আল্লাহর পবিত্র নামসমূহের মধ্যে তার মূল নাম ‘الله’। এই পবিত্র নাম বা ইসমে যাত নিয়ে তামাশার এক পদ্ধতির নাম খতমে জালালী। প্রথমেই দো‘আ করি, যে অজ্ঞ ব্যক্তি এই খতম আবিষ্কার করেছে আল্লাহ যেন তাকে মাফ করে দেন। খতমের পদ্ধতিটি দেখলেই সচেতন ব্যক্তি যিনি ইসলাম সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা রাখেন তার কাছে এই খতমের খারাবী ধরা পড়বে। তবে যিনি ইলমের ধারক হওয়া সত্বেও দুনিয়ার লালসায় হাবুডুবু খাচ্ছেন, তিনি ধর্মের রক্ষা নয় বরং ধর্মই তাকে রক্ষা করছে এমন ব্যক্তির কথা ভিন্ন। খতমের পদ্ধতিটি যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে:

‘‘নদী ভাঙ্গন বা ঐরূপ কঠিন বিপদ হইতে উদ্ধারকল্পে এই নাম সোয়া লক্ষ বার কাগজে লিখিবে ও সোয়া লক্ষ ময়দার আটার গুলী তৈয়ার করিবে, গুলী তৈয়ার করার সময় ‘আল্লাহু’ এই নাম মুখে বলিবে, তৎপর আল্লাহর নাম লিখিয়া কাগজগুলি একটি করিয়া গুলীর মধ্যে ভরিবে, তৎপর গুলীগুলি নদী বা যে পুকুরে মাছ থাকে তাহাতে ফেলিয়া দিবে। সকলেই পাক সাফ অবস্থায় ওযুসহ এই আমল করিবে। নতুবা হিতে বিপরীত হইতে পারে। এই আমল দ্বারা বিপদ হইতে উদ্ধার হইবে ও মতলব পূর্ণ হইবে। ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই। আল্লাহর নামসমূহ ২ ভাগে বিভক্ত- জালালী (তেজস্বী) ও জামালী (সৌন্দর্যময়)। ‘আল্লাহ’ নাম জালালীর অন্তর্ভুক্ত; এই জন্য ইহার খতমকে খতমে জালালী বলা হয়।’’[1]

পাঠক, এবার আপনি নিজেই এই খতমের ফায়সালা করুন। এই খতমের পদ্ধতিতে আল্লাহর যাতি নাম নিয়ে খেল তামাশা, নির্লজ্জ আচরণের সাথে সাথে এর ফায়েদায় যা কিছু বলা হয় তা সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। ওহী ছাড়া এসব কথা বিশ্বাসে মুমিনের আক্বীদায় স্পট পড়ে। আল্হাম্দুলিল্লাহ এমন অনেক আলেম পেয়েছি যিনি এই খতমের নাম ও পদ্ধতি শুনার সাথে সাথে ‘‘লা হাওলা...’’ পড়েছেন।আবার অনেক এমন রয়েছেন যিনি একে অপছন্দ করেন তবে অংশ নেন। তাদেরকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ভাই, আপনি জানা সত্বেও কেন এসব খতমে উপস্থিত হন তাদের একই কথা, ভাই, আমার টাকার দরকার তাই যাই। আবার এমন অনেক আছেন যারা এটির পক্ষে সাফাই গান। বিভিন্ন যুক্তি ও হিলার মাধ্যমে এগুলোকে জায়েয রাখবার চেষ্টা করেন। স্বার্থের কারণে দ্বীনী বিষয়ের যে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া তাদের কাছে কোনো ব্যাপারই নয়। ব্যাখ্যা সঠিক নাকি ভুল এই বিষয় তাদের কাছে মূল্যহীন। এই কর্ম আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সেটিও উপেক্ষিত। অর্থই যেন তাদের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য। অথচ সম্পদের স্বার্থে ইলমের জোরে দীনের যে কোনো অপব্যাখ্যা ইয়াহুদী আলেমদের গুণ ছিল বলে আমাদের সকলের জানা। ইলমের দ্বারা অপব্যাখ্যার মাধ্যমে দো‘আ দুরূদের সুন্নাহ বহির্ভূত পদ্ধতি আবিষ্কার বা আবিষ্কৃত বিষয় জায়েয বানাবার অপচেষ্টা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যৎবাণীর প্রকাশ। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যৎ বাণী ছিল যার মর্ম হচ্ছে: তার উম্মত বনী ইসরাঈলের পূর্ণ অনুসরণ করবে। এমনকি এক জোড়া জুতার মাঝে যেমন কোনো বেশ কম হয় না তার উম্মত ও বনী ইসরাঈলের উম্মতের মাঝে কোনো বেশ কম হবে না।[2] তাই আল্লাহর কাছে সর্বদা অশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত যে, আল্লাহ যেন আমাদেরকে কখনো এই তৃতীয় স্তরের আলেমদের মাঝে শামেল না করেন। আমাদের ঈমানকে দুর্বল করে দ্বিতীয় স্তরের মধ্যে ও যেন না রাখেন। বরং এই তিন শ্রেণির আলেমের মাঝে আল্লাহ আমাদেরকে প্রথম স্তরের আলেমদের অন্তুর্ভুক্ত করুন এবং এই প্রথম শ্রেণির মত আমাদেরকেও সঠিক দীন বোঝার তওফীক দিন। টাকার স্বার্থে বুঝে না বোঝার বাহানার মত মারাত্মক ব্যাধি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমীন।

>
[1] নেয়ামুল কুরআন, ১৯৮।

[2] তিরমিযী, সুনান, উম্মতের দলাদলি অনুচ্ছেদ, নং: ২৬৪১, হাকীম, আল-মুসতাদরাদক ‘আলাস-সহীহাইন, ফিতনা ও পরস্পর লড়াই অধ্যায়, নং:৮৪৪৮, ৪/৫১৬।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে