প্রশ্নঃ (৭২) তাওহীদুল আসমা ওয়াস্ সিফাতের বিপরীত কি?

উত্তরঃ তাওহীদুল আসমা ওয়াস্ সিফাতের বিপরীত হচ্ছে, আল্লাহর নাম, গুণাবলী ও আয়াতসমূহ অস্বীকার করা এবং তার মধ্যে إلحاد ইলহাদ বা পরিবর্তন করা। ইলহাদ তিন প্রকার। যথাঃ

(১) আইয়্যামে জাহেলিয়াতের মুশরিকদের ইলহাদ। তারা আল্লাহর নামগুলো স্বীয় স্থান থেকে পরিবর্তন করেছে এবং তার মধ্যে বাড়িয়ে বা তার মধ্যে হতে কিছু কমিয়ে তা দ্বারা তাদের দেবতাদের নাম রেখেছে। যেমন আল্লাহর নাম ‘اله-ইলাহ’ হতে (لات-লাত) বানিয়েছে, عزيز-(আযীয) হতে عزى-(উয্যা) বানিয়েছে এবং (منان-মান্নান) হতে (منات-মানাত) বানিয়েছে।

(২) মুশাবিবহা তথা উপমা পেশকারী সম্প্রদায়ের ইলহাদ। তারা আল্লাহ্ তাআলার সিফাতগুলোর ধরণ বর্ণনা করেছে এবং সেগুলোকে মাখলুকের সিফাতের মতই বলেছে। আর এটি হচ্ছে মুশরিকদের ইলহাদের বিপরীত। মুশরিকরা তাদের দেবতাসমূহকে মহান রাববুল আলামীনের সমকক্ষ মনে করত। আর এরা আল্লাহ্কে মাখলুকের স্তরে নামিয়ে দিয়েছে এবং আল্লাহর সিফাতগুলো মানুষের সিফাতের মত বলে আখ্যা দিয়েছে। আল্লাহ্ এদের কথার অনেক উর্ধে।

(৩) মুআত্তিলা সম্প্রদায় তথা আল্লাহর সিফাত অস্বীকারকারীদের ইলহাদ। এরা দুই প্রকার। তাদের একদল আল্লাহ্ তাআলার নামগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। কিন্তু আল্লাহর সুন্দর নামগুলো যেসমস্ত পরিপূর্ণ সিফাত বা গুণকে আবশ্যক করে, তা অস্বীকার করেছে। ফলে তারা আল্লাহ্কে রহমতহীন রাহমান অর্থাৎ দয়াহীন দয়াবান, জ্ঞানহীন জ্ঞানী, শ্রবণ শক্তিহীন শ্রবণকারী, দৃষ্টিহীন দ্রষ্টা এবং ক্ষমতাহীন ক্ষমতাবান হিসাবে নির্ধারণ করেছে। বাকি নামগুলোর ক্ষেত্রেও অনুরূপ করেছে।

তাদের অন্য একটি দল সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর নামগুলোকে ও তাঁর সিফাতে কামালিয়াগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। তাদের কথা হচ্ছে আল্লাহর নাম ও সিফাত কোনটিই নেই। তাদের কথা শুধু অস্তিত্বহীন বস্ত্তর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।

আল্লাহ্ তাআলা নাস্তিক ও যালেমদের এ সমস্তত কথার অনেক উর্ধে ও পবিত্র। আললাহ্ তাআ’লা বলেনঃ

رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا

‘‘তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবার পালনকর্তা। সুতরাং তাঁরই এবাদত করুন এবং তাতে দৃঢ় থাকুন। আপনি কি তার সমান কাউকে জানেন’’? (সূরা মারইয়ামঃ ৬৫) আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَ هُوَ السَّميْعُ الْبَصِيْرُ

‘‘কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি শুনেন এবং দেখেন’’। (সূরা শুরাঃ ১১) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ

يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا

‘‘তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। তারা তাঁকে জ্ঞান দ্বারা পরিবেষ্টিত করতে পারেনা ’’। (সূরা তোহাঃ ১১০)