ইমাম বুখারী (রঃ) তাঁর সহীহ গ্রন্থে বলেন, কাতাদাহ বলেছেনঃ
«خَلَقَ الله هَذِهِ النُّجُومَ لِثَلاَثٍ جَعَلَهَا زِينَةً لِلسَّمَاءِ وَرُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ وَعَلاَمَاتٍ يُهْتَدَى بِهَا فَمَنْ تَأَوَّلَ فِيهَا بِغَيْرِ ذَلِكَ أَخْطَأَ وَأَضَاعَ نَصِيبَهُ وَتَكَلَّفَ مَا لاَ عِلْمَ لَهُ بِهِ»
‘‘আল্লাহ তাআলা এসব নক্ষত্র তিনটি উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, আকাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য, শয়তানকে বিতাড়িত করার জন্য এবং পথিকদের দিশা পাওয়ার জন্য। যে ব্যক্তি এ উদ্দেশ্য ছাড়া এর ভিন্ন ব্যাখ্যা করলো সে ভুল করলো, তার ভাগ্য নষ্ট করলো এবং যে বিষয়ে তার কোনো জ্ঞান নেই, তা জানার চেষ্টা করলো।
ব্যাখ্যাঃ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ মহাশূণ্যের বিভিন্ন অবস্থা দ্বারা যমীনের বিভিন্ন ঘটনার উপর দলীল গ্রহণ করার নাম হচ্ছে, علم التنجيم বা জ্যোতির্বিদ্যা।
ইমাম খাত্তাবী (রঃ) বলেনঃ ইলমুন্ নুজুম তথা জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা করা নিষিদ্ধ। ভবিষ্যতে যে সমস্ত ঘটনা পৃথিবীতে ঘটবে জ্যোতিষীরা তা জানে বলে দাবি করে। আর এটাই হচ্ছে জ্যোতির্বিদ্যা। এ বিদ্যা শিক্ষা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। জ্যোতিষীরা দাবি করে যে, বাতাস কখন প্রবাহিত হবে, ঝড় ও অন্যান্য দূর্যোগ কখন শুরু হবে, কখন বৃষ্টি হবে[1], দ্রব্যমূল্য কখন বৃদ্ধি পাবে ইত্যাদি সম্পর্কে তারা জ্ঞান রাখে। তারা আরো ধারণা করে যে, নির্দিষ্ট পথে তারকাসমূহের চলাচল, তারকাসমূহের একত্রিত হওয়া এবং এগুলো বিচ্ছিন্ন হওয়ার মাধ্যমে উপরোক্ত বিষয়গুলো জানা সম্ভব। তারা দাবী করে, যমীনের ঘটনাবলীতে আকাশের তারকাসমূহের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তাদের এ দাবী গায়েবী বিষয় সমূহে অন্যায় হস্তক্ষেপের শামিল এবং এমন জ্ঞানের দাবির অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানেনা। মূলতঃ গায়েবের খবর আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানেনা।
এ আছারকে ইমাম বুখারী স্বীয় কিতাব সহীহ বুখারীতে মুআল্লাক[2] হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আব্দুর রাজ্জাক, আবদ্ বিন হুমাইদ, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির এবং অন্যরাও এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। খতীব বাগদাদী ‘কিতাবুন নুজুম’এ কাতাদাহ থেকে এর চেয়ে আরো দীর্ঘ করে বর্ণনা করেছেন।
কাতাদাহ (রঃ)এর কথা থেকে বুঝা যায় যে, জ্যোতির্বিদ্যা তাঁর যুগেও বিদ্যমান ছিল। এ জন্যই তিনি জ্যোতির্বিদ্যায় বিশ্বাসকারী এবং যারা এর সাথে সম্পর্ক রাখে তাদের প্রতিবাদ করাকে জরুরী মনে করেছেন। এ জ্যোতির্বিদ্যা তাওহীদের সুস্পষ্ট বিরোধী এবং তা মানুষকে শির্কে নিপতিত করে। কেননা এতে পৃথিবীতে সংঘটিত ঘটনাবলীকে যে ঘটায়নি, সে-ই ঘটিয়েছে বলে দাবী করা হয়। অথচ আল্লাহ তাআলা স্বীয় ইচ্ছা ও অভিপ্রায় দ্বারা এ সকল ঘটনা ঘটিয়েছেন। ইলমুন তানজীমের দাবীদাররা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের দিকে এগুলোর সম্বন্ধ করে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যরা ঘটিয়েছেন বলে দাবী করে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللَّهِ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَأَنَّى تُؤْفَكُونَ
‘‘আল্লাহ্ ব্যতীত এমন কোনো স্রষ্টা আছে কি, যিনি তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিযিক দান করে? তিনি ব্যতীত অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। অতএব তোমরা কোথায় ফিরে যাচ্ছ?’’ (সূরা ফাতিরঃ ৩) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ
‘‘বলো, আল্লাহ্ ব্যতীত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কেউ গায়েবের খবর জানেনা এবং তারা জানেনা যে, কখন পুনরুজ্জীবিত হবে’’। (সূরা নামলঃ ৬৫)
خَلَقَ الله هَذِهِ النُّجُومَ لِثَلاَثٍ আল্লাহ তাআলা এসব নক্ষত্র তিনটি উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ
‘‘আমি দুনিয়ার আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জিত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের মেরে তাড়ানোর উপকরণ বানিয়েছি এবং তাদের জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি’’। (সূরা মূল্কঃ ৫) এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, তারকাগুলো শুধু দুনিয়ার আকাশেই। ইমাম ইবনে মারদুওয়াই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশকে ধোঁয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। তাতে তিনি প্রদীপ ও উজ্জ্বল চন্দ্র স্থাপন করেছেন এবং অসংখ্য বাতি সদৃশ তারকা দ্বারা তাকে সুসজ্জিত করেছেন। আর তারকাগুলো শয়তানদের আঘাত করার মাধ্যমে পরিণত করেছেন। অর্থাৎ তারকাগুলো দ্বারা শয়তানদেরকে আঘাত করা হয় এবং আকাশকে উহা দ্বারা বিতাড়িত শয়তান থেকে হেফাযত করা হয়।[3]
আকাশের তারকা সৃষ্টির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে পথ ও দিকের সন্ধান দেয়া। এগুলো দ্বারা মানুষ অন্ধকার রাতে পথের সন্ধান ও দীশা পায়। আল্লাহ তাআলা সূরা নামলের ১৬ নং আয়াতে বলেনঃ وَعَلَامَاتٍ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُونَ ‘‘এবং তিনি ভূপৃষ্ঠে পথ নির্দেশক বহু আলামত সৃষ্টি করেছেন এবং তারকা দ্বারাও মানুষ পথের দিশা পায়’’। আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُوا بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
‘‘তিনি তোমাদের জন্য তারকারাজি সৃষ্টি করেছেন- যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে পথপ্রাপ্ত হও। (সূরা আনআমঃ ৯৭) অর্থাৎ সেগুলো দ্বারা তোমরা যেন ভ্রমণের দিক নির্ণয় করতে পারো।
যদি বলা হয় জ্যোতিষীর কথা তো কখনো সঠিক হয়, তাহলে উত্তর হচ্ছে তার কথা সত্য হওয়া গণকের কথা সত্য হওয়ার মতই। সে একটি সত্য কথা বলে আর একশটি মিথ্যা বলে। তার কথা সত্য হওয়ার ভিত্তি ইলমের উপর নয়। বরং সে কথাটি কখনো তাকদীরের অনুরূপ হয়ে যায়। সুতরাং যার ব্যাপারে কথাটি সত্য হয়, এটি তার গোমরাহীর কারণে পরিণত হয়।
কাতাদাহ (রঃ) চাঁদের কক্ষপথ সংক্রান্ত বিদ্যার্জন বা জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা করা অপছন্দ করতেন। আর উয়াইনা এ বিদ্যা শিক্ষা করার অনুমতি দেননি। উভয়ের কাছ থেকে হারব (রঃ) এ কথা বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমদ এবং ইসহাক (রঃ) নক্ষত্ররাজির কক্ষপথ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার অনুমতি দিয়েছেন।
ব্যাখ্যাঃ ইমাম খাত্তাবী (রঃ) বলেনঃ অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যে জ্যোতির্বিদা অর্জিত হয় এবং যার মাধ্যমে সূর্যোদয়, কিবলার দিক ইত্যাদি জানা যায়, তা নিষেধের অন্তর্ভূক্ত নয়। কেননা ইলমুন্ নুজুম যদি গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে হয়ে থাকে, তাহলে ঠিক আছে।
আর যে ইলমুন নুজুম বা তারকা সম্পর্কিত বিদ্যার মাধ্যমে কিবলার দিক নির্ধারণ করা হয়, সেটি হচ্ছে ঐ সমস্ত অভিজ্ঞ ইমামদের কাজ, যাদের দ্বীনী খেদমতে আমরা কোন প্রকার সন্দেহ করিনা এবং তারকার চলাচল ও গতিপথ সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতাকেও অস্বীকার করিনা। সেই সঙ্গে তারা যে সংবাদ দেয়, তাতেও কোনো সন্দেহ পোষণ করিনা। তারা কিবলার দিককে কাবার কাছে থাকা অবস্থায় যেভাবে দেখেন, দূরে থাকা অবস্থায় ঠিক সেভাবেই দেখেন। সুতরাং দূর থেকে কিবলা সম্পর্কে তাদের জ্ঞান অর্জন করা কাবাকে দেখার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের মতই। আর তাদের খবরকে গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরাও কিবলার দিক জানতে পারি। কেননা তারা দ্বীনি ব্যাপারে আমাদের কাছে বিশ্বস্ত। সেই সঙ্গে তারা আকাশের তারকা ও নক্ষত্ররাজি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার ক্ষেত্রেও কোনো প্রকার ত্রুটি করেন নি। ইমাম ইবনুল মুনযির মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তারকা চলাচলের পথ এবং তারকাসমূহ থেকে ঐসব জ্ঞান অর্জন করা দোষণীয় নয়, যদ্বারা গভীর অন্ধকারে ও নৌপথে পথের সন্ধান পাওয়া যায়।
ইমাম ইবনে রজব বলেনঃ তারকাসমূহ চলাচল সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু যে ইলমের মধ্যে দাবি করা হয় যে, পৃথিবীর ঘটনাবলীতে তারকার প্রভাব রয়েছে, তা শিক্ষা করার অনুমতি নেই। যেমন বর্তমানের জ্যোতিষীরা দাবি করে থাকে। এ ধরণের ইলম অর্জন করা নিষেধ ও বাতিল। তা কম হোক বা বেশী হোক। কিন্তু অন্ধকার রাতে পথ চলার জন্য, কিবলা নির্ধারণ করার জন্য এবং রাস্তা চেনার জন্য প্রয়োজন অনুপাতে ইলমুত্ তাস্য়ীর তথা তারকার চলাচল ও গতিপথ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা অধিকাংশ আলেমের নিকট জায়েয।
উপরে বর্ণিত হারব-এর পরিচয় হচ্ছে, তিনি হলেন আবু মুহাম্মাদ ইমাম হাফেয হারব বিন ইসমাঈল আল কারমানী। তিনি ছিলেন ইলমে ফিকায় বিশেষ পারদর্শী এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ)এর যোগ্য শিষ্যদের অন্যতম। আহমাদ বিন হাম্বাল, ইসহাক, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন এবং অন্যান্য মুহাদ্দিছ থেকে তিনি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ‘মাসায়েল’ নামে তার একটি কিতাব রয়েছে। তাতে তিনি ঐ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর একত্রিত করেছেন, যা তিনি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) এবং অন্যান্য আলেমদের নিকট থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৮০ হিজরীতে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
ইসহাকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় হচ্ছে তিনি হলেন সুপ্রসিদ্ধ ইমাম ইসহাক বিন ইবরাহীম বিন মুখলিদ বিন ইয়াহইয়া আল-হানযালী আল নিসাপুরী। সংক্ষিপ্তভাবে তাকে ইবনে রাহ্ওয়াই বলা হয়। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক, আবু উসামা, সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা এবং তাদের সমপর্যায়ের আলেমদের নিকট হতে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) বলেনঃ ইসহাক ছিলেন মুসলিমদের অন্যতম ইমাম। ইসহাকের নিকট থেকে যারা হাদীছ বর্ণনা করেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ এবং আরো অন্যরা। তিনিও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তিনি ২৩৯ হিজরী সালে মৃত্যু বরণ করেন।
আবু মূসা আশআরী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
«ثَلاَثَةٌ لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَقَاطِعِ الرَّحِمِ وَمُصَدِّقٌ بِالسّحْرِ»
‘‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। (১) মাদকাসক্ত ব্যক্তি (২) আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী এবং (৩) যাদুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল ও ইমাম ইবনু হিববান তার সহীহ গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।
ব্যাখ্যাঃ আরও যে সমস্ত মুহাদ্দিছ এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, তাদের মধ্যে ইমাম তাবারানী এবং হাকিম অন্যতম। ইমাম হাকিম হাদীছটি বর্ণনা করার পর বলেনঃ হাদীছটি সহীহ। ইমাম যাহাবী (রঃ) এতে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
আবু মুসা আশআরী আব্দুল্লাহ বিন কায়িস বিন সালীম বিন খায্যার ছিলেন একজন সম্মানিত সাহাবী। তিনি হিজরী ৫০ সালে মৃত্যু বরণ করেন।
তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবেনাঃ হাদীছের যে অংশ থেকে অধ্যায় রচনা করা হয়েছে, তা হচ্ছে ‘যে ব্যক্তি যাদুকে সত্যায়ন করল’। এ হাদীছের সারমর্ম অন্যান্য হাদীছেও ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
«مَنْ أَتَى كَاهِناً فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ»
‘‘যে ব্যাক্তি গণকের কাছে আসল, অতঃপর গণক যা বলল, তা সত্য বলে বিশ্বাস করল সে মূলতঃ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ কুরআনকে অস্বীকার করল’’।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) বলেনঃ এ ধরণের হাদীছ যেভাবে এসেছে, সেভাবেই রেখে দিতে হবে। কোনো প্রকার ব্যাখ্যা করা যাবেনা। ইমাম যাহাবী স্বীয় কিতাব ‘আল-কাবায়ের’-এ বলেনঃ ‘ইলমুস্ সিমিয়া’[4] শিক্ষা করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করাও নিষিদ্ধ। এর ধরণ হচ্ছে অপরিচিত কিছু শব্দ দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি করা, স্বামীকে স্ত্রীর নিকট অপ্রিয় করে তোলা, তাদের পরস্পরের মধ্যে ঘৃণাবোধ জাগ্রত করা কিংবা অনুরূপ কাজ করার কল্পনা করা। যাদুর মতই এ কাজ ইসলামে নিষিদ্ধ। এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১) নক্ষত্র সৃষ্টির উদ্দেশ্য জানা গেল। আর তা হচ্ছে আকাশকে সুন্দর করা, রাতের অন্ধকারে পথের সন্ধান লাভ, শয়তানের শরীরে তা নিক্ষেপ করে শয়তানকে বিতাড়িত করা।
২) এ অধ্যায়ে নক্ষত্র সৃষ্টির ভিন্ন উদ্দেশ্য বর্ণনাকারীর সমুচিত জবাব প্রদান করা হয়েছে।
৩) কক্ষপথ সংক্রান্ত বিদ্যার্জনের ব্যাপারে মতভেদের উল্লেখ করা হয়েছে।
৪) যাদু বাতিল জানা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি যাদুর অন্তর্ভুক্ত সামান্য জিনিষেও বিশ্বাস করবে, তার প্রতি কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে।
[2] - যে হাদীছের সনদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত মুত্তাসিল নয়, তাকে মুআল্লাক বলা হয়। সহীহ বুখারীতেও এ ধরণের অনেক মুআল্লাক বর্ণনা রয়েছে। ইমাম বুখারী কোন বিষয়কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অথবা সহীহ হাদীছের সমর্থনে এই মুআল্লাক বর্ণনাগুলো উল্লেখ করেছেন।
কেউ কেউ বলেনঃ যে হাদীছের সনদ থেকে সাহাবী ব্যতীত অন্যসব রাবীকে বাদ দেয়া হয়েছে, তাকে ‘মুআল্লাক হাদীছ’ বলে। আবার কেউ কেউ বলেনঃ যে হাদীছের সনদের প্রথম দিক থেকে বাদ দেয়া হয়েছে, তার নাম মুআল্লাক। অন্যরা বলেনঃ সনদের সকল রাবী বাদ দিয়ে শুধু এভাবে বর্ণনা করা যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এভাবে বর্ণিত হাদীছকে মুআল্লাক বলা হয়।
[3] - গ্রন্থকার বলেনঃ আমি এই হাদীছের কোন সনদ খুঁজে পাইনি। ইবনে মারদুওয়াই এককভাবে যা বর্ণনা করেন, তার অধিকাংশই যঈফ। (আল্লাহই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন)
[4] - এক প্রকার যাদু বিশেষ।