প্রশ্নঃ (৭১) আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণীঃ আল্লাহ তা‘আলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, যে উহা গণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে- একথার অর্থ কি?

উত্তরঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর উক্ত বাণীটিকে কয়েকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

(১) এখানে (أحصاها) গণনা করার অর্থ হল তা মুখস্থ করা, এগুলোর উসীলা দিয়ে দু’আ করা এবং এই নামগুলো দিয়ে আল্লাহ প্রশংসা করা।

(২) আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর মধ্যে থেকে কতিপয় নামের মধ্যে এমন গুণাবলী বিদ্যমান, যা দ্বারা বান্দা গুণান্বিত হতে পারে। যেমন رَحِيْم (রাহীম) ও كَرِيْم (কারীম)। এদু’টি নামের অর্থ হচ্ছে দয়াবান ও করুণাময়। বান্দা এসকল গুণে নিজেকে গুণান্বিত করার চেষ্টা করবে। তবে বান্দার ক্ষেত্রে যে ধরণের দয়া ও করুণা প্রযোজ্য, বান্দা সে রকমই দয়াবান ও করুণাময় হতে পারে। আর আল্লাহ্ যেমন মহান, বড়, তাঁর করুণা এবং রহমতও তত বড়।

আর যেসমস্ত নাম আল্লাহ্ তা’আলার জন্য নির্দিষ্ট, যেমন আল-জাববার, আল-আযীম ও আল-মুতাকাবিবর তা স্বীকার করা ও তার মর্মার্থের সামনে মস্তক অবনত করা এবং ঐ সমস্ত গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত করা থেকে বান্দা নিজেকে দূরে রাখবে।

আর যেসমস্ত নামের মধ্যে ক্ষমা, দয়া, করুণা ও দান করার অঙ্গীকার রয়েছে, বান্দার উচিত সে সমস্ত গুণাবলী দ্বারা নিজেকে বৈশিষ্টমন্ডিত করার চেষ্টা করা।

আর যেসমস্ত নামের মধ্যে কঠিন শাস্তির ধমকি রয়েছে, যেমন পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী, কঠিন শাস্তি দাতা, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী, বান্দার উচিত ঐ সমস্ত ক্ষেত্রে ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া।

(৩) আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর অন্য এক অর্থ এই যে, অন্তর দিয়ে আল্লাহর সিফাতগুলো উপলদ্ধি করবে এবং ইবাদতের মাধ্যমে তার হক আদায় করবে। এর উদাহরণ হল, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ সৃষ্টিকুলের উপরে এবং আরশের উপরে বিরাজমান এবং এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় জ্ঞান ও ক্ষমতার মাধ্যমে সমস্ত মাখলুককে ঘিরে আছেন সে এই সিফাতটির দাবী অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার অন্তরে এমন একজন অমুখাপেক্ষী সত্বার আহবান অনুভব করবে, যার কারণে বান্দা তাঁর দিকে ছুটে যেতে চাইবে, তাঁর নিকটই মুনাজাত করবে। একজন নগণ্য চাকর যেমন প্রতাপশালী বাদশার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে সে ঠিক তেমনভাবে তাঁর সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকবে। সে অনুভব করবে যে, তার সমস্ত কথা ও কাজ আল্লাহর কাছে পেশ করা হচ্ছে। তাই সে তার এমন কথা ও কাজ আল্লাহর কাছে পেশ হওয়া থেকে লজ্জাবোধ করবে, যার কারণে সে আল্লাহর নিকট অপমানিত ও লজ্জিত হতে পারে। সে প্রতি নিয়ত বিশ্বের প্রতিটি স্থানে বিভিন্ন প্রকার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা সহকারে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অবতরণ প্রত্যক্ষ করবে। তাঁর রাজত্বের মধ্যে তিনি ব্যতীত অন্য কারো সামান্যতম কর্তৃত্ব করার অধিকার নেই। যেভাবে ইচ্ছা তিনি সেভাবেই তাঁর হুকুম-আহকাম কার্যকর করেন। যেমন কাউকে জীবিত করা, কাউকে মৃত্যু দান করা, কাউকে সম্মানিত করা, কাউকে অপমানিত করা, কাউকে নীচে নামানো, কাউকে উপরে উঠানো, কাউকে দান করা, কাউকে বঞ্চিত করা, কারো মুসীবত দূর করা, মুসীবতে ফেলে কাউকে পরীক্ষা করা এবং মানুষের মধ্যে কালের আবর্তন-বিবর্তন ঘটানো ইত্যাদি। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنْ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ

‘‘তিনি আকাশ থেকে যমীন পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন। অতঃপর প্রতিটি বিষয় তাঁর দিকেই উর্ধমুখী হবে এমন একদিনে যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান’’। (সূরা সিজদাহঃ ৫)

সুতরাং যে বান্দা ঈমান ও এবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর উপরোক্ত গুণাবলীর হক পূর্ণরূপে আদায় করবে, সে সমস্ত সৃষ্টি জগতের প্রতি নিজেকে অমুখাপেক্ষী মনে করবে এবং আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হবেন। এমনিভাবে যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিপূর্ণ জ্ঞান, শ্রবণ, দৃষ্টি, জীবন ও সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি গুণাবলী উপলদ্ধি করতে সক্ষম হবে, তাঁর জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট। তবে এই নেয়ামত কি সকলেই অর্জন করতে পারে? কখনই নয়। এটি শুধু আল্লাহর নৈকট্যশীল এবং সৎকর্মের দিকে প্রতিযোগিতাকারীদের জন্যই অর্জিত হয়ে থাকে।