জাহান্নামীদেরকে খেতে না দিয়েও শাস্তি দেওয়া যেত। তবুও অধিক শাস্তি দেওয়ার জন্য তাদের খাদ্য হবে কয়েক প্রকার।
১। যন্ত্রণাদায়ক যাক্কুম বৃক্ষঃ
এ বৃক্ষ ও তার পরিচিতি সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেন,
أَذَٰلِكَ خَيْرٌ نُّزُلًا أَمْ شَجَرَةُ الزَّقُّومِ (62) إِنَّا جَعَلْنَاهَا فِتْنَةً لِّلظَّالِمِينَ (63) إِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِي أَصْلِ الْجَحِيمِ (64) طَلْعُهَا كَأَنَّهُ رُءُوسُ الشَّيَاطِينِ (65) فَإِنَّهُمْ لَآكِلُونَ مِنْهَا فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ (66) ثُمَّ إِنَّ لَهُمْ عَلَيْهَا لَشَوْبًا مِّنْ حَمِيمٍ (67) ثُمَّ إِنَّ مَرْجِعَهُمْ لَإِلَى الْجَحِيمِ (68)
অর্থাৎ, আপ্যায়নের জন্য কি এটিই উত্তম, না যাক্কুম বৃক্ষ? সীমালংঘনকারীদের জন্য আমি এ সৃষ্টি করেছি পরীক্ষাস্বরূপ; এ বৃক্ষ জাহান্নামের তলদেশ হতে উদগত হয়, এর মোচা শয়তানের মাথার মত। সীমালংঘনকারীরা তা ভক্ষণ করবে এবং তা দিয়ে উদর পূর্ণ করবে। তার উপর অবশ্যই ওদের জন্য ফুটন্ত পানির মিশ্রণ থাকবে, অতঃপর অবশ্যই ওদের প্রত্যাবর্তন হবে জাহান্নামের দিকে। (স্বা-ফ্ফাতঃ ৬২-৬৮)
إِنَّ شَجَرَتَ الزَّقُّومِ (43) طَعَامُ الْأَثِيمِ (44) كَالْمُهْلِ يَغْلِي فِي الْبُطُونِ (45) كَغَلْيِ الْحَمِيمِ (46) خُذُوهُ فَاعْتِلُوهُ إِلَىٰ سَوَاءِ الْجَحِيمِ (47) ثُمَّ صُبُّوا فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيمِ (48) ذُقْ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْكَرِيمُ (49) إِنَّ هَٰذَا مَا كُنتُم بِهِ تَمْتَرُونَ (50)
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই যাক্কুম গাছ হবে পাপিষ্ঠের খাদ্য, গলিত তামার মত তা পেটের ভিতর ফুটতে থাকবে, গরম পানি ফুটার মত। (আমি বলব,) ওকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে। অতঃপর ওর মাথায় ফুটন্ত পানি ঢেলে দিয়ে শাস্তি দাও (এবং বল,) আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, সম্ভ্রান্ত। এটা তো সেই (শাস্তি) যার সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করতে। (দুখানঃ ৪৩-৫০)
ثُمَّ إِنَّكُمْ أَيُّهَا الضَّالُّونَ الْمُكَذِّبُونَ (51) لَآكِلُونَ مِن شَجَرٍ مِّن زَقُّومٍ (52) فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ (53) فَشَارِبُونَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيمِ (54) فَشَارِبُونَ شُرْبَ الْهِيمِ (55) هَٰذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّينِ (56)
অর্থাৎ, অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যাজ্ঞানকারীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে যাকুম বৃক্ষ হতে এবং ওটা দ্বারা তোমরা উদর পূর্ণ করবে। তারপর তোমরা পান করবে ফুটন্ত পানি পান করবে পিপাসার্ত উটের ন্যায়। কিয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আতিথ্য। (ওয়াক্বিআহঃ ৫১-৫৬)
وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِّلنَّاسِ وَالشَّجَرَةَ الْمَلْعُونَةَ فِي الْقُرْآنِ ۚ وَنُخَوِّفُهُمْ فَمَا يَزِيدُهُمْ إِلَّا طُغْيَانًا كَبِيرًا
অর্থাৎ, আমি যে দৃশ্য তোমাকে দেখিয়েছি তা এবং কুরআনে উল্লিখিত অভিশপ্ত বৃক্ষ শুধু মানুষের পরীক্ষার জন্যই। আমি তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করি, কিন্তু এটা তাদের তীব্র অবাধ্যতাই বৃদ্ধি করে। (বানী ইসরাঈলঃ ৬০)
সাহাবা ও তাবেঈনগণ এই দৃশ্যের ব্যাখ্যা করেছেন, চাক্ষুষ দর্শন। এ থেকে মিরাজের ঘটনাকে বুঝানো হয়েছে। এ ঘটনা অনেক দুর্বল ঈমানের লোকদের জন্য ফিতনার কারণ হয়েছে এবং তারা মুর্তাদ্দ হয়ে গেছে। আর ‘বৃক্ষ’ বলতে যাক্কুম গাছ, যা মিরাজের রাতে রসূল (ﷺ) জাহান্নামে দেখেছেন। (مَلْعُونَةَ) (অভিশপ্ত) বলতে, ভক্ষণকারী। অর্থাৎ, সেই গাছ যা অভিশপ্ত জাহান্নামীরা ভক্ষণ করবে।
زقوم শব্দটিتزقم থেকে উৎপত্তি যার অর্থ ও দুর্গন্ধময় ও ঘৃণিত বস্তু গিলে খাওয়া। যাক্কুম’ বৃক্ষের ফল খাওয়াও জাহান্নামীদের জন্য বড় কঠিন হবে। কারণ তা বড় দুর্গন্ধময়, তেতো এবং অতি ঘৃণ্য হবে। অনেকে বলেন যে, এটা পৃথিবীর একটি গাছ এবং তা আরবে পরিচিত। কুত্বরব বলেন, এটি এক প্রকার তেঁতো গাছ, যা তিহামা নামক এলাকায় পাওয়া যায়। আর অনেকে বলেন যে, এটা পৃথিবীর কোন গাছ নয়, পৃথিবীর মানুষের নিকট তা অপরিচিত। (ফাতহুল কাদীর) আরবী-উর্দু অভিধানে ‘যাক্কুম’-এর অর্থ গুহার (কাটাদার বিষাক্ত গাছ) করা হয়েছে। (আহসানুল বায়ান)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “ঐ যাক্কুমের সামান্য পরিমাণ যদি জাহান্নাম হতে পৃথিবীতে আসে তবে পৃথিবীর খাদ্য ও পানীয় তার বিষাক্ততায় বিনষ্ট হয়ে যাবে।” (তিরমিযীঃ ২৫৮৫)
২। যারীঃ
এক প্রকার কন্টকময় বিষাক্ত গুল্ম। যা জাহান্নামীরা ভক্ষণ করবে। মহান আল্লাহ বলেন,
لَّيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلَّا مِن ضَرِيعٍ (6) لَّا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِي مِن جُوعٍ (7)
অর্থাৎ, তাদের জন্য বিষাক্ত কন্টক ব্যতীত খাদ্য নেই। যা পুষ্ট করে না এবং ক্ষুধা নিবারণ করে না। (গাশিয়াহঃ ৬-৭)
৩। গলায় আটকে যায় এমন খাদ্যঃ
মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ لَدَيْنَا أَنكَالًا وَجَحِيمًا (12) وَطَعَامًا ذَا غُصَّةٍ وَعَذَابًا أَلِيمًا (13)
অর্থাৎ, নিশ্চয় আমার নিকট আছে শৃংখল, প্রজ্বলিত অগ্নি। আর আছে এমন খাদ্য, যা গলায় আটকে যায় এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (মুযযাম্মিলঃ ১২-১৩)।
৪৷ গিসলীনঃ
জাহান্নামীদের ক্ষতনিঃসৃত স্রাব। মহান আল্লাহ বলেন,
فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيمٌ (35) وَلَا طَعَامٌ إِلَّا مِنْ غِسْلِينٍ (36) لَّا يَأْكُلُهُ إِلَّا الْخَاطِئُونَ (37)
অর্থাৎ, অতএব এই দিন সেখানে তার কোন সুহৃদ থাকবে না এবং কোন খাদ্য থাকবে না ক্ষতনিঃসৃত পুঁজ ব্যতীত; যা অপরাধীরা ব্যতীত কেউ খাবে । (হা-ক্বাহঃ ৩৫-৩৭)
৫। আগুনের অঙ্গারঃ
যারা আল্লাহর কালাম বেচে খায়, তারা জাহান্নামের আঙ্গার খাবে। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۙ أُولَٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থাৎ, আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যারা তা গোপন করে ও তার বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা কেবল আগুন দিয়ে আপন পেট পূর্ণ করে। শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পবিত্রও করবেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (বাক্বারাহঃ ১৭৪)
যারা এতীমের মাল খায়, তারা জাহান্নামের আঙ্গার খাবে। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَىٰ ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا ۖ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا
অর্থাৎ, নিশ্চয় যারা পিতৃহীনদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে, তারা আসলে নিজেদের উদরে অগ্নি ভক্ষণ করে। আর অচিরেই তারা জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে। (নিসাঃ ১০)।
আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছেন যে, “যে ব্যক্তি অভাব না থাকা সত্ত্বেও যাচনা করে (খেল), সে ব্যক্তি যেন জাহান্নামের অঙ্গার খেল।” (তাবারানীর কাবীর, ইবনে খুযাইমা, বাইহাকী, সহীহ তারগীব ৭৯৩নং) ।
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি চাঁদির পাত্রে পান করে, আসলে সে ব্যক্তি নিজ উদরে জাহান্নামের আগুন ঢক্ঢক্ করে পান করে।” (বুখারী ৫৬৩৪, মুসলিম ২০৬৫নং)