প্রশ্ন: কিছু লোক রজব মাসকে কিছু ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করে থাকে। যেমন, রাগায়েবের সালাত এবং ২৭শে রজবের রাত্রি জাগরণ। শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি আছে কি?

উত্তর: রাগায়েবের সালাত বা ২৭ শে রজবে উৎসব পালন করা এই ধারণায় যে, এ তারিখে ইসরা এবং মেরাজ হয়েছে এ সবই বিদ‘আত, শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। বিজ্ঞ আলেমগণ এ থেকে সতর্ক করেছেন এবং আমিও এ ব্যাপারে কয়েকবার লেখার মাধ্যমে লোকদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি যে, রাগায়েবের সালাত বিদ‘আত। কিছু লোক রজব মাসের প্রথম জুম‘আ রাত্রিতে তা করে থাকে। এমনিভাবে ২৭ শে রজবে উৎসব পালন করে থাকে এ ধারণায় যে, এ তারিখে ইসরা এবং মেরাজ হয়েছে এ সবই বিদ‘আত, শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই।

ইসরা এবং মেরাজের সঠিক তারিখ জানা যায় না, যদি জানাও যায় তাহলে এ নিয়ে উৎসব পালন করা জায়েয নেই কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তা পালন করেননি, তদ্রূপ তাঁর সুপথ প্রাপ্ত খলিফাগণ এবং বাকী অন্যান্য সাহাবীগণও কখনো তা পালন করেননি। যদি তা পালন করা সুন্নাত হত তাহলে তারা অবশ্যই করতেন।

তাদের অনুসরণ এবং তাদের পথে চলার মধ্যেই সকল কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠ ﴾ [التوبة: ١٠٠]

“আর যারা সর্ব প্রথম হিজরতকারী, আনসার এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সকল লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সেই জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই হলো মহা কৃতকার্যতা। [সূরা তাওবা/১০০]

এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে এসেছে যে, তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”[1]

তিনি আরও বলেন : “যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যা আমার শরিয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”[2]

এবং তিনি তাঁর জুম‘আর খুৎবায় বলেছেন,

“অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হলো: আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হেদায়েত হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আর নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”[3]

কাজেই সকল মুসলিমের উচিৎ হলো: সুন্নাতের অনুসরণ করা এবং এর উপর দৃঢ় থেকে পরস্পরে নসিহত গ্রহণ করা এবং সকল প্রকার বিদ‘আত থেকে সতর্ক থাকা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ এবং সেই বাণীর উপর আমল করার লক্ষ্যে যেখানে আল্লাহ বলেছেন :

﴿وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ﴾ [المائ‍دة: ٢]

“তোমরা পরস্পরে ভালো এবং তাকওয়াপূর্ণ কাজে সহযোগিতা কর।” [সূরা মায়েদা/২]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَٱلۡعَصۡرِ ١ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَفِي خُسۡرٍ ٢ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡحَقِّ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ ٣ ﴾ [العصر: ١، ٣]

“কসম যুগের, নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয় যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে হক্বের তাকীদ করে এবং তাকীদ করে ধৈর্যের।” [সূরা আসর ১-৩]

তদ্রূপ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:

«الدِّينُ النَّصِيحَةُ» قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ: «لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ»

“দ্বীন হচ্ছে উপদেশ বা কল্যাণ কামনা, বলা হলো, কার জন্য হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন: আল্লাহর জন্য, তার কিতাবের জন্য, তার রাসূলের জন্য এবং মুসলিমদের ইমাম ও সাধারণ জনগণের জন্য।”[4] তবে রজব মাসে উমরা করাতে কোনো অসুবিধা নেই, কারণ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে সাব্যস্ত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে উমরা করেছেন এবং সালাফগণও রজব মাসে উমরা করতেন। যেমন হাফেয ইবনে রজব তার কিতাব (আল লাতায়েফ) এ উমর, তার ছেলে আব্দুল্লাহ এবং আয়েশার হাদীস উল্লেখ করেছেন এবং ইবনে সিরিন হতে বর্ণিত আছে যে, সালাফগণও এ রকম করেছেন।

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।

[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৬৭।

[4] সহীহ মুসলিম; হাদীস নং ৫৫।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে