আল কুরআনের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, সংরক্ষণ এবং তার নির্দেশ অনুযায়ী হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম মনে করে চলা-ই হচ্ছে মূলত কুরআন মাজীদকে সম্মান করা। যেসব বিষয়ে আল কুরআন মানুষকে সতর্ক করেছে এবং ভয় দেখিয়েছে সেসব বিষয়ে ভয় করা এবং সতর্ক থাকার নাম আল্লাহভীতি (খাশইয়াতুল্লাহ্) বা তাকওয়া (সতর্কতা)। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা বলেন,
لَوْ أَنزَلْنَا هَٰذَا الْقُرْآنَ عَلَىٰ جَبَلٍ لَّرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْيَةِ اللَّهِ
‘আমরা যদি এই কুরআনকে পাহাড়ের উপর নাযিল করতাম তাহলে দেখতে পেতে আল্লাহর ভয়ে পাহাড় পর্যন্ত বিদীর্ণ হয়ে যেত।[১]
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে,
إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ * فِي كِتَابٍ مَّكْنُونٍ * لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ * تَنزِيلٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ
‘নিঃসন্দেহে এই কুরআন মহাসম্মানিত। কিতাব আকারে (লিখিত) সংরক্ষিত। পবিত্রগণ ছাড়া আর কেউ এটি স্পর্শ করে না। বিশ্বজাহানের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।”[২]
সূরা আর রাদে বলা হয়েছে,
وَلَوْ أَنَّ قُرْآنًا سُيِّرَتْ بِهِ الْجِبَالُ أَوْ قُطِّعَتْ بِهِ الْأَرْضُ أَوْ كُلِّمَ بِهِ الْمَوْتَىٰ ۗ بَل لِّلَّهِ الْأَمْرُ جَمِيعًا
যদি কুরআন এমন হতো যার সাহায্যে পাহাড় চলমান হয়, অথবা জমিন বিদীর্ণ হয় কিংবা মৃতরা কথা বলে, তবে কেমন হতো? বরং সব কাজ তো আল্লাহ্র হাতে।[৩]
সহীহ আল বুখারীতে উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীম (সা.) বলেছেন,
أفضلكم أو خيركم من تعلم القرآن وعلمه
‘তোমাদের মধ্যে মর্যাদাবান বা উত্তম সেই ব্যক্তি যে নিজে আল কুরআন শিখে এবং অপরকে শেখায়।'
আবু মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
تعاهدوا هذا القرآن فوالذي نفس محمد بيده لهو أشد تفلتاً من الإبل في عُقُلها
‘তোমরা আল কুরআনের মুখস্থ অংশের প্রতি লক্ষ্য রেখো। যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আমি সেই সত্তার শপথ করে বলছি, আল কুরআনের মুখস্থ সূরা বা আয়াতসমূহ মানুষের মন থেকে এক পা বাধা উটের চেয়েও দ্রুত পলায়ন পর (অর্থাৎ মুখস্থ অংশ মানুষ তাড়াতাড়ি ভুলে যায়)।[৪]
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীম (সা.) বলেছেন
لَا حَسَدَ إِلَّا عَلَى اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ الْكِتَابَ وَقَامَ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَرَجُلٌ أَعْطَاهُ اللَّهُ مَالًا فَهُوَ يَتَصَدَّقُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ
দুটো ব্যাপার ছাড়া ঈর্ষা করা ঠিক নয়। একটি হচ্ছে, যাকে আল্লাহ্ তা'আলা এই কুরআনের জ্ঞান দিয়েছেন এবং সে দিনরাত সেই জ্ঞানানুযায়ী আমল (কাজ) করে। অপরটি হচ্ছে, যাকে আল্লাহ তা'আলা ধন সম্পদ দান করেছেন এবং সেই ধনসম্পদ সে রাতদিন আল্লাহর পথে খরচ করছে।' (এ ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশী আমল ও দান করার চেষ্টা করাকে ঈর্ষা বলা হয়েছে)।[৫]
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন
إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِهِ آخَرِينَ
‘আল্লাহ্ তা'আলা এই কিতাবের দ্বারা এক জাতির উত্থান ঘটান আবার আরেক জাতির পতন ঘটান।[৬]
[২]. সূরা আল ওয়াকিয়া, আয়াত : ৭৭-৮০।
[৩]. সূরা আর রা'দ, আয়াত :৩১।
[৪]. সহীহ আল বুখারী; সহীহ মুসলিম, হাদীস-১৭২১)।
[৫]. সহীহ মুসলিম, (হাদীস-১৭৭২); সহীহ আল বুখারী, কিতাবুত তাওহীদ।
[৬]. সহীহ মুসলিম, মুসাফিরের নামায অধ্যায়।