মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّىٰ يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ ۚ وَإِمَّا يُنسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَىٰ مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
অর্থাৎ, (হে নবী) তুমি যখন দেখ যে, তারা আমার নিদর্শন সম্বন্ধে নিরর্থক আলোচনায় মগ্ন হয়, তখন তুমি দুরে সরে পড়বে, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে আলোচনায় প্রবৃত্তি হয় এবং শয়তান যদি তোমাকে ভ্রমে ফেলে, তাহলে স্মরণ হওয়ার পরে অত্যাচারী সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না। (সুরা আনআম ৬৮ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللَّهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوا مَعَهُمْ حَتَّىٰ يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ ۚ إِنَّكُمْ إِذًا مِّثْلُهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِينَ وَالْكَافِرِينَ فِي جَهَنَّمَ جَمِيعًا
অর্থাৎ, আর তিনি কিতাবে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন যে যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর কোন আয়াত প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে এবং তা নিয়ে বিদ্রুপ করা হচ্ছে, তখন যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হয় তোমরা তাদের সহিত বসো না, নচেৎ তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। কপট ও অবিশ্বাসীদের সকলকেই আল্লাহ জাহান্নামে একত্রিত করবেন। (সুরা নিসা ১৪০ আয়াত)
প্রবৃত্তির অনুসারী এবং বিদআতীদের সহিত উঠা-বসা করতে তাবেঈনদের বহু উলামা সাবধান ও নিষেধ করেছেন এবং তা এই আশঙ্কায় যে, হয়তো বা ঐ বিদআতী তার সঙ্গীর উপরেও বিদআতের প্রভাব বিস্তার করে ফেলবে। যেহেতু আল্লাহর রসুল ঐ সৎ ও সাধু সাথী নির্বাচন করতে এবং অসৎ ও মন্দ সঙ্গী হতে দূরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি ঐ দুই সঙ্গীর উপমা বর্ণনা করে বলেন, “সৎ সঙ্গী সুগন্ধি ব্যবসায়ীর ন্যায়; যার নিকট হতে সুগন্ধ ক্রয় করা যায় অথবা সে পার্শ্বে উপবেশনকারীকে সুগন্ধ (আতর) উপহার দিয়ে থাকে অথবা তার নিকট হতে (এমনিই) সুন্দর সুবাস পাওয়া যায়। আর অসৎ সাথী হাপরে ফুৎকারকারী (কামারের) মত। যার পার্শ্বে বসলে অঙ্গারের ছিটায় কাপড় পুড়ে যায় অথবা তার নিকট হতে বিকট দুর্গন্ধ (এবং দমবন্ধকারী ধুয়া) নাকে লাগে।” (বুখারী, মুসলিম)
অনুরূপভাবে বিদআতীর সাহচর্য গ্রহণ করলে হয়তো বা সে তার বিদআতকে সুন্দররূপে সুশোভিত করে দ্বীন বলে হৃদয়ে গেঁথে ফেলবে অথবা তার শরীয়ত পরিপন্থী কথা শুনে বা কাজ দেখে চিত্ত দগ্ধ ও ব্যধিগ্রস্ত হবে।।
যার জন্য ইমাম হাসান বসরী (রঃ) বলেন, কোন খেয়াল-খুশীর অনুসারী ব্যক্তি (বিদআতীর) নিকট বসো না, কারণ, সে এমন কিছু তোমার অন্তরে ভরে দেবে যার অনুসরণ করে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে অথবা তুমি তার প্রতিবাদ ও বিরোধিতা করবে যাতে তোমার হৃদয় ব্যাধিগ্রস্ত হবে। আবু কিলাবাহ বলেন, প্রবৃত্তির অনুসরণকারী (বিদআতী)দের সাথে বসো না এবং তাদের সঙ্গে কোন বিষয়ে ঝগড়া বা বিতর্ক করো না, কারণ আমার আশঙ্কা হয় যে, তারা তোমাদেরকে তাদের ভ্রষ্টতায় ডুবিয়ে ফেলবে এবং যা তোমরা জানতে তাতে বিভ্রম ও সংশয় সৃষ্টি করবে।
তিনি আরো বলেন, খেয়াল-খুশীর অনুগতরা ভ্রান্ত ও ভ্রষ্ট এবং দোযখই তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল বলে মনে করি। কোন ব্যক্তি বিদআত রচনা করলেই সে তরবারি হালাল করে নেয়।
আইয়ুব সাখতিয়ানী বলেন, বিদআতী যত বেশী ইজতিহাদ করবে, তত বেশী আল্লাহ থেকে দুর হতে থাকবে। এবং তিনি বিদআতীদেরকে খাওয়ারেজ বলতেন। (ইতিসাম ১/৮৩)
ইয়াহয়্যা বিন কাষীর বলেন, যদি বিদআতীকে কোন রাস্তায় দেখ, তাহলে তুমি। ভিন্ন রাস্তা ধরে চলো, (এবং তার সহিত সাক্ষাৎও করো না।)
এতে বুঝা যায় যে, অন্যায়ের সহিত কোন আপোস নেই। পাপকে ঘৃণা কর। পাপীকে নয় বলে তাদের সহিত কোন বন্ধুত্ব নেই। যে যা করছে করুক, নামে মুসলিম হলেই হবে বলে তার কুফর ও বিদআতের প্রতি ভক্ষেপ না করে অনবধানতায় ঐক্য সৃষ্টি করার কথা যুক্তিযুক্ত নয়। তবে পূর্বোক্ত উক্তিগুলির এ অর্থ নয় যে, তাদের নিকট বসে তাদেরকে সত্যের দিকে আহবান করা হবে না বা সঠিক পথনির্দেশ করে তাদের ভুল সংশোধন করা হবে না অথবা তাদের বিভ্রান্তি ও সন্দেহ নিরসন করার উদ্দেশ্যে কোন ঠান্ডা বিতর্ক করা হবে না। বরং তাদের সহিত প্রজ্ঞা, যুক্তি, দলীল ও সদুপদেশের সাথে আলোচনা করতে হবে এবং তাদেরকে সত্য পথের সন্ধান দিয়ে ভ্রান্ত পথ হতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। কারণ তা ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দান করার অন্তর্ভুক্ত; যা দাওয়াতি কাজের বিভিন্ন মৌলনীতি ও ভিত্তির অন্যতম। যার আদেশ আল্লাহ তাঁর কিতাবে ঘোষণা করেছেন; তিনি বলেন,
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (লোককে) কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দিবে ও মন্দ কার্যে বাধা দান করবে। আর এরাই হবে সফলকাম। (সুরা আলে-ইমরান ১০৪ আয়াত)
সাধারণভাবে সমগ্র মুসলিম জাতির উদ্দেশ্যে প্রিয় নবী ঐ বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ কোন অসৎ কাজ দেখলে তা স্বহস্ত দ্বারা অপসারিত করবে, যদি তাতে সক্ষম না হয়, তবে রসনা দ্বারা, তাতেও যদি সক্ষম না হয়, তবে তার অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করবে) এবং এটা সবচেয়ে দুর্বলতম ঈমান (এর পরিচায়ক)।” (মুসলিম ৪৯নং, আহমাদ, আসহাবে সুনান)।
সুতরাং বিদআতীদের বিদআতে প্রতিবাদ করা, তাদের সহিত প্রতর্কে তাদেরকে পাস্ত করা এবং তাদেরকে সৎপথের নির্দেশনা দেওয়া যাদের ক্ষমতায় আছে তারা অবশ্যই তাদের মজলিসে বসে সে উদ্দেশ্য সাধন করবে। কিন্তু যাদের সে ক্ষমতা নেই, দিতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার যাদের ভয় আছে এবং তাদের বিভ্রান্তিমূলক ও সুশোভিত কথায় প্রভাবান্বিত হওয়ার যাদের আশঙ্কা আছে, তারা যেন তাদের বৈঠকে না বসে।