বৈশিষ্ট্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বিদআতকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; বিদআহ হাক্বীক্বিয়্যাহ (প্রকৃত বিদআত) এবং বিদআহ ইযাফিয়্যাহ (অতিরিক্ত বিদআত)।
প্রকৃত বিদআত তখন বলা হয়, যখন ধর্ম-কল্প কাজের ভিত্তি কিতাব, সুন্নাহ অথবা ইজমাতে পাওয়া যায় না। বরং ভিত্তিহীনভাবেই সে কাজকে দ্বীন বলে মেনে নেওয়া হয়। যেমন, কোন সন্দিহানে পড়ে বিনা কোন শরয়ী ওযর অথবা সৎ উদ্দেশ্যে কোন হালাল বস্তুকে হারাম অথবা হারাম বস্তুকে হালাল করা। যেমন, বৈরাগ্য অবলম্বন করা, মাছ-মাংসাদি উত্তম খাদ্য ভক্ষণ না করা, উত্তম পরিচ্ছদ পরিহার করা, প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও বিবাহ না করা ইত্যাদি। আত্মাকে কষ্ট দিয়ে (যেমন দেহে কাঁটা, জিভে শিক ফুড়ে আল্লাহর নৈকট্য আশা করা, জ্যান্ত কবর নিয়ে। মাটির উপর হাত বের করে তসবীহ পড়া, মর্সিয়া-মাতমে বুক চিরা, পিঠে চাবুক মারা প্রভৃতির মাধ্যমে) ইবাদত করা বা নেকী লাভের আশা করা।
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমরা নবী (সা.)-এর সহিত জিহাদে (সফরে) থাকতাম এবং আমাদের সঙ্গে আমাদের পত্নীরা থাকত না। (দীর্ঘ সফরের ফলে যৌনজ্বালা অনুভূত হলে) আমরা তাঁকে বললাম, আমরা খাসি করব না কি?” তিনি আমাদেরকে তাতে নিষেধ করলেন এবং বস্ত্রের বিনিময়ে (সফরে) কোন নারীকে বিবাহ করতে অনুমতি দিলেন। অতঃপর এই আয়াত পাঠ করলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحَرِّمُوا طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে সব উৎকৃষ্ট বস্তু বৈধ করেছেন, সে সকলকে তোমরা অবৈধ করো না। সীমালংঘনকারীদেরকে আল্লাহ মোটেই ভালবাসেন না। (সুরা মায়েদাহ ৮৭ আয়াত, বুখারী ৮/২৭৬)।
আবু কাইস বিন হাযেম বলেন, আবু বাকর (রাঃ) আহমাসের যয়নাব নামক এক মহিলার নিকট প্রবেশ করলেন। তিনি তাকে দেখলেন, সে কথা বলে না। জিজ্ঞাসা করলেন, 'ব্যাপার কি ওর, কথা বলে না কেন?’ সকলে বলল, ‘নীরব থেকে হজ্জ করতে চায়। তিনি মহিলাটিকে বললেন, ‘কথা বল, কারণ, এটা বৈধ নয়। এমন করা জাহেলিয়াতের কাজ। মহিলাটি তখন কথা বলতে শুরু করল। বলল, ‘আপনি কে? তিনি বললেন, ‘মুহাজেরীনদের একটি লোক।' (বুখারী ৭/১৪৭)
তদনুরূপ এমন মনগড়া ইবাদত রচনা করা যার বিধান আল্লাহ তাআলা দেননি। যেমন বিনা পবিত্রতায় নামায পড়া, কাওয়ালী, গান-বাজনা প্রভৃতির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি চাওয়া ইত্যাদি। অনুরূপভাবে শরীয়তে সুন্নাহকে দলীল মানতে অস্বীকার করা, শুদ্ধ বর্ণনার উপর জ্ঞান ও বিবেককে প্রাধান্য দেওয়া এবং জ্ঞানের নিক্তিতে শরীয়তকে ওজন করা ইত্যাদি।
তদনুরূপ হকীকত, তরীকত বা মারেফত ইত্যাদি নতুন পথ রচনা করা বা মান্য করা। নির্দিষ্ট ধর্মীয় মর্যাদা (বা কামালে) পৌছে গেলে -আমল ওয়াজেব হওয়ার শর্তাবলী বর্তমান থাকা সত্ত্বেও - আর কোন আমল ঐ কামেলের উপর ওয়াজেব। নেই ভাবা। অথবা মারেফতীর সেই মঞ্জিলে পৌছে গেলে বান্দার নিকট হারামহালাল সব একাকার হয়ে যায়; তখন আর তাকে শরীয়তের বাধা মেনে চলতে হয় না, ব্যভিচার, শুয়োর, কুকুর, মাদক দ্রব্য ইত্যাদি হারাম বস্তু তার জন্য হালাল হয়ে যায় -এই ধারণা করা অথবা কোন মরমিয়া তত্ত্বানুসন্ধান করা ইত্যাদি।
অতিরিক্ত বিদআত তখন হয়, যখন আসল আমল তো বিধেয় থাকে; কিন্তু ঐ বিধেয় কর্মের সাথে আরো কিছু অতিরিক্ত কর্ম মনগড়াভাবে যুক্ত করে দেওয়া হয়। যার ফলে পুরো কর্মটাই অবিধেয় বিদআত বলে বিবেচিত হয়। লোক মাঝে অধিকাংশ এই বিদআতেরই প্রচলন বেশী। যেমন; নামায, রোযা, যিকর, দুআ, দরূদ, কষ্টের সময় পূর্ণ অযু প্রভৃতি বিধেয় ইবাদত; যে সবের বিধান শরীয়তে রয়েছে। কিন্তু কেউ যদি বলে, আমি এক রাকআতে একশ বার কুল পড়ে অথবা প্রতি রাকআতে তিন বার করে সিজদা করে নামায পড়ব, রৌদ্রে কষ্ট ভোগ করে ছায়া থাকা সত্ত্বেও তা গ্রহণ না করে রোযা করব, বছরের তিন শ’ পঁয়ষট্টি দিনই রোযা রাখব। একত্রিত হয়ে সমস্বরে জামাআতী যিকর করব, যেখানে বিধেয় নয়। সেখানে একত্রে হাত তুলে জামাআতী দুআ করব, জামাআতবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে সমস্বরে দরূদ পড়ব ইত্যাদি তবে সে বিদআতী। অযুর সময় অতিরিক্ত বিদআত যেমন, কোন ব্যক্তির নিকট গরম পানি মজুদ আছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও কঠিন শীতের সময় অতি শীতল পানি দ্বারা অযু করা উত্তম মনে করে এবং ঐ পানি দ্বারা অযু করে আত্মাকে কষ্ট দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা করে।
সুতরাং নামায, রোযা, যিকর প্রভৃতি শরীয়ত-সম্মত (ফরয) ইবাদত যা পালন করতে বান্দা আদিষ্ট হয়েছে, যা আদায় করতে তাকে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে এবং তার বিনিময়ে মহাপুণ্যলাভের প্রতিশ্রুতিও দান করা হয়েছে। কিন্তু তার সহিত পালনের অতিরিক্ত মনগড়া পদ্ধতি ও প্রণালী সম্পর্কে কোন নির্দেশ তাকে দেওয়া হয়নি। তাই যেমনভাবে তাকে তা পালন করতে বলা হয়েছিল, ঠিক তেমনিভাবে তা তার করা উচিত ছিল। তা না করে স্বকপোলকল্পিত পদ্ধতিতে শরীয়তের উপর সংশোধন ও সংযোজন সাধন করার অপচেষ্টা ও দুঃসাহসিকতা করে। অথচ আল্লাহ বলেন, “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম।”
পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) একদল মানুষকে একত্রে সমস্বরে যিকর করতে দেখে বললেন, 'অবশ্যই তোমরা সীমালংঘন করে (যিকর করার) এক অভিনব পন্থা (বিদআত) রচনা করেছ অথবা মুহাম্মাদ (সা.)-এর সহচরবৃন্দ অপেক্ষা তোমরা নিজেদেরকে ইমে অধিক বড় মনে করছ। নিশ্চয় তোমরা এ ভ্রষ্টতার পাপের জন্য ধৃত হবে।
অনুরূপভাবে নবী-দিবসের বিদআত; অবশ্যই নবী (সা.)-এর প্রতি ভক্তি, প্রেম ও ভালবাসা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ওয়াজেব। “কোন মানুষই ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার আপন প্রাণ, সন্তান, পিতা এবং সকল মানুষ (বরং সকল সৃষ্টি) অপেক্ষা তাঁকে অধিক ভালবেসেছে।” (বুখারী)। কিন্তু সংসারে প্রত্যেক ভালোবাসা বা প্রেমের এক এক রকম ভিন্ন-ভিন্ন ভাব ও ধরন আছে। বিশ্বপ্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)-কে ভালবাসার ধরন হল, তাঁর আনুগত্য করা, তাঁর কথার অনুসরণ করা, তাঁর আদর্শে আদর্শবান হওয়া, তাঁর প্রত্যেক নির্দেশ পালন করা, প্রত্যেক নিষিদ্ধ কর্ম হতে বিরত থাকা, তিনি বিদআত (বা দ্বীনে অভিনব পথ রচনা) করতে নিষেধ করেছেন তা মান্য করা।
যদি এসব কেউ করতে পারে তবে সত্যই সে নবীর যথার্থ প্রেমিক বা ভক্ত। নচেৎ যে কেবল মুখে প্রেমের দাবী করে, লোক সমাজে প্রচার করে এবং প্রিয়তমের মন ও আদেশের প্রতিকূলে চলে সে এক কপট ভন্ড প্রেমিক ব্যতীত কিছু নয়। হ্যাঁ, নবী দিবস এক অভিনব রচিত নবীপ্রেম-বিকাশ পদ্ধতি। যার কোন নির্দেশ অথবা ইঙ্গিত তিনি দেননি। তাঁর একান্ত ভক্ত সাহাবাবৃন্দও ঐ দিবস পালন করে তাঁর প্রগাঢ় ভক্তি ও প্রেমের প্রমাণ ও পরিচয় দিয়ে যাননি। অথচ তাঁরা এই ধর্মধ্বজীদের চেয়ে কত শতগুণ অধিক তাঁর কথার অনুসরণ করতেন, তাঁকে তা’যীম ও ভক্তি করতেন। তাঁদের পরে কোন আহলে সুন্নাহর ইমামও এ পদ্ধতি প্রসঙ্গে কোন ঈঙ্গিত দেননি। এই প্রেম প্রণালী বা ভক্তি প্রকাশের ফ্যাশন’ রাফেযাহ, ফাতেমী বা উবাইদী ফিকাহর লোকেরা আবিষ্কার করে মুসলিম সমাজে প্রচলিত করেছে। যে ফাতেমীদের প্রকৃত বংশধারা সুলামিয়ার একজন ইয়াহুদী হতে শুরু হয়।
এই নবী দিবস প্রসঙ্গে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রঃ) বলেন, খ্রীষ্টানদের অনুকরণে অথবা নবী প্লঃ-এর মহব্বতে (অতিরঞ্জন করে) কিছু লোক তাঁর জন্ম দিনটিকে নবী দিবস’রূপে ঈদের মত পালন করে থাকে। অথচ তাঁর জন্মদিন। প্রসঙ্গে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতান্তর রয়েছে। (অনেকে বলেছেন ১২ রবিউল আওয়াল। কিন্তু সর্বসম্মত অভিমতে তাঁর মৃত্যু দিন ঐ তারীখেই। তাই ঐ দিনে জন্মের খুশী মানালে তাঁর মৃত্যুর দিনে খুশী করা হয়। আবার মৃত্যুর শোক পালন করলে জন্মের শুভ আনন্দের পরিপন্থী হয়।) পরন্তু ঐ দিনটিকে অথবা নবীদিবস নামক কোন ঈদ সফলদের কেউই পালন করে যাননি। (তারা তো কেবল দুটি ঈদই জানতেন।)
অথচ যদি ঐ ঈদ পালনে কোন মঙ্গল থাকত, তাহলে আমাদের চেয়ে তাঁরাই তার অধিক হকদার হতেন। (আমাদের পূর্বে তাঁরাই বেশীরূপে তা পালন। করে যেতেন। কারণ আমাদের চেয়ে তাঁদের হৃদয়ে নবী (সা.)-এর মহব্বত ও তা'যীম বহুগুণ অধিক ছিল এবং আমাদের অপেক্ষা তাঁরাই অধিক কল্যাণকর ও পুণ্যময় কর্মের খোঁজ ও আশা রাখতেন। পক্ষান্তরে প্রকৃত মহব্বত ও প্রেমের পরিচয় তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণে, তাঁর আদেশ পালনে, তাঁর সুন্নাহ ও আদর্শ দ্বারা জীবন ও চরিত্র গঠনে, তাঁর আনীত শরীয়ত প্রচারে এবং এর উপরে নিজ হস্ত, রসনা ও অন্তর দ্বারা জিহাদে প্রকাশ পায়। মহব্বত প্রকাশের এই পদ্ধতিই প্রাথমিক অগ্রানুসারী মুহাজেরীন ও আনসারদের। এবং যাঁরা শুদ্ধচিত্তে তাঁদের অনুগমন করেছেন তাঁদের।” (ইতিফউস সিরাহিল মুস্তাকীম)
বিদআতকে ভিন্ন আরো তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়ঃ (১) ই’তিক্বাদিয়্যাহ (বিশ্বাসগত) (২) ক্বাওলিয়্যাহ (কথাগত) এবং (৩) আমালিয়্যাহ (কর্মগত)।
১। বিশ্বাসগত বিদআত তখন হয়, যখন কোন কিছুর উপর কারো বিশ্বাস রসূল ও সাহাবার বিশ্বাসের পরিপন্থী হয়। যেমন খাওয়ারেজদের বিশ্বাস; তারা মনে করে যে, কোন মুসলিম কাবীরাহ গুনাহ (চুরি, চুগলী, হত্যা ইত্যাদি) করলে কাফের হয়ে
চিরস্থায়ী জাহান্নামবাসী হবে। তাই তারা অনেক সাহাবাদেরকেও কাফের মনে করে থাকে। অথচ আহলে সুন্নাহর মতে সে ব্যক্তি কাফের হয় না। পাপের পরিমাণ মত দোযখে শাস্তি ভোগ করে ঈমানের কারণে একদিন জান্নাতবাসী হবে। অথবা আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে মাফ করে জান্নাতে দেবেন। যেমন অনেকের বিশ্বাস; আল্লাহ সব জায়গায় বিদ্যমান। অথচ আল্লাহ আছেন সপ্তাকাশের উপর আরশে। তাঁর ইলম আছে সর্বত্রে।
তদনুরূপ এই বিশ্বাস যে, মানুষের কর্ম মানুষেরই সৃষ্টি, আল্লাহর সৃষ্টি নয়, অথবা কর্মে মানুষের কোন এখতিয়ার নেই প্রভৃতি।
২। কথাগত বিদআত তখন হয়, যখন এমন কথা বলা ও প্রচার করা হয় যা কিতাব ও সুন্নাহর বিপরীত। যেমন বিভিন্ন ফির্কা; রাফেযাহ, খাওয়ারেজ, জাহমিয়াহ, মু’তাযেলাহ, আশআরিয়্যাহ প্রভূতিদের কথা। যারা কিতাব ও সুন্নাহর মৌলনীতি বর্জন করে সাহাবায়ে কেরামগণের সমঝ ও তরীকা প্রত্যাখ্যান করে উভয়ের অপব্যাখ্যা ও ভুল অর্থ মনগড়াভাবে করে থাকে এবং আহলে সুন্নাহ তথা দুনিয়ায় কিয়ামত পর্যন্ত হক ও ন্যায়ের সপক্ষে জিহাদে তায়েফাহ মানসুরাহ (সাহায্য প্রাপ্ত গোষ্ঠী) এবং আখেরাতে ‘ফিকাহ নাজিয়াহ’ (মুক্তিপ্রাপ্ত সম্প্রদায়)-এর বিরোধিতা করে থাকে। যারা সাহাবাদেরকে গালি দেয়, কেউ কাবীরাহ গোনাহ করলে তাকে কাফের ও চির-জাহান্নামী বলে, আল্লাহ মহিমান্বিত গুণাবলীর তাবীল ও অপব্যাখ্যা অথবা অস্বীকার করে ইত্যাদি।
৩। কর্মগত বিদআত তখন হয়, যখন এমন কোন কাজ দ্বীন ভেবে বা করতে হয় ভেবে করা হয়, যা শরীয়তে বর্ণিত কাজ ও তার পদ্ধতির প্রতিকুল হয়। যেমন। শবেবরাত, শবে মিরাজ, মুহারাম, চালশে প্রভৃতি পালন করা।
বিদআতের প্রতিক্রিয়ার দিকে লক্ষ্য করে তাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়
(ক) বিদআত মুকাফফিরাহ
(খ) গায়র মুকাফফিরাহ।
(ক) মুকাফফিরাহ বিদআত তখন বলা হয়, যখন ঐ বিদআত করার ফলে বিদআতী কাফের বলে গণ্য হয়। যেমন, সৰ্ববাদিসম্মত কোন দ্বীনী অনুশাসনকে অস্বীকার করা, কোন ফরয কর্মকে অস্বীকার করা, অথবা যা ফরয নয় তাকে ফরয। করে নেওয়া, সৰ্ব্বসম্মত কোন হালাল বস্তুকে হারাম অথবা তার বিপরীত করা। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অথবা কিতাব প্রসঙ্গে এমন বিশ্বাস রাখা, যা হতে আল্লাহ, তাঁর রসুল এবং কিতাব পবিত্র।
যেমন; আল্লাহর পুত্র আছে ভাবা, রসুলকে আল্লাহ মনে করা (আহমাদকে আহাদ মনে করা) কুরআনকে মখলুক (সৃষ্ট) মনে করা ইত্যাদি। তদনুরূপ কবর বা আস্তানা পূজা করা এবং জান্নাত, জাহান্নাম, তকদীর, ফিরিশ্মা জিন প্রভৃতি অস্বীকার ও অবিশ্বাস করা ইত্যাদি।
(খ) গায়র মুকাফফিরাহ বিদআত তখন বলা হয়, যখন বিদআত করে বিদআতী। তার কারণে কাফের হয়ে যায় না, তবে পাপী নিশ্চয় হয়। যেমন, নির্দিষ্ট সময় হতে নামায দেরী করে পড়া, ঈদের নামাযের পুর্বে খুতবাহ পড়া, বিভিন্ন পর্ব ও ঈদের উদ্ভাবন করা ইত্যাদি।
প্রকাশ যে, বিদআতে হাসানাহ (যে বিদআত কোন উপকার ও মঙ্গলের খাতিরে রচনা করা হয়) বলে কোন বিদআত নেই; যা করলে পাপ না হয়ে পুণ্যলাভ হয়, অথবা তা মুবাহ। বরং দ্বীনে প্রত্যেক নবীন বিরচনই বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই সাইয়েআহ ও ভ্রষ্টতা। বলা বাহুল্য, বিদআতকে বিদআতে হাসানাহ ও বিদআতে সাইয়েআহ এই দুই ভাগে ভাগ করাও এক বিদআত। রসুল (সা.) জুমআর খুতবায় বলতেন, “নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ কথা আল্লাহর বাণী এবং সর্বোত্তম হেদায়াত (পথনির্দেশ) মুহাম্মাদ (সা.)-এর হেদায়াত। সর্বনিকৃষ্ট বিষয় যাবতীয় অভিনব রচিত বিষয়। প্রত্যেক অভিনব রচিত বিষয়ই বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।” অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, “আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই জাহান্নামে।”
সতর্কতার বিষয় যে, হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি ইসলামে কোন উত্তম সুন্নাহ (প্রথা বা রীতি রচনা বা) চালু করে, তার জন্য রয়েছে ঐ সুন্নাহর সওয়াব এবং তার সওয়াবও যে ঐ সুন্নাহর উপর আমল করে------।”
এর অর্থ এ নয় যে, যদি কেউ শরীয়তে কোন উত্তম কর্ম বা প্রথা নতুনভাবে প্রচলন। করে তবে সে ঐ সওয়াবের অধিকারী হবে। বরং এর অর্থ এই যে, যে ব্যক্তি কোন বিধিসম্মত উত্তম কাজ প্রারম্ভ করে এবং তার দেখাদেখি অন্যান্য লোক সেই কাজ করে, অথবা কোন সুন্নাহর সংস্কার করে; অর্থাৎ, যা আসলে সুন্নাহ ও দ্বীনী রীতি, কিন্তু তার উপর কেউ আমল না করার ফলে তা মৃতপ্রায় থাকে এবং কেউ এসে তা পুনর্জীবিত করে, অথবা এমন পদ্ধতি ও পথ আবিষ্কার করে যা আসলে ধর্ম বা সুন্নাহ
হলেও তা ধর্মের অসীলা বা মাধ্যম; যেমন, মাদ্রাসা নির্মাণ, বই-পুস্তক ছাপা ইত্যাদি, তাহলে তার জন্য ঐ সওয়াবও রয়েছে।
সুতরাং এ ধরনের কর্ম বা সুন্নাহ মানুষ নিজের তরফ থেকে বিরচন করে না; বরং তার সংস্কার বা বৈধ উন্নয়ন সাধন করে যা উত্তম কাজ। আর তা বিদআত নয়।