কুরআন প্রতিটি মুসলিমের জীবন বিধান। এই কুরআন তাকে নিয়মিত তেলাওয়াত করতে হবে এবং এর মর্ম বুঝে তদনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। কুরআন শিক্ষা ও তেলাওয়াতের ফযিলত বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

«خيركم من تعلم القرآن وعلمه» (صحيح البخاري، كتاب فضائل القرآن، باب خيركم من تعلم القرآن وعلمه)

‘‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়’’।[1]

এভাবে কুরআন তেলাওয়াতের বেলায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

" مثل الذي يقرأ القرآن كالأترجة طعمها طيب وريحها طيب . والذي لا يقرأ القرآن كالتمرة طعمها طيب ولا ريح لها ومثل الفاجر الذي يقرأ القرآن كمثل الريحانة ريحها طيب وطعمها مر . ومثل الفاجر الذي لا يقرأ القرآن كمثل الحنظلة طعمها مر ولا ريح لها". (صحيح البخاري، باب فضل القرآن على سائر الكلام)

‘‘কুরআন পাঠকারী (মুমিনের) উদাহরণ সুস্বাদু সুগন্ধযুক্ত লেবুর ন্যায়। আর যে (মুমিন) কুরআন পাঠ করে না তার উদাহরণ এমন খেজুরের মত যা সুগন্ধহীন তবে খেতে সুস্বাদু। আর যে ফাসিক কুরআন পাঠ করে তার উদাহরণ রায়হান জাতীয় গুল্মের মত যার সুগন্ধ আছে কিন্তু খেতে বিস্বাদযুক্ত। আর যে ফাসেক কুরআন তেলাওয়াত করে না তার উদাহরণ ঐ মাকাল ফলের মত যা খেতেও বিস্বাদ (তিক্ত) আবার কোনো সুঘ্রানও নেই।[2]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন,

" من قرأ حرفا من كتاب الله فله به حسنة والحسنة بعشر أمثالها لا أقول آلم حرف ولكن ألف حرف ولام حرف وميم حرف ". ( سنن الترمذي، باب فيمن قرأ حرفا من القرآن ما له من الأجر)

‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তার আমলনামায় একটি নেকী প্রদান করেন, আর এই নেকীটি দশটি নেকীর সমান। আমি বলি না, ‘‘ الم ’’ একটি অক্ষর, বরং ‘‘ أ ’’ একটি অক্ষর, ‘‘ل ’’ একটি অক্ষর, ‘‘ م ’’ একটি অক্ষর’’।[3]

কুরআন তেলাওয়াতের এত মর্যাদা, গুরুত্ব, ছওয়াব কুরআন হাদীস থেকে প্রমাণিত থাকা সত্বেও প্রচলিত খতমের রূপরেখায় নবী আদর্শ ও সাহাবা আদর্শের বৈপরিত্য থাকার কারণে এই কুরআন খতমের হুকুম যদি না বাচক হয় তবে যার কোনো অস্তিত্ব নবী জীবনে, নবীর শিক্ষা প্রাপ্ত সাহাবিদের জীবনে নেই তার হুকুম কী হবে তা সহজেই অনুমেয়।

রূপরেখায় বৈপরিত্য বলতে যেমন, সাহাবায়ে কেরাম কুরআন নিজে শিখতেন, নিজে পড়তেন। যিনি জানেন না তিনি শিখতেন। এই শিক্ষাই তাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন। অনেক সময় কেউ কুরআন অপরের কাছে শুনতে চাইতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও কোনো কোনো সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে শুনার আগ্রহ প্রকাশ করতেন, শুনতেন। তবে অন্যকে এনে বাড়ীতে খতম করানোর কোনো রেওয়াজ তাদের মাঝে ছিল না। কেউ মারা গেলে তাদের যা করণীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছেন তারা শুধু তাই করতেন। কেউ অসুস্থ হলে, বিপদে পড়লে কী করণীয় তাও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে দিয়েছেন। কেউ মারা গেলে বা অন্য কোনো সমস্যায় পড়লে কুরআন খতম করা বা খতম করানোর কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে একটিবার কাউকে বলেন নি নিজেও করেন নি। তাই সাহাবিরা এমন কর্ম কখনো করেন নি।

এখন আমরা জানতে চেষ্টা করব প্রচলিত খতমের হুকুম সম্পর্কে আদর্শবান আলেমদের কী মত। এ ব্যাপারে আমাদের আলেম সমাজে অত্যন্ত সুপরিচিত কিতাব ‘‘আহসানুল ফাতওয়া’’ এর লিখক প্রসিদ্ধ ফক্বিহ রশিদ আহমদ রহ. তার কিতাবে প্রচলিত কুরআন খতম সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে যে দলীলভিত্তিক আলোচনা করেছেন, অসংখ্য আলেমের বক্তব্যের উদ্ধৃতি পেশ করেছেন তার এই লেখাটির অনুবাদ তুলে দেওয়াই যথেষ্ট মনে করছি। তার এ বক্তব্যের পর এ ব্যাপারে আর কিছু লেখার কোনো প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না। এতে আমরা প্রচলিত খতমের তাৎপর্য যেমন বুঝতে পারব তেমনি অগণিত আলেমের মতামত পেয়ে যাব। তার আলোচনা পড়ার পর সত্য সন্ধানী মানুষের মনে আর কোনো দ্বিধা থাকবে না বলে আশা করি। নিম্নে তার কিতাবের প্রশ্ন ও উত্তর হুবহু তুলে ধরছি।

প্রশ্ন: বর্তমানে কুরআন খতমের প্রচলন ব্যাপক হয়ে গেছে। যেমন, নতুন ঘর ক্রয় করা হলে কুরআন খতম করা হয়। দোকান উদ্বোধন করা হলে খতম করা হয়। কারো চল্লিশা হলে কুরআন খতম করা হয়, কারো মৃত্যুর তৃতীয় দিনে কুরআন খতম করা হয়; যাতে মৃত ব্যক্তির কাছে ছওয়াব পৌঁছে। কোনো সময় এর ঘোষণা পত্রিকায় দেওয়া হয় এবং মানুষ দুর-দুরান্ত থেকে শুধুমাত্র কুরআন খতমের জন্য আসে। এমন কুরআন খতমের আমলের হুকুম কী? কুরআন হাদীসের আলোকে এর কোনো প্রমাণ আছে কি? এতে আমাদের বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের লোক শরীক হতে পারবে কি? আমরা নিজে কি এমন কর্মে শরীক হয়ে গোনাহগার হচ্ছি না?

بينوا توجروا - -

সুমতি দানকারীর নামে উত্তর

    قال الإمام محمد إسماعيل البخاري رحمه الله تعالى: " حدثنا قتيبة حدثنا جرير عن منصور عن مجاهد قال : دخلت أنا وعروة بن الزبير المسجد فإذا عبد الله بن عمر رضي الله عنهما جالس إلى حجرة عائشة وإذا ناس يصلون في المسجد صلاة الضحى قال فسألناه عن صلاتهم فقال بدعة ".

) صحيح البخاري ص:238ج:1)

(মুহাম্মদ ইসমাইল বুখারী রাহ. বলেন: ...........মুজাহিদ (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং উরওয়া ইবনু যুবাইর (র) মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, আব্দুল্লাহ ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা- আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর হুজরার পাশে বসে আছেন। ইতোমধ্যে কিছু লোক মসজিদে সালাতুদ্দোহা আদায় করতে লাগল। আমরা তাকে এদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা বিদ‘আত।[4]

    وقال الإمام أبو الحسين مسلم بن الحجاح بن مسلم القشيري وحدثنا إسحاق بن إبراهيم أخبرنا جرير عن منصور عن مجاهد قال دخلت أنا وعروة بن الزبير المسجد فإذا عبد الله بن عمر جالس إلى حجرة عائشة والناس يصلون الضحى فى المسجد فسألناه عن صلاتهم فقال بدعة.

(صحيح مسلم ص:409 ج:1

(এবং ইমাম আবুল-হুসাইন মুসলিম ইবন হাজ্জাজ ইবন মুসলিম আল-কুশাইরী বলেন: ........... মুজাহিদ (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং উরওয়া ইবনু যুবাইর (র) মাসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, আবদুল্লাহ ইবনু উমররাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা - আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর হুজরার পাশে বসে আছেন। আর কিছু লোক মসজিদে সালাতুদ্দোহা আদায় করছে। আমরা তাকে এদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা বিদ‘আত।[5]

    وقال الشيخ محي الدين أبو زكريا يحيى بن شرف النووي رحمه الله تعالى: انهم سألوا ابن عمر عن صلاة الذين كانوا يصلون الضحى في المسجد فقال بدعة ) هذا قد حمله القاضي وغيره على أن مراده أن اظهارها في المسجد والاجتماع لها هو البدعة لا أن أصل صلاة الضحى بدعة وقد سبقت المسألة في كتاب الصلاة.

( شرح النووي على صحيح مسلم صفحه مندرجه بالا)

(এবং শাইখ মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহ্ইয়া ইবন শরফ নববী রাহ. বলেন, তারা ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যারা মসজিদে সালাতুদদ্বোহা আদায় করছিল তাদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছিল, তিনি বললেন বিদ‘আত। এটা ক্বাযী[6] এবং অন্যান্যরা এর অর্থ নিয়েছেন, তার উদ্দেশ্য হলো সালাতকে মসজিদে প্রকাশ করা এবং এর জন্য সমবেত হওয়াটাই হচ্ছে বিদ‘আত। মূল সালাতুদদ্বোহা বিদ‘আত নয়। সালাত অধ্যায়ে মাসআলাটির আলোচনা হয়েছে।)[7]

4- وقال الامام محمد بن شهاب المعروف بابن البزار الكردري الحنفي رحمه الله تعالى: وقد صح عن ابن مسعود رضي الله عنه أنه سمع قوما اجتمعوا في مسجد يهللون ويصلون عليه الصلاة والسلام جهرا، فراح إليهم فقال ما عهدنا دلك على عهده عليه السلام وما أراكم إلا مبتدعين، فما زال يذكر ذلك حتى أخرجهم من المسجد.

( بزازية بهامش الهنديه، ج:6 ص:378)

(এবং ইমাম মুহাম্মদ ইবন শিহাব আল-কুরদুরী আল-হানাফী রাহ.[8] যিনি ইবনে বায্যার নামে পরিচিত, তিনি বলেন, ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত যে, তিনি শুনতে পান একদল লোক মসজিদে সমবেত হয়ে উচ্চস্বরে তাহলীল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ পড়ছে। অতএব তিনি তাদের কাছে গেলেন এবং বললেন, আমরাতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এমনটি পাইনি। আমিতো তোমাদেরকে বিদ‘আতি ছাড়া কিছু দেখছি না। তিনি একথা বলতে বলতে তাদেরকে মসজিদ হতে বের করে দেন।)[9]

    وقال في موضع آخر: ويكره اتخاذ الطعام في اليوم الأول والثالث وبعد الأسبوع والأعياد ونقل الطعام إلى القبر في المواسم واتخاذ الدعوة بقراءة القرآن وجمع الصلحاء والقراء للختم أو لقراءة سورة الأنعام أو الإخلاص. فالحاصل أن اتخاذ الطعام عند قراءة القرآن لأجل الأكل يكره. ( بزازية بهامش الهنديه، ج:4 ص:81)

(এবং তিনি আরেক জায়গায় বলেন, আর মৃত্যুর প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন, সাপ্তাহ পর এবং অনুষ্ঠানে খাবারের আয়োজন করা, বিভিন্ন মৌসুমে কবরে খাবার নিয়ে যাওয়া, কুরআন পড়ার জন্য দাওয়াতের আয়োজন করা এবং সৎ লোক ও ক্বারীদেরকে খতমের জন্য বা সূরা আন‘আম অথবা সূরা ইখলাস পড়ার জন্য সমবেত করা মাকরূহ।

মোটকথা, কুরআন পড়ার সময় খাওয়ার জন্য দাওয়াতের আয়োজন করা মাকরূহ।)[10]

    وقال الفقيه المخدوم محمد جعفر بن العلامة عبد الكريم البوبكاني السندي رحمه الله تعالى في الصيرفية: قراءة القرآن لأجل المهمات والبأس مكروه. (وبعد صفحة) يكره للقوم أن يقرأ القرآن جملة لتضمنها ترك الاستماع والإنصات المأمور بهما. وقيل لا بأس به. في التتارخانية من المحيط: من المشايخ من قال: إن ختم القرآن بالجماعة جهرا ويسمى "سيباره خوانده" مكروه، (الى قوله) في عين العلم: ولا يختم في أقل من ثلاثة أيام(وبعد صفحة) في مفيد المستفيد من النصاب: قراءة القرآن في المجالس يكره، لأنه يقرأ طمعا في الدنيا، وكذلك في الأسواق، وكذلك على رأس القبر. قيل، ولو قرأ ولا يسأل والناس أعطوه من غير سؤال قال يكره أيضا، لأنه إذا لم يقصد السؤال لِمَ لا يجلس في بيته يقرأ. ( المتانة في المرمة عن الخزانة، 632، 633، 634)

(এবং ফক্বীহ মুহাম্মদ জাফর[11]....সিন্দি বলেন, সাইরাফিয়্যাহ কিতাবে[12] ‘‘কঠিন বিষয় এবং অসুবিধার কারণে কুরআন পড়া মাকরূহ’’। (এবং এক পৃষ্ঠা পর) মুফিদুল মুস্তাফিদ কিতাবে এসেছে, ‘‘দলবদ্ধ হয়ে বৈঠকে কুরআন পড়া মাকরূহ, কেননা এতে শ্রবণ করা এবং চুপ থেকে শোনা পরিত্যাগ করা হয় অথচ এ দুটি বিষয় নির্দেশিত।’’ কেউ কেউ বলেন, ‘‘এতে অসুবিধা নেই’’। ‘মুহিত’[13]কিতাবের উদ্ধৃতিতে ‘তাতারখানিয়া’[14]কিতাবে রয়েছে, ‘‘মাশায়েখের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, নিশ্চয় দলবদ্ধ হয়ে উচ্চস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করা যাকে বলা হয় ‘সীপারা পড়া’ তা মাকরূহ। (আরো বলেন) আইনুল ইলমে রয়েছে, তিন দিনের কমে খতম করবে না ’’। (আরো এক পৃষ্ঠা পর), ‘‘মুফিদুল মুসতাফিদে নেসাব[15]থেকে বলা হয়েছে, সমাবেশস্থলে কুরআন পড়া মাকরূহ, কেননা পাঠক তা দুনিয়ার লোভে পড়ছে। এভাবে বাজারে পড়া মাকরূহ। কবরের কাছে পড়াকেও এভাবে মাকরূহ বলা হয়েছে। যদি পড়ে কিন্তু (কারো কাছে কিছু) না চায়, আর মানুষ তাকে চাওয়া ব্যতীতই দান করে তবে তাও মাকরূহ বলেছেন, কেননা চাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে সে কেন ঘরে বসে পড়ছে না’’।[16]

7 - وقال العلامة ابن عابدين رحمه الله تعالى: (تتمة) أشار بقوله فرادى إلى ما ذكره بعد في متنه من قوله ويكره الاجتماع على إحياء ليلة من هذه الليالي في المساجد وتمامه في شرحه وصرح بكراهة ذلك في الحاوي القدسي قال وما روي من الصلوات في هذه الأوقات يصلي فرادى غير التراويح". قال في البحر: قال في البحر ومن هنا يعلم كراهة الاجتماع على صلاة الرغائب التي تفعل في رجب أو في أولى جمعة منه وأنها بدعة وما يحتاله أهل الروم من نذرها لتخرج عن النفل والكراهة فباطل ا هـ قلت: وصرح بذلك في البزازية كما سيذكره الشارح آخر الباب وقد بسط الكلام عليها شارحا المنية وصرحا بأن ما روي فيها باطل موضوع. وللعلامة نور الدين المقدسي فيها تصنيف حسن سماه ( ردع الراغب عن صلاة الرغائب ) أحاط فيه بغالب كلام المتقدمين والمتأخرين من علماء المذاهب الأربعة. (رد المحتار،ج:2ص:26)

(এবং আল্লামা ইবনে আবেদিন[17]রাহ. বলেন, (পরিশিষ্ট) মুসান্নিফ[18]তার কথা ‘‘একা একা’’ বলে তিনি সেদিকে ইঙ্গিত করেন যা একটু পরে তিনি তার মতনে (বইয়ের মূল অংশে) এই বলে উল্লেখ করেন, ‘‘আর এই রাতগুলো জাগ্রত থেকে কাটানোর জন্য মসজিদে সমবেত হওয়া মাকরূহ’’ পুরো আলোচনা তার ব্যখ্যাগ্রন্থে রয়েছে। আল-হাবীল ক্বুদসীতে[19]তা মাকরূহ বলে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, ‘‘এই রাতগুলোতে যে সালাতের কথার বর্ণনা রয়েছে তা একা একা পড়তে হবে, একমাত্র তারাবীহ ব্যতীত’’।আল-বাহরে[20]বলেন, ‘‘এথেকে জানা যায় যে, সালাতুর রাগাইব যা রজবের প্রথম জুমুআয় পড়া হয়, এর জন্য সমবেত হওয়া মাকরূহ এবং এটি বিদ‘আত। এটাকে নফল ও মাকরূহ থেকে বের করার জন্য রোমবাসীরা এই সালাতের মান্নতের যে হীলা অবলম্বন করে তা বাতিল’’।

[1] সহীহুল বুখারী, কুরআনের ফযিলত সমূহ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে শিখায়, নং:৪৭৩৯।

[2] সহীহুল বুখারী, কুরআনের ফযিলতসমূহ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: সব কালামের উপর কুরআনের শ্রেষ্টত্ব, নং:৪৭৩৯, সহীহ মুসলিম, কুরআনের ফযিলতসমূহ অধ্যায়, হাফিজে কুরআনের মর্যাদা অনুচ্ছেদ, নং:১৮৯৬।

[3] সুনানুত তিরমিযি, হাদীস সহীহ, কুরআনের ফযিলত সমূহ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: যে কুরআনের একটি অক্ষর পড়ল তার কতটুকু ছওয়াব রয়েছে, নং: ২৯১০।

[4] সহীহুল বুখারী, উমরা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার উমরা করেছেন।

[5] সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: উমরা, অনুচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উমরার সংখ্যার বর্ণনা।

[6] কাযী আয়ায, মালেকি মাযহাবের প্রখ্যাত আলেম মুহাদ্দীস, ফকীহ, আদীব, ঐতিহাসিক, একাধিক কিতাবের রচয়িতা। ৪৭৩-৫৪৪ হিজরী।

[7] ইমাম নববীর মুসলিমের ব্যখ্যগ্রন্থ, প্রাগুক্ত অধ্যায়। কিতাবুস-সালাত, (باب استحباب صلاة الضحى وأن أقلها ركعتان) এর অধীনে আলোচনা সালাতুদ দ্বোহার আলোচনা করেছেন।

[8] ফাতওয়া বায্যাযিয়ার মুসান্নিফ, ইমাম মুহাম্মদ ইবন মুহাম্মদ ইবন শিহাব, ইবনে বায্যার আলকুরদুরী আল-হানাফী। মৃত্যু: ৮২৭ হিজরী।

[9] বায্যাযিয়া, হিন্দিয়ার টিকা, ৬/৩৭৮ (লেখকের দেওয়া তথ্য সুত্র মোতাবেক)।

[10] বায্যাযিয়া, হিন্দিয়ার টিকা, ৪/৮১ (লেখকের দেওয়া সুত্রে)

[11] মুহাম্মদ জা‘ফর ইবন আব্দুল করীম আল-বুবাকানী আস-সিন্দি আল-হানাফী। তার লিখিত কিতাব, ‘আল-মাতানাহ ফিল-মারাম্মাতে আনিল খিযানাহ’।

[12] আল-ফাতাওয়া আস-সাইরাফিয়্যাহ। লিখক, হানাফী ফক্বীহ আসআদ ইবন ইউসুফ ইবন আলী মাজ্দুদ্দীন আস-সাইরাফী আল-বুখারী। মৃত:১০৮৮ হিজরী। (আল-আ‘লাম, ১/৩০২)

[13] দেখুন, বুরহানুদ্দীন ইবনু মাযাহ (৬১৬ হি.) রচিত কিতাব ‘আল-মুহিত্বুল বুরহানী, পৃষ্টা:১৪৪, খ-:৫।

[14] ফিকহে হানাফী নিয়ে রচিত কিতাব ‘আল-ফাতাওয়া আত্তাতার খানিয়া’, লিখক, ইবনুল আলা আল-আনসারী আদ-দেহলবী আল-হিন্দি।

[15] ‘আইনুল ইলম’ ‘মুফিদুল মুস্তাফিদ’ ‘কিতাবুন-নেসাব’ ফিক্বহে হানাফীতে রচিত বিভিন্ন কিতাবের নাম।

[16] আল-মাতানাহ ফিল-মারাম্মাতে আনিল খিযানাহ, ৬৩৩,৬৩৪,৬৩৫ (লেখকের দেওয়া সুত্রে)।

[17] বিশিষ্ট হানাফী ফক্বীহ মুহাম্মদ আমীন ইবন উমর ইবন আব্দুল আযীয ইবন আবেদীন। ১১৯৮-১১২৫ হিজরী। দামেশ্কে জন্ম এবং মৃত্যু। যাকে ইমামুল হানাফিয়্যাহ ফিশ্-শাম বলে ভূষিত করা হয়। আল্লামা ইবনে আবেদীন বা আল্লামা শামী নামে তিনি প্রসিদ্ধ। তার কিতাব ‘রাদ্দুল মুহতার‘ যা ফাতওয়া শামী হিসেবে পরিচিত তা ফিকহে হানাফীর মাসাঈলে আলাউদ্দীন হাসকাফী রচিত ‘আদ্দুররুল-মুখতারের’ ব্যাখ্যাগ্রন্থ। (আল-আ‘লাম: ৬/৪২)

[18] মুসান্নিফ আর্থাৎ ‘আদ্দুররুল-মুখতারের’ রচয়িতা মুহাম্মদ ইবন আলী আলাউদ্দীন আল-হাসকাফী। দামেশ্কের একজন হানাফী মুফতী। ১০২৫-১০৮৮ হিজরী। (আল-আ‘লাম: ৬/৪২)

[19] ‘আল-হাবীল ক্বুদসী ফিল ফুরু’ লিখক, কাযী জামাল উদ্দীন আহমদ ইবন মুহাম্মদ আল-গাযনবী আল-হানাফী। (কাশ্ফুয যুনুন:১/৬২৭)

[20] যাইনুদ্দীন ইবনে নুজাইম মিসরী আল-হানাফী ৯২৬-৯৭০ হিজরী রচিত কিতাব ‘আল-বাহরুর রায়িক্ব’। সালাত অধ্যায়। বিতর ও নফল অনুচ্ছেদ, ২/৫৬।

 আমি বলি (ইবনে আবেদীন) বায্যাযিয়ায় তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে, যেমন ব্যাখ্যাকার অধ্যায়ের শেষে উল্লেখ করবেন। আল-মুনইয়াহ এর দুই ব্যাখ্যাকার[1]এর উপর দীর্ঘ আলোচনা করেছেন এবং তারা উভয়ে স্পষ্ঠভাবে বলেছেন যে, ‘‘এ ব্যাপারে যা বর্ণনা করা হয় সব বাতিল মনগড়া। আল্লামা নুরুদ্দীন মাক্বদিসীর[2]এ বিষয়ে একটি সুন্দর রচনা রয়েছে তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘রাদ্উর রাগিব আন সালাতির রাগাইব’ তিনি এখানে চার মাযহাবের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আলেমেদের কথার অধিকাংশ সংকলন করেছেন।[3]

وقال في موضع آخر: ويكره اتخاذ الضيافة من الطعام من أهل الميت لأنه شرع في السرور لا في الشرور وهي بدعة مستقبحة

وروى الإمام أحمد وابن ماجه بإسناد صحيح عن جرير بن عبد الله قال كنا نعد الاجتماع إلى أهل الميت وصنعهم الطعام من النياحة اهـ وفي البزازية ويكره اتخاذ الطعام في اليوم الأول والثالث وبعد الأسبوع ونقل الطعام إلى القبر في المواسم واتخاذ الدعوة لقراءة القرآن وجمع الصلحاء والقراء للختم أو لقراءة سورة الأنعام أو الإخلاص والحاصل أن اتخاذ الطعام عند قراءة القرآن لأجل الأكل يكره وفيها من كتاب الاستحسان وإن اتخذطعاما للفقراء كان حسنا اه وأطال في ذلك المعراج وقال وهذه الأفعال كلها للسمعة والرياء فيحترز عنها لأنهم لا يريدون بها وجه الله تعالى اهـ (رد المحتار:ج:2ص:240)

(এবং তিনি আরেক জায়গায় বলেন, আর মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে যিয়াফত খাবারের আয়োজন করা মাকরূহ। কেননা তা আনন্দের বেলায় শরীয়ত সম্মত, অনিষ্টতার বেলায় নয়। আর এটা মন্দ বিদ‘আত। ইমাম আহমদ এবং ইবনে মাজাহ বিশুদ্ধ সনদে জারীর ইবন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন,[4]জারীর বলেন, ‘‘মৃত ব্যক্তির পরিবারের নিকট সমবেত হওয়া এবং তারা খাবারের আয়োজন করাকে আমরা নিয়াহাহ (বিলাপ) গণ্য করতাম’’। বায্যাযিয়ায় রয়েছে, ‘‘আর মৃত্যুর প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন, সপ্তাহ পর এবং অনুষ্ঠানে খাবারের আয়োজন করা, বিভিন্ন মৌসুমে কবরে খাবার নিয়ে যাওয়া, কুরআন পড়ার জন্য দাওয়াতের আয়োজন করা এবং সৎ লোক ও ক্বারীদেরকে খতমের জন্য বা সূরা আন‘আম অথবা সূরা ইখলাস পড়ার জন্য সমবেত করা মাকরূহ। মোটকথা, কুরআন পড়ার সময় খাওয়ার জন্য দাওয়াতের আয়োজন করা মাকরূহ’’ এবং উক্ত কিতাবের ইসতেহসান অধ্যায়ে রয়েছে, ‘‘যদি দরিদ্র মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন করে তবে ভাল’’। আর মি‘রাজে[5]এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন, ‘‘এই সবগুলো হচ্ছে লোক দেখানো ও লোক শুনানো। তাই এ সব থেকে বিরত থাকবে, কেননা তারা এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে না’’।)[6]

وقال في موضع آخر: وقد أطنب في رده صاحب تبيين المحارم مستندا إلى النقول الصريحة فمن جملة كلامه قال تاج الشريعة في شرح الهداية إن القرآن بالأجرة لا يستحق الثواب لا للميت ولا للقارىء وقال العيني في شرح الهداية ويمنع القارىء للدنيا والآخذ والمعطي آثمان فالحاصل أن ما شاع في زماننا من قراءة الأجزاء بالأجرة لا يجوز لأن فيه الأمر بالقراءة وإعطاء الثواب للآمر والقراءة لأجل المال فإذا لم يكن للقارىء ثواب لعدم النية الصحيحة فأين يصل الثواب إلى المستأجر ولولا الأجرة ما قرأ أحد لأحد في هذا الزمان بل جعلوا القرآن العظيم مكسبا ووسيلة إلى جمع الدنيا إنا لله وإنا إليه راجعون (وبعد أسطر) كما صرح به في التاتارخانية حيث قال لا معنى لهذه الوصية ولصلة القارىء بقراءته لأن هذا بمنزلة الأجرة والإجارة في ذلك باطلة وهي بدعة ولم يفعلها أحد من الخلفاء (رد المحتار:ج:6ص:56)

(এবং তিনি আরেক জায়গায় বলেন, তাবয়িনুল-মাহারিমের লিখক[7]স্পষ্ট উদ্ধৃতির মাধ্যমে এসব প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে অনেক দীর্ঘ আলোচনা করেন। তার বক্তব্যের মধ্য থেকে রয়েছে,‘‘তাজুশ্-শরীয়াহ বলেন,[8]পারিশ্রামিকের মাধ্যমে কুরআন পড়া ছওয়াবের উপযুক্ত হয় না, না মৃতব্যক্তির জন্য, না পাঠকের জন্য’’। হেদায়ার ব্যখ্যাগ্রন্থে আইনি[9]লিখেন, ‘‘দুনিয়ার জন্য কুরআন পাঠককে বাধা দেওয়া হবে, দাতা, গ্রহিতা উভয়ে গোনাহগার হবে’’। মোটকথা, আমাদের যুগে পারিশ্রমিকের মাধ্যমে কুরআনের অংশ পড়ার যে প্রচলন বিস্তার লাভ করেছে তা জায়েয নেই, কেননা এখানে পড়ার নির্দেশ এবং ছওয়াব নির্দেশদাতাকে দেওয়া রয়েছে, আর পড়া হচ্ছে অর্থের কারণে। অতএব বিশুদ্ধ নিয়্যাত না থাকার কারণে পাঠকই যখন ছওয়াব পাচ্ছে না তাহলে কী-ভাবে পাঠক নিয়োগকারীর কাছে ছওয়াব পৌছবে। যদি পারিশ্রমিক না থাকত তবে আজকাল কেউ কারো জন্য পড়ত না। বরং কুরআনকে তারা উপার্জনের বস্তু ও দুনিয়া সংগ্রহের মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছে। ইন্না লিল্লাহি ও ইন্না ইলাইহি রাজি‘ঊন। (কয়েক লাইন পর) যেমন তাতারখানিয়ায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে বলেন, ‘‘এই (খতমের) অসিয়্যাতের এবং পড়ার কারণে পাঠককে দানের অসিয়্যাতের কোনো অর্থ নেই। কেননা এটা ভাড়া করার ন্যায়, আর এসবের বেলায় ভাড়া করা বাতিল এবং তা বিদ‘আত। খুলাফাদের মধ্যে কেউই এমন কর্ম করেননি।)[10]

10- وقال ايضا: ونقل العلامة الحلواني في حاشية المنتهى الحنبلي عن شيخ الإسلام تقي الدين ما نصه ولا يصح الاستئجار على القراءة وإهداؤها إلى الميت لأنه لم ينقل عن أحد من الأئمة الإذن في ذلك وقد قال العلماء إن القارىء إذا قرأ لأجل المال فلا ثواب له فأي شيء يهديه إلى الميت وإنما يصل إلى الميت العمل الصالح والاستئجار على مجرد التلاوة لم يقل به أحد من الأئمة (وبعد اسطر) وحينئذ فقد ظهر لك بطلان ما أكب عليه أهل العصر من الوصية بالختمات والتهاليل مع قطع النظر عما يحصل فيها من المنكرات التي لاينكرها إلا من طمست بصيرته وقد جمعت فيها رسالة سميتها (شفاء العليل وبل الغليل في حكم الوصية بالختمات والتهاليل) ) رد المحتار: ج:6ص:57)

(তিনি আরো বলেন, আল্লামা হুলওয়ানী ‘আল-মুনতাহাল হান্বলী’[11]এর টিকায় শায়খুল ইসলাম তাক্বী উদ্দীন থেকে বর্ণনা করেন যার ভাষ্য হলো, ‘‘পড়ার জন্য পারিশ্রমিকের উপর নিয়োগ দেওয়া এবং এর ছওয়াব মৃতব্যক্তিকে পাঠানো শুদ্ধ নয়, কেননা কোনো ইমাম থেকে এর অনুমোদন পাওয়া যায় না। বরং আলেমগণ বলেন, নিশ্চয় ক্বারী যখন সম্পদের কারণে পড়বে তখন তার কোনো ছওয়াব নেই, অতএব সে মৃতব্যক্তির কাছে কি জিনিস পাঠাবে, মৃত ব্যক্তির কাছে কেবল সৎকর্মই পৌঁছে। আর শুধুমাত্র তেলাওয়াতের উপর পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা কোনো ইমাম বলেননি’’।

(কয়েক লাইন পর) অতএব, এখন তোমার কাছে খতম এবং তাহালিলের অসিয়্যাত, যে দিকে মানুষ ঝুঁকেছে তার অন্যান্য খারাবীর দিকে দৃষ্টি দেওয়া ছাড়াই তা বাতিল হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল। দৃষ্টিশক্তি লোপ করা হয়েছে এমন ব্যক্তি ছাড়া যার খারাবী কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমি এতে একটি পুস্তিকা সংকলন করেছি যার নাম দিয়েছি ‘শিফাউল-আলীল ও বাল্লু-গালীল ফি হুকমিল-অসিয়্যাতে বিল-খাতামাতে ওয়াত্তাহালীল’[12]

এসমস্ত বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত কুরআন খতম বিদ‘আত এবং না-জায়েয। কুরআন, হাদীস এবং কল্যাণের সাক্ষ্যপ্রাপ্ত যুগে এর কোনো প্রমাণ নেই। এতে অংশ নেওয়া জায়েয নয়। এছাড়া প্রচলিত খতমে কুরআনে আরো অসংখ্য খারাবী রয়েছে যার কিছু নিম্নে তুলে ধরছি:

ঘোষণা এবং বলপূর্বক এতে লোকজনদের সমবেত করা হয়, যাকে শরীয়তের পরিভাষায় ‘‘তাদাঈ’’ (ডাকাডাকি) বলা হয় যা নফল ইবাদতে নিষিদ্ধ। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সামনে কিছু মানুষ সালাতুদ্দ্বোহা জামাতের আকারে পড়ছিল, যখন তার কাছে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো তিনি তাদের আমলকে বিদ‘আত আখ্যা দিলেন। অথচ সালাতুদ্দ্বোহা একাকি পড়া প্রমাণিত। এভাবে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এক গোত্রের ব্যাপারে শুনলেন, তারা উচ্চস্বরে তাহলিল এবং দুরূদ পড়ছে, তখন তিনি তাদেরকে বিদ‘আতি বলে মসজিদ থেকে বের করে দিলেন। অথচ একাকি তাসবীহ, তাহলীল এবং দুরূদ পড়া পূণ্য ও ছওয়াবের কাজ।
ডাকার পর যদি কিছু মানুষ কুরআন খতমে না আসে তাহলে তাকে বিভিন্নভাবে তিরস্কার করা হয়। অথচ মুস্তাহাব কাজ ছাড়ার উপর তিরস্কার জায়েয নেই।
অনুপস্থিতদের ব্যাপারে মনে বিদ্বেষ, ঘৃণা, ক্রোধ বদ্ধমূল করা হয়।
কুরআন খতমের আয়োজকরা বেশি লোকের উপস্থিতিতে গর্ব করে।
প্রচলিত কুরআন খতম এত জরুরী মনে করা হয় যে, যদি কোনো মানুষ কুরআন খতম না করায় অথবা তার খতমের আয়োজনে মানুষ কম হয় তবে সে সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
পুরো কুরআন খতম জরুরী মনে করা হয়, অথচ শরীয়তে বরকত এবং ছওয়াবের জন্য কোনো পরিমাণ নির্দিষ্ট নেই। কুরআন তেলাওয়াত ছাড়া যিকর আযকার, তাসবীহাত, নফল এবং সাদাকাত ইত্যাদি অন্যান্য পদ্ধতিতেও এই উদ্দেশ্য অর্জন হয়।
যদি পড়ার জন্য মানুষ কম জমা হয় তখন তার পুরো কুরআন খতমকে নিজের উপর চাপ এবং বিষের ঢোক মনে করে যে কোনভাবে তা গলা থেকে সরানোর চেষ্টা করা হয়। অথচ হাদীসে বর্ণিত হচ্ছে,

(اقرؤوا القرآن ما ائتلفت قلوبكم فإذا اختلفتم فقوموا عنه) (صحيح بخاري:ج:2ص:757)

অর্থাৎ (ঐ সময় পর্যন্ত কুরআন পড় যতক্ষন মনে বিরক্তিবোধ না হয় এবং যখন ক্লান্ত হয়ে পড় তখন ছেড়ে দাও)[13]

৮. এই অবস্থায় তাজবীদের নিয়ম কানুন, হুরূফের সিফাতের বিশুদ্ধ আদায়, গুন্নাহ, ইখফা, ইজহার এবং মদসমূহের প্রতি খেয়াল করা ব্যতীত শব্দ ও অক্ষর কেটে প্রাণ পরিত্রাণের চেষ্টা করা হয়।

প্রচলিত কুরআন খতমে এমন লোক আসে যে কুরআন পড়া জানে না। তখন সে কুরআন হাতে নিয়ে প্রত্যেক লাইনে বিসমিল্লাহ পড়ে অথবা শুধু আঙ্গুল ফিরিয়ে পারা রাখা দেয়। একে আঙ্গুল এবং বিসমিল্লাহ খতম বলা হয়, শরীয়তে যার কোনো প্রমাণ নেই। বরং এতে কুরআনের অবমাননা।
খতমের শেষ পর্যন্ত বসাকে জরুরী মনে করা হয়। তাই কোনো ব্যক্তি নিজের পারা শেষ করে কঠিন প্রয়োজন সত্বেও উঠার সাহস করে না। কেননা এটাকে অত্যন্ত দোষনীয় মনে করা হয়।
কোনো কোনো মানুষের তেলাওয়াতে সেজদার জ্ঞান থাকে না, ফলে সে সেজদার আয়াত পড়ে এবং শোনে তেলাওয়াতে সেজদা না করার কারণে নেকীর পরিবর্তে ওয়াজিব ছাড়ার গোনাহ নিজের মাথায় বহন করে।
কোনো কোনো জায়গায় কুরআন খতমের আয়োজক সবার পক্ষ থেকে চৌদ্দ সাজদা আদায় করে নেয়। এতে পাঠকদের দায়িত্ব আদায় হয় না এবং শরীয়ত বিরোধী কাজের কারণে সাজদাকারী গোনাহগার হয়।
প্রচলিত কুরআন খতমে মিঠাইর ব্যবস্থা করা হয়। ‘‘প্রচলিত নিয়ম শর্তের ন্যায়’’ মূলনীতির আলোকে এটা পাঠকদের পারিশ্রমিক, আর কুরআন পড়ার পারিশ্রমিকের দাতা, গ্রহিতা উভয় গোনাহগার। তাহলে এখানে নেকীর কী প্রত্যাশা করা যায়? আর যেখানে পাঠকের নিজের ছওয়াব হচ্ছে না, সেখানে মৃত ব্যক্তির জন্য তার ঈসাল কিভাবে হতে পারে ?
দাওয়াত বা মিঠাইকে এমন জরুরী করে রাখা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি এর ব্যবস্থা করে না তার উপর অভিশাপ ও তিরস্কারের ঝুড়ি পড়ে।
প্রচলিত কুরআন খতমের জন্য তিনদিনা, চল্লিশা ইত্যাদি বিশেষ দিন নির্দিষ্ট করা হয়। আর অনির্দিষ্ট ইবাদতের জন্য নিজের পক্ষ থেকে দিন নির্দিষ্ট করা মাকরূহ, না-জায়েয বরং বিদ‘আত।
জারীর ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

" كنا نعد الاجتماع إلى أهل الميت وصنعهم الطعام من النياحة ".

‘‘মৃতব্যক্তির পরিবারে সমবেত হওয়া এবং তারা খাবারের আয়োজন করাকে আমরা ‘নাওহা’[14](বিলাপ) গণ্য করতাম’’ আর বিলাপ করা হারাম।

প্রচলিত কুরআন খতমে অংশগ্রহণকারী এবং যিনি অংশগ্রহণ করান সবার উদ্দেশ্য থাকে লোক দেখানো। লোকদেখানোর কারণে মানুষের বড় বড় আমল নষ্ট হয়ে যায়।

হাদীসে রয়েছে লোক দেখানো আমলকারীর আমল এমন ধ্বংস হয় যেমন আগুন লাকড়ি খেয়ে ফেলে[15]এবং আল্লাহর কাছে এমন আমল প্রত্যাখ্যাত। অতএব যে আমলটি আল্লাহর জন্য করার ছিল, বরকত এবং ছওয়াব পৌছা উদ্দেশ্য ছিল, লোকদেখানোর কারণে সমস্ত আমলে আগুন লেগে গেছে। ছওয়াব কি মিলবে? উল্টো লোকদেখানোর আযাব মাথার উপর আসলো।এই সমস্ত খারাবী শরীয়ত এবং সুন্নাত থেকে চেহারা ফিরিয়ে নেওয়ার ফলাফল। এর বিপরীত যদি শরীয়তের পদ্ধতি অবলম্বন করা হত তাহলে আরাম হত। এত কষ্ট উঠাতে হত না। ইখলাসের সহিত ও আল্লাহর জন্য হত। যার বদলে পাঠক ছওয়াব পেত। মৃত ব্যক্তির কাছেও ছওয়াব পৌছত। লোক দেখানো মারাত্মক গোনাহও মাথায় নিতে হত না।

[1] ‘আল-মুনইয়াহ’ অর্থাৎ ‘মুনইয়াতুল মুসাল্লী’, এই কিতাবের দু্ই ব্যাখ্যাকার দ্বারা উদ্দেশ্য সম্ভবত, ‘গুনইয়াতুল মুতামাল্লী’ এবং ‘আল-ক্বুনইয়া’ কিতাবদ্বয়ের রচয়িতা। দুটি কিতাবই ‘মুনইয়াতুল মুসাল্লী’র শরাহ। কিতাব দুটি দুর্লভ ও সম্মুখে না থাকায় এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারিনি। (সংকলক)

[2] ইমাম নুরুদ্দীন আলী ইব্নু গানিম আল-মাক্দিসী আল-হানাফী। মৃত্যু:১০০৪ হিজরী (কাশফুয যুনুন:১/৮৪০)। সালাতুর রাগাইব নামে সালাতের বিদ‘আত সম্পর্কে তার লিখিত কিতাবের নাম, ردع الراغب عن الجمع في صلاة الرغائب

[3] রাদ্দুল মুহ্তার, কিতাবুস সালাত, বিতর ও নফল অধ্যায়, ২/২৬

[4] ইবনে মাজাহ, সনদ সহীহ, মৃত ব্যক্তির পরিবারে সমবেত হওয়া এবং খাবারের আয়োজন করা নিষেধ অনুচ্ছেদ, হাদীস নং ১৬১২, ইবনে মাজাহ এর হাদীসটির শব্দ হলো:

كنا نرى الاجتماع إلى أهل الميت وصنعة الطعام من النياحة

মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং:৬৯০৫, মুসনাদে আহমদের শব্দ:

كُنَّا نَعُدُّ الِاجْتِمَاعَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنِيعَةَ الطَّعَامِ بَعْدَ دَفْنِهِ مِنْ النِّيَاحَةِ

[5] সম্ভবত আবুল ক্বাসিম আল-কুশাইরী নাইসাবুরী রচিত ‘কিতাবুল মি‘রাজ’ উদ্দেশ্য।

[6] রাদ্দুল মুহতার, সালাত অধ্যায়, সালাতুল-জানাযা অনুচ্ছেদ, ২/২৪০।

[7] সিনানুদ্দীন ইউসুফ আল-আমাসী আল-হানাফী, আল-মক্কী, মৃত্যু: ১০০০ হিজরীর পাশাপাশি।

[8] আল-ইমাম তাজুশ-শরীয়াহ, আহমদ ইবন উবাইদুল্লাহ আল-মাহবুবী আল-হানাফী উমর ইবন সাদরুশ-শরীয়াহ আল-আওয়াল, মৃত্যু:৬৭২ হিজরী। তার লিখিত হেদায়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘নিহায়াতুল কিফায়াহ ফি দিরায়াতিল হিদায়াহ। (কাশফুয-যুনুন ২/২০২২)

[9] প্রখ্যাত হানাফী মুহাদ্দীস আবু মুহাম্মদ আল্লামা বদরুদ্দীন আল-আইনি। ৭৬২৮৫৫ – হিজরী১৩৬১ - -১৪৫১ ঈসায়ী। তার লিখিত হেদায়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আল-বিনায়াহ’। দেখুন, বর্ণিত কিতাবের কারাহিয়্যাহ অধ্যায়, মাসাঈলু মুতাফার্রিক্বাহ, ১১/২৬৭।

[10] রাদ্দুল-মুহতার, কিতাবুল ইজারাহ, মাতলাবুন ফিল-ইসতিজার আলাত্-ত্বা‘আত, : ৬/৫৬।

[11] ফিক্বহে হাম্বলীতে রচিত কিতাব, মূল নাম ‘মুনতাহাল-ইরাদাত ফিল জাম্‘ঈ বাইনাল মুক্বান্না‘ঈ ওয়াত্-তানক্বীহি ওয়ায্-যিয়দাত’, লেখক, তাক্বীউদ্দীন মুহাম্মদ ইবন আহমদ ইবন আব্দুল আযিয ইবনুন্-নাজ্জার আল-ফুতুহী আল-মিসরী, মৃত্যু: ৯৭২ হিজরী।

[12] রাদ্দুল মুহতার, প্রাগুক্ত অধ্যায়:৬/৫৭।

[13] সহীহুল বুখারী, অধ্যায়: কুরআনের ফযিলত সমূহ, অনুচ্ছে: যতক্ষন মন চায় ততক্ষন কুরআন তেলাওয়াত করা। নং: ৪৭৭৩।

[14] ‘নাওহা’ বা ‘নিয়াহাহ’, অর্থাৎ বিলাপ করে মৃত ব্যক্তির উপর ক্রন্দন করা। ইসলাম পূর্ব জাহেলী যুগে কেউ মারা গেলে বিলাপ করে ক্রন্দনের প্রচলন ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কর্মকে জাহেলী কর্ম আখ্যা দেন এবং তা হারাম ঘোষণা করেন। দেখুন, বুখারী, ‘মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ মাকরূহ অধ্যায়’। সহীহ মুসলিম, নিয়াহার উপর কঠোরতা অধ্যায়। বুখারীর একাধিক অধ্যায়ে এ বিষয় সংক্রান্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

[15] লোকদেখানো আমলকে শরয়ী পরিভাষায় ‘রিয়া’ বলা হয়। কুরআন হাদীস উভয়ের মাধ্যমে ‘রিয়া’ হারাম প্রমাণিত। হাদীসে ‘রিয়া’কে শিরকে আসগর বা ছোট শিরক গণ্য করা হয়েছে। ‘রিয়া’ হারাম বা কবীরা গোনাহের অন্যতম এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে লেখক এখানে হাদীসে রয়েছে বলে যে কথা উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ ‘‘লোক দেখানো আমলকারীর আমল এমন ধ্বংস হয় যেমন আগুন লাকড়ি খেয়ে ফেলে’’ এই মর্মের কোনো হাদীস রয়েছে বলে অবগত হতে পারিনি। (সংকলক)

ঈসালে ছওয়াবের সঠিক পদ্ধতি এই যে, মৌখিক এবং শারীরিক ইবাদতের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ ঘরে একাকীভাবে যে ইবাদত করে, নফল নামায পড়ে, নফল রোজা রাখে, তাসবীহ আদায় করে, তেলাওয়াত করে, নফল হজ্ব বা উমরা করে, তাওয়াফ করে এগুলোতে শুধু এই নিয়্যাত করে নিবে যে, এর ছওয়াবটুকু আমাদের অমুক দোস্তের কাছে পৌঁছুক। তা পৌঁছে যাবে। এটাই হচ্ছে ঈসালে সওয়াব। যে ছওয়াবটুকু তোমার নিজের পাবার কথা তা তোমার জন্য অর্জিত হয়ে যাবে এবং যে সমস্ত লোকদের নিয়্যাত করা হয়েছে তারাও এর পুরো ছওয়াব পেয়ে যাবে।[1]

আর্থিক সাদাকা খায়রাতের সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো, নিজের সামর্থানুযায়ী নগদ অর্থ কোনো কল্যাণমূলক কাজে লাগিয়ে দিবে অথবা কোনো মিসকিনকে দিয়ে দিবে।

এই পদ্ধতি এ জন্য উত্তম যে, এতে মিসকিন নিজের প্রয়োজন পুরা করতে পারে। যদি আজ তার কোনো প্রয়োজন না হয় তবে কালকের জন্য রাখতে পারে। তা ছাড়া এই ব্যবস্থাটি লোকদেখানো হতে মুক্ত। হাদীসে গোপনে সাদাকাকারীর এই ফযিলত বর্ণিত হয়েছে যে, এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ কিয়ামত দিবসে নিজের রহমতের ছায়ায় জায়গা দিবেন, যখন আর কোনো ছায়া থাকবে না এবং গরমের কারণে মানুষ ঘামে ডুবে যাবে।

ফযিলতের দিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির সাদাকা হচ্ছে, মিসকিনের প্রয়োজন অনুসারে তাকে সাদাকা করবে। অর্থাৎ প্রয়োজন দেখে তা পুরা করবে।

ঘর ও দোকানের বরকতের জন্যও মালিক নিজে উপরোক্ত ব্যবস্থাগুলো অবলম্বন করবে।

والله سبحانه وتعالى أعلم

১৪ রবিউল আওয়াল ১৪১৭ হিজরী।

পাঠক, এই হলো উনার বক্তব্য। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, উনার লেখায় অসংখ্য কিতাব ও ফকীহের বক্তব্য ও তথ্য রয়েছে। এই লেখা পড়ার পর আশা করি সত্যসন্ধানী আলেমের জন্য বিষয়টি বুঝতে কোনো সমস্যা পেতে হবে না। একমাত্র পেটপূজারী আলেম ছাড়া কেউই হিলার বাহানা তালাশ করে উনার লিখার বিরুদ্ধে কলম ধরবেন না। শরীয়তে বৈধ বা হালাল থাকা এক কথা, আর বৈধ বানানো আরেক কথা। কুরআন হাদীসে কোনো জিনিসের বৈধতা থাকা এক কথা, কুরআন হাদীস দিয়ে বৈধ বানানো আরেক কথা। তবে প্রথমটি আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আলেমদের গুণ। আর দ্বিতীয়টি গুমরাহ পেটপূজারী আলেমদের গুণ। বিষয়টি সহজে বোঝার জন্য একটি উপমা পেশ করছি। যেমন ধরুন, রাসূল আলিমুল গাইব নন বিষয়টি কুরআন ও হাদীসে দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যিনি বলছেন রাসূল আলিমুল গাইব নন, তার দলীল কুরআন ও হাদীসের একাধিক জায়গায় রয়েছে। পক্ষান্তরে যে আলেম দাবী করছেন রাসূল আলিমুল গাইব, তিনি কুরআন হাদীস থেকেই তার মতের স্বপক্ষে দলীল দিচ্ছেন। তবে তার দাবীর পক্ষে কোনো দলীল কুরআন বা হাদীসে নেই। তিনি কিছু দ্ব্যর্থবোধক আয়াত ও হাদীসকে তার মতের পক্ষে দলীল বানাচ্ছেন। এই দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের আলেম ছাড়া কেউই প্রচলিত খতমে কুরআনের স্বপক্ষে ওকালতি করতে পারেন না, কেননা এসবের অস্তিত্ব কুরআন, হাদীস, সাহাবা জীবনে নেই, এমনকি খাইরুল কুরুন তথা সোনালী প্রজন্ম (রাসূল, সাহাবা ও তাবে‘ঈ) এর কোনো যুগেও এর অস্তিত্ব খোঁজে পাবেন না।

প্রচলিত খতমের অস্তিত্ব খাইরুল কুরুনে না থাকায় বিষয়টি বিদ‘আত হওয়ার সাথে সাথে লেখক আরো অনেক খারাবী তুলে ধরেছেন, যা উনার অভিজ্ঞতার আলোকে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে উল্লেখিত কারণ ছাড়াও আরো যে সমস্ত খারাবী রয়েছে তার কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরছি। এই অভিজ্ঞতা সবার নাও থাকতে পারে। আমি অধমের কাছে যে বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়েছে তার কয়েকটি উল্লেখ করব।

  1. পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ সৃষ্টি। মনের হিংসার জ্বালা প্রকাশ্যে রুপ নিতে অনেকের বেলায় দেখা গেছে। যেমন, একজন কোথাও দশজন নিয়ে যাওয়ার কথা। বাস্তবতা হলো, দশজন হলে এক প্রতিষ্ঠানের সবাইকে খতমের তালিকায় রাখা সম্ভব নয়। এ থেকেই হিংসা ও সমালোচনার সুত্রপাত। যা খতমের দু একদিন পর্যন্ত বা আরো বেশি চলতে থাকে।
  2. অন্যের মনে জ্বালা সৃষ্টির জন্য অযথা ঠাট্টাস্বরূপ খতমের কথা বলা। অথচ হাদীসের দৃষ্টিতে মিথ্যা বলা কাজে হোক বা ঠাট্টায় হোক সর্বাবস্থায় হারাম। সাধারণ নিমণ শ্রেণির উস্তাদ নয় বরং অনেক শ্রদ্ধাভাজন আলেম যারা দাওরায়ে হাদীসে পড়ান তাদের অনেকের কাছ থেকেও এ সব আচরণ পাওয়া যায়, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।
  3. মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া। যেমন অনেক সময় খতম না করেই খতমের আয়োজককে মিথ্যা বলা।
  4. কুরআনের সাথে ব্যবসায়িক পণ্যের মত লেনদেনের আচরণ করা এবং কুরআন নিয়ে বেয়াদবীমূলক কথা বলা। যেমন, অহরহ একথা বলতে শুনা গেছে, সিলেটি ভাষায় ‘যেলা পয়সা ওলা খতম’ অর্থাৎ টাকা হিসেবে খতমের মান নির্ণয় করা হয়। অনেককে আগেই ‘কয়টেকি খতম’ অর্থাৎ কত টাকার খতম, একথা বলতে শুনা যায়। এভাবে টাকার উপর কুরআন পড়ার মান নির্ণয় করা কুরআনের সাথে কতটুকু বেয়াদবী? তা পাঠক নিজেই বলুন। অসতর্কতায় আমার মুখ থেকেও দু-একদিন এমন কথা বের হয়েছে। আল্লাহর কাছে তওবা করেছি। আবারো করছি, তিনি যেন আমাকে মাফ করেন।
  5. কুরআন সামনে নিয়ে হাসি, তামাশা, গল্পগুজবের মধ্য দিয়ে তেলাওয়াত করা। আয়োজক সামনে থাকলে তার ভয়ে একটু মনোযোগ দিয়ে পড়া। এ থেকে স্পষ্ট যে, টাকাই প্রচলিত খতমের মূল টার্গেট।
  6. টাকাই যে মূল টার্গেট তা সবার মনে জানা রয়েছে। সবার আচরণে একথা স্পষ্ট। মূল টার্গেট টাকা থাকাবস্থায় আল্লাহর কাছে এসব খতমের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, আলেম বলতেই একথা জানেন। একথা জানা থাকা সত্বেও নিজের পেট পালার তাগিদে দীন সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তির অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাকে ধোঁকা দেয়া। তাকে রাসূলের শিক্ষার আদেশ না দিয়ে খতমের কথা বলা, অথবা নিজ থেকে না বললেও তাকে তার অজ্ঞতার উপর রাখা। সঠিক সুন্নাতের দিশা না দেওয়া। অথচ সঠিক ইলম প্রকাশের সুযোগ থাকা সত্বে তা গোপন রাখা অবৈধ। হাদীসে এর উপর ধমকি এসেছে।

এছাড়া সমাজিকভাবে আরো অনেক বিষয় রয়েছে যা আলেমদের জন্য লজ্জাজনক ও তাদের মান সম্মানে আঘাত, এই খতমকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। আহসানুল ফাতওয়ার লিখাটি অনুবাদ করার পর এ বিষয়ে নিজ থেকে কিছু লিখার প্রয়োজন ছিল না। যা নিজেই পূর্বে উল্লেখ করেছি, তথাপি দু-একটি কথা না লিখে পারলাম না। আল্লাহ প্রথমে আমাকে এবং আমাদের সবাইকে হেদায়াতের উপর পরিচালিত করুন। সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনার তওফীক দান করুন। আমীন।

>
[1] আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আলেমগণ ঈসালে ছওয়াবের বেলায় দুই ভাগে বিভক্ত। একদল কুরআনের আয়াত,‘‘وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى ’’ অর্থাৎ: আর মানুষের জন্য তার চেষ্টা ব্যতীত কোনো কিছু নেই, (সূরা নাজম:৩৯) এই মর্মের আয়াত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস,

"إذا مات الإنسان انقطع عمله إلا من ثلاث صدقة جارية وعلم ينتفع به وولد صالح يدعو له"

‘‘মানুষ যখন মারা যায় তখন তাঁর তিনটি আমল ব্যতীত সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। সাদাকায়ে জারিয়াহ, যে ইলম দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং নেক সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করে।’’ (তিরমিযী, হাদীস সহীহ, ওয়াক্বফ অনুচ্ছেদ, নং:১৩৭৬) এই হাদীসের আলোকে তারা বলেন: হাদীসে উল্লেখিত তিন বস্তু ব্যতীত অন্য কিছুর ঈসাল হয় না। কেননা; হাদীসে তিন বস্তু ছাড়া সব আ‘মাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা এসেছে। আর এ তিনটি মূলত তার নিজের চেষ্টার ফসল। সুতরাং এই হাদীস আর আয়াতে কোনো বিরোধ নেই। তবে সাদাকা যেহেতু শারীরিক ইবাদত নয়, জীবিত ব্যক্তিকে তা দেওয়া যায়, তার পক্ষ থেকে অন্যকে দেওয়া যায়, মৃত্যুর পরও তার পক্ষ থেকে দেওয়া যাবে। কিন্তু শারীরিক ইবাদত কাউকে দেওয়া যায় না তাই তার ঈসাল ও নেই। তবে শারীরিক কিছু ইবাদত যার ঈসাল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সেগুলো মানসুস হওয়ার কারণে তা এই কায়দা থেকে মুসতাসনা বা ব্যতিক্রম থাকবে। এই দল আলেমদের মতে কুরআন তেলাওয়াত যেহেতু একটি শারীরিক ইবাদত তাই তার ঈসালই হবে না, কেননা এব্যাপারে কোনো নস নেই। আর ইবাদতে বিষয় গাইরে মা‘কুল, তাই আমরা তাকে অন্য ইবাদতের উপর ক্বিয়াস করতে পারি না। আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অপরদল মনে করেন, যে কোনো ইবাদতের ঈসাল হতে পারে। আমাদের লেখক এমতের প্রবক্তা হিসেবে কুরআন তেলাওয়াতের ঈসালের সঠিক পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন।

ইউনুস আলাইহিস সালাম আল্লাহর প্রেরিত একজন নবী। আল্লাহর নির্দেশের পূর্বে তিনি তাঁর গোত্র থেকে হিজরত করে চলে যান। আল্লাহর কাছে তাঁর এ কাজ অপছন্দনীয় হলে ইউনুস আলাইহিস সালামকে মাছের পেটে যেতে হয়। যার বিবরণ কুরআন পাকে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। কমবেশ আমাদের সবারই ঘটনাটি জানা আছে। বিপদে পড়ে যে কেউ নিজের গোনাহের স্বীকারোক্তি বা তওবা করে আন্তরিকভাবে আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ তাঁর ডাক শুনেন। ইউনুস আলাইহিস সালামের মাছের পেটে পড়ার বিপদ থেকে উদ্ধারের এই কাহিনিটি থেকে আল্লাহ আমাদেরকে এই খবরটি দেন। উদ্ধারের কাহিনিটি আল্লাহ যেভাবে উল্লেখ করেন তাতে বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি সাল্লামকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তা‘আলা কয়েকজন নবীর কথা স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে বলেন,

﴿ وَذَا النُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَى فِي الظُّلُمَاتِ أَن لا إِلَهَ إِلا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ وَكَذَلِكَ نُنجِي الْمُؤْمِنِينَ ﴾ ( سورة الأنبياء: 87-88 )

‘‘আর আপনি মাছওয়ালার কথা স্মরণ করুন, তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাকে আটকাবো না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহ্বান করে বললেন, তুমি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তুমি দোষমুক্ত, নিশ্চয় আমি গোনাহগার। অতঃপর আমি তার আহ্বানে সাড়া দিলাম। এবং তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনিভাবে মুমিনদের মুক্তি দিয়ে থাকি’’।[1]

এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই? একটু চিন্তা করলেই যে কেউ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে। অর্থাৎ যে কোনো বিপদে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনই একজন মুমিনের করণীয়। সকাতরে আল্লাহকে ডাকলে তিনি তাঁর ডাকে অবশ্যই সাড়া দিবেন।

এবার আমরা দেখি হাদীসে এ দো‘আর ব্যাপারে আমাদের জন্য কী দিকনির্দেশনা রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

" دعوة ذي النون إذا دعا وهو في بطن الحوت لا إله إلا أنت سبحانك إني كنت من الظالمين فإنه لم يدع بها رجل مسلم في شيء قط إلا استجاب الله له ". ( سنن الترمذي،كتاب الدعوات عن رسول الله صلى الله عليه و سلم، باب 82 ، رقم: 3505، مسند احمد، مسند سعد بن أبي وقاص، رقم: 1462)

‘‘মাছওয়ালা যখন মাছের পেটে থাকাবস্থায় দো‘আ করেছিলেন তখন তার দো‘আ ছিল,

لا إِلَهَ إِلا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

(তুমি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তুমি দোষমুক্ত, নিশ্চয় আমি গোনাহগার) অতএব যখনই কোনো মুসলিম ব্যক্তি কোনো বিষয়ে এর মাধ্যমে দো‘আ করেছে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।’’[2]

কুরআন হাদীসের শিক্ষা থেকে যে বিষয়টি উপলব্ধি হয় তা অত্যন্ত স্পষ্ট। সাধারণ ব্যক্তিও চিন্তা করলে বিষয়টি বুঝতে পারবেন। কুরআন হাদীসের শিক্ষা থেকে আমরা বুঝলাম, যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো বিপদে পড়লে এই দো‘আটি করতে পারে। এই দো‘আ করলে আল্লাহ তাকে বিপদ মুক্ত করবেন বলে আমরা পূর্ণ আশাবাদী হতে পারি। কিন্তু কে বা কারা প্রথমে কুরআন হাদীসের এই শিক্ষার পরিবর্তন ঘটিয়ে খতমে ইউনুস নামে খতম আবিষ্কার করেছে তার ইতিহাস আমাদের কাছে না থাকলেও অভিজ্ঞতার নামে আমরা কুরআন হাদীসের শিক্ষার বিপরীত চলছি। সাধারণ মানুষের অজ্ঞতাকে পূঁজি করে আমাদের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার প্রচার না করা কতটুকু আমানতদারী তা প্রশ্নযোগ্য। বিবেকের কাছে কি আমরা কখনো প্রশ্নের সম্মুখীন হই না? না কি পেটের তাগিদে আমাদের বিবেকই নষ্ট হয়ে গেছে?

এই খতমের বিবরণ যেভাবে দেওয়া হয়েছে:

‘‘কঠিন বিপদ মামলা-মোকাদ্দমা ও সঙ্কটের সময় এই দো‘আ সোয়া লক্ষ বার পড়িবে। প্রত্যেক একশতবার পড়া হইলে শরীর বা মুখে পানি দিবে। পাক অবস্থায় পাক বিছানায় বসিয়া কেবলামুখী হইয়া পড়িবে। ৩,৭ কিংবা ৪০ দিনে শেষ করিবে। মাছের পেটের ভিতর অন্ধকারের এই দোয়া জন্মলাভ করিয়াছে বলিয়া অন্ধকারে বসিয়া পড়িলে আরও সত্বর ফল লাভ হয়। খতম শেষ হইলে একবার এই আয়াত পড়িবেঃ

( فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ وَكَذَلِكَ نُنْجِي الْمُؤْمِنِينَ (الانبياء: 88) )

উচ্চারণঃ ফাসতাজাবনা লাহু ওয়া নাজ্জাইনাহু মিনাল গাম্মি ওয়া কাযালিকা নুনজিল মুমিনীন। (১৭ পারা, সূরা আম্বিয়া, আয়াত:৮৮)

অর্থঃ ‘‘তৎপর আমি তাঁহার (হযরত ইউনুস নবীর) দোয়া কবুল করিয়াছিলাম এবং তাঁহাকে কঠিন বিপদ হইতে উদ্ধার করিয়াছিলাম এবং এইরূপে আমি বিশ্বাসীগণকে উদ্ধার করিয়া থাকি।’’ এই তাদবীরকে খতমে ইউনুস বলা হয়। ইহা প্রত্যেক ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী ও অব্যর্থ ফলপদ বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে।’’[3]

এখানে আমরা কুরআন হাদীসের শিক্ষার সাথে দুই ধরণের বৈপরীত্য দেখতে পাই।

এক: নির্দিষ্ট সংখ্যার ব্যাপারটি। যা কুরআন হাদীসের শিক্ষার বিপরীত।

দুই: বিপদে যিনি পড়েন তিনি আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করে দো‘আটি না পড়ে অন্যকে দিয়ে পড়ানো। যার কোনো শিক্ষা কুরআন বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন থেকে আমরা পাই না। সবচেয়ে হাসির ব্যাপার হলো, বিপদে পড়লাম আমি, আর আরেকজনকে এনে তাকে দিয়ে দো‘আ পড়াচ্ছি, সে তার দো‘আয় বলছে ‘নিশ্চয় আমি গোনাহগার’ আমি বিপদে পড়ে অন্যকে গোনাহগার বলানোর মাধ্যমে আমার নিজের কী লাভ?

একটু ভেবে দেখলাম না। একদিন একজন সাধারণ মানুষ আমাকে কথাটি বলে হাসিয়ে দিয়েছেন। আলেম না হয়েও তার এই উপলব্ধি দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হলাম এবং নিজেকে ধিক্কার দিলাম এই বলে যে, বুঝেও কেন এতে জড়িত রয়েছি। আল্লাহ আমাকে মাফ করুন।

এভাবে এসব খতমের মাধ্যমে সমাজে ‘পুরোহিততন্ত্র’ চালু হয়েছে। ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে সুন্নাত সম্মত দো‘আ পড়ে মনের আবেগ নিয়ে আল্লাহর কাছে কাঁদবে এবং বিপদমুক্তি প্রার্থনা করবে। নেককার মানুষের কাছে দো‘আ চাওয়া যাবে। তিনি তার মত করে তার জন্য দো‘আ করবেন।

অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে বৈধ করা

এসব খতম বৈধ করার স্বার্থে অভিজ্ঞতার কথা বলে ফতোয়া চালিয়ে দিতে দেখা যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার বিপরীত কার অভিজ্ঞতা বা কার কথার এত মূল্যায়ন যা রাসূলের শিক্ষাকেও হার মানায়? আর যিনি এ নির্দিষ্ট সংখ্যার অভিজ্ঞতার কথা বললেন, তিনি নিজে পড়ার কথা বললেন, না কি অন্যকে দিয়ে পড়ানোর? যাই হোক এর কোনটিই যেহেতেু রাসূলের শিক্ষা নয় তাই আমরা এ সবের পিছনে পড়ার প্রয়োজন বোধ করি না। এ সব কথাবার্তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে করে শরীয়ত পরিবর্তন হয় বলে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। একটি সহজ উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে বলে আশা করছি।

যেমন ধরুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের আলোকে আমরা জানি, সাদাকা বা দানের মাধ্যমে বালা মুসিবত দূর হয়। এবার মনে করুন কোনো ব্যক্তি কোনো এক তারিখের নির্দিষ্ট সময়ে, যেমন সে শাওয়াল মাসের ৬ তারিখ শনিবার বিকাল ৫টার সময় ১০ টাকা দান করল। আল্লাহর অনুগ্রহে তার একটি মুসিবত দূর হলো। আমরা বলতে পারি এই সাদাকার ওসীলায় হয়ত আল্লাহ তাঁর মুসিবত দূর করেছেন। কেননা সাদাকায় মুসিবত দূর হয় বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস থেকে আমরা পেয়েছি। এমন কয়েকবার হলে সে বলতে পারে, অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে সাদাকায় মুসিবত দূর হয়। কিন্তু এ দানকারী লোকটি যদি বলে, অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে ১০ টাকা দান করলে মুসিবত দূর হয় তাই সবাই দশ টাকা দান করাকে আমল বানান। আরেকটু এগিয়ে যদি বলে, শাওয়াল মাসে দশ টাকা দান করলে মুসিবত দূর হয়, আরো বাড়িয়ে যেমন, শাওয়াল মাসের ৬ তারিখ দশ টাকা দান করলে মুসিবত দূর হয়, আরেকটু এগিয়ে যেমন, শাওয়াল মাসের ৬ তারিখ শনিবার বিকাল ৫টার সময় ১০ টাকা দান করলে মুসিবত দূর হয়। তাই সবাই এভাবে আমল করুন। তাঁর এই কথাগুলো একেবারে মুর্খ ছাড়া কেউ গ্রহণ করবেন বলে জানি না। যদিও সে তার আমলের ফলাফল এভাবে পেয়েছে। কিন্তু তার এই অনুভূতি রাসূলের শিক্ষা বিবর্জিত।

এতে শরীয়তের মূল শিক্ষা পরিবর্তন হয়, তাই তার অনুভূতি কখনো গ্রহণ করা যায় না বা অভিজ্ঞতার নাম দিয়ে এ ধরণের আমল শুরু করা যায় না। এবার এর আলোকে আমরা ‘খতমে ইউনুস’ নামের খতমের কথাটি চিন্তা করি। আশাকরি এসবের অসারতা বুঝতে আর কারো কোনো দ্বিধা থাকবে না।এতো হলো খতমের নামে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তন থেকেই খতমকে কেন্দ্র করে অন্যান্য খারাবী ও নাজায়েযের সুচনা। যে কোনো সুন্নাতকেই তার স্বাভাবিক অবস্থা তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলের রূপরেখা থেকে সরিয়ে দিলে সুন্নাত নিমজ্জিত হওয়ার সাথে সাথে আরো অনেক নাজায়েয যোগ হয়। যার অনেকটা আমরা ইতোপূর্বে খতমে কুরআনের শেষে উল্লেখ করেছি। অধিক সংখ্যক পড়া নিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া, খতম পাঠকারী হুজুর ও খতমের আয়োজকের মাঝে সন্দেহ, মন কষাকষির সৃষ্টি হওয়া, টাকার পরিমাণ হিসেবে খতমের সংখ্যায় কমবেশ করা, আলেমদের সাথে জাহেলের বেয়াদবীমূলক আচরণ ইত্যাদি। টাকার স্বার্থে বুঝে না বোঝার ভান করে অনেক শ্রদ্ধাভাজন আলেমকে তাঁর সম্মান বা নিজ অবস্থানের অনেক নিচে নামতে দেখা যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ সব থেকে পরিত্রাণ দান করুন এবং হুবহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরীক্বার উপর চলার তওফিক দান করুন।

>
[1] সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭-৮৮।

[2] তিরমিযী, সুনান, হাদীস সহীহ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু‘আ অধ্যায়, ৮২ নং অনুচ্ছেদ, হাদীস নং: ৩৫০৫, আলবানী, তিরমিযির সহীহ ও দয়ীফ, ৮/৫, মুসনাদে আহমদ, সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্বাসের হাদীস, নং:১৪৬২।

[3] নেয়ামুল কুরআন, মৌলবী শামছুল হুদা, রহমানিয়া লাইব্রেরী, একাদশ সংস্করণ, পৃষ্ঠা: ১২০।

মুমিন ব্যক্তির জীবনে হাদীসের গুরুত্ব অপরিসীম। হাদীস ছাড়া মুমিন তাঁর ইসলামী জীবন কল্পনা করতে পারে না। কুরআন হাদীস উভয় মিলেই তাঁর জীবন পরিচালিত। তাই কুরআনের মতই হাদীস শিক্ষা করা, হাদীস চর্চা করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। প্রতিটি মুমিনের জন্য জ্ঞান শিক্ষা করা ফরয। আর কুরআন ও হাদীসই হচ্ছে মুসলিমের মূল জ্ঞান ভাণ্ডার। এই হাদীস শিক্ষা, চর্চা, মুখস্থ রাখা, সংরক্ষণ করা ও প্রচার প্রসারে সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে উম্মতের একদল আলেম তাদের জীবনের পুরো অংশটিই ব্যয় করে দিয়েছেন। যাদের মেহনত, শ্রমের বদৌলতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস সঠিকভাবে আমাদের পর্যন্ত পৌছেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« نضر الله امرأ سمع منا حديثا فحفظه حتى يبلغه فرب حامل فقه إلى من هو أفقه منه ورب حامل فقه ليس بفقيه».

(سنن أبي داود، كتاب العلم، باب فضل نشر العلم، رقم: 3662، سنن الترمذي، كتاب العلم عن رسول الله صلى الله عليه وسلم، باب الحث على تبليغ السماع، رقم: 3656)

‘‘আল্লাহ তাঁর চেহারাকে উজ্জল করুন যে আমার কাছ থেকে কোনো হাদীস শুনল, অতঃপর সে তা সংরক্ষন করল, এমনকি তা অন্যের কাছে পৌছাল। অনেক ফিক্বহ (হাদীস) এর ধারক এমন রয়েছে, সে যার কাছে পৌছায় সেই ব্যক্তি তাঁর চেয়ে অধিক ফক্বীহ। আর অনেক ফিক্বহের ধারক নিজে ফক্বীহ নয়।’’[1]

হাদীসটির মর্ম হচ্ছে, অনেক সময় এমনও হয় যে, যার কাছে পৌছানো হয় সে হাদীসের মর্ম বা ভাব যিনি পৌছিয়েছেন তার চেয়ে বেশি বুঝেন। আবার এমনও অনেক রয়েছেন যিনি শুধুমাত্র হাদীসটি মুখস্থ রাখতে পেরেছেন কিন্তু তার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারেন নি, হতে পারে যার কাছে পৌছাবেন তিনি এর তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবেন, তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসকে বেশি বেশি পৌছানো ও প্রচারের দিকে উৎসাহিত করেছেন।

উলামায়ে কেরামের এই দল উক্ত হাদীসের পুরোপুরি হক্ব আদায় করার চেষ্টা করেছেন।

এদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তাঁর নামে মিথ্যা বানিয়ে বলার দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা পাওয়া গেলেও সাধারণত কেউই সে সময় তাঁর নামে মিথ্যা কথা বলার সাহস পেত না। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর মিথ্যা বানিয়ে বলা শুরু হয়। মুনাফেক, ফাসেক্ব, স্বার্থান্বেষী তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য রাসূলের নামে মিথ্যা বানিয়ে বলত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন বলে সরলমনা মুসলিমদের ধোকা দেওয়া সহজ ছিল। কিন্তু হাদীস গ্রহণে সাহাবিদের সতর্কতা ও যাচাইয়ের কারণে তা তাদের মধ্যে খুব প্রসার লাভ করতে পারে নি। প্রখ্যাত তাবিয়ী মুজাহিদ (রহ.)[2] বলেন:

"جاء بشير العدوى إلى ابن عباس فجعل يحدث ويقول قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- فجعل ابن عباس لا يأذن لحديثه ولا ينظر إليه فقال يا ابن عباس ما لى لا أراك تسمع لحديثى أحدثك عن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- ولا تسمع. فقال ابن عباس إنا كنا مرة إذا سمعنا رجلا يقول قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- ابتدرته أبصارنا وأصغينا إليه بآذاننا فلما ركب الناس الصعب والذلول لم نأخذ من الناس إلا ما نعرف". (صحيح مسلم، مقدمة, باب النهي عن الرواية عن الضعفاء، 1-10)

‘‘(তাবিয়ী) বুশাইর আল-আদাবী ইবনে আব্বাসের (রা) কাছে আগমন করেন এবং হাদীস বলতে শুরু করেন। তিনি বলতে থাকেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। কিন্তু ইবনে আব্বাস (রা) তার দিকে কর্ণপাত করলেন না। তখন বুশাইর বলেন: হে ইবনু আব্বাস, আমার কি হলো! আমি আপনাকে আমার হাদীস শুনতে দেখছি না? আমি আপনার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বর্ণনা করছি, অথচ আপনি কর্ণপাত করছেন না!? তখন ইবনু আব্বাস (রা) বলেন: একসময় ছিল যখন আমরা যদি কাউকে বলতে শুনতাম: ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন’, তখনই আমাদের দৃষ্টিগুলো তাদের দিকে আবদ্ধ হয়ে যেত এবং আমরা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তাঁর প্রতি কর্ণপাত করতাম। কিন্তু যখন মানুষ খানাখন্দক ভালমন্দ সব পথেই চলে গেল তখন থেকে আমরা আর শুধুমাত্র সুপরিচিত ও পরিজ্ঞাত বিষয় ব্যতীত মানুষদের থেকে কোনো কিছু গ্রহণ করি না।’’[3]

মুসলিম উম্মাহর ভিতরে মিথ্যাবাদী হাদীস বর্ণনাকারীর উদ্ভব হবে বলে নবী আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক করেন। তার থেকে কিছু শুনেই যাচাই ছাড়া নির্বিচারে গ্রহণ করা, বর্ণনা করা থেকে উম্মতকে সর্বোচ্চ সতর্ক ও সাবধান করে দেন। মিথ্যা বা সন্দেহযুক্ত হাদীস বর্ণনা করতে নিষেধ আরোপ করেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনে:

« سَيَكُونُ فِى آخِرِ أُمَّتِى أُنَاسٌ يُحَدِّثُونَكُمْ مَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ » (صحيح مسلم، المرجع السابق)

‘‘শেষ যুগে আমার উম্মতের কিছু মানুষ তোমাদেরকে এমন সব হাদীস বলবে যা তোমরা বা তোমাদের পিতামহগণ কখনো শুনেন নি। খবরদার! তোমরা তাদের থেকে সাবধান থাকবে, তাদের থেকে দূরে থাকবে।’’[4]

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে আরেকটি হাদীসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« كفى بالمرء كذبا أن يحدث بكل ما سمع »

‘‘একজন মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে তাই বর্ণনা করবে।’’[5]

এভাবে অগণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে উম্মতকে সর্বোচ্চ সতর্ক করেছেন।

একদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সতর্কবাণী, অপরদিকে জালিয়াতদের জালিয়াতী উম্মতের এই শ্রেষ্ঠ জাতি উলামাদল তথা মুহাদ্দিসীনের শ্রমকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে বর্ণিত অগণিত হাদীসের মধ্য হতে প্রকৃত হাদীসটি খোঁজে বের করতে তাদেরকে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে। হাদীস মূলত কুরআনের ব্যাখ্যা বা প্রজ্ঞা হিসেবে কুরআনের মতই তার হেফাযত করতে আল্লাহ তা‘আলা এ ধরণের আলেমের এক ঝাঁক তৈরী করে দেন। যারা তাদের জীবনের সিংহভাগই হাদীস চর্চার পিছনে ব্যয় করে রাসূলের প্রকৃত বাণীটি উম্মতের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হন। আর একেই আমরা সহীহ হাদীস বা বিশুদ্ধ হাদীস বলে জানি।

উলামায়ে উম্মতের এই শ্রেণির অন্যতম ছিলেন ইমাম বুখারী রাহ.। আরব রীতি অনুযায়ী বংশধারা সহ তার পুরো নাম হলো, মুহাম্মদ ইবন ইসমাইল ইবন ইবরাহীম ইবন মুগীরাহ ইবন বারদিযবাহ। তার মূল নাম মুহাম্মদ। তিনি ১৯৪ হিজরীর শাওয়াল মাসের ১৩ তারিখ রোজ শুক্রবার (৮১০ খ্রিস্টাব্দ) খোরাসানের বুখারা এলাকায় (বর্তমানে উজবেকিস্তানের অংশ) জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৯ বৎসর বয়সে কুরআন মুখস্থ শেষ করেই ১০ বৎসর বয়স থেকে হাদীস মুখস্থ, হাদীসের চর্চা, হাদীস সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন মুহাদ্দিসের কাছে যাতায়াত শুরু করেন। তার মেধা ছিল বর্ণনাতীত। তার মেধা, হাদীস গ্রহণে সতর্কতার বিভিন্ন ঘটনা কিতাবাদিতে উল্লেখ রয়েছে। তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম কর্ম ‘সহীহুল বুখারী’ নামে প্রসিদ্ধ হাদীসের এই গ্রন্থটির রচনা বলে উল্লেখ করেছেন উলামায়ে কেরাম। হাদীসের উপর পূর্ণ পাণ্ডিত্য অর্জনের পর ২১৭ হিজরী সনে তার বয়স যখন ২৩, তখন তিনি এই গ্রন্থটির রচনা শুরু করেন। গ্রন্থটিতে শুধুমাত্র সহীহ হাদীসকেই স্থান দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি দীর্ঘ ষোল বছর সাধনার মধ্য দিয়ে ২৩৩ হিজরী সনে এর কাজ সমাপ্ত করেন। রচনাকালে তিনি সর্বদা সওম পালন করতেন এবং প্রতিটি হাদীস লিখতে গোসল করে দু রাক‘আত সালাত আদায় করতেন বলে জানা যায়। বিশুদ্ধতার উপর নিশ্চিত হওয়ার আগে কোনো হাদীস লিখতেন না। বর্ণনায় আরো জানা যায় যে, তিনি বিশুদ্ধ থেকে বিশুদ্ধতম হাদীসের সংকলনের ইচ্ছায় তার মুখস্থ অনুমানিক ছয় লক্ষ হাদীস থেকে বাছাই করে একেবারে সহীহ বা বিশুদ্ধ হাদীসটিকেই এই গ্রন্থে স্থান দেন। এত সংখ্যক হাদীস থেকে বিভিন্ন হাদীস বারবার বর্ণনা সহকারে মাত্র ৭২৭৫ বা তার সামান্য কমবেশ[6] হাদীস তার কিতাবে স্থান পেয়েছে। সহীহুল বুখারী হিসেবে কিতাবটির নাম সর্বজনের কাছে পরিচিত। তবে তার মূল নাম হচ্ছে ‘আল-জামি‘উস্-সহীহ’। ২৫৬ হিজরীর ১লা শাওয়াল, মোতাবেক ৩১ আগষ্ট ৮৭০ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার দিবাগত রাত্রে ৬২ বৎসর বয়সে এই মহান ব্যক্তিত্ব মারা যান।[7]

উলামায়ে উম্মতের মূলধারার আলেম তথা আহলুস্সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আলেমদেরকে সর্বদা সহীহ হাদীসকেই গ্রহণ করতে এবং অন্যান্য ভেজালযুক্ত হাদীসকে চিহ্নিত করে প্রত্যাখ্যান করতে দেখা গেছে। জানা অবস্থায় কেউই সহীহ হাদীস ছাড়া অন্য কোনো হাদীস গ্রহণ করতেন না। সহীহ হাদীস ছাড়া শরীয়তের বিষয়াদি প্রমাণ করতেন না। ইমাম বুখারী তাঁর এই রচনায় সহীহ গ্রহণের প্রচেষ্টায় পূর্ণ সফল হয়েছেন বলে সমস্ত উলামায়ে মুহাদ্দিসীন যাচাই ও পরীক্ষা নিরীক্ষার পর স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি তার চেষ্টায় সফল হওয়ায় সারা বিশ্বের আনাচে কানাচে তাঁর কিতাবের সুনাম, সুখ্যাতি ও মূল্যায়ন ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর কিতাব দল মত নির্বিশেষে সর্বজনের কাছে ‘আসাহ্হুল কুতুব বা‘দা কিতাবিল্লাহ’ বা কুরআনের পর সর্বোচ্চ বিশুদ্ধ কিতাব হিসেবে ভূষিত হয়। এর মত আরেকটি কিতাব ‘সহীহ মুসলিম’ ছাড়া অন্য সব কিতাবের হাদীস যাচাই করে নেওয়াকে মুহাদ্দিসীনে কেরাম জরুরী মনে করলেও তাঁর এ কিতাবের হাদীসগুলো নির্বিচারে গ্রহণের অনুমোদন দেন।

এই হলো ‘সহীহুল বুখারী’ বা আমাদের মাঝে ‘বুখারী শরীফ’ হিসেবে পরিচিত কিতাবের অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সারকথা। অত্যন্ত সংক্ষেপে আমরা যে সার কথাটি জানলাম তা হলো,

*‘সহীহুল বুখারী’ মুহাম্মদ ইবন ইসমাইল বুখারীর লিখিত একটি হাদীসের কিতাব।

* এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিপুল সংখ্যক বিশুদ্ধ হাদীসের এক বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে।

* তাঁর কিতাবের সমস্ত হাদীস বিশুদ্ধ বলে মুহাদ্দিসীনে কেরামের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে।

* যাচাই বা নিরীক্ষা ছাড়াও আমরা তাঁর কিতাবের হাদীস গ্রহণ করতে পারি।

তাঁর কিতাবের হাদীসগুলো সহীহ জানার পর এখন আমাদের করণীয় কী? এই প্রশ্নের উত্তর আহলুস্সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আলেমদের কাছে একটিই। আর তা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা মোতাবেক আমাদের করণীয়:

* হাদীসগুলো থেকে আমাদের জ্ঞান আহরণ করতে হবে।

* বেশি বেশি এই হাদীসগুলোর চর্চা করতে হবে।

* হাদীসগুলো নিজে বুঝা এবং অপরকে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে।

* হাদীসগুলো মুখস্থ করা, বর্ণনা করা, তার প্রচার প্রসার করতে হবে। হাদীসের ক্ষেত্রে এই হলো রাসূলের শিক্ষা। সাহাবায়ে কেরামের জীবন থেকেও আমরা এই শিক্ষাই দেখতে পাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বীকৃত খাইরুল কুরুনেও এই ছিল হাদীসের ক্ষেত্রে তাদের আচরণ।

এর বিপরীত ঈসালে ছওয়াবের জন্য হাদীস তেলাওয়াত করা, অসুস্থ হলে বা যে কোনো বিপদে মুসিবতে পড়লে হাদীস পাঠ করে দো‘আ করার কোনো নজীর না রাসূলের শিক্ষায় রয়েছে, না সাহাবিদের জীবনে রয়েছে, না খাইরুল কুরুনে রয়েছে। কিন্তু কে বা কারা কুরআনের মত বিভিন্ন বাহানায় এই কিতাবের হাদীসকে তাদের অর্থ উপার্জনের জন্য ‘খতমে বুখারী’ নামে এই প্রসিদ্ধ ‘সহীহুল বুখারী’ কিতাবের খতম বের করেছে তার কোনো হদীস না থাকলেও আমাদের মাঝে তা অত্যন্ত প্রসার লাভ করেছে। এই কিতাবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে দো‘আ করলে নাকি দো‘আ কবুল হয়। রাসূলের বাণী ছাড়া এমন কথা বলার সাহস আমরা কী-ভাবে পাই তাতে অবাক লাগে। এর নাম আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর মিথ্যা অপবাদ নয় কি? আমাদের বাস্তব জীবনে এই কিতাবের হাদীসের তেমন একটা গুরুত্ব না দেখা গেলেও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিক্ষার উল্টো বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহ এবং এই বিপরীতমুখি শিক্ষার দিকে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে দেখা যায়। পেটপূজারী বা আলেম নামে অজ্ঞ কোনো ব্যক্তি হয়তো এর সূচনা করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে খাইরুল কুরুনের বিপরীত কর্ম কী-ভাবে বর্তমান আহলুস্সুন্নাহ ওয়াল জামাত দাবীদার আলেমদের মাঝে প্রচলন লাভ করে তা ভেবে পাওয়া মুশকিল। অর্থের লোভ ছাড়া বাহ্যত আর কোনো কারণ না দেখে গেলেও এতসব আলেমকে এদিকে সম্পৃক্ত করাটাও দুস্কর। আল্লাহই ভাল জানেন।

কথিত রয়েছে, ইমাম বুখারী রাহ. না কি এই কিতাব শেষ করে দো‘আ করেছিলেন। এই বাহানায় এই কিতাবের খতমের দিকে উদ্বুদ্ধ করা হয়ে থাকে।

পাঠক, এই কথাকে আপনি নিজের বিবেক খাটিয়ে একটু চিন্তা করে বুঝুন। ইমাম বুখারী রাহ. এত বছরের সাধনায় যে কর্ম করেছেন তা তাঁর একটি নেক আমল। কুরআন ও হাদীসের ভাষায় যা ‘আমলে সালেহ’। তাঁর কর্মটি যে ‘আমলে সালেহ’ এতে কোনো সন্দেহ নেই। হাদীসের মাধ্যমে আমরা তা প্রমাণ করেছি। ‘আমলে সালেহ’ বা নেক কর্মের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। আমলে সালেহের পর দো‘আ কবুল হয় বলে হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি। তাই বুখারী রাহ. এর জন্য এটা করা স্বাভাবিক। তবে একথা মনে রাখতে হবে যে, ‘আমল’ কোনটি সালেহ আর কোনটি সালেহ নয় তা সম্পূর্ণ তাওক্বীফী বা নুসূস নির্ভর বিষয়। ওহির বাইরে যুক্তি দিয়ে এ বিষয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই। ইমাম বুখারী রাহ. এর কর্মটি আমলে সালেহ হওয়ার বেলায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী রয়েছে। কিন্তু আমাদের এই কর্ম কি তাই? তার কর্ম আর আমার কর্ম কি এক? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এমনটি করতে বলেছেন? সাহাবিরা কখনো এমনটি করেছেন? এসবের উত্তর যদি ‘না’ হয় তবে কোন বাহানায় আমরা এ ধরণের কর্মের বৈধতা দেই? না কি উপার্জনের স্বার্থে হালালকে হারাম করার মত পাণ্ডিত্য ও যোগ্যতা আমরা অর্জন করেছি?

এই খতমের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য আরো বলা হয়ে থাকে যে, ইমাম বুখারী রাহ. নাকি এই কিতাবের কাজ সমাপ্তির পরে আল্লাহর কাছে দো‘আ করেছিলেন যে, যে ব্যক্তি তাঁর এই কিতাবটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে দো‘আ করবে আল্লাহ যেন তাঁর দো‘আ কবুল করেন। এ থেকেই নাকি এই খতমের সুত্রপাত। পাঠক, এই কথাটি আপনি কী হিসেবে দেখেন? বুখারী রাহ. এর কিতাব রচনার প্রেক্ষাপটের নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবে আপনি এমন কোনো কথা পাবেন না। ‘সহীহুল বুখারী’ রচনার কয়েক শতাব্দী পর পর্যন্ত ইমাম বুখারী রচিত এ গ্রন্থের চর্চা, তার খেদমত অত্যন্ত ব্যাপক হারে হলেও খতমের নজীর দেখবেন না। এ থেকেই এসব কিছু যে বানানো গল্প তা অতি সহজে অনুমেয়। তা ছাড়া বুখারী রাহ. এর মত বিশুদ্ধ আকীদার ধারক ব্যক্তির দিকে এমন কথার অপবাদ দেওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা বিবেকের কাছে প্রশ্ন। ইমাম বুখারী রাহ. তিনি কি শারি‘ তথা শরীয়ত প্রবর্তক? তিনি এমন কথা বললে তা অনুসরণযোগ্য হবে? নাকি তার আক্বীদা প্রশ্নবিদ্ধ হবে? যাই হোক আমরা অযথা অনির্ভরযোগ্য কোনো কথার উপর ভিত্তি করে ইমাম বুখারী রাহ. এর ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারি না। আমরা এই কথাগুলোকেই অসার বলে ধরে নেই। বুখারী পড়ে দো‘আ কবুল হলে রাসূলের অন্য সব হাদীসের কি দোষ? নাকি আপনার অভিজ্ঞতায় অন্য হাদীস পড়ে দো‘আ করলে তা কবুল হয় না, শুধু এই কিতাবের হাদীস পড়লে দো‘আ কবুল হয়? সাহাবিরা যে সব হাদীস জানতেন তা তাদের কাছে হাদীস বলে সন্দেহ ছিল নাকি? নাকি তারা এ ব্যাপারে অজ্ঞ ছিলেন? নাকি তাদের কারো জীবনে কোনদিন কোনো বিপদ মুসিবত আসে নি? তারা একটি দিনও একটি হাদীস পড়ে দো‘আ করলেন না তার কারণ কি?

মোটকথা, অভিজ্ঞতার নামে রাসূলের শিক্ষার বাইরে আমাদের কিছু বলার অধিকার নেই।

পাঠক, আশা করি আমরা এই বুখারী খতমের তাৎপর্য বুঝতে পেরেছি। এতো হলো শুধুমাত্র মূল খতমের বিষয়। অর্থাৎ এটি একটি রাসূলের শিক্ষা বিরোধী কর্ম। যার কোনো নজীর বা দৃষ্টান্ত সোনালী যুগে নেই। অপরদিকে খতমে কুরআনের বেলায় তা খেলাফে সুন্নাহ হওয়া ছাড়া আরো যে সমস্ত অতিরিক্ত খারাবী উল্লেখ করা হয়েছিল তার অনেকটা এই খতমে বুখারীতেও রয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে তা খতমে কুরআনের তুলনায় অধিক। যেমন:

* কুরআন খতম করা বুখারী খতমের তুলনায় অনেক সহজ। তাই কুরআন সাধারণত খতম তথা পড়ে শেষ করা হয়। খতম না করে মিথ্যা বলার ধোকা কুরআনের বেলায় কম হয়। পক্ষান্তরে বুখারী পুরো পড়া অনেক কঠিন। তাই এখানে খতমের আয়োজকের জিজ্ঞাসার উত্তরে খতম হয়ে গেছে বলে মিথ্যার ধোকা প্রায়ই অপরিহার্য বলে দেখা যায়।

* কুরআন সাধারণত আলেম বলতেই সবাই পড়তে পারে। তাই তাজবীদ, সিফাত, হক্ব আদায় করে তেলাওয়াত বা অতি দ্রুত তেলাওয়াতের ত্রুটি ছাড়া সাধারণত শব্দ ভুলের ত্রুটি হয় না। পক্ষান্তরে বিজ্ঞ আলেম ছাড়া অনেকেই হাদীস পড়তে পারে না। টাকার স্বার্থে খতমে অংশ নিয়ে সে আল্লাহর রাসূলের বাণীকে তার মনমত ভুল উচ্চারণ করে। এমন ভুলকেও মুহাদ্দিসীনে কেরাম রাসূলের উপর মিথ্যা বলার অপরাধ বলে গণ্য করেছেন।

* ইতোপূর্বে বলেছি যে, বুখারী অধিকাংশ সময়ই খতম হয় না। একজনের অংশ শেষ হলেও আরেকজন তার নির্ধারিত অংশ শেষ করতে পারে না। এক্ষেত্রে মানুষের সাথে মিথ্যা বলা ধোকা দেওয়ার সাথে সাথে দো‘আর সময় আল্লাহর সাথে মিথ্যা বলতে অনেক দিন লক্ষ্য করা গেছে। যেমন. দো‘আয় বলা হয়, ‘‘আল্লাহ, এই আমাদের বুখারী খতমকে...’’ ‘‘ যে খতম করা হয়েছে...’’ ইত্যাদি।

* হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পড়া অবস্থায় অনর্থক গল্পগুজব, হাসিঠাট্টা, ঢং তামাশা থেকে সাধারণত কোনো মজলিসই খালি থাকে না। একমাত্র খতমের আয়োজক সামনে থাকলে তাঁর ভয় বা সম্মানে নিশ্চুপ পড়া হয়। হাদীসের সাথে বেয়াদবী ছাড়া এ সবের নাম কি দেওয়া যায়?

* এই খতমে মাঝে মধ্যে সবচেয়ে বড় আপত্তিকর যে বিষয়টি সংঘটিত হয় তা হলো, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম জপের মাধ্যমে বরকত গ্রহণ যা সম্পূর্ণরূপে শির্ক। কেননা বরকতের জন্য কারো নাম জপ করা তাঁর ইবাদত বা আর্চনার শামিল। বরকতের জন্য একমাত্র আল্লাহর নামই নেওয়া যায়। তাই বরকতের জন্য আল্লাহ ছাড়া কারো নাম এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিলেও শির্কের গোনাহ্ কাঁধে বহন করতে হবে। কিন্তু অনেক সময় খতমে বুখারীর অনুষ্ঠানের শেষদিকে আসহাবে বদরিয়্যিন অর্থাৎ বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাগণ সম্বলিত হাদীসটি সবাইকে শুনিয়ে পূনরায় পড়া হয়। তাদের নাম নেওয়ার কারণ হিসেবে বরকতের কথা উল্লেখ করা হয় এবং পরবর্তীতে তাদের নামের দোহাই দিয়ে দো‘আ করা হয়। কারো দোহাই দিয়ে দো‘আর ব্যাপারটি খতমে তাসমিয়াতে আমরা আরেকটু বিস্তারিত জানব ইনশাআল্লাহ। এখানে শুধু এটুকু বলতে চাই যে, বরকতের জন্য আল্লাহ ছাড়া কারো নাম নেওয়া শির্ক।

সত্য সন্ধানী নিঃস্বার্থ ব্যক্তির জন্য এই খতমের তাৎপর্য বুঝতে আর কোনো বেগ পেতে হবে না বলে আশা করি। আল্লাহ সর্বপ্রথম আমাকে অসংখ্য এসব মজলিসে শরীক হওয়ার কারণে যে সব গুনাহ সংঘটিত হয়েছে তা থেকে ক্ষমা করুন এবং আমি সহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। স্বার্থের জন্য দীনকে জলাঞ্জলি দেওয়া থেকে আমাকে এবং সবাইকে বিরত রাখুন। আমীন।

>
[1] আবু দাঊদ, সুনান, ইলম অধ্যায়, ইলম প্রচারের মর্যাদা পরিচ্ছেদ, নং: ৩৬৬২, তিরমিযী, সুনান, অধ্যায়: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত ইলম, পরিচ্ছেদ: শ্রবণকৃত প্রচারের উৎসাহ, নং:৩৬৫৬, হাদীস সহীহ।

[2] বিশিষ্ট মুফাসসির তাবিয়ী মুজাহিদ ইবন জাবর আবুল হাজ্জাজ মক্কী, ২১-১০৪ হিজরী। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে তাফসীর শিক্ষা লাভ করতেন। (আল-আ‘লাম: ৫/২৭৮)

[3] সহীহ মুসলিম, মুকাদ্দিমাহ, দুর্বলদের থেকে বর্ণনা গ্রহণ করা নিষেধ অনুচ্ছেদ, ১/১০।

[4] সহীহ মুসলিম, প্রাগুক্ত।

[5] সহীহ মুসলিম, মুকাদ্দিমাহ, যা কিছু শুনবে তার সব বর্ণনা থেকে নিষেধাজ্ঞা অনুচ্ছেদ, ১/৮।

[6] ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী, ১০ নং অনুচ্ছেদ জামে‘ এর হাদীসের সংখ্যা, ১/৪৬৫।

[7] বিস্তারিত দেখুন, শায়খ আব্দুল্লাহ মুহসিন, আল ইমাম বুখারী ও কিতাবুহু আল-জামি‘উস সহীহ।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে