আল্লাহর দ্বীনে নব বিধান রচনাকারী বিদআতী যে নিজেকে তাঁর সমকক্ষ মনে। করে, কুরআন কারীমে তার নিন্দা করা হয়েছে। কারণ, বিদআতের পথ বক্রপথ। আর যে বক্র পথে চলতে চায় আল্লাহ তার হৃদয়কে বক্র করে দেন। যেহেতু প্রতিশোধ কৃতকর্মের সদৃশ হয়ে থাকে। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَلَمَّا زَاغُوا أَزَاغَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ ۚ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
অর্থাৎ, অতঃপর ওরা যখন বক্রপথ অবলম্বন করল, তখন আল্লাহও তাদের হৃদয়কে বক্র করে দিলেন। আল্লাহ সত্যত্যাগী (ফাসেক) সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। (সুরা সাফ্ফ ৫ আয়াত)।
তাদের এ শাস্তি এই জন্যই যে, তারা কুরআনের রূপক আয়াতের অনুসরণ করে, সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন আয়াত বর্জন করে এবং রূপক আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য অনুসন্ধান করে; বরং আয়াতের অর্থ বিকৃত করে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ
অর্থাৎ, তিনিই তোমার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যার কিছু আয়াত সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন, এগুলি কিতাবের মূল অংশ। আর অন্যগুলি রূপক, যাদের মনে বক্রতা আছে তারা ফিতনা (বিশৃঙ্খলা) সৃষ্টি ও ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রূপক তার অনুসরণ করে। (সুরা আলে ইমরান ৭ আয়াত)
আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল (সা.) এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বললেন, “যাদেরকে রূপক আয়াতের অনুসরণ করতে দেখবে আল্লাহ তাদেরকেই উদ্দেশ্য করেছেন। অতএব তোমরা ঐ ধরনের মানুষ হতে সাবধান থাকো।”
অন্য এক বর্ণনায় বলেন, “যাদেরকে রূপক আয়াত নিয়ে তর্ক-বিবাদ (অনুরূপভাবে রহস্য ও ভেদ বের করার অপচেষ্টা করতে দেখবে তাদেরকেই আল্লাহ লক্ষ্য করে বলেছেন। অতএব তাদের থেকে সাবধান থেকো।” মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ
অর্থাৎ, অবশ্যই যারা ধর্ম সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে কোন কিছুতেই তুমি তাদের মধ্যে নও। (সূরা আনআম ১৫৯ আয়াত) (এবং তারা তোমাদের দলভুক্ত নয়।)।
ইবনে কাসীর বলেন, বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে; যেমন বিভিন্ন সম্প্রদায় দল, প্রবৃত্তি ও ভ্রষ্টতার অনুগামীরা হয়েছে। আল্লাহ জাল্লা শানুহ তাঁর রসূলকে সে সব দল হতে সম্পর্কহীন ঘোষণা করেছেন। (তফসীর ইবনে কাসীর)। আল্লাহ রাব্বল আলামীন অন্যত্র বলেন,
وَأَنَّ هَٰذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
অর্থাৎ, নিশ্চয় এটিই আমার সরল পথ, সুতরাং এরই অনুসরণ কর ও বিভিন্ন পথের অনুসরণ করো না। করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দান করেছেন, যেন তোমরা সাবধান। হও। (সুরা আনআম ১৫৩ আয়াত)।
আল্লাহ যে সরল পথের প্রতি আহবান করেছেন তা হল আহমাদ (সা.)-এর চরিত্রাদর্শ, যা কুরআন ও সুন্নাহর পথ এবং পূর্ণাঙ্গ ইসলামের বিধান। আর অন্যান্য বিভিন্ন বাঁকা পথ, বিরুদ্ধবাদী, অন্যথাচারী ও ভ্রষ্টচারীদের পথ; যারা সরল পথ হতে সরে গেছে, যারা নিজেদের খেয়াল-খুশী ও কুপ্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে আল্লাহর দ্বীনে নতুনত্ব সৃষ্টি করেছে।
উপরোক্ত আয়াত শরীফে বিভিন্ন (বাকা) পথ’ বলতে বিদআতীদের বিভিন্ন পথ উদ্দিষ্ট হয়েছে। যেমন আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ এ বলেন, একদা রসূল ঐ স্বহস্তে একটি (সরল) রেখা টানলেন, অতঃপর বললেন, “এটা আল্লাহর সরল পথ।” তারপর ঐ রেখাটির ডানে ও বামে আরো অনেক রেখা টেনে বললেন, “এই হচ্ছে বিভিন্ন পথ; যার প্রত্যেকটির উপর রয়েছে শয়তান, যে ঐ পথের দিকে আহবান করে (দাওয়াত দিতে) থাকে।” অতঃপর তিনি উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করলেন। বাক বিন আ’লা বলেন, 'আমার মনে হয় তাঁর উদ্দেশ্য মনুষ্যশয়তানের আহবান; আর তা হচ্ছে বিদআত।”
মুজাহিদ বলেন, বিভিন্ন পথসমূহের অনুসরণ করো না। অর্থাৎ, বিদআত ও সন্দিহান কর্মের অনুসরণ করো না।”
বিদআতীদের নিন্দাবাদ যেমন আল-কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে তেমনিই বহু সংখ্যক হাদীসে নববীতে তাদের অতি নিন্দা বিবৃত হয়েছে এবং তাদের ভ্রষ্টতা, পাপ ও তাদের আমল অগ্রহণযোগ্যতার কথাও বর্ণিত হয়েছে। যেমন মুস্তাফা (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের এ বিধানে আধুনিক কিছু রচনা করবে; যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত। (পরিত্যাজ্য ও বাতিল।) (বুখারী ৪/৩৫৫) | অন্য বর্ণনায় বলেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যার উপর আমাদের কোন নির্দেশ নেই, তা নাকচকৃত ও খন্ডিত।” (মুসলিম)।
যে ব্যক্তি হেদায়াত (সৎপথের) দিকে আহবান করবে তার পুণ্য হবে ওর অনুসারীদের পুণ্যরাশির মত। তাদের কারোরই পুণ্য কিছু পরিমাণও কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে মানুষকে আহবান করবে (বা দাওয়াত দেবে) তার পাপ হবে ওঁর অনুসারীদের পাপরাজির মত। তাদের কারোই পাপ কিছু পরিমাণও কম করা হবে না।” (মুসলিম) “কোন জাতি যখন তাদের দ্বীনে কোন বিদআত রচনা করে, তখন আল্লাহ তাদের সুন্নাহ থেকে সমপরিমাণ অংশ তুলে নেন। অতঃপর তা আর তাদের প্রতি কিয়ামত পর্যন্ত ফিরিয়ে দেন না।” (দারেমী)। হও কওসরের পানি পান করার জন্য পিপাসার্ত লোক (কিয়ামতের) দিন। আল্লাহর নবী ঐ-এর নিকট উপস্থিত হবে। কিন্তু তাদেরকে নিরুদ্দেশ উট বিতাড়িত করার ন্যায় বিতাড়িত করা হবে। তিনি বলবেন, 'ওরা আমার দলের। (বা ওরা তো আমার উম্মত)। বলা হবে। তিনি বলবেন, আপনি জানেন না, আপনার বিগত হওয়ার পর ওরা কি নবরচনা করেছিল। তখন নবী (সা.) তাদেরকে বলবেন ? “দূর হও, দুর হও।” (মুসলিম)।
তিনি আরো বলেন, “আমার পুর্বে আল্লাহর প্রেরিত প্রত্যেক নবীর জন্যই তাঁর। উম্মতের মধ্য হতে বহু শিষ্য ও সহচর ছিল; যারা তাঁর আদর্শ গ্রহণ করত এবং তাঁর সর্বকাজে অনুসরণ করত। অতঃপর তাদের পর তারা আদিষ্ট নয়। অতএব যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে হস্ত দ্বারা জিহাদ করে সে মুমিন। যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে রসনা দ্বারা জিহাদ করে সে মুমিন এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে অন্তর দ্বারা জিহাদ করে সে মুমিন। আর এর পশ্চাতে এক সরিষা দানা পরিমাণও ঈমান থাকে না।” (মুসলিম)
“নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বিদআতী হতে তওবা অন্তরিত করেছেন।”(1) (সিলসিলাহ সহীহাহ ১৬২০নং) “যে ব্যক্তি (দ্বীনে) অভিনব কিছু রচনা করে অথবা কোন নতুনত্ব উদ্ভব রচয়িতাকে স্থান দেয় তার উপর আল্লাহ, ফিরিশ্তাগণ এবং সমস্ত মানুষের অভিশাপ। আল্লাহ তার নিকট হতে নফল ইবাদত (অথবা তওবা) এবং কোন। ফরয ইবাদত (অথবা ক্ষতিপুরণ করবেন না।)”
আমর বিন সালামাহ বলেন, ফজরের নামাযের পূর্বে আমরা আব্দুল্লাহ বিন। মাসউদ (রাঃ)-এর বাড়ির দরজায় বসে থাকতাম। যখন তিনি নামাযের জন্য বের হতেন, তখন আমরা তাঁর সাথে মসজিদে যেতাম। (একদা ঐরূপ বসেছিলাম) ইতিমধ্যে আবু মূসা আশআরী আমাদের নিকট এসে বললেন, 'এখনো কি আবু আব্দুর রহমান (ইবনে মাসউদ) বের হন নি?” আমরা বল্লাম, না। অতঃপর তাঁর অপেক্ষায় তিনিও আমাদের সহিত বসে গেলেন। তারপর তিনি যখন বাড়ি হতে
বের হয়ে এলেন, তখন আমরা সকলে তাঁর প্রতি উঠে দন্ডায়মান হলাম। আবু মূসা আশআরী তার উদ্দেশ্যে বললেন, হে আবু আব্দুর রহমান! আমি মসজিদে এক্ষনি এমন কাজ দেখলাম, যা অদ্ভুত বা অভূতপূর্ব। তবে আলহামদুলিল্লাহ, আমি তা ভালই মনে করি। তিনি বললেন, 'কি সেটা? ' (আবু মুসা) বললেন, যদি বাঁচেন। তো দেখতে পাবেন; আমি মসজিদে এক সম্প্রদায়কে এক-এক গোল বৈঠকে বসে। নামাযের প্রতীক্ষা করতে দেখলাম। তাদের হাতে রয়েছে কাঁকর। প্রত্যেক মজলিসে কোন এক ব্যক্তি অন্যান্য সকলের উদ্দেশ্যে বলছে, একশত বার ‘আল্লাহু আকবার” পড়। তা শুনে সকলেই শতবার তকবীর পাঠ করছে।
লোকটি আবার বলছে, একশত বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়। তা শুনে সকলেই শতবার তাহলীল পাঠ করছে। আবার বলছে, একশত বার সুবহানাল্লাহ’ পড়। তা শুনে সকলেই শতবার তসবীহ পাঠ করছে। তিনি (ইবনে মাসউদ) বললেন, 'আপনি ওদেরকে কি বললেন?’ আবু মূসা বললেন, 'আপনার রায়ের অপেক্ষায় আমি ওদেরকে কিছু বলিনি।” তিনি বললেন, আপনি ওদেরকে নিজেদের পাপ গণনা করতে কেন আদেশ করলেন না এবং ওদের পুণ্য বিনষ্ট হবার উপর যামানত কেন নিলেন না?” আমর বলেন, অতঃপর আমরা তাঁর সহিত চলতে লাগলাম। তিনি ঐ সমস্ত গোল বৈঠকের কোন এক বৈঠকের সম্মুখে পৌছে দন্ডায়মান হয়ে বললেন, 'আমি তোমাদেরকে একি করতে দেখছি?” ওরা বলল, 'হে আবু আব্দুর রহমান! কাঁকর, এর দ্বারা তকবীর, তহলীল ও তসবীহ গণনা করছি।
তিনি বললেন, 'তোমরা তোমাদের পাপরাশি গণনা কর, আমি তোমাদের জন্য যামিন হচ্ছি যে, তোমাদের কোন পুণ্য বিনষ্ট হবে না। ধিক তোমাদের প্রতি হে উম্মতে মুহাম্মাদ! কি সত্বর তোমাদের ধ্বংসের পথ এল! তোমাদের নবীর সাহাবাবৃন্দ এখনও যথেষ্ট রয়েছেন। এই তাঁর বস্ত্র এখনো বিনষ্ট হয়নি। তাঁর পাত্রসমূহ এখনো ভগ্ন হয়নি। তাঁর শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! তোমরা এমন মিল্লাতে আছ যা মুহাম্মাদ (সা.)-এর মিল্লাত অপেক্ষা শ্রেষ্টতর অথবা তোমরা ভ্রষ্টতার দ্বার উদঘাটনকারী?! ওরা বলল, ‘আল্লাহর কসম, হে আবু আব্দুর রহমান! আমরা ভালরই ইচ্ছা করেছি। তিনি বললেন, কিন্তু কত ভালোর অভিলাষী ভালোর নাগালই পায় না। অবশ্যই আল্লাহর রসূল ঐ আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, “এক সম্প্রদায় কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তাদের ঐ পাঠ (তেলাঅত) তাদের কণ্ঠ অতিক্রম করবে না।” আর আল্লাহর কসম! জানি না, সম্ভবতঃ তাদের অধিকাংশই তোমাদের মধ্য হতে।”
অতঃপর তিনি সেখান হতে প্রস্থান করলেন। আর বিন সালামাহ বলেন, ‘নহরওয়ানের দিন ঐ বৈঠকসমুহের অধিকাংশ লোককেই খাওয়ারেজদের সহিত দেখে ছিলাম। যারা আমাদের (হযরত আলী ও অন্যান্য সাহাবাদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়ছিল।’ (সিলসিলাহ ২০০৫নং)
অধিকাংশ বিদআতীর রচনায় কিছুটা অথবা সম্পূর্ণ সদুদ্দেশ্য থাকে। কোন। সৎকাজ করছে মনে করেই নতুন কোন ধর্মীয় কর্ম বিরচিত করে। কুরআনের (বিশেষ করে সিফাতের) আয়াতসমূহের অপব্যাখ্যা ও ভুল তাৎপর্য করে। অনেক ক্ষেত্রে স্পষ্ট অর্থ ত্যাগ করে নিজের জ্ঞান ও প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন কুটার্থ উদ্ভাবন করে। হক ও বাতিলের মাঝে খামখা সমন্বয় ও সম্প্রীতি সাধন করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ ও তদীয় রসুলের নির্দেশিত পথ ব্যতিরেকে ভিন্ন পথে কল্যাণ অন্বেষণ করে। এই ধরনের কিছু কপট মানুষের উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا (59)
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَن يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا (60) وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَىٰ مَا أَنزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودًا (61) فَكَيْفَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ ثُمَّ جَاءُوكَ يَحْلِفُونَ بِاللَّهِ إِنْ أَرَدْنَا إِلَّا إِحْسَانًا وَتَوْفِيقًا (62) أُولَٰئِكَ الَّذِينَ يَعْلَمُ اللَّهُ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُل لَّهُمْ فِي أَنفُسِهِمْ قَوْلًا بَلِيغًا (63)
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর তবে আল্লাহর অনুগত হও, রসুল ও তোমাদের শাসক (আমীর ও উলামা)দের অনুগত হও। আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়ে। আল্লাহ ও রসুলের (কিতাব ও সুন্নাহর) ফায়সালা নাও। এটিই ভালো এবং ব্যাখ্যায়। (পরিণামে) প্রকৃষ্টতর। (হে মুহাম্মাদ!) তুমি কি তাদের দেখনি, যারা ধারণা করে যে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পুর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস করে? অথচ তারা তাগুতের (আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন আরাধ্য ও মান্য বস্তু যেমন, মুর্তি, কবর, মাযার,ঝটা আউলিয়া, মনগড়া কানুন, শয়তান, মন ও প্রবৃত্তি প্রভৃতি) কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায় - যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। তাদেরকে যখন বলা হয় যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার দিকে এবং রসূলের দিকে (কিতাব ও সুন্নাহর দিকে) এস, তখন তুমি কপটদের তোমার নিকট থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখবে। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য যখন তাদের। উপর কোন বিপদ এসে পড়ে তখন তাদের কি অবস্থা হয়? অতঃপর তোমার নিকট আল্লাহর শপথ করে বলবে যে, আমরা কল্যাণ ও সম্প্রীতি সাধন ব্যতীত অন্য কিছুই চাইনি। এরাই তো তারা যাদের অন্তরে কি আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তুমি তাদেরকে উপেক্ষা কর, তাদেরকে সদুপদেশ দাও এবং তাদেরকে গোপনে গভীর কথা বল। (সুরা নিসা ৫৯-৬৩ আয়াত)
আয়াতের মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যাকারী এক সম্প্রদায় সম্বন্ধে সতর্ক করে রসুল (সা.) বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এই কুরআনের ব্যাখ্যার উপর লড়বে, যেমন আমি ওর অবতরণের উপর লড়ছি।” (মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান)