সকল প্রশংসা আল্লাহর, আমরা তাঁর প্রশংসা করছি, তাঁরই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি, তাঁর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি, তাঁর কাছে তাওবা করছি। তাঁর কাছে আমাদের অন্তরের সব কলুষিতা ও সব পাপ কাজ থেকে পানাহ চাই। তিনি যাকে হিদায়াত দান করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না আর তিনি যাকে পথ-ভ্রষ্ট করেন কেউ তাকে হিদায়াত দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাকে হিদায়াত ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তা সব দীনের ওপর বিজয় লাভ করে। তিনি তাঁর রিসালাহ (দাওয়াত) পৌঁছেছেন, আমানত আদায় করেছেন, উম্মতকে উপদেশ দিয়েছেন, আল্লাহর পথে যথাযথ প্রচেষ্টা করেছেন। তাঁর উম্মতকে সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণের রেখে গেছেন, যার দিবারাত্রি সমানভাবেই স্পষ্ট, একমাত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত ছাড়া কেউ সে পথ থেকে সরে যায় না। তাই আল্লাহর সালাত ও সালাম তাঁর ওপর, তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীগণ ও কিয়ামত পর্যন্ত একনিষ্ঠার সাথে যারা তাঁর অনুসরণ করবে সকলের ওপর বর্ষিত হোক। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাকে ও আপনাদেরকে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব কাজে তাঁর অনুসারী করেন। যিনি যেন তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দলের অন্তর্ভুক্ত করে আমাদেরকে মৃত্যু দান করেন। তাঁর উম্মতের কাতারে যেন হাশরের দিনে একত্রিত করেন। তাঁর শাফা‘আতের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তিনি যেন আমাদেরকে চিরস্থায়ী জান্নাতে তাঁর সাথে ও সে সব নবী রাসূল, সিদ্দিকীন, শুহাদা ও সালেহীন বান্দাদের সাথে একত্রিত করেন যাদের ওপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন।
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢﴾ [ال عمران: ١٠٢]
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যথাযথ তাকওয়া। আর তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া মারা যেও না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২]
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسٖ وَٰحِدَةٖ وَخَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَبَثَّ مِنۡهُمَا ٗا كَثِيرٗا وَنِسَآءٗۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَٱلۡأَرۡحَامَۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَيۡكُمۡ رَقِيبٗا ١﴾ [النساء: ١]
“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১]
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ٧٠ يُصۡلِحۡ لَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۗ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا ٧١ ﴾ [الاحزاب: ٧٠، ٧١]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল”। [সূরা: আল-আহযাব, আয়াত: ৭০-৭১]
মহান আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য কিছু ইবাদত প্রবর্তন করে তাদের ওপর অনুগ্রহ ও দয়া করেছেন। যেহেতু তিনি সাওমকে বান্দাহর জন্য দূর্গ ও ঢাল স্বরূপ করেছেন। সাওমের মাধ্যমে তিনি জান্নাতের পথ সুপ্রশস্ত করেছেন। মানুষের অন্তরের কুপ্রবৃত্তি দমন করে তাকে করেছেন পবিত্র। সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগরণ, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কষ্ট উপলব্ধি, শারীরিক সুস্থতা, সর্বোপরি মহান আল্লাহর নৈকট্যলাভ ইত্যাদি হলো সাওমের সওগাত। সাওমের অপরিসীম ফযিলতের কারণেই আল্লাহ বলেছেন, “সাওম আমার জন্য, আর এর প্রতিদান আমি নিজেই দিব”।
ইসলামী কিতাবের ভাণ্ডারের দিকে কেউ তাকালে দেখবে সাওম সম্পর্কে অসংখ্য কিতাব বিভিন্ন ভাষায় রচিত হয়েছে। এ সব কিতাবে সহীহ ও দ‘য়ীফ হাদীস সন্নিবেশিত হয়েছে, ফলে সাধারণ মানুষের জন্য সহীহ হাদীসের ওপর ‘আমল করা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব কথা বিবেচনা করেই বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য ‘আলেম, আমার সম্মানিত উস্তাদ আমাকে “সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম বিশ্বকোষ” সংকলনের নির্দেশ দেন। শাইখের আদেশেই আমি এ কিতাবখানা ‘আলেম ওলামা ও সাধারণ মানুষের জন্য লিপিবদ্ধ করেছি।
সংকলনের ক্ষেত্রে আমি নিম্নের পদ্ধতি অনুসরণ করেছি
১- সহীহ বুখারীকে এ কিতাবের মূল হিসেবে রেখেছি। বুখারীর সব হাদীস হুবহু উল্লেখ করেছি। এমনকি বুখারীর ‘তালিকসমূহও অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখ করেছি।
২- বুখারীর বাবের সাথে অন্যান্য সহীহ হাদীসের কিতাব থেকে হাদীস সংযোগ করেছি এবং প্রয়োজনে আরো বাব সংযোজন করেছি।
৩- বুখারীর সাথে মুসলিমেরও হাদীসসমূহ উল্লেখ করেছি।
৪- তাখরীজ ও হুকুমের ক্ষেত্রে বুখারী ও মুসলিম থেকে হাদীস উল্লেখ করলে শুধু এ কিতাবের নাম উল্লেখ করেছি। আলাদা কোনো হুকুম উল্লেখ করি নি। কেননা সব ‘আলেমদের ঐক্যমতে এ দুই কিতাবের হাদীসসমূহ সহীহ। কখনও কখনও শুধু বুখারী বা শুধু মুসলিম উল্লেখ করেছি। অর্থাৎ এ দু’কিতাবের যে কোনো একটির নাম উল্লেখ করা মানেই হাদীসটি সহীহ প্রমাণিত হয়।
৫- বুখারী ও মুসলিম ছাড়া অন্যান্য হাদীসের কিতাব থেকে হাদীস উল্লেখ করলে সে হাদীসের হুকুম উক্ত কিতাবসমূহে পাওয়া গেলে তা উল্লেখ করেছি। তাদের দেওয়া হুকুমকে আরো শক্তিশালী করতে সাথে সাথে সুনানের ক্ষেত্রে আল্লামা আলবানী রহ. ও মুসনাদে আহমদ ও ইবন হিব্বানের ক্ষেত্রে শাইখ শু‘আইব আরনাঊত-এর দেওয়া হুকুমও বর্ণনা করেছি।
৬- বুখারী, মুসলিম, সুনান, মুসতাদরাক হাকিম, ইবন হিব্বান, মুসনাদে আহমদ ইত্যাদি হাদীসের কিতাবের ক্ষেত্রে হাদীস নম্বর উল্লেখ করেছি। কেননা বর্তমানে হাদীস নম্বর দিয়ে সহজেই সাধারণ মানুষ উক্ত কিতাবের কাঙ্ক্ষিত হাদীসে পৌঁছতে পারে। যেসব কিতাবের হাদীস নম্বর পাওয়া যায় নি সে ক্ষেত্রে কিতাবের খণ্ড ও পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করেছি।
৭- কোনো কোনো সময় টীকাতে হাদীসের সাথে সম্পৃক্ত মাসআলা থাকলে তা উল্লেখ করেছি, তবে এগুলো খুবই স্বল্প। আমার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষ সরাসরি সহীহ হাদীসের ওপর আমল করুক। তাই ফিকহি মাসআলা বেশি উল্লেখ করি নি।
৮- কিতাবের শুরুতে সাওমের সংজ্ঞা, তাৎপর্য, নানা ধর্মে সাওম পালন নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছি, যাতে সাধারণ মানুষ সাওম সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পায়।
৯- কিতাবের শেষে সাওম সম্পর্কিত জরুরী কিছু মাসআলা উল্লেখ করেছি।
১০- কিতাবটি আটটি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে সাওমের পরিচয়, ইতিহাস ও তাৎপর্য, দ্বিতীয় অধ্যায়ে সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম, তৃতীয় অধ্যায়ে সালাতুত তারাবীহ, চতুর্থ অধ্যায়ে ই‘তিকাফ,পঞ্চম অধ্যায়ে সদকাতুল ফিতর, ষষ্ঠ অধ্যায়ে ঈদের সালাত, সপ্তম অধ্যায়ে সংক্ষেপে পবিত্র রমযান মাসে আমাদের করণীয় ‘আমল এবং অষ্টম অধ্যায়ে সাওম সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা উল্লেখ করেছি।
পরিশেষে সম্মানিত ‘আলেম, তালিবে ইলম ও অন্যান্য সবার কাছে অনুরোধ থাকবে এ কিতাবে কোনো দ‘য়ীফ হাদীস পাওয়া গেলে অনুগ্রহ করে জানাবেন। পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। কেননা আমি সহীহ হাদীসের আলোকেই কিতাবটি সাজিয়েছি। কিতাবটির নামকরণ করেছি, “সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম বিশ্বকোষ”। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে এ দো‘আ করছি যে, তিনি যেন আমাদেরকে সহীহ হাদীসের ওপর সর্বদা ‘আমল করার তাওফীক দান করেন। বিদ‘আত, দুর্বল ও জাল হাদীসের ওপর ‘আমল করা থেকে বিরত রাখেন। কিয়ামতের দিন এ ক্ষুদ্র কাজটি নাজাতের অসীলা করে দিন। সব মুসলিম যেন এ কিতাবটি থেকে উপকৃত হন। আমীন।