‘যিকর’এর অর্থ স্মরণ। মু’মিন সর্বদা আল্লাহর রহমত ছায়ায় প্রতিপালিত, তার জীবন আল্লাহর দয়াবারিতে সদা সিক্ত। তার জীবনের সকল কিছুই আল্লাহর দান। প্রতি পদে তাকে আল্লাহরই আনুগত্য করতে হয়। আল্লাহই তার স্রষ্টা, মালিক, বিধানকর্তা এবং একমাত্র উপাস্য। তাই তার নিকটে আল্লাহ সদা স্মরণীয়। অন্তরে, মুখে ও কর্মে তাঁর যিকর করা মুসলিমের অপরিহার্য কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, (وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ) অর্থাৎ, আল্লাহর যিকর (স্মরণ)ই সবচেয়ে বড়।” (সূরা আনকাবুত ৪৫ আয়াত) তিনি আরো বলেন, (فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ) অর্থাৎ, অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং কৃতঘ্ন হয়ো না।' (সূরা বাক্বারাহ ১৫২)।
তিনি অন্যত্র বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিকরূপে স্মরণ কর। (সূরা আহযাব ৪১)।
তিনি আরো বলেন, 'আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারিণী নারী এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহা প্রতিদান রেখেছেন।” (সূরা আহযাব ৩৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন, “হে মুমিনগণ তোমাদের ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে উদাসীন না করে, যারা উদাসীন হবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।” (সূরা মুনাফিকূন ৯)
তিনি আরো বলেন, “সেই সমস্ত গৃহে -- যে সমস্ত গৃহকে আল্লাহ নির্মাণ ও সম্মান করতে এবং তাতে তার নাম স্মরণ করতে আদেশ দিয়েছেন সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘােষণা করে সে সব লোক, যাদেরকে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং নামায পড়া ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে। না। তারা ভয় করে সেদিনকে, যেদিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টি ভীতি-বিহ্বল হয়ে পড়বে।” (সূরা নুর ৩৬-৩৭)
“তুমি তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর এবং উদাসীনদের দলভুক্ত হয়ো না।” (সুরা আরাফ ২০৫)
তিনি অন্যত্র বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন কোন দলের সম্মুখীন হবে, তখন অবিচলিত থাক এবং আল্লাহকে অধিক অধিক স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (সূরা আনফাল ৪৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন, “অতঃপর যখন তোমরা হজ্জ সম্পন্ন করে নেবে, তখন আল্লাহকে এমনভাবে স্মরণ করবে যেমন তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষকে স্মরণ করতে অথবা তদপেক্ষা গভীরভাবে।” (সূরা বাক্বারাহ ২০০ আয়াত)
তিনি বলেন, “অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান কর ও আল্লাহকে অধিকরূপে স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা জুমুআহ ১০ আয়াত)
তিনি আরো বলেন, “সে (ইউনুস) যদি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘােষণা না করত, তাহলে সে পুনরুত্থান-দিবস পর্যন্ত সেথায় (মৎসগর্ভে) অবস্থান করত।” (সুরা স্বা-ফাত ১৪৩-১৪৪)।
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “কোন সম্প্রদায় যখন আল্লাহর যিকর করতে বসে তখন ফিরিশতামন্ডলী তাদেরকে বেষ্টিত করেন, আল্লাহর রহমত তাদেরকে ছেয়ে নেয়, তাদের উপর শান্তি বর্ষণ হয় এবং আল্লাহ তার নিকটবর্তী ফিরিশতাবর্গের নিকট তাদের কথা আলোচনা করেন।” (মুসলিম ৪/২০৭৪)।
“আল্লাহর ভ্রমণরত অতিরিক্ত ফিরিশতাদল আছেন, যারা যিকরের মজলিস অনুসন্ধান করে থাকেন।” (বুখারী ৭/১৬৮ ও মুসলিম ৪/২০৬৯)।
“যে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং যে করে না, উভয়ের উপমা জীবিত ও মৃতের ন্যায়।” (বুখারী৭/ ১৬৮; মুসলিম ১/৫৩৯)
“আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের উত্তম কাজের সন্ধান দেব না? যা তোমাদের প্রভুর নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের মর্যাদায় সব চেয়ে উচ্চ, সােনা-চাদি দান করার চেয়ে উত্তম এবং শত্রুর সম্মুখীন হয়ে গর্দান কাটা ও কাটানোর চেয়ে শ্রেয়।” সকলে বললেন, নিশ্চয় বলে দিন। তিনি বললেন, “আল্লাহ তাআলার যিকর।” (তিরমিযী ৫/৪৫৮, ইবনে মাযাহ ২/১২৪৫, সহীহুল জামে’ ২৬২৯নং)।
“আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার বান্দার ধারণার কাছে থাকি। যখন সে আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সঙ্গে থাকি। যদি সে আমাকে অন্তরে স্মরণ করে তাহলে তাকেও আমি আমার অন্তরে স্মরণ করি, যদি সে আমাকে কোন সভায় স্মরণ করে তবে আমি তাকে তার চেয়ে উত্তম সভায় স্মরণ করে থাকি--” (বুখারী ৮/১৭১, মুসলিম ৪/২০৬১নং)
“মুফারিদগণ আগে বেড়ে গেছে।” সকলে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসূল! ‘মুফারিদ কারা? তিনি বললেন, “আল্লাহর অধিক অধিক যিকরকারী পুরুষ ও নারী।” (মুসলিম ৪/২০৬২নং)
এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! কল্যাণের দরজা তো অনেক। তার সবটা পালন করতে আমি সক্ষম নই। অতএব আমাকে এমন কাজের সন্ধান দিন, যাকে আমি দৃঢ়ভাবে ধরে থাকব, আর অধিক ভার দিবেন না যাতে আমি ভুলে না যাই (যেহেতু আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি)। তিনি বললেন, “তোমার জিহ্বা যেন সর্বদা আল্লাহর যিকরে আর্দ্র থাকে।” (তিরমিযী ৫/৪৫৮ ইবনে মাজাহ ২/১২৪৬)
“যে ব্যক্তি এমন মজলিসে বসে, যেখানে সে আল্লাহর যিকর করে না (এর জন্য) আল্লাহর তরফ থেকে তার উপর পরিতাপ আসবে।” (আবুউদ ৪/২৬৪ সহীহুল জামে' ৫৩৪২)