ব্যাখ্যাঃ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা স্বীয় কিতাবে নববইবার সবরের কথা উল্লেখ করেছেন। সহীহ হাদীছে রয়েছে, সবর হচ্ছে জ্যোতি স্বরূপ। ইমাম আহমাদ ও ইমাম মুসলিম (রঃ) এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ সবরের মাধ্যমেই আমরা সর্বোত্তম জীবন পেয়েছি। ইমাম বুখারী এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
আলী বিন আবু তালিব রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ দেহের মধ্যে মাথার স্থান যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঈমানের মধ্যে সবরের স্থান ঠিক সে রকমই। অতঃপর তিনি আওয়াজ উঁচু করে বললেনঃ যার সবর নেই, তার ঈমানও নেই।
জেনে রাখা দরকার যে, সবর তিন প্রকার। (১) আল্লাহর বিধান ও হুকুম-আহকাম পালন করার ক্ষেত্রে (কষ্টের উপর) সবর করা। (২) আল্লাহর নিষেধ ও হারাম কাজগুলো থেকে বিরত থাকায় সবর করা। (৩) আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত যে সমস্ত বিপদাপদ আগমণ করে তা বরদাশত করতে গিয়ে সবর করা।
শাইখুল ইসলাম আরো বাড়িয়ে বলেনঃ কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে শরীয়ত বিরোধী কাজ করা থেকে বিরত থাকাও সবরের অন্যতম প্রকার।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَه ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ঈমান রাখে, তিনি তার অন্তরকে হেদায়াত করেন’’। (সূরা তাগাবুনঃ ১১)
ব্যাখ্যাঃ আয়াতের শুরুতে রয়েছে, مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ আল্লাহর হুকুম ব্যতীত মানুষকে কোন মসীবতই আক্রমণ করেনা। অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুমতি ব্যতীত। যেমন অন্য আয়াতে এসেছেঃ
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ
‘‘যমীনে এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যে যত মসীবত এসেছে, তা আমি সৃষ্টি করার পূর্বেই একটি কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছি। নিশ্চয়ই এটা আল্লাহ্র পক্ষে সহজ’’। (সূরা হাদীদঃ ২২)
আলকামা (রঃ) বলেছেন, আয়াতে যার আলোচনা হয়েছে, সে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে বিপদ আসলে মনে করে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। এর ফলে সে বিপদগ্রস্ত হয়েও সন্তুষ্ট থাকে এবং বিপদকে খুব সহজেই মেনে নেয়।
ব্যাখ্যাঃ ইবনে জারীর, ইবনে আবী হাতিম এই আছারটি বর্ণনা করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকেও এটি বর্ণিত হয়েছে।
আলকামার পরিচয় হচ্ছে, তিনি হলেন আলকামা বিন কাইছ বিন আব্দুল্লাহ আন-নাখঈ আল-কুফী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর জীবদ্দশায় তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি আবু বকর, উমার, উছমান, আলী, সা’দ, আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ, আয়েশা এবং অন্যান্য সাহাবী থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তিনি ছিলেন তাবেঈদের মধ্যে নির্ভরযোগ্য ও বিজ্ঞ আলেম। ৬০ হিজরীর পর তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
উপরোক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, সৎ আমল ঈমানের অন্তর্ভূক্ত এবং আয়াতে এ কথার বিবরণ রয়েছে যে, সবরের অন্যতম ছাওয়াব হচ্ছে আল্লাহ তাআলা সবরকারীর অন্তরকে হেদায়াত করেন।
সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
«اِثْنَتَانِ فِيْ النَّاس هُمَا بِهِمْ كُفْرٌ الطَّعْنُ فِى الأَنْسَابِ وَالنِّيَاحَةُ عَلَى الْمَيِّتِ»
‘‘মানুষের মধ্যে এমন দু’টি মন্দ স্বভাব রয়েছে যা দ্বারা তাদের কুফুরী প্রকাশ পায়। একটি হচ্ছে, মানুষের বংশের মধ্যে দোষ লাগানো, অপরটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা’’।[1]
ব্যাখ্যাঃ মানুষের মধ্যে এ দু’টি আমল হচ্ছে কুফুরী আমল। এ দু’টি ছিল জাহেলী যামানার আমল, যা মানুষ এখনো ছাড়তে পারেনি। আল্লাহ যাদেরকে এ থেকে বাঁচিয়েছেন, সে ব্যতীত অন্য কেউ বাঁচতে পারেনি। যার মধ্যে উপরোক্ত স্বভাব দু’টির একটি স্বভাব রয়েছে, তার মধ্যে কুফরীর একটি স্বভাব রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সঠিক কথা হচ্ছে, যার মধ্যে কুফুরীর কোন স্বভাব রয়েছে, সে নিরেট কাফের হয়ে যায়নি। এমনি যে ব্যক্তির মধ্যে ঈমানের কোন বৈশিষ্ট রয়েছে, সেও খাঁটি ঈমানদার হয়ে যায়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণীঃ ليس بين العبد وبين الكفر أو الشرك إلا ترك الصلاة এর মধ্যে আলিফ-লামযুক্ত মারেফা (নির্দিষ্ট) الكفرশব্দটি এবং আলিফ-লাম ছাড়া নাকেরা (অনির্দিষ্ট) كفر শব্দটির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যেখানে كفر শব্দটির সাথে আলিফ-লাম যুক্ত হয়ে الكفر হবে, সেখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলাম থেকে সম্পূর্ণ বের হয়ে যাওয়া। আর আলিফ-লাম ছাড়া আসলে সে রকম অর্থ হবেনা এবং সেই কুফুরী মুসলিমকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়না।
الطَّعْنُ فِى الأَنْسَابِ ‘‘মানুষের বংশে দোষ লাগানো’’ঃ তাতে এ কথাও অন্তর্ভূক্ত যে, কারও ব্যাপারে এ কথা বলা, অমুক অমুকের পুত্র নয়। অথচ তার বংশ প্রমাণিত।
وَالنِّيَاحَةُ عَلَى الْمَيِّتِ ‘‘মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা’’ঃ অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করার সময় আওয়াজ উঁচু করা, মৃত ব্যক্তির ফযীলত গণনা করা এবং তা মানুষের সামনে তুলে ধরা। এ রকম করার মধ্যে আল্লাহর ফয়সালার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ পায় এবং তা ধৈর্যের পরিপন্থী।
বুখারী ও মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
«لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَطَمَ الْخُدُودَ وَشَقَّ الْجُيُوبَ وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ»
‘‘যে ব্যক্তি মসীবতে পড়ে স্বীয় গালে চপেটাঘাত করে, বুকের জামা ছিড়ে এবং জাহেলী যুগের ন্যায় চিৎকার করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়’’।[2]
ব্যাখ্যাঃ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেনঃ এখানে গালকে নির্দিষ্ট করার কারণ হল, অধিকাংশ সময় মসীবতে পড়ে মানুষ গালেই আঘাত করে। অন্যথায় চেহারা ও শরীরের অন্যান্য স্থানে আঘাত করার হুকুম একই।
وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ» ‘‘জাহেলী যুগের ন্যায় চিৎকার করে’’ঃ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেন, এখানে মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করার কথা বলা হয়েছে।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) বলেনঃ জাহেলী যামানার চিৎকার বলতে এখানে জাতীয়তাবাদ এবং গোত্রপ্রীতির দিকে আহবান করার কথা বলা হয়েছে। এমনি মাজহাব, দল এবং শাইখদের জন্য গোঁড়ামি করাও জাহেলিয়াতের আহবানের অন্তর্ভূক্ত। অনুরূপ কোনো শাইখকে অন্য কারো উপর প্রাধান্য দিয়ে তার দিকে আহবান করা, এর উপর ভিত্তি করেই কাউকে বন্ধু বানানো, কাউকে শত্রু বানানো। এ সবগুলোই জাহেলিয়াতের দাওয়াতের অন্তর্ভূক্ত।
তবে উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে কিছু কিছু বিষয় গ্রহণ করা যেতে পারে, যখন তা সঠিক হয়। যেমন মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করা জায়েয, যখন তা বিলাপ আকারে না হবে এবং তাতে আল্লাহর ফয়সালার উপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ না পাবে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) সুস্পষ্ট করেই এ কথা বলেছেন।
আনাস বিন মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
«إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الْخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ الْعُقُوبَةَ فِى الدُّنْيَا وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَفَّى بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
‘‘আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর কোন বান্দার মঙ্গল করতে চান, তখন দুনিয়াতেই তার (অপরাধের) শাস্তি দিয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে তিনি যখন তাঁর কোন বান্দার অমঙ্গল করতে চান, তখন দুনিয়াতে তার পাপের শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থাকেন, যেন কেয়ামতের দিন তাকে পূর্ণরূপে শাস্তি দেন’’।[3]
ব্যাখ্যাঃ তিরমিযী ও হাকেম এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করার পর হাসান বলেছেন।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ মসীবত এক প্রকার নেয়ামত। কেননা এগুলো মানুষের গুনাহএর কাফ্ফারা স্বরূপ। মসীবত মানুষকে সবরের শিক্ষা দেয়। বান্দা যদি মুসীবতে পড়ে সবর করে, তাহলে এর বিনিময়ে তাকে ছাওয়াব প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে বিপদাপদ ও মসীবতের কারণে বান্দাগণ আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে আসে, আল্লাহর সামনে নত হয় এবং মাখলুকের কাছে নিজের প্রয়োজন পেশ করা থেকে বিরত থাকে। মসীবতে পতিত বান্দার জন্য আরও অনেক দ্বীনী স্বার্থ হাসিল হয়। মূলত মসীবতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহ মিটিয়ে দেন। সুতরাং এটি বান্দার জন্য এক বিরাট নেয়ামত।
সুতরাং জানা গেল যে, মসীবত হচ্ছে সমস্ত বনী আদমের ক্ষেত্রেই রহমত ও নেয়ামত স্বরূপ। তবে মানুষ যদি মসীবতে পতিত হওয়ার পর তার পূর্বের গুনাহ্র চেয়ে বড় গুনাহয় লিপ্ত হয়, তাহলে তার দ্বীনের জন্য মসীবত আরো ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনে। কেননা কতক মানুষ আছে যখন তাদেরকে অভাব-অনটনে ফেলা হয়, অসুস্থতায় ফেলা হয় অথবা ক্ষুধার্ত রাখা হয়, তখন সে অধৈর্য হয়ে যায় এবং নিফাকী, অন্তরের রোগ ও প্রকাশ্য কুফুরীতে লিপ্ত হয়। সেই সঙ্গে ওয়াজিব আমলসমূহও ছেড়ে দেয় এবং এমন হারাম কর্মে লিপ্ত হয়, যা তার দ্বীনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই শ্রেণীর লোকদের জন্য মসবীতে পতিত হওয়ার চেয়ে নিরাপদ থাকাই ভাল। এটি মূলত মসীবতের কারণে নয়; বরং মসীবতে পতিত ব্যক্তির দুর্বলতার কারণেই। পক্ষান্তরে মসীবতে পতিত হয়ে ধৈর্যধারণকারী এবং আল্লাহর এবাদত ও আনুগত্যকারীর জন্য মসীবত একটি নেয়ামত ও রহমত। সুতরাং জানা গেল যে, বান্দাকে মসীবতে ফেলা আল্লাহর কাজ এবং বান্দার জন্য তা রহমত। এ জন্য আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা উচিৎ।
মসীবতে পতিত যেই ব্যক্তিকে সবর করার তাওফীক দেয়া হয়েছে, সবর তার জন্য একটি দ্বীনি নেয়ামত। গুনাহসমূহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার সাথে সাথে তার জন্য আল্লাহ তাআলার রহমতও অর্জিত হবে। মসীবতে পড়ে যে স্বীয় প্রভুর প্রশংসা করে, আল্লাহ তাআলা বিনিময়ে তার উপর রহমত করেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
‘‘তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ্র অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়াতপ্রাপ্ত’’। (সূরা বাকারাঃ ১৫৭) অর্থাৎ তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। যে ব্যক্তি পূর্ণ সবর করবে তার জন্যই ইহা অর্জিত হবে। শাইখুল ইসলামের কথা এখানেই শেষ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
«إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلاَءِ وَإِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ فَمَنْ رَضِىَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ»
‘‘পরীক্ষা যত কঠিন হয়, পুরস্কার তত বড় হয়। আল্লাহ তাআলা যখন কোনো জাতিকে ভালবাসেন, তখন তাকে তিনি পরীক্ষা করেন। এতে যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য রয়েছে সন্তুষ্টি। আর যে ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হয়, তার প্রতিও রয়েছে অসন্তুষ্টি’’।[4] ইমাম তিরমিযী (রঃ) এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন এবং হাসান বলেছেন।
ব্যাখ্যাঃ عِظَم শব্দটির ‘আইন’ বর্ণে যের দিয়ে এবং যোয়া বর্ণে যবর দিয়ে পড়তে হবে। আইন অক্ষরে পেশ এবং যোয়া অক্ষরে সাকিন দিয়েও পড়া যায়। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) বলেনঃ নিশ্চয়ই বড় মসীবতের ছাওয়াব বড় হবে তখনই, যখন বান্দা সবর করবে এবং ছাওয়াবের আশা করবে। মসীবতে সবর করা অবস্থায় অন্যান্য যে সমস্ত নেকীর কাজ করা হবে তারও উত্তম বদলা দেয়া হবে। এ কথাটি খুবই সুস্পষ্ট।
আল্লাহ তাআলা যখন কোনো জাতিকে ভালবাসেন, তখন তাকে মসীবতে ফেলে পরীক্ষা করেনঃ অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ
«أَىُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلاَءً قَالَ الأَنْبِيَاءُ ثُمَّ الأَمْثَلُ فَالأَمْثَلُ فَيُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ فَإِنْ كَانَ دِينُهُ صُلْبًا اشْتَدَّ بَلاَؤُهُ وَإِنْ كَانَ فِى دِينِهِ رِقَّةٌ ابْتُلِىَ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ فَمَا يَبْرَحُ الْبَلاَءُ بِالْعَبْدِ حَتَّى يَتْرُكَهُ يَمْشِى عَلَى الأَرْضِ مَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ»
‘‘লোকদের মধ্যে কাকে সবচেয়ে কঠিন মসীবতে ফেলা হয়? জবাবে তিনি বললেনঃ নবীগণকে। অতঃপর সর্বাধিক ভাল লোকদেরকে। এরপর অন্যান্য ভাল লোকদেরকে। মানুষকে তার দ্বীন অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। দ্বীন পালনে যদি সে মজবুত হয়, তার মসীবতও কঠিন হয়। দ্বীন পালনে সে যদি দুর্বল হয়, তাহলে তার দ্বীন অনুযায়ীই তাকে মসীবতে ফেলা হয়। বান্দাকে মসীবতে ফেলে পরীক্ষা নেওয়া হতেই থাকে, এমন কি শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাকে এমন পর্যায়ে রাখেন যে, সে যমীনে এমন অবস্থায় চলাফেরা করে যে, তার কোন গুনাহ্ থাকেনা’’।[5] ইমাম দারেমী, ইবনে মাজাহ এবং তিরমিযী এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করার পর হাসান সহীহ বলেছেন।
যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য রয়েছে সন্তুষ্টিঃ অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ হতে রয়েছে তার জন্য সন্তুষ্টি। আর যে ব্যক্তি মসীবতে পতিত হয়ে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ হতে অসন্তুষ্টি। এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১) সূরা তাগাবুনের ১১ নং আয়াতের তাফসীর জানা গেল। আল্লাহ তাআলা সেখানে বলেছেনঃ আল্লাহ্র নির্দেশ ব্যতিরেকে কোনো বিপদ আসেনা। সুতরাং যে আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস করে, মসীবতে পড়ে ধৈর্যধারণ করে এবং আল্লাহর উপর আস্থা রাখে, আল্লাহ তাআলা তার অন্তরকে সৎ পথ প্রদর্শন করেন।
২) বিপদে ধৈর্য ধারণ ও আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকা ঈমানের অংশ।
৩) কারো বংশের মধ্যে অপবাদ দেয়া বা দুর্নাম করা কুফুরীর শামিল।
৪) যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে, গাল চাপড়ায়, জামার আস্তিন ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহেলী যুগের রীতি নীতির প্রতি আহবান জানায়, তাকে কঠোর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে।
৫) আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর বান্দার কল্যাণ চান এবং তাকে ভালবাসেন, তার আলামত কী, তাও জানা গেল। অর্থাৎ তিনি তখন তাঁর বান্দাকে মসীবতে ফেলেন এবং পরীক্ষা করেন।
৬) আর আল্লাহ যখন তার বান্দার অকল্যাণ চান, তার নিদর্শন কী, তাও জানা গেল। অর্থাৎ পাপ কাজ করার পরও তাকে শাস্তি দেন না; বরং তাকে নেয়ামতের মধ্যেই রাখেন।
৭) বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসার নিদর্শন সম্পর্কে জানা গেল।
৮) আল্লাহর ফয়সালার প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়া হারাম।
৯) বিপদে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকার ছাওয়াব।
[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি মসীবতে পড়ে গাল চাপড়ায় সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়।
[3] - তিরমিজী, অধ্যায়ঃ মুসীবতের সময় ধৈর্য ধারণ করা। ইমাম আলবানী (রঃ) এই হাদীছকে হাসান বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং-১২২০।
[4] - তিরমিজী, অধ্যায়ঃ মসীবতে সবর করা। ইমাম আলবানী (রঃ) এই হাদীছকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ১৪৬।
[5] - তিরমিযী, অধ্যায়ঃ মসীবতে সবর করার ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আলবানী (রঃ) এই হাদীছকে সহীহ বলেছেন। দেখুন সহীহুত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীছ নং-৩৪০২।