বোচ্চ চরিত্র মাধুর্য দিয়ে সৃষ্টি করেছি।”[১]

অন্য জায়গায় বলা হয়েছে,

وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

যারা ক্রোধকে হজম করে এবং অন্যদের মাফ করে দেয় আল্লাহ্ এ ধরনের নেক লোকদেরই ভালোবাসেন।[২]

আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) অশ্লীলভাষী এবং নির্লজ্জ ছিলেন না। বরং তিনি বলতেন,

مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلَاقًا

তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে সচ্চরিত্রবান।[৩]

অন্য বর্ণনায় আছে,

إن أحبكم إلي أحاسنكم أخلاقا

‘তোমাদের মধ্যে যে সচ্চরিত্রবান সেই আমার কাছে বেশী প্রিয়।

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।

ماخير رسول الله صلى الله عليه وسلم بين أمرين قط الأ أخذ ايسرهما مالم يكن اثما فان كان اثما كان أبعد الناس منه وما انتقم رسول الله صلى الله عليه وسلم لنفسه في شيء قط الا ان تنتهك حرمة الله فينتقم لله تعالى

রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-কে দুটো বিষয়ের কোনো একটি গ্রহণের সুযোগ দিলে এবং তা গুনাহ্র বিষয় না হলে, তিনি সর্বদা অপেক্ষাকৃত সহজটিকে গ্রহণ করতেন। আর যদি তা গুনাহর বিষয় হতো তবে সকলের চেয়ে তিনি আরও বেশী দূরে অবস্থান করতেন। তিনি ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনও কারও থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর বিধান লংঘিত হলে তিনি শুধু মহান আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্যই প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন।[৪]

(আবু বকর আল বাইহাকী বলেন) সচ্চরিত্র বলতে মূলত আত্মার বিশুদ্ধতা বুঝানো হয়েছে। প্রশংসনীয় কাজ করা, সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা এসব সচ্চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। সচ্চরিত্রের বিনিময়ে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা তার অন্তরকে সৎ কাজের জন্য খুলে দেন। অসৎ কাজ থেকে হিফাযত করেন। তখন সে আল্লাহর নির্দেশ মেনে আনন্দ পায়, নফল ইবাদাতের প্রতি উৎসাহ বোধ করে। হারাম কাজ তো দূরের কথা মুবাহ্ কাজও সে পরিহার করে চলতে সচেষ্ট হয়। যখন দেখে আল্লাহর বান্দারা তার ইবাদাতের পথ ভুলে বিপথে চলে যাচ্ছে তখন তাদরেকে সতর্ক করে এবং সুসংবাদ দেয়। আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে প্রার্থনা করে না, কিছু চায় না।

অন্যের প্রয়োজন পূরণ করতে সদা সচেষ্ট থাকে। অসুখ বিসুখে দেখা শুনা করে। সফরে যেতে কিংবা সফর থেকে ফিরে আসতে সে তার সঙ্গী সাথীকে ফেলে আসে না। মোটকথা ব্যক্তি জীবনে, সামাজিক জীবনে এবং পারিবারিক জীবনে সর্বদা সে আল্লাহর সন্তুষ্টি মত চলার চেষ্টা করে। সচ্চরিত্রের কিছু কিছু বিষয় মানুষ জন্মগতভাবেই পেয়ে থাকে আবার অনেক বিষয় চেষ্টা সাধনার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। এ অর্জনের উপায় দুটো। এক, ইল্ম বা জ্ঞান অর্জন করা এবং দুই. সেই ইলম অনুযায়ী আমল বা কাজ করা।

[১]. সূরা আল কলম, আয়াত : ৪।

[২]. সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪।

[৩]. সহীহ আল বুখারী; সহীহ মুসলিম।

[৪]. সহীহ্ আল বুখারী; সহীহ মুসলিম।