১। অনেকে দুআ করে, কিন্তু তাদের দুআ কবুল হয় না, চায় অথচ পায় না। এর কতকগুলি কারণ আছে, যেমন; শীঘ্রতা করা। দুআ করার পরই যে মঞ্জুর হবে তা জরুরী নয়। যেমন আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “তোমাদের কারো দুআ কবুল করা হয়, যতক্ষণ না সে তাড়াতাড়ি করে। বলে, ‘দুআ করলাম অথচ কবুল হল না।” (বুখারী ১১/১৪০, মুসলিম ৪/ ২০৯৫)।

২। সৃষ্টিকর্তা সর্বজ্ঞ আল্লাহ তাআলার হিকমত।

বান্দা দুআতে যা চায়, তা তার জন্য মঙ্গলদায়ক কি না, তা সে সঠিক জানে না। কিন্তু আল্লাহ পাক সব কিছু জানেন, বান্দা যা চাচ্ছে, তা তার জন্য কল্যাণকর বটে কি না, তা বর্তমানেই তার জন্য ফলপ্রসু, নাকি কিছুদিন বা দীর্ঘদিন পর? অথবা যা চাচ্ছে, তা তার জন্য যথােপযুক্ত নয়। বরং অন্য কিছু তার জন্য অধিক লাভদায়ক। অথবা কল্যাণ আসার চেয়ে আসন্ন বিপদ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া তার জন্য ভালো। তাই আল্লাহ বান্দার জন্য যা করেন, তা তার মঙ্গলের জন্যই করেন। বান্দার আসল মঙ্গলের প্রতি খেয়াল রেখে কখনো দুআ কবুল হয়, কখনো কবুল হয় না। তা বলে তার দুআ করাটা বৃথানষ্ট হয়ে যায় না। প্রিয় নবী সু বলেন, “কোন মুসলিম যখন আল্লাহর নিকট এমন দুআ করে, যাতে পাপ ও তিবন্ধন ছিন্নতা নেই, তখন আল্লাহ তাকে তিনটের একটা দান করে। থাকেন; সত্বর তার দুআ মঞ্জুর করা হয় অথবা পরকালের জন্য তা জমা রাখা হয়। অথবা অনুরূপ কোন অকল্যাণকে তার জীবন হতে দুর করা হয়।” লোকেরা বলল, তাহলে আমরা অধিক অধিক দুআ করব।' তিনি বললেন, “আল্লাহও অধিক দানশীল।” (আহমদ ৩/১৮, হাকেম ১৪৯৩ যদুল মাসীর ১/১৯০)

৩। কোন পাপ বা জ্ঞাতিবন্ধন ছিন্ন করার দুআ করলে তা কবুল হয় না। পাপের দুআ যেমন, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়ে উন্নতির জন্য দুআ, চোরের চুরি করতে ধরা না পড়ার দুআ ইত্যাদি।

৪। হারাম পানাহার ও পরিধান করা।

৫৷ দুআয় দৃঢ়চিত্ত না হওয়া এবং আল্লাহর ইচ্ছায় ‘যদি যােগ করা। যেহেতু আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু নেই। যেমন দুআর আদবে আলোচিত হয়েছে।

৬। সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজে বাধা দান ত্যাগ করা। মানুষ নিজে ভালো হলেই যথেষ্ট নয়। অপরকে ভালো করার চেষ্টা করাও তার সর্বাঙ্গীন ভালো হওয়ার পরিপূরক। তাই সর্বাঙ্গসুন্দর ভালো লোক হতে চাইলে সামর্থ্যানুযায়ী সৎকাজের আদেশ দিতে হবে এবং সম্মুখে বা জানতে কোন পাপকাজ ঘটলে, তাতে সাধ্যানুক্রমে (হাত দ্বারা, না পারলে মুখ দ্বারা) বাধা দিতে হবে। তাও না পারলে, অন্তর দ্বারা ঘৃণা করতে হবে। নচেৎ শাস্তিতে সেও তাদের দলভুক্ত হবে, আর তার দুআও মঞ্জুর হবে না। (বুখারী ১১/১৩৯, ৪/২০৬৩)

৭। কিছু পাপ বা নির্দিষ্ট অবাধ্যাচরণে লিপ্ত থাকা। যার অবাধ্যাচরণ করা হয় ও যার কথার অন্যথাচরণ করা হয় তার নিকট প্রার্থনা করে কিছু পাওয়ার আশা সব সময় করা যায় না। এ ব্যাপারে রসূল (ﷺ) এর একটি ইঙ্গিত, তিনি বলেন, “তিন ব্যক্তি দুআ করে অথচ তাদের দুআ মঞ্জুর করা হয় না; (১) যে ব্যক্তির বিবাহ-বন্ধনে কোন দুশ্চরিত্রা স্ত্রী থাকে অথচ তাকে তালাক দেয় না, (২) এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট মালের অধিকারী থাকে অথচ তার উপর সাক্ষী রাখে না, (৩) যে ব্যক্তি নির্বোধকে তার সম্পদ দান করে অথচ আল্লাহ পাক বলেন, “আর তোমাদের সম্পদ নির্বোধদের হাতে অর্পণ করো না---” (কুঃ ৪/৫; হাকেম ২/৩০২)

৮৷ ঔদাস্য, কুপ্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশীর বশবর্তী থাকা এবং মিনতি, ভক্তি, আশা ও ভীতির অভাব থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আল্লাহ অবশ্যই কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরাই পরিবর্তন না করে।” (কুঃ ১৩/১১)

আর রসুল (ﷺ) বলেন, যা পুর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, জেনে রাখ যে, আল্লাহ উদাসীন ও অমনোযােগী হৃদয় থেকে দুআ মঞ্জুর করেন না।

দুআ কবুল হওয়ার কারণসমূহ

পূর্বের আলোচনা হতে কি কি কারণে দুআ মঞ্জুর হয়, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। যেমন হালাল খাওয়া-পরা, দুআর ফললাভের জন্য তাড়াতাড়ি না করা, পাপ ও জ্ঞাতিবন্ধন ছিন্নের দুআ না করা এবং গোনাহ থেকে দূরে থেকে বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহরই নিকট দুআ করা ইত্যাদি। (আয যিকরু আদ্দুয়া দ্রষ্টব্য)।

দুআ কবুলের এক শর্ত হল বিশুদ্ধ ঈমান। তাই কাফের বা মুশরিকের দুআ বা বদুআ কবুল নয়। অবশ্য কাফের যদি মুসলিমের হক্কে দুআ করে তবে তাতে ‘আমীন’ বলা বৈধ। কারণ মুসলিমের হক্কে কাফেরের দুআও কবুল হয়ে থাকে। (সিঃ সহীহাহ ৬/৪৯৩)।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে