পিপাসায় পানি না দিয়ে জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে। আর অধিক আযাব দেওয়ার জন্য তাদেরকে কয়েক প্রকার পানি পান করতে দেওয়া হবেঃ

১। হামীমঃ

অত্যুষ্ণ ফুটন্ত পানি। মহান আল্লাহ বলেন,

فَشَارِبُونَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيمِ (54) فَشَارِبُونَ شُرْبَ الْهِيمِ (55)

অর্থাৎ, তারপর তোমরা পান করবে ফুটন্ত পানি। পান করবে পিপাসার্ত উটের ন্যায়। (ওয়াক্বিআহঃ ৫৪-৫৫)

যা পান করলে জাহান্নামীদের নাড়িভুড়ি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَسُقُوا مَاءً حَمِيمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءَهُمْ

অর্থাৎ, (পরহেযগাররা কি তাদের মতো,) যাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি; যা তাদের নাড়ীভুড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে দেবে? (মুহম্মদঃ ১৫)

২। গাস্‌সাকঃ

অতিশয় দুর্গন্ধময় তিক্ত অথবা নিরতিশয় শীতল পানীয়। মহান আল্লাহ বলেন,

هَٰذَا ۚ وَإِنَّ لِلطَّاغِينَ لَشَرَّ مَآبٍ (55) جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا فَبِئْسَ الْمِهَادُ (56) هَٰذَا فَلْيَذُوقُوهُ حَمِيمٌ وَغَسَّاقٌ (57)

অর্থাৎ, এ হল (সাবধানীদের জন্য) আর সীমালংঘনকারীদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট পরিণাম; জাহান্নাম, সেখানে ওরা প্রবেশ করবে, সুতরাং কত নিকৃষ্ট সে শয়নাগার। এ হল ফুটন্ত পানি ও (গাস্‌সাক) পুঁজ। সুতরাং ওরা তা আস্বাদন করুক। (স্বাদঃ ৫৫-৫৭)।

إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا (21) لِّلطَّاغِينَ مَآبًا (22) لَّابِثِينَ فِيهَا أَحْقَابًا (23) لَّا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرْدًا وَلَا شَرَابًا (24) إِلَّا حَمِيمًا وَغَسَّاقًا (25) جَزَاءً وِفَاقًا (26)

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই জাহান্নাম ওঁৎ পেতে রয়েছে---সীমালংঘনকারীদের প্রত্যাবর্তনস্থল রূপে। সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে। সেখানে তারা কোন ঠান্ডা (বস্তুর) স্বাদ গ্রহণ করতে পাবে না, আর কোন পানীয়ও (পাবে না); ফুটন্ত পানি ও (প্রবাহিত) পুঁজ ব্যতীত। এটাই (তাদের) উপযুক্ত প্রতিফল। (নাবাঃ ২১-২৬)

৩। স্বাদীদঃ

জাহান্নামীদের পচনশীল ক্ষত-নির্গত পুঁজ-রক্ত বা ঘাম; যা তাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে। তারা অতি কষ্টে গলধঃকরণ করবে এবং তা গলধঃকরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। (তখন) সব দিক থেকে তাদের নিকট মৃত্যুযন্ত্রণা আসবে, কিন্তু মৃত্যু তাদের ঘটবে না। আর তারা কঠোর শাস্তি ভোগ করতেই থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَاسْتَفْتَحُوا وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ (15) مِّن وَرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَىٰ مِن مَّاءٍ صَدِيدٍ (16) يَتَجَرَّعُهُ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُ وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِن كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ ۖ وَمِن وَرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيظٌ (17)

অর্থাৎ, প্রত্যেক উদ্ধত হঠকারী ব্যর্থকাম হল। তাদের প্রত্যেকের সম্মুখে রয়েছে জাহান্নাম এবং প্রত্যেককে পান করানো হবে পূজমিশ্রিত পানি। যা সে অতি কষ্টে এক ঢোক এক ঢোক করে গিলতে থাকবে এবং তা গিলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে; সর্বদিক হতে তার নিকট আসবে মৃত্যু-যন্ত্রণা, কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবে না এবং তার পরে থাকবে কঠোর শাস্তি। (ইব্রাহীমঃ ১৫-১৭)

৪৷ গলিত ধাতু অথবা তৈলকিট্টের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ, গাঢ় ও দুর্গন্ধময় পানীয়ঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا ۚ وَإِن يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ ۚ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا

অর্থাৎ, আমি সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেওয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়; যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে; কত নিকৃষ্ট সেই পানীয় এবং কত নিকৃষ্ট সেই (অগ্নির) আশ্রয়স্থল। (কাহফঃ ২৯)

৫। খাবাল নদীর পানিঃ

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি মদ পান করবে সে ব্যক্তির ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। কিন্তু এরপর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করে নেবেন। অন্যথা যদি সে পুনরায় পান করে, তাহলে অনুরূপ তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। যদি এর পরেও সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করে নেবেন। অন্যথা যদি সে তৃতীয়বার পান করে, তাহলে অনুরূপ তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। কিন্তু এর পরেও যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করে নেবেন। অন্যথা যদি সে। চতুর্থবার তা পান করে, তাহলে অনুরূপ তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবে । কিন্তু এরপরে সে যদি তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন না, তিনি তার প্রতি ক্রোধান্বিত হন এবং (পরকালে) তাকে খাবাল নদী থেকে পানীয় পান করাবেন।”

ইবনে উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আবু আব্দুর রহমান! খাবাল নদী’ কি? উত্তরে তিনি বললেন, 'তা হল জাহান্নামবাসীদের পুঁজ দ্বারা প্রবাহিত (জাহান্নামের) এক নদী।” (তিরমিযী, হাকেম ৪/১৪৬, নাসাঈ, সহীহুল জামে’ ৬৩১২-৬৩১৩নং)।