জীবদ্দশায় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মানুষ

এ কথা বিদিত যে, সকল আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালাম) জান্নাতী। মহানবী (ﷺ)কর্তৃক দশজন সাহাবী একত্রে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী প্রমুখ)। এঁদেরকে ‘আশারায়ে মুবাশশারাহ’ বলা হয়। এঁদের মধ্যে রয়েছেন চার খলীফা।

আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা তিনি নিজ বাড়িতে ওযু করে বাইরে গেলেন এবং (মনে মনে) বললেন যে, আজ আমি অবশ্যই আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর সাহচর্যে থাকব। সুতরাং তিনি মসজিদে গিয়ে আল্লাহর রসূল (ﷺ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। সাহাবীগণ উত্তর দিলেন যে, তিনি এই দিকে গমন করেছেন। আবু মূসা (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর পশ্চাতে চলতে থাকলাম এবং তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করতে থাকলাম। শেষ পর্যন্ত তিনি ‘আরীস’ কুয়ার (সন্নিকটবর্তী একটি বাগানে) প্রবেশ করলেন। আমি (বাগানের) প্রবেশ দ্বারের পাশে বসে থাকলাম। শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পেশাব-পায়খানা সমাধা করে ওযু করলেন। অতঃপর আমি উঠে তাঁর দিকে অগ্রসর হলাম। দেখলাম, তিনি আরীস’ কুয়ার পাড়ের মাঝখানে পায়ের নলা খুলে পা দুটো তাতে ঝুলিয়ে বসে আছেন। আমি তাঁকে সালাম দিয়ে আবার ফিরে এসে প্রবেশ পথে বসে রইলাম। আর মনে মনে বললাম যে, আজ আমি অবশ্যই আল্লাহর রসুলের দ্বার রক্ষক হব। সুতরাং আবু বাকর (রাঃ) এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কে?” তিনি উত্তরে বললেন, ‘আবু বাকর। আমি বললাম, একটু থামুন। তারপর আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর নিকট গিয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহ রসূল! উনি আবু বাকর, প্রবেশ করার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, 'ওকে অনুমতি দাও। আর তার সাথে জান্নাতের সুসংবাদ জানিয়ে দাও। সুতরাং আমি আবূ বাকর (রাঃ) এর নিকট এসে বললাম, “প্রবেশ করুন। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছেন। আবূ বাকর প্রবেশ করলেন এবং কুয়ার পাড়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ডান দিকে পায়ের নলার কাপড় তুলে পা দুখানি কুয়াতে ঝুলিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মত বসে পড়লেন।

আমি পুনরায় দ্বার প্রান্তে ফিরে এসে বসে গেলাম। আমি মনে মনে বললাম, আমার ভাইকে ওযু করা অবস্থায় ছেড়ে এসেছি; (ওযুর পরে) সে আমার পশ্চাতে আসবে। আল্লাহ যদি তার জন্য কল্যাণ চান, তাহলে তাকে (এখানে আনবেন। হঠাৎ একটি লোক এসে দরজা নড়াল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে? সে বলল, উমার বিন খাত্তাব। আমি বললাম, একটু থামুন। অতঃপর আমি রসূল (ﷺ) এর কাছে এসে নিবেদন করলাম যে, উনি উমার। প্রবেশ অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, ওকে অনুমতি দাও এবং ওকেও জান্নাতের সুসংবাদ জানাও। সুতরাং আমি উমারের নিকট এসে বললাম, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আপনাকে প্রবেশ অনুমতি দিচ্ছেন এবং জান্নাতের শুভ সংবাদও জানাচ্ছেন। সুতরাং তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং কুয়ার পাড়ে আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর বাম পাশে কুয়ায় পা ঝুলিয়ে বসে পড়লেন।

আমি আবার সেখানে ফিরে এসে বসে পড়লাম। আর মনে মনে বলতে থাকলাম, আল্লাহ যদি আমার ভায়ের মঙ্গল চান, তাহলে অবশ্যই তাকে নিয়ে আসবেন। (ইত্যবসরে) হঠাৎ একটি লোক দরজা নড়াল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কে? সে বলল, আমি উসমান ইবনে আফফান। আমি বললাম, একটু থামুন। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে তাঁর সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, ওকে অনুমতি দাও। আর জান্নাতের সুসংবাদ জানাও। তবে ওর জীবনে বিপর্যয় আছে। আমি ফিরে এসে তাঁকে বললাম, ‘প্রবেশ করুন। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছেন। তবে আপনার বিপর্যয় আছে। সুতরাং তিনি সেখানে প্রবেশ করে দেখলেন যে, কুয়ার এক পাড় পূর্ণ হয়েছে। ফলে তিনি তাঁদের সামনের অপর পাড়ে গিয়ে বসে গেলেন। (বুখারী-মুসলিম)।

চতুর্থ খলীফা আলী বিন আবী তালেব। আর অবশিষ্ট হলেনঃ

তালহা, যুবাইর, আব্দুর রহমান বিন আওফ, সা’দ বিন আবী অক্কাস, সাঈদ বিন যায়দ ও আবু উবাইদাহ (রাঃ)।

এ ছাড়াও যারা পৃথিবীতেই ‘জান্নাতী’ বলে ঘোষিত হয়েছেন, তারা হলেনঃ

১। শহীদগণের সর্দার হামযাহ বিন আব্দিল মুত্তালিব। (সঃ জামে ৩৫৬৯নং)

২। জাফর বিন আবী তালেব । (তিরমিযী, আবু য়্যালা, হাকেম)

৩। আব্দুল্লাহ বিন সালাম। (আহমাদ, তাবারানী, হাকেম)

৪৷ যায়দ বিন হারেসাহ (রাঃ)। (সঃ জামে' ৩৩৬ ১নং)

৫। যায়দ বিন আমর বিন নুফাইল (রাঃ)। (ঐ ৩৩৬২নং)

৬। হারেসাহ বিন নুমান (রাঃ)। (তিরমিযী, হাকেম)

৭। বিলাল বিন রাবাহ (রাঃ)।

একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিলাল (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে বিলাল! আমাকে সর্বাধিক আশাপ্রদ আমল বল, যা তুমি ইসলাম গ্রহণের পর বাস্তবায়িত করেছ। কেননা, আমি (মিরাজের রাতে) জান্নাতের মধ্যে আমার সম্মুখে তোমার জুতার শব্দ শুনেছি।” বিলাল (রাঃ) বললেন, ‘আমার দৃষ্টিতে এর চাইতে বেশী আশাপ্রদ এমন কোন আমল করিনি যে, আমি যখনই রাত-দিনের মধ্যে যে কোন সময় পবিত্রতা অর্জন (ওযু, গোসল বা তায়াম্মুম) করেছি, তখনই ততটুকু নামায পড়ি, যতটুকু নামায পড়া আমার ভাগ্যে লিপিবদ্ধ থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)

৮। আবুদ দাহদাহ (রাঃ)। ইনি খেজুরের গোটা বাগান দান করেছিলেন। তার জন্য মহানবী (ﷺ) তাকে বলেছিলেন, “আবু দাহদার নিমিত্তে জান্নাতে কত বিশাল খেজুর গাছ (ও খেজুর) রয়েছে!” (আহমদ ৩/ ১৪৬, হাকেম ৩/২০)

৯। অরাাহ বিন নাওফাল (রাঃ)। (হাকেম, সঃ জামে ৭১৯৭নং)

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে