সলফে সালেহীনগণ বিদআত ও বিদআতীদের প্রতি অতি কঠোর ছিলেন। বিদআতকে প্রতিহত এবং বিদআতীর প্রতিবাদ করতে তাঁরা কখনো দ্বিধা করতেন না। আব্দুল্লাহ ও বলেন, এক সম্প্রদায় আসবে যারা এই সুন্নাহসমূহকে প্রত্যাখ্যান। করবে, অতএব যদি তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর (কোন বাধা না দাও), তবে। তারা মহাসঙ্কট উপস্থিত করবে।”
উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) বলেন, 'রায়-ওয়ালাদের থেকে দুরে থেকো। কারণ তারা সুন্নাহর দুশমন। হাদীস মুখস্থ করতে অপারগ হয়ে নিজেদের রায় (জ্ঞান) দ্বারা কথা বলে (দ্বীনী বিধান দেয়)। ফলে তারা নিজেরা ভ্রষ্ট হয় এবং অপরকেও ভ্রষ্ট করে।
ইয়াহয়্যা বিন ইয়া’মুর আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ)-কে বললেন, 'আমাদের দিকে কিছু লোক বের হয়েছে, যারা কুরআন (বেশী বেশী) পাঠ করে এবং ইলম অনুসন্ধান করে বেড়ায়। অতঃপর তাদের আরো অন্যান্য অবস্থা বর্ণনা করে বললেন, তারা ধারণা করে যে, তকদীর বলে কিছু নেই এবং সমস্ত বিষয় সদ্য উদ্ভূত, (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার পূর্বে কিছুরই তকদীর (ভাগ্য) নির্ধারিত করেননি এবং কিছু ঘটার পুর্বে তিনি তার অবস্থা সম্পর্কে অবহিত নন।) একথা শুনে ইবনে উমর (রাঃ), তাঁকে বললেন, 'ওদের সহিত তোমার সাক্ষাৎ হলে ওদেরকে খবর দাও যে, ওদের সহিত আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং আমার সহিত ওদের কোন সম্পর্ক নেই।
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) যার হলফ করেন, তাঁর শপথ! যদি ওদের কারো উহুদ (পর্বত) সমপরিমাণ সোনা থাকে এবং তা দান করে তবে আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত তা কবুল করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তকদীরের উপর ঈমান এনেছে। ' (মুসলিম)।
কাতাদাহ বলেন, কেউ যখন কোন বিদআত রচনা করে, তখন (আহলে সুন্নাহর) উচিত, তা সকলের সম্মুখে উল্লেখ করা যাতে সকলে তা হতে বাঁচতে পারে।
সলফে সালেহীনগণ এইভাবে বিদআতের খন্ডন, প্রতিবাদ ও প্রতিকার করেছেন। তাঁরা কেবল ভ্রষ্ট বিদআতীদের মত ও পথের খন্ডন করে এবং তাদের বাতিল ও বিভ্রান্তি বর্ণনা করেই তাদের মুকাবিলা করেননি; বরং সকল মানুষকে তাদের মজলিসে বসতে সতর্ক করেছেন, তাদের সহিত কথা বলতে সাবধান করেছেন। তাদের প্রতি স্মিত মুখ হতে, তাদেরকে সালাম করতে এবং তাদের সালামের উত্তর দিতেও বাধা দিয়েছেন। বরং অনেকে তাদের সহিত একত্রে এক পরিবেশে বাস করতেও অপছন্দ ও হুশিয়ার করেছেন।
যেমন আবুল জাওযা বলেন, কোন প্রবৃত্তি-পূজারী (বিদআতী) আমার প্রতিবেশী হওয়া অপেক্ষা শুকর ও বানর দল প্রতিবেশী হওয়া আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। কতক সলফ এমন গ্রাম বা শহর বসবাস করা পরিত্যাগ করেছেন যেখানে বিদআত প্রসার ও দৃঢ়তা লাভ করেছে এবং প্রতিবেশী এমন গ্রাম বা শহরে বাস করেছেন যা পূর্বাপেক্ষা অধিক সুন্নাহর অনুসারী। যেমন, হুরাইম বিন আব্দুল্লাহ, হানযালাহ এবং আদী বিন হাতেম প্রভৃতি সলফগণ (বিদআতের শহর) কুফা ত্যাগ করে কুকীসিয়ায় গিয়ে বসবাস করেছেন এবং বলেছেন, 'আমরা এমন শহরে বসবাস করব না, যে শহরে উসমান (রাঃ)-কে গালি দেওয়া হয়।”
হাসান বলেন, 'ইচ্ছার পূজারীদের নিকট বসো না, তাদের সহিত কোন তর্ক করো না এবং তাদের নিকট হতে কিছু শ্রবণও করো না।
মামার বলেন, ইবনে ত্বাউস বসে ছিলেন। ইতিমধ্যে মু'তাযিলার একটি লোক তাঁর নিকট এসে অনেক কিছু বলতে লাগল। তা দেখে ইবনে ত্বউস আঙ্গুল দ্বারা। দুই কান বন্ধ করে নিলেন এবং তাঁর ছেলেকেও বললেন, “বেটা! কানে শক্ত করে। আঙ্গুল রেখে নাও। ওর কোন কথাই শুনো না।”
ফুযাইল বিন ইয়া বলেন, 'কারো নিকটে কোন ব্যক্তি (ইম তলবের ব্যাপারে) পরামর্শ নিতে এলে সে যদি কোন বিদআতী (আলেমের) ঠিকানা বলে দেয় তবে নিশ্চয় সে ইসলামকে ধােকা দেয়। বিদআতীদের নিকট যাতায়াত করা হতে সাবধান হও। কারণ, তারা হক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সত্যপক্ষে যে ব্যক্তি কোন বিদআতীকে তার পথপ্রদর্শক, মুরশিদ ওস্তাদ মেনে। নেয়, তার সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী। কারণ,
কাক যদি কারো পথের হয় রাহবার
চলাইবে সেই পথে যে পথে ভাগাড়।
তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি কোন বিদআতীর তা'যীম ও সম্মান করল, সে যেন ইসলামকে ধ্বংস করার উপর সাহায্য করল, যে ব্যক্তি কোন বিদআতীর সাক্ষাতে হাসল, সে যেন মুহাম্মাদ (সা.)-এর অবতীর্ণ শরীয়তকে গুরুত্বহীন মনে করল, যে ব্যক্তি তার স্নেহ-পুত্তলী (কন্যার বন্ধন) বিবাহ কোন বিদআতীর সাথে (বা ঘরে) দিল, সে যেন তার আত্মীয়তার (পিতা-কন্যার) বন্ধন ছেদন করল এবং যে ব্যক্তি কোন বিদআতীর জানাযায় অংশ গ্রহণ করল, সে আল্লাহর গযবে থাকে; যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। (শারহুসসুন্নাহ)।
ইব্রাহিম বিন মাইসারাহ বলেন, 'যে ব্যক্তি কোন বিদআতীকে তা'যীম বা শ্রদ্ধা করে সে অবশ্যই ইসলাম ধ্বংসে সহায়তা করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ
অর্থাৎ, সেদিন কতকগুলো মুখমণ্ডল সাদা (উত্তঞ্জল) হবে এবং কতকগুলো মুখমণ্ডল হবে কালো। (সুরা আলে ইমরান ১০৬ আয়াত)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, সেদিন যাদের মুখমণ্ডল উজ্জল হবে তাঁরা আহলে সুন্নাহ অল-জামাআহ (হাদীস ও সাহাবার অনুসারীদল) এবং উলামা। আর যাদের মুখমণ্ডল কালো হবে তারা হল, বিদআতী ও ভ্রষ্টের দল। (তফসীর ইবনে কাষীর)
সুফইয়ান সাওরী (রঃ) বলেন, 'ইবলীসের নিকট পাপের চেয়ে বিদআতই অধিকতর পছন্দনীয়। কারণ, পাপ হতে তওবার আশা থাকে, কিন্তু বিদআত হতে তওবার কোন সম্ভাবনা থাকে না। (অর্থাৎ, তওবার তওফীকই লাভ হয় না। কারণ, বিদআতী তার বিদআতকে দ্বীন মনে করে থাকে।) ইবনে আবী আসেম প্রভৃতি বর্ণনা করেন যে, নবী ঐ বলেছেন, “শয়তান বলে। আমি মানুষকে বিভিন্ন পাপ দ্বারা সর্বনাশগ্রস্ত করেছি, কিন্তু ওরা আমাকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও ইস্তিগফার দ্বারা ধ্বংস করেছে। অতঃপর যখন আমি তা লক্ষ্য করলাম, তখন ওদের মধ্যে কুপ্রবৃত্তি প্রক্ষিপ্ত করলাম। সুতরাং ওরা পাপ করবে; কিন্তু আর ইস্তিগফার করবে না। কারণ, তারা ধারণা করবে যে, তারা ভালো কাজই করছে।”
ইমাম ইবনুল কাইয়েম (রঃ) বলেন, সাধারণ পাপীর ক্ষতি তার নিজের উপরই বর্তায়, কিন্তু বিদআতীদের ক্ষতি ও অনিষ্ট শ্রেণী (বহু মানুষের) উপর ব্যাপক হয়। বিদআতীর ফিৎনা হয় মূল দ্বীনে অথচ সাধারণ পাপীর ফিৎনা তার প্রবৃত্তিতে হয়।। বিদআতী সহজ ও সরল পথের উপর বসে মানুষকে সে পথে চলা হতে বিরত করে, কিন্তু পাপী সেরূপ করে না। বিদআতী আল্লাহর গুণগ্রাম ও তার পরিপূর্ণতায় আঘাত হানে, অথচ পাপী তা করে না। বিদআতী রসুল প্লঃ কর্তৃক আনীত শরীয়তের পরিপন্থী হয়, কিন্তু পাপী তা হয় না। বিদআতী মানুষকে আখেরাতের সঠিক পথ হতে বিচ্যুত করে, কিন্তু পাপী নিজেই স্বীয় পাপের কারণে মৃদুগামী হয়। (আলজাওয়াবুল কাফী
সুতরাং বিদআতীরা কেবল গোনাহর জন্য গোনাহগারই হয় না বরং তারও অধিক কিছু হয় (যেমন পূর্বে আলোচিত হয়েছে। কারণ, গোনাহগার যখন গোনাহ করে, তখন তাতে অপরের জন্য শরীয়ত-বিধায়ীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কোন আদর্শ বা চিরপালনীয় রীতির রূপ দান করে না; যেমন বিদআতী করে থাকে। অতএব তার দুষ্কৃতি সাধারণ দুষ্কৃতির চেয়ে বহু গুণে বড়। আল্লাহ পাক বলেন,
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ ۗ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থাৎ, ওদের কি এমন কতকগুলি অংশীদার আছে যারা ওদের জন্য বিধান। দিয়েছে এমন ধর্মের, যার অনুমতি আল্লাহ লংঘনকারীদের জন্য মর্মন্তুদ শান্তি রয়েছে। (সুরা শূরা ২১ আয়াত)
আবু তালেব বলেন, “আমি আব্দুল্লাহকে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, যে। (কুরআন সম্বন্ধে) কিছু মন্তব্য করতে বিরত থাকে এবং বলে বলছি না যে, কুরআন মখলুক (সৃষ্টি) নয়। এমন ব্যক্তির সাথে যদি রাস্তায় আমার সাক্ষাৎ হয় এবং সে আমাকে সালাম দেয়, তবে আমি তার উত্তর দেব কি? তিনি বললেন, 'তার সালামের উত্তর দিও না এবং তার সহিত কথাও বলো না। তুমি তাকে সালাম দিলে (বা সালামের উত্তর দিলে) লোক তাকে চিনবে কি করে? আর সেই বা জানবে কি করে যে, তুমি তাকে মন্দ জানছ? অতএব যদি তুমি তাকে সালাম না দাও তাহলে অপমান স্পষ্ট হয়, জানা যায়, তুমি তাকে মন্দ জেনেছ এবং লোকেও তাকে (বিদআতী বলে) চিনতে পারে।” বিশেষ করে যে বিদআতে কুফর হয় সেই বিদআতের বিদআতীদের সহিত সলফ ও তার উলামাদের এই পদক্ষেপ ও ভূমিকা ছিল এবং বর্তমানেও তাই হওয়া দরকার।
যেহেতু বিদআত রচনা করে বিদআতীরা প্রকৃত ইসলাম হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেই বিদআত ত্যাগ না করা পর্যন্ত তাদের সহিত কোন প্রকার আপোস সম্ভব নয়। ইজতিহাদী আহকাম বা গৌণ বিষয়ে মতান্তরকে দুরে ফেলে আকীদাহ ও মৌলিক বিষয়ে একমত হয়ে একতা সম্ভব। (অবশ্য ইসলামের সকল নীতিই মৌলিক, তাতে গৌণ কিছু নেই।) হানাফী-শাফেয়ী, মালেকী-হাম্বলী প্রভৃতি ইজতিহাদী পৃথক পৃথক মযহাবের মাঝে ঐক্য সম্ভব; যদি সকলে সহীহ সুন্নাহর অনুসারী হয়। নির্দিষ্ট কোন মহাবের (সহীহ সুন্নাহর বিপরীত) তাকলীদ করা ওয়াজেব জ্ঞান যদি ত্যাগ করা হয় এবং কেবল আনুগত্য ও অনুসরণ তাঁর করা হয়, যাঁর সমস্ত সাহাবা, তাবেঈন এবং সকল ইমামগণ করেছেন।
আর সামান্য ইজতিহাদী বিষয়ের মতপার্থক্যকে এক ওজর ও অজুহাত বলে মানা যায়। যাতে সকলের নিকট হতে পরস্পর সহিষ্ণতার সহিত সম্প্রীতি ও আপোস সৃষ্টি করতে সাহায্য পাওয়া যায়; আর সেটাই ওয়াজেব।। কিন্তু যার মতান্তর মৌলিক বিষয়ে কেন্দ্রীভূত তার সহিত ন্যায়ের আপোস সম্ভব নয়। যেহেতু এ মতভেদ সামান্য নয়। এ পার্থক্য হক ও বাতিলের, ঈমান ও কুফরের, আর ঈমান ও কুফরের মাঝে আপোস আদৌ সম্ভব নয়। যারা হযরত
আবু বাকর, উমার, উষমান, আয়েশা প্রভৃতি সাহাবা (রাঃ)-কে গালি দেয় ও কাফের বলে, যারা বলে, এ কুরআন সে কুরআন নয়, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যের সামনে। সিজদাবনত হয়, যারা কবরের নিকট নিজেদের প্রয়োজন ভিক্ষা করে, যারা কাবীরাহ। গোনাহগারকে কাফের মনে করে, যারা তকদীরকে অবিশ্বাস করে, যারা আল্লাহর বিভিন্ন সিফাতকে অস্বীকার করে, যারা মারেফতীর দাবী করে মরমিয়া সেজে শরীয়ত ত্যাগ করে, যারা গায়বী খবর জানার দাবী করে, যারা বাউলিয়া হয়ে খানকার মধ্যে ইসলামকে সীমাবদ্ধ করে ইত্যাদি। এমন মযহাবধারীরা নিজেদের মযহাবে থেকে সালাফীদের সহিত (বাহ্যিক) আপোস করতে চাইলে অথবা কেউ সালিস করতে চাইলে তা সুদূর পরাহত এবং এক স্বপ্ন।
আন্তরিক ও বাহ্যিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করতে হলে তাদেরকে নিজেদের সুন্নাহ পরিপন্থী ঐ সালিস বা আপোসে রাজি হলে তাকে সালাফিয়াত বা সুন্নিয়াত ত্যাগ করতে হবে। কারণ, সলফ ও আহলে সুন্নাহর আকীদাহ, নোংরাকে নোংরা ও মন্দকে মন্দ জানা এবং তার কর্তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা আর খাঁটি তওহীদবাদী হক-পন্থীদের সাথেই অন্তরঙ্গ সম্প্রীতি গড়া এবং তা ওয়াজেব। সুতরাং কোন সালাফী ঐ সালিস বা আপোসে সম্মত হলে এবং ঐ জাতীয় দলে শামিল হলে ওতে বাতিল থাকা সত্ত্বেও ওর প্রতি অন্তরঙ্গ সম্প্রীতি রাখবে এবং তা ছাড়া বিরোধী অন্যান্য সবকিছুর প্রতি (সুন্নাহ হলেও) বিদ্বেষ পোষণ করবে এবং ভাববে এটাই সঠিক ও বাকী বেঠিক। অনেক ক্ষেত্রে অন্যায়কে অন্যায় জানা সত্ত্বেও কোন স্বার্থে তার প্রতিবাদ করতে নীরব হবে। ফলে ঈমান ও কুফর তার নিকট একাকার হয়ে সালাফিয়াত বা সুন্নিয়াত চুরমার হয়ে যাবে। যেহেতু অন্যায়ের সাথে আপোস করে সালাফিয়াত থাকে না। কারণ, হক এক ও অদ্বিতীয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ
অর্থাৎ, হক ও সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ছাড়া আর কি? (সুরা ইউনুস ৩২ আয়াত) আর সে হকের পথ সরল। বাকি ডানে বামে সবই বাঁকা পথ। যাতে ভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতা ছাড়া কিছু নেই। যেমন সরল রেখার আয়াত ও হাদীসে পুর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
অতএব বলাই বাহুল্য যে, একজন সালাফী বা আহলে সুন্নাহ কোন বিদআতীর দলে একাকার হতে পারে না। (অবশ্য কূটনীতির ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা) আহলে সুন্নাহ ও সালাফী একতার ডাক দেয়, ইসলামী রাষ্ট্র রচনা করতে চায় এবং ঐক্য ও মিলনকে ওয়াজেবও মনে করে। তবে ন্যায় ও তাওহীদের উপর কিতাব ও সুন্নাহর উপর এবং জামাআত ও সাহাবাগণের সমঝের উপর। কিতাব ও সুন্নাহর ডাকে জামাআত ও সাহাবাগণের সমঝের আওয়াজ ভিন্ন অন্য কোন ঐক্যের প্রতি সালাফীরা আহবান করে না এবং মিথ্যা আহবানে সাড়া দেয় না। যেহেতু একতা কেবল কিতাব ও সুন্নাহর (শুদ্ধ ও সঠিক জ্ঞানের) প্লাটফর্মে সম্ভব। শির্ক ও বিদআতের ‘জগাখিচুড়ি’ ময়দানে সম্ভব নয়। কেউ যদি সলফ বা আহলে সুন্নাহর রীতি-নীতি অবলম্বন করে এবং শির্ক ও বিদআত বর্জন করে একতা প্রতিষ্ঠার জন্য বাতিলকে স্বীকৃতি দিয়ে। কোন সালাফী আপন (কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ তথা সাহাবার) নীতি ও বিশ্বাসের একটি হরফও ছাড়তে বিন্দুমাত্র রাজী নয়।
পক্ষান্তরে ঐ ধরনের আপোস ও ঐক্যের মানুষদেরকে ঐক্যবদ্ধ দেখলেও তাদের। আপোষের আন্তরিক ও মানসিক মিল থাকে না। ফলে ঐ মরিচীকাকে দুর হতে পানি মনে হলেও নিকটে বা বাস্তবে তা নয়। যে অট্টালিকা কাঁচা-পাকা-ভুয়া প্রভৃতি ইষ্টক দ্বারা নির্মিত, তা যে তিষ্ঠিতে পারে না অথবা অদুরেই সদ্যপাতী হয়, তা সকল স্থপতির জ্ঞান অবশ্যই আছে।