কাফের হলেও তার মৃতদেহ দাফন করা ওয়াজেব। আবু তালেব মারা গেলে নবী (ﷺ) আলী (রাঃ)-কে বললেন, “তোমার বৃদ্ধ চাচা তো মারা গেল। এখন যাও ওকে কবরস্থ করে এস---।” (আহমাদ ৮০৭নং, আবু দাউদ ৩২ ১৪নং, নাসাঈ ২০০৫নং, প্রমুখ, সহীহ আবু দাউদ ২৭৫৩নং)
তা ছাড়া তিনি বদর-যুদ্ধের দিন কুরাইশদের মৃতদেহসমূহকে বদরের এক কুয়ায় ফেলতে সাহাবাগণকে আদেশ করেছিলেন। সুতরাং তারা উক্ত কাফেরদের লাশসমূহকে কুয়ায় ফেলেছিলেন এবং উমাইয়া বিন খালাফের লাশকে মাটি ও পাথর দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলেন। (দেখুন, বুখারী ৩৯৭৬, মুসলিম ২৮৭৫নং, আহমাদ ৩/ ১০৪, ৪/ ১২৯ প্রমুখ)
তবে কাফের (অনুরূপ মুশরিক, মুনাফিক এবং মতান্তরে বেনামাযী)কে মুসলিমদের সাধারণ কবরগাহে দাফন করা যাবে না। আর কোন মুসলিমকেও কাফেরদের সমাধিক্ষেত্রে সমাধিস্থ করা যাবে না। এই আমলই ছিল মহানবী (ﷺ) এর যুগে।) (দেখুন, আবু দাউদ ৩২৩০, নাসাঈ ২০৪৭, ইবনে মাজাহ ১৫৬৮নং প্রমুখ সহীহ আবু দাউদ ২৭৬৭নং)
কোন মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অথবা কোন বুযুর্গের বা আহলে বাইতের কবরের পাশে কবর দেওয়ার জন্য দূর থেকে লাশ বহন করা বিদআত। (আহকামুল জানাইয ২৪৮পৃঃ)
সুতরাং মাইয়্যেত যত বড়ই বুযুর্গ হোক, তাকে সাধারণ ও স্থানীয় কবরস্থানেই দাফন করা সুন্নত। কারণ, মহানবী (ﷺ) এর যুগে সকল মাইয়্যেতকেই তিনি বাকী’র গোরস্থানে দাফন করতেন। আর একথা কোন সলফ কর্তৃক বর্ণিত হয় নি যে, কারো লাশ করস্থ ছাড়া অন্য কোথাও দাফন করা হয়েছে। অবশ্য মহানবী (ﷺ) যে তাঁর হুজরায় সমাধিস্থ, সে কথা প্রসিদ্ধ। যেহেতু আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাতু অসসালামগণের যে স্থানেই ইন্তিকাল হয় সে স্থলেই তাদের কবর হয়।
তদনুরূপ শহীদদের কবরও জিহাদের ময়দানে তাঁদের নিহত হওয়ার স্থলেই হয়ে থাকে এবং সাধারণ কবরস্থানে তার লাশ বহন করে এনে দাফন করা হয়। (দেখুন, মুসনাদে আহমাদ ৩/৩৯৭-৩৯৮)
কোন ঘরের ভিতর কবর নেওয়া বা দেওয়া মোটেই বৈধ নয়। কারণ, প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা তোমাদের গৃহসমূহকে কবর বানিয়ে নিও না।” (মুসলিম ৭৮০, তিরমিযী ২৮৭৭নং প্রমুখ)
অনুরূপভাবে বৈধ নয় কোন মসজিদের সীমার ভিতরে মৃত দাফন করা। যেহেতু যে মসজিদে কবর থাকে, তাতে নামাযই শুদ্ধ ও বৈধ হয় না। দেখুন, তাহযীরুস সাজেদ, আল্লামা আলবানী) প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “কবরস্থান, প্রস্রাবপায়খানা ও গোসল করার স্থান ছাড়া পৃথিবীর সমস্ত জায়গাই মসজিদ। ” (তাতে নামায পড়া চলে।) (আবু দাউদ ৪৯২, তিরমিযী ৩১৭, ইবনে মাজাহ ৭৪৫ প্রমুখ)।
এ ছাড়া তাঁর ব্যাপক নির্দেশ রয়েছে যে, “সাবধান! তোমরা কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিও না। এরূপ করতে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি।” (মুসলিম ৫৩২নং)
প্রকাশ যে, প্রত্যেক (ছোট) শহর ও গ্রামের সকল মুসলিমদের জন্য একটি মাত্রই কবরস্থান থাকা উচিত এবং অপ্রয়োজনে একাধিক কবরস্থান হওয়া আদৌ উচিত নয়। কারণ, প্রত্যেক গোষ্ঠি যদি নিজ নিজ কবরস্থান বানায় অথবা মাইয়্যেতকে যদি তার নিজস্ব মালিকানাভুক্ত জায়গায় দাফন করা হয় তাহলে অবশ্যই তাতে অহেতুক বত্র জমি-জায়গা অবরোধ হয়; আর এ ফলে যেখানে সেখানে কবর থাকা দরুন কবরের অসম্মানও হয় বেশী।
তাছাড়া পৃথক পৃথক গোরস্থান নিয়ে মুসলিমদের মাঝে বিছিন্নতা, বৈষম্য ও গর্ববোধ প্রকাশ পায়। যাতে সাম্য ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের কোন অনুমতি নেই।
একান্ত অনিবার্য কারণ ছাড়া ঠিক সুর্যের উদয়, অস্ত এবং ঠিক মাথার উপর থাকার সময় দাফন করা বৈধ নয়। উকবাহ বিন আমের (রাঃ) বলেন, তিনটি সময় এমন রয়েছে যাতে আল্লাহর রসূল (ﷺ) আমাদেরকে নামায পড়তে এবং মাইয়্যেত দাফন করতে বারণ করতেন। আর তা হল, সুর্যোদয় শুরু হওয়া থেকে একটু উঁচু না হওয়া পর্যন্ত, ঠিক সূর্য মাথার উপর আসা থেকে একটু ঢলে না যাওয়া পর্যন্ত এবং অস্তের জন্য হলুদবর্ণ হওয়া থেকে অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত সময়। (মুসলিম ৮৩ ১, আবু দাউদ ও ১৯২, তিরমিযী ১০৩০, নাসাঈ ৫৫৯ ইবনে মাজাহ ১৫১৯নং)।
তদনুরূপ অনিবার্য কারণ ছাড়া (রাত্রে মারা গেলে) রাতে-রাতেই দাফন করে দেওয়া বৈধ নয়। কারণ, মহানবী (ﷺ) নিরুপায় না হলে (অধিক সংখ্যক মানুষের) জানাযা না পড়া পর্যন্ত রাত্রে মাইয়্যেত দাফন করার ব্যাপারে ভৎর্সনা (নিষেধ করেছেন। (মুসলিম ৯৪৩, আবু দাউদ ৩১৪৮নং প্রমুখ।
পক্ষান্তরে রাতারাতি লাশ দাফন করা যদি জরুরীই হয়, তাহলে লাইট ইত্যাদির আলো ব্যবহার করে তা বৈধ। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, 'আল্লাহর রসূল (ﷺ) বাতি জ্বালিয়ে এক ব্যক্তিকে কবরস্থ করেছেন।' (তিরমিযী ১০৫৭, ইবনে মাজাহ ১৫২০নং, সহীহ ইবনে মাজাহ ১২৩৪নং)।
কোন মাইয়্যেতকে দাফন করার পর যদি দুর্ঘটনাগ্রস্ত তার বিচ্ছিন্ন হাত অথবা পা পাওয়া যায়, তবে ঐ অঙ্গের জন্য আর পৃথক গোসল ও জানাযার নামায নেই। বরং এমনিই দাফন করে দিতে হবে। আবার যদি মাইয়্যেতের কোন অঙ্গ ছাড়া দেহের অবশিষ্টাংশ না পাওয়া যায়, তবে যে অঙ্গ পাওয়া যাবে তারই গোসল, কাফন, নামায এবং দাফন কার্য সমাধা করা হবে। (ফাতাওয়াত ত’যিয়াহ ২৩পৃঃ)