মুসলিম উম্মাহর কিছু লোক মূর্তি পূজা করবে - ১

আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ

‘‘তুমি কি তাদেরকে দেখোনি যাদেরকে কিতাবের কিছু অংশ দেয়া হয়েছে? তারা জিবত এবং তাগুতকে বিশ্বাস করে’’। (সূরা নিসাঃ ৫১)

ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ ব্যতীত যারই এবাদত করা হয় বা যার জন্য কোনো প্রকার এবাদত পেশ করা হয়, তাই মূর্তি। সেটি হতে পারে কবর, হতে পারে গম্বুজ, মাযার, মৃত অলী-আওলীয়া, গাছ, পাথর বা অন্য যে কোনো সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

إِنَّمَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْثَانًا وَتَخْلُقُونَ إِفْكًا إِنَّ الَّذِينَ تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ لَكُمْ رِزْقًا فَابْتَغُوا عِنْدَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

‘‘তোমরা তো আললাহ্র পরিবর্তে কেবল মূর্তিরই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে যাদের এবাদত করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহ্‌র কাছে রিযিক তালাশ কর, তাঁর এবাদত করো এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তোমরা তারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে’’। (সূরা আনকাবুতঃ ১৭) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

قَالُوا نَعْبُدُ أَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عَاكِفِينَ (71) قَالَ هَلْ يَسْمَعُونَكُمْ إِذْ تَدْعُونَ (72) أَوْ يَنْفَعُونَكُمْ أَوْ يَضُرُّونَ (73) قَالُوا بَلْ وَجَدْنَا آَبَاءَنَا كَذَلِكَ يَفْعَلُونَ

‘‘তারা বলল, আমরা মূর্তিসমূহের পূজা করি এবং এদেরকেই আঁকড়ে থাকি। ইবরাহীম বললেনঃ তোমরা যখন আহবান করো, তখন তারা কি শুনে? অথবা তারা কি তোমাদের উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারে? তারা বললঃ না, তবে আমরা আমাদের বাপদাদাদেরকে অনুরূপ করতে দেখেছি’’। (সূরা শুআরাঃ ৭১-৭৪)

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ ‘‘তুমি কি তাদেরকে দেখোনি যাদেরকে কিতাবের কিছু অংশ দেয়া হয়েছে? তারা জিবতএবং তাগুতকে বিশ্বাস করে’’। ইবনে আবী হাতিম ইকরিমা হতে বর্ণনা করেন যে, হুয়াই ইবনে আখতাব এবং কাব বিন আশরাফ মক্কাবাসীদের নিকট আগমণ করলে মক্কার লোকেরা তাদেরকে বললঃ তোমরা তো আহলে কিতাব। তোমাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান রয়েছে। সুতরাং তোমরা আমাদের ব্যাপারে এবং মুহাম্মাদের ব্যাপারে কিছু বল তো। তখন কাব ও হুহাই বললঃ আমাদেরকে প্রথমে তোমাদের সম্পর্কে এবং মুহাম্মাদ সম্পর্কে অবহিত করো। তখন মক্কাবাসীরা বললঃ আমরা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করি, উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট উট যবেহ করি, দুধের সাথে পানি মিশ্রিত করে মানুষকে উহা পান করাই, কয়েদীদেরকে মুক্ত করি এবং হাজীদেরকে পানি পান করাই। অপর পক্ষে মুহাম্মাদ তো লেজ কাটা, নির্বংশ। সে আমাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করেছে এবং গিফার গোত্রের ঐ সমস্ত চোরেরাই তার অনুসরণ করেছে, যারা হাজীদের মালামাল চুরি করে। এখন তোমরাই বলো, আমরা ভাল না মুহাম্মাদ? তারা বললঃ তোমরাই অধিক উত্তম এবং সঠিক পথের অনুসারী। তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াত নাযিল করেনঃ

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ وَيَقُولُونَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا هَؤُلَاءِ أَهْدَى مِنَ الَّذِينَ آَمَنُوا سَبِيلًا

‘‘তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা কিতাবের কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে, যারা প্রতিমা ও শয়তানকে বিশ্বাস করে এবং কাফেরদের সম্পর্কে বলে মুসলিমদের তুলনায় এরাই অধিকতর সরল সঠিক পথে রয়েছে’’। (সূরা নিসাঃ ৫১)[1]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

قُلْ هَلْ أُنَبِّئُكُمْ بِشَرٍّ مِنْ ذَلِكَ مَثُوبَةً عِنْدَ اللَّهِ مَنْ لَعَنَهُ اللَّهُ وَغَضِبَ عَلَيْهِ وَجَعَلَ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ وَعَبَدَ الطَّاغُوتَ أُولَئِكَ شَرٌّ مَكَانًا وَأَضَلُّ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ

‘‘বলোঃ আমি কি সেসব লোকদের কথা জানিয়ে দেব? যাদের পরিণতি আল্লাহর কাছে এর চেয়ে খারাপ। তারা এমন লোক যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন এবং যাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়েছে। যাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে তিনি বানর ও শুকর বানিয়ে দিয়েছেন। তারা তাগুতের পূজা করেছে। তারাই মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সত্যপথ থেকেও অনেক দূরে। (সূরা মায়েদাঃ ৬০)

ব্যাখ্যাঃ ইমাম বগবী তাঁর তাফসীরে বলেনঃ হে মুহাম্মাদ! তুমি বলোঃ আমি কি তোমাদেরকে ঐ কথার চেয়েও অধিক নিকৃষ্ট বিষয়ের কথা জানিয়ে দিব? অর্থাৎ তারা যে বলেছিল হে মুসলিমগণ! দুনিয়া ও আখেরাতে তোমাদের চেয়ে অধিক কম ভাগ্যবান দ্বীনদার আর কাউকে দেখিনি এবং তোমাদের দ্বীনের চেয়ে অধিক নিকৃষ্ট আর কোন দ্বীনও দেখিনি। যেমন আল্লাহ তাআলা সূরা হজ্জের ৭২ নং আয়াতে বলেনঃ

قُلْ أَفَأُنَبِّئُكُمْ بِشَرٍّ مِنْ ذَلِكُمُ النَّارُ وَعَدَهَا اللَّهُ الَّذِينَ كَفَرُوا وَبِئْسَ الْمَصِيرُ

‘‘বলো, আমি কি তোমাদেরকে তদপেক্ষা মন্দ কিছুর সংবাদ দেব? তা তো জাহান্নামের আগুন; আল্লাহ্ কাফেরদেরকে এর ওয়াদা দিয়েছেন। এটা কতই না নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল’’।

مثوبة শব্দটির অর্থ হচ্ছে ছাওয়াব ও প্রতিদান। তামীয হিসাবে এটি মানসুব বা যবর বিশিষ্ট হয়েছে।

যাদেরকে আল্লাহ তাআলা বানরে পরিণত করেছেন, তারা ছিল বনী ইসরাঈলের ঐসব লোক, যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শনিবারে মাছ শিকার করেছিল। যারা ঈসা (আঃ)এর জন্য আসমান থেকে অবতারিত খাবারের সাথে কুফরী করেছিল আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শুকরে পরিণত করেছিলেন।

আলী বিন আবু তালহা[2] আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, বনী ইসরাঈলের মধ্য হতে যাদেরকে বানর ও শুকরে পরিণত করা হয়েছিল তারা ছিল শনিবারের বিধান লংঘনকারী। তাদের যুবকদেরকে বানরে পরিণত করা হয়েছিল এবং বৃদ্ধদেরকে শুকরে পরিণত করা হয়েছিল। আর আল্লাহ তাআলা তাদের মধ্যে হতে কতক লোককে তাগুতের এবাদতকারী বানিয়েছিলেন। অর্থাৎ তারা শয়তানের প্ররোচনার অনুসরণ করেছিল।

أُولَئِكَ شَرٌّ مَكَانًا وَأَضَلُّ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ ‘‘তারাই মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সত্যপথ থেকে অনেক দূরে’: শয়তানের এবাদতকারীদের ঠিকানা নিকৃষ্টতর। অর্থাৎ তোমরা আমাদের ব্যাপারে যেই ধারণা পোষণ করে থাক, তার চেয়ে অধিকতর নিকৃষ্ট হবে তাদের ঠিকানা এবং তারা সঠিক পথেরও অনেক দূরে।

ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ যদিও اسم التفضيل এর সীগাহ شر (অধিক নিকৃষ্ট) এবং أضل (অধিক গোমরাহ) অর্থে ব্যবহৃত, কিন্তু তার অর্থ এ নয় যে অপর পক্ষে মুমিনরাও গোমরাহিতে শামিল। অর্থাৎ এখানে এ কথা অকল্পনীয় যে, মুমিনরা নিকৃষ্ট এবং তাদের মধ্যেও গোমরাহী রয়েছে, আর তাদের তুলনায় কাফেররা অধিক নিকৃষ্ট এবং কাফেররা মুমিনদের তুলনায় সরল পথ হতে অনেক দূরে।[3] যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

أَصْحَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ مُسْتَقَرًّا وَأَحْسَنُ مَقِيلًا

‘‘সেদিন জান্নাতীদের বাসস্থান হবে অধিক উত্তম এবং বিশ্রামস্থল হবে সুন্দরতম’’। (সূরা ফুরকানঃ ২৪)

আল্লাহ তাআলা আসহাবে কাহাফের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেনঃ

قَالَ الَّذِينَ غَلَبُوا عَلَى أَمْرِهِمْ لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيْهِمْ مَسْجِدًا

‘‘যারা তাদের ব্যাপারে বিজয়ী হলো তারা বলল, আমরা অবশ্যই তাদের কবরের উপর মসজিদ তৈরী করবো’’ (সূরা কাহাফঃ ২১)

সাহাবী আবু সাঈদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ

«لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حذو القذة بالقذة حَتَّى لَوْ دخلوا جُحْرَ ضَبٍّ لَدخلتتُمُوهُ قالوا: يَا رسول الله الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى. قَالَ: فَمَنْ؟»

‘‘তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী উম্মতদের অভ্যাস ও রীতি-নীতির ঠিক ঐ রকম অনুসরণ করবে, যেমন এক তীরের ফলা অন্য এক তীরের ফলার সমান হয়। অর্থাৎ তোমরা পদে পদে তাদের অনুসরণ করে চলবে। এমনকি তারা যদি দববএর[4] গর্তে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও সেখানে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! পূর্ববর্তী উম্মত দ্বারা আপনি কি ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেনঃ তবে আর কারা?[5]

ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হাদীছে বর্ণনা করেছেন যে, আহলে কিতাবদের থেকে যে সমস্ত আমল ও কর্মকান্ড প্রকাশিত হওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলা এই আয়াত গুলোতে এবং অন্যান্য আয়াতে তাদেরকে দোষারোপ করেছেন, তার সবগুলোই এই উম্মতের মধ্যে অবশ্যই প্রকাশিত হবে। এই কথা থেকেই গ্রন্থকারের শিরোনামের প্রমাণ মিলে।

سَنَن শব্দের ‘সীন’ বর্ণে যবর দিয়ে পড়তে হবে। এর অর্থ হচ্ছে পূর্ববর্তী লোকদের তরীকা।

حذو القذة এখানে حذوশব্দটি নসবের অবস্থায় আছে বলে واو বর্ণে যবর দিয়ে পড়তে হবে। আর القذة এর কাফ অক্ষরে পেশ দিয়ে পড়তে হবে। القذة শব্দটির বহু বচন القذذ। তীরের ফলা তথা ধারালো সম্মুখ ভাগকে কুয্যা বলা হয়। অর্থাৎ তোমরা পূর্ববর্তী লোকদের সকল কাজেই তাদের অনুসরণ করবে এবং তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে। যেমন একটি তীরের ফলা অন্য তীরের ফলার সদৃশ হয়ে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে খবর দিয়েছেন হুবহু তাই হয়েছে।

ইমাম সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আমাদের আলেম সমাজের যে আলেম নষ্ট হবে, সে ইহুদীদের ন্যায়। আর আমাদের আবেদদের মধ্য হতে যারা নষ্ট হবে, তারা খৃষ্টানদের ন্যায়। ইমাম সুফিয়ানের বক্তব্য এখানেই শেষ।

মুসলিম শরীফে সাহাবী ছাওবান রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ

«إِنَّ اللَّهَ زَوَى لِىَ الأَرْضَ فَرَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا وَإِنَّ أُمَّتِى سَيَبْلُغُ مُلْكُهَا مَا زُوِىَ لِى مِنْهَا وَأُعْطِيتُ الْكَنْزَيْنِ الأَحْمَرَ وَالأَبْيَضَ وَإِنِّى سَأَلْتُ رَبِّى لأُمَّتِى أَنْ لاَ يُهْلِكَهَا بِسَنَةٍ بِعَامَّةٍ وَأَنْ لاَ يُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ سِوَى أَنْفُسِهِمْ فَيَسْتَبِيحَ بَيْضَتَهُمْ وَإِنَّ رَبِّى قَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنِّى إِذَا قَضَيْتُ قَضَاءً فَإِنَّهُ لاَ يُرَدُّ وَإِنِّى أَعْطَيْتُكَ لأُمَّتِكَ أَنْ لاَ أُهْلِكَهُمْ بِسَنَةٍ بِعَامَّةٍ وَأَنْ لاَ أُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ سِوَى أَنْفُسِهِمْ يَسْتَبِيحُ بَيْضَتَهُمْ وَلَوِ اجْتَمَعَ عَلَيْهِمْ مَنْ بِأَقْطَارِهَا حَتَّى يَكُونَ بَعْضُهُمْ يُهْلِكُ بَعْضًا وَيَسْبِى بَعْضُهُمْ بَعْضًا»

‘‘আল্লাহ তাআলা গোটা যমীনকে একত্রিত করে আমার সামনে পেশ করলেন। তখন আমি যমীনের পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্ত দেখতে পেলাম। পৃথিবীর যতটুকু স্থান আমাকে দেখানো হয়েছে আমার উম্মতের শাসন বা রাজত্ব সেখান পর্যন্ত বিস্তার লাভ করবে। লাল ও সাদা দু’টি ধনভান্ডার আমাকে দেয়া হল। আমি আমার রবের কাছে আমার উম্মতের জন্য এ আরজ করলাম, তিনি যেন আমার উম্মতকে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে ধ্বংস না করেন এবং তাদের নিজেদেরকে ব্যতীত বাহিরের কোন শত্রুকে তাদের উপর বিজয়ী বা ক্ষমতাসীন করে না দেন। যার ফলে সেই শত্রু তাদের সব কিছুকে নিজেদের জন্য হালাল মনে করবে। আমার রব আমাকে বললেন, হে মুহাম্মদ! আমি যখন কোন বিষয়ে ফয়সালা করি, তখন তার কোনো ব্যতিক্রম হয়না। আমি তোমাকে তোমার উম্মতের জন্য এ অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আমি তাদেরকে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে ধ্বংস করবোনা এবং তাদের নিজেদেরকে ছাড়া যদি সারা বিশ্বও তাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয় তবুও এমন কোনো শত্রুকে তাদের উপর ক্ষমতাবান করবোনা যে তাদের জান, মাল, ও রাজত্ব এমনকি সবকিছুই বৈধ মনে করে লুটে নিবে। তবে তোমার উম্মতের লোকেরাই পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে একে অপরকে হত্যা করবে এবং একে অপরকে বন্দী করবে’’।[6]

ব্যাখ্যাঃ ছাওবান ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর আযাদকৃত দাস। তিনি সবসময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সাথেই থাকতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর তিনি সিরিয়ায় চলে যান এবং সিরিয়ার হিমস নগরীতে ৫৪ হিজরী সালে ইন্তেকাল করেন।

زَوَى لِىَ الأَرْضَ ‘‘যমীনকে একত্রিত করে আমার সামনে পেশ করলেন’’ঃ ইমাম তুরবুশতী (রঃ) বলেনঃ زويت الشيئ جمعته وقبضته অর্থাৎ এখানে زوي অর্থ একত্র করলেন এবং মুষ্ঠির মধ্যে নিলেন। এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীর দূরের স্থানকে নিকটবর্তী করা। এতে করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দূরের বস্ত্তসমূহকে কাছের বস্ত্তসমূহ দেখার মতই দেখতে পেলেন।

মোটকথা আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর জন্য যমীনকে ভাজ করলেন এবং তিনি একে এমনভাবে একত্রিত করলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়নায় দেখার মতই সবকিছু চোখের সামনে দেখতে পেলেন।

ইমাম তীবি (রঃ)এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আমার জন্য যমীনকে একত্রিত করলেন। এতে আমি পূর্ব ও পশ্চিমের ঐ সমস্ত যমীন দেখতে পেলাম, যা অচীরেই আমার উম্মতের লোকেরা দখল করে নিবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীঃ পৃথিবীর যতটুকু স্থান আমাকে দেখানো হয়েছে আমার উম্মতের শাসন বা রাজত্ব ঠিক সেই স্থান পর্যন্ত বিস্তার লাভ করবেঃ ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে খবরটি দিয়েছেন, সেভাবেই বাস্তবায়িত হয়েছে। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নবুওয়াতের অন্যতম প্রমাণ। তাঁর উম্মতের রাজত্ব এত বিস্তার লাভ করেছিল যে, তা পশ্চিম দিকে মরক্কোর তানজা শহরের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত এবং পূর্ব দিকে খোরাসান, সুদূর মধ্য এশিয়া এবং সীহুন ও জীহুন নদীর অপর প্রান্তের রাজ্যগুলো পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। এমনকি ভারত এবং চীনের বহু অঞ্চলও ইসলামী সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হয়। তবে দক্ষিণ ও উত্তর দিকে ইসলামী সাম্রাজ্য ততটা প্রসারিত হয়নি। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন কিছু বলেন নি যে, তাকে উত্তর বা দক্ষিণের অঞ্চল দেখানো হয়েছে এবং সে সম্পর্কে তাকে কোন খবর দেয়া হয়েছে কিংবা তিনি এমন কিছু বলেন নি যে, তাঁর উম্মতের বাদশাহী ঐ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।

وَأُعْطِيتُ الْكَنْزَيْنِ الأَحْمَرَ وَالأَبْيَضَ ‘‘লাল ও সাদা দু’টি ধনভান্ডার আমাকে দেয়া হয়েছে’’- ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেনঃ এখানে পারস্যের বাদশা কিসরা এবং রোমের বাদশা কায়সার উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে তাদের রাজপ্রাসাদ এবং রাজ্যসমূহ উদ্দেশ্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর শপথ! রোম ও পারস্যের ধনভান্ডারসমূহ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা হবে। লাল ধনভান্ডার বলতে কায়সারের ধনভান্ডার উদ্দেশ্য। কেননা তাদের অধিকাংশ সম্পদ ছিল স্বর্ণ। আর সাদা বলতে কিসরার ধনভান্ডার উদ্দেশ্য। কারণ তাদের অধিকাংশ সম্পদ ছিল মুক্তা ও রৌপ্য। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকালে এই সুসংবাদ বাস্তবায়িত হয়েছে।

وَإِنِّى سَأَلْتُ رَبِّى لأُمَّتِى أَنْ لاَ يُهْلِكَهَا بِسَنَةٍ بِعَامَّةٍ ‘‘আমি আমার রবের কাছে উম্মতের জন্য এ আরজ করলাম, তিনি যেন আমার উম্মতকে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে ধ্বংস না করেন’’- লেখকের মূল কপিতে بعامة শব্দে ‘ب’সহ এসেছে। এটি সহীহ মুসলিম শরীফের বর্ণনা। কোনো কোনো বর্ণনায় ‘ب’ ছাড়াই উল্লেখ আছে। ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেনঃ সম্ভবতঃ ‘বা’ অক্ষরটি অতিরিক্ত। কেননা عامة শব্দটি سَنة শব্দের সিফাত। সানাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে এমন দুর্ভিক্ষ, যাতে ব্যাপক প্রাণ হানি ঘটে।

তাদের নিজেদেরকে ব্যতীত বাহিরের শত্রুকে তাদের উপর বিজয়ী করবেন নাঃ অর্থাৎ মুসলমানদের উপর কাফেরদেরকে শক্তিশালী করবেন না। তবে উম্মতে মুহাম্মাদীর কতক লোকই তাদের কতককে হত্যা করবে এবং তাদের কতক লোক কতক লোককে বন্দী করবে। ইতিহাসের কিতাবসমূহে এ বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।

فيستبيح بيضتهم তাদের সব কিছুকে নিজেদের জন্য হালাল মনে করবেঃ ইমাম জাওহারী (রঃ) বলেনঃ প্রত্যেক জিনিষের পূর্ণ অংশকে بيضة বলা হয়। কোন গোত্রের বাইযা বলতে সে জাতির সমগ্র অঞ্চল, আঙ্গিনা ও ময়দান উদ্দেশ্য। এর উপর ভিত্তি করে হাদীছের ব্যাখ্যায় বলা যায়, আল্লাহ তাআলা উম্মতে ইসলামীয়ার শত্রুদেরকে সমগ্র মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিবেন না। যাতে করে তারা মুসলমানদের সমস্ত অঞ্চল ও সমগ্র ভূমি দখল করে নিতে সক্ষম হয়। যদিও তাদের বিরুদ্ধে সারা দুনিয়ার সমস্ত লোক একত্রিত হয়। কেউ কেউ বলেছেনঃ بيضة দ্বারা মুসলিমদের অধিকাংশ লোক ও জামাআত উদ্দেশ্য। যদিও সংখ্যায় তারা কম হয়।

حَتَّى يَكُونَ بَعْضُهُمْ يُهْلِكُ بَعْضًا وَيَسْبِى بَعْضُهُمْ بَعْضًا ‘‘তবে তোমার উম্মতের লোকেরাই পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে একে অপরকে হত্যা করবে এবং একে অপরকে বন্দী করবে’’ঃ বাহ্যিক অর্থে এখানে حتَّى শেষ সীমা বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ তোমার উম্মতের অবস্থা এ পর্যন্ত গিয়ে গড়াবে যে, তাদের মধ্য হতে কতক লোক অপর কতক লোককে ধ্বংস করবে।

[1] - এই হাদীছের সনদ দুর্বল। কারণ ইকরিমা তাবেয়ীদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কারণে তাঁর পক্ষে ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা অকল্পনীয়।

[2] - আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে আলী বিন আবু তালহার বর্ণনায় দুর্বলতা রয়েছে। কেননা তিনি ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে হাদীছ শুনেন নি। আল্লাহই ভাল জানেন।

[3] - আল্লাহ তাআলার বাণীঃ ‘‘তারাই অর্থাৎ কাফেররাই মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সত্যপথ থেকেও অধিক দূরে’’। এখান থেকে এমন বুঝার সুযোগ নেই যে, মুমিনরাও নিকৃষ্ট এবং তারাও গোমরাহীর মধ্যে রয়েছে, তবে কাফেররা মুমিনদের তুলনায় অধিক নিকৃষ্ট এবং তারা মুমিনদের থেকে অধিক গোমরাহ। তবে এ কথা সত্য যে, কাফেররা অধিকতর নিকৃষ্ট এবং তারা অধিক গোমরাহ। কিন্তু ঈমানদারগণ তাদের ঈমান ও তাওহীদের বদৌলতে সুস্পষ্ট হেদায়াত ও কল্যাণের মধ্যে রয়েছেন। গ্রন্থকার এখানে জান্নাতবাসীদের শানে আল্লাহ তাআলার এই বাণী উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

أَصْحَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ مُسْتَقَرًّا وَأَحْسَنُ مَقِيلًا

‘‘সেদিন জান্নাতীদের বাসস্থান হবে অধিক উত্তম এবং বিশ্রামস্থল হবে সুন্দরতম’’। সুতরাং জাহান্নামবাসীদের জন্য অধিক উত্তম তো দূরের কথা কোন সাধারণ বাসস্থানও থাকবেনা এবং তাদের কোন বিশ্রামস্থলও থাকবেনা। তারা থাকবে পেরেশান, দুঃশ্চিন্তা এবং দুর্দশাগ্রস্ত। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে যে, একবার উমার (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তখন কুরাইশদের কিছু মহিলা তাঁর সাথে কথা বলছিল এবং তারা রাসূলের আওয়াজের উপর আওয়াজ উঁচু করছিল। উমার (রাঃ) যখন অনুমতি চাইলেন তখন মহিলারা দাঁড়িয়ে গেল এবং দ্রুত পর্দা করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমারকে অনুমতি দিলে তিনি প্রবেশ করলেন। রাসূল তখন হাসছিলেন। উমার বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি হাসছেন কেন? তিনি তখন বললেনঃ এই যে মহিলাগুলো আমার কাছে ছিল, তাদের কান্ড দেখে আমি আশ্চর্যবোধ করছি। তারা যখন তোমার আওয়াজ শুনেছে, কেবল তখন দ্রুত পর্দাগ্রহণ করেছে। উমার (রাঃ) তখন বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকেই বেশী ভয় করা উচিৎ। অতঃপর উমার মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেনঃ ওহে স্বীয় নফসের দুশমনেরা! তোমরা আমাকে ভয় কর। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভয় করোনা? মহিলারা বললঃ

«نعم أَنْتَ أَفَظُّ وَأَغْلَظُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم»

‘‘হ্যাঁ, আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অধিক অধিক রূঢ় ও কঠোর’’। (দেখুনঃ সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ উমার (রাঃ)এর ফযীলত। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর চরিত্র ও ব্যবহার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেনঃ

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ

‘‘আল্লাহ্‌র রহমতেই তুমি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছো। পক্ষান্তরে তুমি যদি রূঢ় ও কঠিন হৃদয় হতে, তাহলে তারা তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত’’। (সূরা আল ইমরানঃ ১৫৯) সুতরাং উপরোক্ত ক্ষেত্রে ইসমে তাফযীলের সীগাহ ব্যবহৃত হলেও ইসমে তাফযীলের সাধারণ অর্থ গ্রহণ করে এটা বলা যাবে না যে, মুমিনগণ ও কাফেররা উভয়ই গোমরাহ। তবে কাফেররা মুমিনদের তুলনায় অধিক গোমরাহ। তেমনি বুখারী শরীফের উপরোক্ত হাদীছের আলোকে এটা বলা যাবেনা যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উমার (রাঃ) উভয়ই কঠোর, তবে উমার ইবনুল খাত্তাব রাসূলের চেয়ে অধিক কঠোর।

মোট কথা এখানেও خير (অধিক ভাল), أحسن (অধিক উত্তম), شر (অধিক নিকৃষ্ট) শব্দগুলো ইসমে তাফযীল হিসাবে ব্যবহৃত হলেও اسم التفضيل এর সাধারণ অর্থ গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও দু’টি বস্ত্ত নির্দিষ্ট কোন গুণে শরীক হলে সেই দু’টি বস্ত্তর একটিকে অন্যটির তুলনায় ঐ গুণে বেশী পরিমাণে গুণান্বিত করার জন্য ইসমে তাফজীলের সীগাহ (শব্দ) ব্যবহৃত হয়। আল্লাহই ভাল জানেন। (অনুবাদক)

[4] - মরুভূমিতে বসবাসকারী গুই সাপের ন্যায় এক ধরণের জন্তু বিশেষ।

[5] - বুখারী, অধ্যায়ঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণীঃ তোমরা অবশ্যই পূর্ববতী লোকদের রীতি-নীতির অনুসরণ করবে। তবে বুখারীর বর্ণনায় حذو القذة بالقذة - এই শব্দসমূহ নেই। তার স্থলে شبرا بشبر وذراعا بذراع শব্দগুলো রয়েছে। অর্থাৎ এক হাতের বিঘত যেমন অন্য হাতের বিঘতের সমান হয় এবং এক হাতের বাহু অন্য হাতের বাহুর সমান হয়।

[6] - সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ এই উম্মতের কতক লোক কতকের হাতে ধ্বংস হওয়া।
মুসলিম উম্মাহর কিছু লোক মূর্তি পূজা করবে - ২

ইমাম বারকানী তাঁর সহীহ হাদীছ গ্রন্থে উপরোক্ত হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তবে উক্ত বর্ণনায় নিম্নোক্ত কথাগুলো অতিরিক্ত এসেছে,

«وَإِنَّمَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِى الأَئِمَّةَ الْمُضِلِّينَ وَإِذَا وُقع السَّيْفُ عليهم لَمْ يُرْفَعْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يْلحَقَ حَيُّ مِنْ أُمَّتِى بِالْمُشْرِكِينَ وَحَتَّى تَعْبُدَ فِئام مِنْ أُمَّتِى الأَوْثَانَ وَإِنَّهُ سَيَكُونُ فِى أُمَّتِى كَذَّابُونَ ثَلاَثُونَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِىٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لاَ نَبِىَّ بَعْدِى وَلاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى عَلَى الْحَقِّ مَنْصُوْرَةً لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلََهُمْ حَتَّى يَأْتِىَ أَمْرُ اللَّهِ تبارك وتعالى»

‘‘আমার উম্মতের উপর বিভ্রান্তির ইমামদের ব্যাপারে বেশী আশঙ্কা বোধ করছি এবং তাদের উপর একবার তলোয়ার চালানো হলে কিয়ামত পর্যন্ত সে তলোয়ার উঠানো হবেনা। আর ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবেনা যতক্ষণ না আমার একদল উম্মত মুশরিকদের সাথে মিলিত হবে এবং যতক্ষণ না আমার উম্মতের এক শ্রেণী লোক মূর্তিপূজা করবে। আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর আগমণ ঘটবে। প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে। অথচ আমিই সর্বশেষ নবী। আমার পর আর কোনো নবী নাই। কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটি সাহায্য প্রাপ্ত দল থাকবে, যারা তাদেরকে পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআলার ফয়সালা আসার পূর্ব পর্যন্ত তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।

ব্যাখ্যাঃ ইমাম বারকানী হলেন হাফেয কাবীর আবু বকর আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন গালিব আল খাওয়ারেযমী আল-শাফেঈ। ৩৩৬ হিজরী সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। হিজরী ৪২৫ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। খতীব বাগদাদী বলেনঃ তিনি ছিলেন খুব গ্রহণযোগ্য, নির্ভরশীল এবং পরহেজগার আলেম। আমাদের উস্তাদদের মধ্যে তাঁর চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য আলেম আর কাউকে দেখিনি। তিনি ফিকাহ শাস্ত্রে খুব অভিজ্ঞ এবং অনেক গ্রন্থ রচনাকারী। তিনি এমন একটি মুসনাদ গ্রন্থ রচনা করেছেন, যাতে বুখারী ও মুসলিমের হাদীছগুলো একত্রিত করার সাথে সাথে ছাওরী, শুবা এবং আরো একদল মুহাদ্দিছের হাদীছ জমা করেছেন।

‘‘আমার উম্মতের উপর পথভ্রষ্টকারী ইমামদের ব্যাপারে বেশী আশঙ্কা বোধ করছিঃ এখানে ইমাম বলতে শাসক, আলেম এবং আবেদগণ উদ্দেশ্য। তারা বিনা ইলমে মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে এবং তাদেরকে গোমরাহ করবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَإِنَّ كَثِيرًا لَيُضِلُّونَ بِأَهْوَائِهِمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِالْمُعْتَدِينَ

‘‘অনেক লোক স্বীয় ভ্রান্ত প্রবৃত্তি দ্বারা বিনা ইলমে মানুষকে বিপথগামী করতে থাকে। আপনার প্রতিপালক সীমা লংঘনকারীদের সম্পর্কে পূর্ণ অবগত’’। (সূরা আনআমঃ ১১৯) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ وَلَقَدْ ضَلَّ قَبْلَهُمْ أَكْثَرُ الْأَوَّلِينَ ‘‘তাদের পূর্বেও অগ্রবর্তীদের অধিকাংশ লোক বিপথগামী হয়েছিল’’। (সূরা সাফ্ফাতঃ ৭১) কুরআনে এই ধরণের আয়াত আরও অনেক রয়েছে।

যিয়াদ বিন হুদাইর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ

«هَلْ تَعْرِفُ مَا يَهْدِمُ الإِسْلاَمَ؟ قَالَ قُلْتُ لاَ قَالَ يَهْدِمُهُ زَلَّةُ الْعَالِمِ وَجِدَالُ الْمُنَافِقِ بِالْكِتَابِ وَحُكْمُ الأَئِمَّةِ الْمُضِلِّينَ»

‘‘তুমি কি জান কোন্ জিনিষ ইসলামকে ধ্বংস করে দেয়? আমি বললামঃ না। অতঃপর তিনি বললেনঃ আলেমের পদস্খলন, কুরআন নিয়ে মুনাফিকের তর্ক-বিতর্ক এবং গোমরাহকারী শাসকদের শাসন’’।[7]

তাদের উপর একবার তলোয়ার চালানো হলে কিয়ামত পর্যন্ত সেই তলোয়ার উঠানো হবেনাঃ এই উম্মতের মধ্যে উহা চালানো হয়েছে এবং এখনও চালানো হচ্ছে। আমরা আল্লাহর কাছে ইহ-পরকালের সকল ফিতনা থেকে মুক্তি চাই।

মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের যুদ্ধের ন্যায়ই এ যুদ্ধগুলোর মধ্যে কিছু যুদ্ধ ছিল সঠিক। মুসলিমগণ এ সব যুদ্ধে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করছেন, যাতে তারা শির্ক থেকে বিরত থাকে। আখেরী যামানায় আল্লাহ তাআলা ঐ সমস্ত লোকের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যারা তাঁর তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছে। কিন্তু এই উম্মতের মুসলিম নামধারী মুশরিকরা তাওহীদের দিকে আহবানকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সূচনা করেছে। এতে আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের উপর তাওহীদপন্থীদেরকে বিজয় দান করেছেন।

وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يْلحَقَ حي مِنْ أُمَّتِى بِالْمُشْرِكِينَ ‘‘আর ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবেনা যতক্ষণ না আমার উম্মতের একদল লোক মুশরিকদের সাথে মিলিত হবে’’- এখানে حي শব্দটি এক বচন। বহুবচনে أحياء। এর অর্থ হচ্ছে গোত্রসমূহ। আবু দাউদের এক বর্ণনায় এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

«وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِى بِالْمُشْرِكِينَ»

‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমার উম্মতের বেশ কিছু গোত্র মুশরিকদের সাথে মিলিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। এ রকম বহু গোত্র অতীতে পাওয়া গিয়েছে।

وَحَتَّى تَعْبُدَ فِئام مِنْ أُمَّتِى الأَوْثَانَ এবং যতক্ষণ না আমার উম্মতের একটি শ্রেণী মূর্তি পূজা করবেঃ এখানে الفئام শব্দটির ‘ফা’ বর্ণের পরে হামজাহ দিয়ে পড়া হয়েছে। এ দ্বারা মানুষের অনেক জামাআত উদ্দেশ্য। আবুস সাআদাত বলেনঃ এখান থেকেই লেখক অধ্যায় রচনা করার দলীল গ্রহণ করেছেন।

এই উম্মতের মধ্যে মূর্তির বা কবর ও অলী-আওলীয়ার এবাদতের শির্ক এমনভাবে শিকড় গেড়ে বসেছে যে, আখেরী যামানায় এমন কোনো লোকের সন্ধান পাওয়া যাবেনা, যে এগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রঃ)কে তাওফীক দিলেন। তিনি শির্কের প্রতিবাদ করলেন, তা থেকে মানুষকে নিষেধ করলেন এবং তাদেরকে শির্ক বর্জনের আহবান জানালেন। একই সাথে তিনি এককভাবে আল্লাহর এবাদতের আহবান জানালেন, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর রুবুবীয়াত, উলুহীয়াত এবং তাঁর আসমা ওয়াস সিফাতেও কোন অংশীদার নেই। এর ফলে সেই যামানার রাজা-বাদশাহ ও তাদের অনুসারীগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করল। আল্লাহ তাআলা দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে তাঁকে বিজয়ী করলেন এবং তাঁর বিরোধীদের বিরুদ্ধে তাঁকে সাহায্য করলেন। পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তসমূহে তার দাওয়াত পৌঁছে গিয়েছে। লোকদের মধ্যে অনেকেই এই দাওয়াতকে চিনতে পেরে তা কবুল করে নিয়েছে এবং কতক লোক এটিকে বর্জন করেছে ও তার প্রতিবাদ করেছে। হেজাজ, নজদ এবং ওমানসহ আরও অনেক অঞ্চলের লোকেরা এই বরকতময় দাওয়াতের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে। এ বিরাট নেয়ামত পেয়ে আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তাওফীক দিন! আমীন

আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে। প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবেঃ ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেনঃ হুযায়ফাঃ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছে নির্দিষ্টভাবে তাদের সংখ্যা বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে ২৭ জন মিথ্যুক দাজ্জাল আগমণ করবে। তাদের মধ্যে চারজন হবে মহিলা। আবু নুআইম এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীছটি দুর্বল। পূর্বে উল্লেখিত ছাওবানের হাদীছ এ হাদীছের চেয়ে অধিক বিশুদ্ধ।

কাযী ইয়ায (রঃ) বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর যামানা থেকে শুরু করে বর্তমানকাল পর্যন্ত নবুওয়াতের দাবীদারদের মধ্যে যারা প্রসিদ্ধি অর্জন করেছে এবং একদল মানুষ যাদের গোমরাহীর অনুসরণ করেছে, তাদের সংখ্যা গণনা করা হয়েছে। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা হুবহু পাওয়া গেছে। যারা ইতিহাসের কিতাবগুলো পাঠ করবে, সে এর সত্যতা জানতে পারবে। এদের মধ্যে সর্বশেষ হবে সর্বাধিক বড় মিথ্যুক দাজ্জাল।

وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لاَ نَبِىَّ بَعْدِى ‘‘আমিই সর্বশেষ নবী, আমার পর আর কোনো নবী নেই’’ঃ ইমাম হাসান বসরী (রঃ) বলেনঃ খাতাম ঐ জিনিষকে বলা হয়, যার মাধ্যমে মোহর লাগানো হয়। অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেনঃ সর্বশেষ নবী। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا

‘‘মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহ্‌র রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত’’। (সূরা আহযাবঃ ৪০)

তবে এ কথা সঠিক যে, আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) আখেরী যামানায় পৃথিবীতে পুনরায় আগমণ করবেন। তিনি শরীয়তে মুহাম্মাদী অনুযায়ী ফয়সালা করবেন এবং মুসলিমদের কিবলার দিকে মুখ করে নামায আদায় করবেন। তিনি হবেন উম্মতে মুহাম্মাদীর সাধারণ একজন মানুষের মতই। সেই সঙ্গে তিনি হবেন উম্মতে মুহাম্মাদীর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।

وَلاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى عَلَى الْحَقِّ مَنْصُوْرَةً لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلََهُمْ ‘‘কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের মধ্যে একটি সাহায্য প্রাপ্ত দল থাকবে। যারা তাদেরকে পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআলার ফয়সালা আসার পূর্ব পর্যন্ত তারা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা’’ঃ ইমাম নববী (রঃ) বলেনঃ মুমিনদের বিভিন্ন জামাআত এ সাহায্যপ্রাপ্ত গোষ্ঠির অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। বীর সাহসী, যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী, ফকীহ, উম্মতের মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, সৎ কাজের আদেশকারী ও অসৎ কাজের নিষেধকারী, আবেদ ইত্যাদি আরো অনেক শ্রেণীর লোক এ নাজী ফির্কার অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। এটি আবশ্যক নয় যে, তারা একই দেশের বাসিন্দা হবে। তারা কোনো সময় পৃথিবীর এক স্থানে একত্রিত অবস্থায় থাকতে পারে। আবার কখনো পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়েও থাকতে পারে। আবার কখনো একটি দেশের এক স্থানে একত্রিত অবস্থায় থাকতে পারে আবার কখনো একই দেশের এক অংশে থাকতে পারে এবং সে দেশের অন্য অংশে তাদের অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে। এও হতে পারে যে, এক এক করে পৃথিবীর সকল অংশ এ নাজাতপ্রাপ্ত দল থেকে খালি হয়ে যাবে। এভাবে খালি হতে হতে পৃথিবীর মাত্র একটি এলাকাতেই তাদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যাবে। পরিশেষে যখন পৃথিবী থেকে এ দল একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যাবে, তখন কিয়ামত সংঘটিত হবে। ইমাম নববীর এ বক্তব্য ইবনে হাজার আসকালানী সংক্ষিপ্ত করে এবং তার নিজের পক্ষ হতে কিছু বাড়িয়ে ফতহুল বারীর ১৩ নং খন্ডের ২৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন।

সম্মানিত শাইখ বলেনঃ এ হাদীছে বিরাট একটি নিদর্শন রয়েছে। তা হলো, সেই নাজাতপ্রাপ্ত লোকদের সংখ্যা কম হওয়ার পরও যারা তাদেরকে বর্জন করবে এবং তাদের বিরোধীতা করবে, তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। এখানে আরও সুসংবাদ রয়েছে যে, হক কখনো একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়না।

حَتَّى يَأْتِىَ أَمْرُ اللَّهِ تبارك وتعالى ‘‘যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাআলার ফয়সালা আগমণ করে’’ঃ অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। এ বাক্যের বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে, সে সময় নরম ও পবিত্র একটি বাতাসের মাধ্যমে পৃথিবীতে বসবাসকারী অবশিষ্ট সমস্ত মুমিনের রূহ কবজ করে নেওয়া হবে এবং বড় বড় আলামতগুলো প্রকাশিত হবে। তারপর শুধু খারাপ লোকগুলোই বাকী থাকবে।

تبارك وتعالى এর ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) বলেনঃ বরকত দুই প্রকার। (১) এমন বরকত, যা আল্লাহ তাআলা হতে প্রকাশিত হয়। البركة থেকে بارك (তিনি বরকত দান করেছেন) فعل বা ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। এ ফেলটি কখনো নিজে নিজেই বাক্যে ব্যবহৃত হয়। কখনো على হরফে জার আবার কখনো في হরফে জারের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়। এ থেকে اسم مفعول এর সীগাহ হয় مباركٌ। অর্থাৎ যার মধ্যে বরকত রাখা হয়। সুতরাং আল্লাহ তাআলা যাকে বরকতময় করেছেন, কেবল তাই বরকতময় হয়েছে।

(২) আল্লাহ তাআলার দিকে যেমন রহমত ও ইজ্জতের সম্বন্ধ করা হয়, তেমনি বরকতের সম্বন্ধও তাঁর দিকেই করা হয়। বরকত শব্দটি যখন এ অর্থে ব্যবহৃত হয়, তখন এ থেকে فعل (ক্রিয়া) হয় تَبَارَكَ । তাই আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য تبارك ক্রিয়াটি ব্যবহৃত হয়না এবং অন্য কারো জন্য এটি ব্যবহার করা সঠিকও নয়। সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা متبارك তথা বরকতের অধিকারী ও বরকত দানকারী। তাঁর রাসূল এবং অনুগত বান্দা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম مبارك তথা বরকতময়। সুতরাং تبارك এর সিফাতটি তথা বরকত দান করা কেবল আল্লাহর সাথে খাস। আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের পবিত্র সত্তার জন্য এই সিফাতটি সাব্যস্ত করেছেন। তিনি সূরা আরাফের ৫৪ নং আয়াতে বলেনঃ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ ‘‘আললাহ বড়ই বরকতের অধিকারী। তিনি সমগ্র সৃষ্টিজগতের মালিক ও প্রতিপালক’’। আল্লাহ তাআলা সূরা মুলকের ১ নং আয়াতে বলেনঃ

تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

‘‘অতি মহান তিনি, যার হাতে রয়েছে সবকিছুর রাজত্ব, তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান’’।[8]

[7] - সুনানে দারামী, অধ্যায়ঃ রায় তথা মানুষের মত গ্রহণ করা অপছন্দনীয়।

[8] - মূলতঃ আল্লাহ তাআলার জন্য এখানে تَبَارَكَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর পূর্ণ অর্থ এক শব্দে তো দূরের কথা এক বাক্যে বর্ণনা করাও কঠিন। এর শব্দমূল রয়েছে ب - ر - ك অক্ষর। এ থেকে بَرَكَة ও بُرُوك দু'টি ধাতু নিষ্পন্ন হয়। بَرَكَة এর মধ্যে রয়েছে বৃদ্ধি, সমৃদ্ধি, বিপুলতা, প্রাচুর্যের অর্থ। আর بُرُوك এর মধ্যে স্থায়িত্ব, দৃঢ়তা, অটলতা ও অনিবার্যতার অর্থ রয়েছে। তারপর এ ধাতু থেকে যখন تَبَارَكَ ক্রিয়াপদ তৈরী করা হয় তখন تفاعل এর বৈশিষ্ট্য হিসেবে এর মধ্যে বৃদ্ধি পাওয়া ও পূর্ণতা প্রকাশের অর্থও শামিল হয়ে যায়। এ অবস্থায় এর অর্থ দাঁড়ায় সর্বোচ্চ, বর্ধমান প্রাচুর্য ও চূড়ান্ত পর্যায়ের স্থায়িত্ব। এ শব্দটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে কোন জিনিষের প্রাচুর্য বা তার দৃঢ়তা ও স্থায়িত্বের অবস্থা বর্ণনা করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন কখনো এর অর্থ হয় উচ্চতায় অনেক বেশী এগিয়ে যাওয়া। বলা হয়, تباركت النخلة অর্থাৎ অমুক খেজুর গাছটি অনেক উঁচু হয়ে গেছে। আসমায়ী বলেন, এক বন্ধু একটি উঁচু টিলায় উঠে নিজের সাথীদেরকে বলতে থাকে تَبَارَكْتُ عَلَيْكُمْ ‘‘আমি তোমাদের চেয়ে উঁচু হয়ে গেছি’’। কখনো মর্যাদায় ও শ্রেষ্ঠত্বে বেশী অগ্রণী হওয়ার অর্থে শব্দটি ব্যবহার হয়। কখনো একে ব্যবহার করা হয় দয়া ও সমৃদ্ধি পৌঁছানো এবং শুভ ও কল্যাণের ক্ষেত্রে অগ্রণী হওয়ার অর্থে। কখনো এ থেকে পবিত্রতার পূর্ণতা ও চূড়ান্ত বিশুদ্ধতার অর্থ গ্রহণ করা হয়। পূর্বাপর বক্তব্যই বলে দেয় কোথায় একে কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং উপরোক্ত আয়াতে ব্যবহৃত تبارك শব্দের যেসব ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,

এক) মহা অনুগ্রহকারী ও সর্বজ্ঞ। কারণঃ তিনি নিজের বান্দাকে ফুরকানের মহান নিয়ামত দান করে সারা দুনিয়াকে জানিয়ে দেবার ব্যবস্থা করেছেন।

দুই) বড়ই মর্যাদাশালী ও সম্মানীয়। কারণ, পৃথিবী ও আকাশে তাঁরই রাজত্ব চলছে।

তিন) বড়ই পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। কারণ, তাঁর সত্তা সকল প্রকার শির্কের গন্ধমুক্ত। তাঁর সমজাতীয় কেউ নেই। ফলে আল্লাহর সত্তার সার্বভৌমত্বে তাঁর কোন নযির ও সমকক্ষ নেই। তাঁর কোন ধ্বংস ও পরিবর্তন নেই। কাজেই তাঁর স্থলাভিষিক্তের জন্য কোন পুত্রের প্রয়োজন নেই।

চার) বড়ই উন্নত ও শ্রেষ্ঠ। কারণ, সমগ্র রাজত্ব তাঁরই কতৃর্ত্বাধীন। তাঁর ক্ষমতায় অংশীদার হবার যোগ্যতা ও মর্যাদা কারো নেই।

পাঁচ) শক্তির পূর্ণতার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ। কারণ, তিনি বিশ্ব-জাহানের প্রত্যেকটি জিনিষ সৃষ্টিকারী ও তার ক্ষমতা নির্ধারণকারী। {(বাগাবী, আলুসী এবং ইমাম ইবনুল কায়্যিম রচিত জালাউল আহকাম, (১/৩০৬)}
মুসলিম উম্মাহর কিছু লোক মূর্তি পূজা করবে - ৩

হে পাঠক! আপনি কি লক্ষ্য করেন না! কুরআনে কিভাবে আল্লাহ তাআলার জন্য নির্দিষ্ট করে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে? তিনি ব্যতীত অন্য কারো জন্য কুরআনে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। تبارك শব্দটি প্রশস্ততা এবং বৃদ্ধির অর্থ প্রদান করে। এটি تعالى (উঁচু হলেন), تعاظم (মহান হলেন) এবং অনুরূপ শব্দের মতই। সুতরাং تبارك শব্দটি تعالى এর মতই। তাআলা শব্দটি যেমন আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির সর্বোচ্চ উপরে হওয়ার অর্থ বহন করে, তেমনি تبارك শব্দটি আল্লাহ তাআলার বরকতের পূর্ণতা, বড়ত্ব এবং তাঁর বরকতের প্রশস্ততার অর্থ বহন করে। কোনো কোনো সালাফ বরকতের এ অর্থ মুতাবেক تبارك -এর অর্থ করেছেন تعاظم শব্দ দ্বারা। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ تبارك অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা সকল বরকত আনয়ন করেছেন। এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

১) সূরা নিসার ৫১নং আয়াতের তাফসীর।

২) সূরা মায়েদার ৬০ নং আয়াতের তাফসীর।

৩) সূরা কাহাফের ২১ নং আয়াতের তাফসীর।

৪) এ অধ্যায়ের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এখানে জিবত এবং তাগুতের প্রতি ঈমানের অর্থ কী? এটা কি শুধু অন্তরের বিশ্বাসের নাম? নাকি জিবত ও তাগুতের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা এবং বাতিল বলে জানা সত্ত্বেও এর পূজারীদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করা বুঝায়? ইত্যাদি বিষয় এই অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।

৫) ইহুদীদের কথা হচ্ছে, কাফেরদের কুফরী সম্পর্কে অবগত হওয়া সত্ত্বেও তারা মুমিনদের চেয়ে অধিক সত্য পথের অধিকারী।

৬) এ অধ্যায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই উম্মতের মধ্যে অবশ্যই মূর্তি পূজারীদের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে। আবু সাঈদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছে এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।[9]

৭) এ রকম সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুস্পষ্ট ঘোষণা। অর্থাৎ এই উম্মতের অনেক লোকের মধ্যে মূর্তিপূজা পাওয়া যাবে।

৮) সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এমন লোকের আবির্ভাব হবে, যারা নবুওয়াতের দাবী করবে। যেমন দাবী করেছিল ‘‘মুখতার ছাকাফী’’। অথচ সে আল্লাহর তাওহীদ ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতকে স্বীকার করত। সে নিজেকে উম্মতে মুহাম্মাদীর অন্তর্ভূক্ত বলেও ঘোষণা করত। সে আরও ঘোষণা দিত যে, রাসূল সত্য, কুরআন সত্য এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী হিসেবে স্বীকৃত। এগুলোর স্বীকৃতি প্রদান সত্ত্বেও তার মধ্যে উপরোক্ত স্বীকৃতির সুস্পষ্ট বিপরীত ও পরিপন্থী কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ভন্ড মুর্খ সাহাবায়ে কেরামের শেষ যুগে আবির্ভূত হয়েছিল এবং অনেক লোক তার অনুসারীও হয়েছিল।

৯) সু-খবর হচ্ছে, অতীতের মত হক সম্পূর্ণরূপে কখনো বিলুপ্ত হবেনা; বরং একটি দল হকের উপর চিরদিনই প্রতিষ্ঠিত থাকবে।

১০) এর সবচেয়ে বড় নিদর্শন হচ্ছে, সংখ্যায় কম হলেও যারা তাদেরকে বর্জন করবে এবং তাদের বিরোধীতা করবে, তারা এ হকপন্থী জামাআতের কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা।

১১) কিয়ামত পর্যন্ত হকপন্থী একটি জামাআত বিদ্যমান থাকবে।

১২) এ অধ্যায়ে অনেকগুলো বড় নিদর্শনের উল্লেখ রয়েছে। যথাঃ ক) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন যে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিশ্বের পূর্ব ও পশ্চিমের যমীনকে একত্রিত করে দেখিয়েছেন। এ সংবাদ দ্বারা তিনি যে অর্থ করেছেন, তার অর্থ সম্পর্কেও সংবাদ দিয়েছেন। ঠিক তাই সংঘটিত হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণের ব্যাপারে ঘটেনি। খ) তাঁকে দু’টি ধনভান্ডার প্রদান করা হয়েছে, -এ সংবাদও তিনি দিয়েছেন। গ) তাঁর উম্মতের ব্যাপারে দুটি দু’আ কবুল হওয়ার সংবাদ দিয়েছেন এবং তৃতীয় দু’আ কবুল না হওয়ার খবরও জানিয়েছেন। ঘ) তিনি এ খবরও জানিয়েছেন যে, এই উম্মতের উপরে একবার তলোয়ার উঠলে তা আর খাপে প্রবেশ করবেনা। অর্থাৎ সংঘাত শুরু হলে তা আর থামবেনা। ঙ) তিনি আরো জানিয়েছেন যে, উম্মতের লোকেরা একে অপরকে ধ্বংস করবে ও একে অপরকে বন্দী করবে। উম্মতের জন্য তিনি গোমরাহকারী শাসকদের ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। চ) এই উম্মতের মধ্য থেকে মিথ্যা ও ভন্ড নবী আবির্ভাবের কথা তিনি জানিয়েছেন। ছ) সাহায্যপ্রাপ্ত একটি হক পন্থীদল সবসময়ই বিদ্যমান থাকার সংবাদ জানিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সংবাদ অনুযায়ী উল্লেখিত সব বিষয়ই হুবহু সংঘটিত হয়েছে। অথচ উপরোক্ত বিষয়ের কোনটিই যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।

১৩) একমাত্র পথভ্রষ্ট নেতাদের ব্যাপারেই তিনি শঙ্কিত ছিলেন।[10]

১৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য মূর্তি পূজার অর্থও বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ কাঠের বা পাথরের তৈরি মূর্তির পূজা করা, অলী-আওলীয়াদের মাযার ও কবর পূজা, পাথর পূজা এবং গাছ ইত্যাদির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

[9] - বুখারী ও মুসলিম শরীফে মারফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,

«لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَضْطَرِبَ أَلَيَاتُ نِسَاءِ دَوْسٍ حول ذِى الْخَلَصَةِ وَذُو الْخَلَصَةَ طَاغِيَةُ دَوْسٍ الَّتِى كَانُوا يَعْبُدُونَ فِى الْجَاهِلِيَّةِ»

‘‘দাওস গোত্রের মহিলাদের নিতম্ব যুল-খালাসার চতুর্দিকে নড়াচড়া না করা পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। আর যুল খালাসা হচ্ছে দাওস গোত্রের মূর্তি। আইয়্যামে জাহেলিয়াতে তারা এ মূর্তিটির এবাদত করত।

হাদীছের উদ্দেশ্য হচ্ছে আরব গোত্রসমূহের অনেক লোক পুনরায় শির্কে লিপ্ত হবে। তারা আবার মূর্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এবং মূর্তি পূজার দিকে ফেরত যাবে। এমন কি দাওস গোত্রের মহিলারা যখন যুল খালাসা নামক মূর্তির চতুর্দিকে তাওয়াফ শুরু করবে, তখন ভয় ও শ্রদ্ধা-ভক্তির কারণে তাদের পাছা (শরীরের নিম্নাংশ) কাপতে থাকবে।

জাহেলী যামানায় দাওস গোত্র যেই মূর্তিটির এবাদত করত, তার নাম যুল খালাসা। সহীহ মুসলিমে আয়শা (রাঃ) হতে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, ততক্ষণ পর্যন্ত দিবা-রাত্রি শেষ হবেনা, যতক্ষণ না লাত এবং উয্যার এবাদত করা হবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর এই ভবিষ্যৎ বাণী হুবহু বাস্তবায়িত হয়েছে। আরব উপদ্বীপে সাউদ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বে যুলখালাসার এবাদত করা হয়েছে। দাওস গোত্রের মহিলারা সেই মূর্তির চার পাশে তাওয়াফও করেছে বলে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত।

[10] - উম্মতের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনি আরো অনেক জিনিষের ভয় করেছেন। যেমন তিনি শির্কে আসগারের ভয় করেছেন, মুনাফেকদের ভয় করেছেন এবং কুরআন নিয়ে ঝগড়া করারও ভয় করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমি আশঙ্কা করছি যে, তোমাদের জন্য দুনিয়ার সম্পদ প্রশস্ত করে দেয়া হবে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য তা প্রশস্ত করে দেয়া হয়েছিল। ফলে তোমরা দুনিয়ার সম্পদ অর্জনে প্রতিযোগিতা শুরু করবে, যেমন পূর্ববর্তীরা করেছিল এবং তাদেরকে যেমন দুনিয়া লাভের প্রতিযোগিতা ধ্বংস করে দিয়েছিল, তেমনি তোমাদেরকেও ধ্বংস করবে। অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুরূপ কথা বলেছেন।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে