শাখা-২, ৩, ৪. রাসূলগণের প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি ও আল-কুরআনের উপর ঈমান

ঈমানের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অংশ বা শাখা হচ্ছে নবী-রাসূল, ফেরেশতা এবং আল্লাহ প্রদত্ত কিতাবসমূহের উপর ঈমান আনা। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা ইরশাদ করেন

وَالْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ

‘এবং সকল মুমিন— আল্লাহ্, ফেরেশতা, কিতাবসমূহ এবং নবীদের উপর ঈমান আনে।[১]

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস- যা হাদীসে জিবরীল নামে খ্যাত সেখানে জিবরীল (আঃ)-এর এক প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে

الْإِيمَانُ قَالَ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ

“ঈমান হচ্ছে- আল্লাহ্, ফেরেশতা, কিতাবসমূহ ও রাসূলগণের উপর তোমার ঈমান আনয়ন।[২]

কিতাবসমূহের উপর ঈমান আনার সাথে সাথে আল-কুরআনের উপর ঈমান আনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছেঃ

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনো এবং সেই কিতাবের (কুরআনের) প্রতিও যা তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন, সেই সাথে আগে যেসব কিতাব নাযিল হয়েছিল সেগুলোর প্রতিও।[৩]

[১]. সূরা আল-বাকারা : ২৮৫।

[২]. হাদীসটি সহীহ আল-বুখারীতে আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে এবং সহীহ মুসলিম উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। পুরো হাদীসটি নিম্নরূপঃ

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন, আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কাছে ছিলাম। একজন লোক এলেন। তার পরনের কাপড় ছিলো সাদা ধবধবে, মাথার চুলগুলো ছিলো কাল কুচকুচে। তিনি অনেক দূর থেকে সফর করে এসেছেন, দেখে এমন মনে হলো না, কিন্তু আমরা কেউ তাকে চিনলাম না। এসে নিজের হাঁটুদ্বয় নবী করীম (সা.)-এর হাঁটুদ্বয়ের সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন। দুহাত নবী করীম (সা.)-এর উরুর উপর রাখলেন। তারপর বললেনঃ হে মুহাম্মদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন- ইসলাম হলো তুমি এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমযানের রোযা রাখবে এবং বাইতুল্লাহ পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিক বলেছেন।

তার কথা শুনে আমরা বিস্মিত হলাম, কী আশ্চর্য! প্রশ্নও করছেন আবার সত্যায়িতও করছেন। তারপর বললেনআমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ঈমান হচ্ছে- তুমি আল্লাহ্, ফেরেশতা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, আখিরাত এবং তাকদীরের ভালোমন্দের ব্যাপারে ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন- আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন- আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন। নবী করীম (সা.) বললেন, ইহসান হচ্ছে- তুমি আল্লাহকে দেখছে এই অনুভূতি নিয়ে ইবাদাত-বন্দেগী করবে। যদি তাকে নাও দেখ মনে করবে তিনি তো তোমাকে দেখছেন। এবার আগন্তুক বললেন, কিয়ামত সম্পর্কে কিছু বলুন। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন, এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চেয়ে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি (উত্তরদাতা) বেশী কিছু জানেন না।

তিনি বললেন, আমাকে এর কিছু নিদর্শন সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন- দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে। খালি পা উদাম গা এরূপ দরিদ্র মেষের রাখালদেরকে অট্টালিকা নির্মাণে পরস্পর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত দেখতে পাবে। আগন্তুক প্রস্থান করলেন। আমিও বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন- উমার! তুমি কি জাননা প্রশ্নকারী কে? বললাম- আল্লাহ ও তার রাসূলই এ সম্পর্কে ভালো জানেন। নবী করীম (সা.) বললেন, তিনি জিবরীল, তোমাদেরকে তোমাদের দীন শেখাতে এসেছিলেন। (সহীহ মুসলিম)।

[৩]. সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১৩৬।