সহীহ বুখারীতে আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
«لا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمُ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي إِنْ شِئتَ، اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي إِنْ شِئتَ، لِيَعْزِمِ الْمَسْأَلَةَ، فَإِنَّهُ لا مُكْرِهَ لَهُ»
‘‘তোমাদের কেউ যেন দুআ করার সময় এভাবে না বলে, হে আল্লাহ্! তুমি যদি চাও তবে আমাকে ক্ষমা করো, হে আল্লাহ্! তুমি যদি চাও তবে আমার উপর রহমত নাযিল করো; বরং সে যেন দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে দু’আ করে। কেননা আল্লাহকে বাধ্য করার কেউ নেই’’।[1]
ব্যাখ্যাঃ এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা বান্দার মত নয়। কেননা বান্দা কখনো ভিক্ষুককে এই আশায় দান করে যে, হয়ত তারও কোন সময় ভিক্ষুকের কাছে প্রয়োজন পড়তে পারে অথবা প্রার্থনাকারীর পক্ষ হতে ভয়ের কারণে কিংবা তার পক্ষ হতে কিছু পাওয়ার আশায় দান করে থাকে। তাই অনেক সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভিক্ষুককে প্রার্থীত বস্ত্ত দান করে। সুতরাং মাখলুকের কাছে কিছু প্রার্থনাকারীর উচিত, তার মকসুদ হাসিলের বিষয়টি মানুষের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া। এই আশঙ্কায় যে, হয়ত সে স্বেচ্ছায় দিতে না চাইলেও অনেক সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও দান করে থাকে। কিন্তু আল্লাহ রাববুল আলামীন এমন নন। কেননা তিনি তাঁর বান্দাকে যা দিতে ইচ্ছা করেন, স্বীয় ফযল, করম এবং অনুগ্রহেই তা দান করেন।
তাই আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার আদব হচ্ছে, তাঁর কাছে কোনো জিনিষ চাওয়ার সময় তা আল্লাহর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিবেনা। কেননা আল্লাহর অনুগ্রহ, দয়া ও দান অত্যন্ত প্রশস্ত ও সীমাহীন। উপরোক্ত হাদীছের বাক্য ليعزم المسألة অর্থ হচ্ছে দুআ করার দৃঢ়তার সাথে জোর দিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা চাই। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের অন্য এক হাদীছে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ
«يَدُ اللَّهِ مَلأَى لا تَغِيضُهَا نَفَقَةٌ، سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَ قَالَ: أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَاءَ وَالأَرْضَ؟ فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِي يَدِهِ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ، وَبِيَدِهِ الْمِيزَانُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ»
‘‘আল্লাহর হাত পরিপূর্ণ। দিন রাত একাধারে যতই খরচ করেন, তা থেকে কিছুই কমেনা। তিনি আরও বলেনঃ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করার পর থেকে তিনি কী পরিমাণ খরচ করেছেন, তা কি তোমরা দেখতে পেরেছো? এরপরও তাঁর হাতে যা আছে, তা হতে সামান্যও কমেনি। তাঁর আরশ পানির উপর। তাঁর হাতে রয়েছে দাঁড়িপাল্লা। তিনি কাউকে নীচে নামান আবার কাউকে উপরে উঠান’’।[2]
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
«وَلْيُعَظِّمِ الرَّغْبَةَ فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يَتَعَاظَمُهُ شَىْءٌ أَعْطَاهُ»
‘‘আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সময় পূর্ণ দৃঢ়তার সাথে কবুলের সুদৃঢ় বৃহৎ আশা নিয়ে প্রয়োজন পেশ করা উচিত। কেননা আল্লাহ বান্দাকে যাই দান করেন না কেন তার কোনটাই তাঁর কাছে বড় কিংবা কঠিন নয়’’।
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ বান্দা যখন তার প্রভুর নিকট কোন কিছু চাইবে এবং স্বীয় প্রয়োজন পেশ করবে, তখন পূর্ণ আশা, আগ্রহ ও দৃঢ়তা সহকারে চাইবে। কেননা আল্লাহ তাআলা স্বীয় অনুগ্রহ, দানশীলতা ও দয়ার কারণেই বড় বড় নেয়ামত দান করেন। কেননা আল্লাহ তাঁর বান্দাকে যাই দান করেন, তা তাঁর নিকট কিছুই বড় নয়। অর্থাৎ বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায় তা দেয়া আল্লাহর নিকট বড় কিছু নয়। কেননা আল্লাহর অনুগ্রহ, নেয়ামত ও ধনভান্ডার পরিপূণ। তাতে কোনো কমতি নেই। সুতরাং বান্দার বড় বড় প্রার্থনা কবুল করা এবং প্রার্থনা অনুপাতে তাকে দান করা আল্লাহর জন্য মোটেই কঠিন নয়। জনৈক কবি তার প্রিয় ব্যক্তির প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেনঃ
وتعظُم في عين الصغير صِغارُها + وتصغُر في عين العظيم العظائم
‘‘ছোট লোকের দৃষ্টিতে মানুষের ছোট ছোট দানও অনেক বড় বলে গণ্য হয়। আর বড় লোকের দৃষ্টিতে মানুষের বড় বড় দানও ছোট বলে গণ্য হয়’’। এই অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১) দুআর মধ্যে ইনশা-আল্লাহ বলা নিষেধ। অর্থাৎ এভাবে দুআ করা যে, হে আল্লাহ! তুমি ইচ্ছা করলে আমাকে ক্ষমা করো, তুমি ইচ্ছা করলে আমাকে ইহা দান কর ইত্যাদি। দুআ কবুল করা বা না করার বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া নিষেধ।
২) দুআতে ইনশা-আল্লাহ বলা নিষেধ হওয়ার কারণ এই অধ্যায়েই বর্ণিত হয়েছে।
৩) দুআর মধ্যে দৃঢ়তা থাকা চাই।
৪) দুআ করার সময় মাকসুদ হাসিল হওয়ার জন্য পরিপূর্ণ আগ্রহ প্রকাশ করা জরুরী।
৫) দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর কাছে চাওয়ার আদেশ দেয়ার কারণ এই অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।
[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তাঁর আরশ পানির উপর। হাদীছ নং- ৪৬৮৪।