মানসূখ কাহিনী : ঐতিহাসিক মিথ্যাচার

রাফ‘উল ইয়াদায়েনের সুন্নাতকে প্রতিরোধ করার জন্য হুকুম রহিত হওয়ার যে কাহিনী পেশ করা হয় তা মূলতঃ মিথ্যাচার। কারণ রাসূল (ছাঃ) যদি পরবর্তীতে উক্ত আমল ছেড়ে দিতেন, তাহলে ছাহাবায়ে কেরাম কেন করবেন? বরং রাসূল (ছাঃ) নিজেই মৃত্যু পর্যন্ত উক্ত আমল অব্যাহত রেখেছিলেন।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ إِذا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ وَكَانَ لَا يَفْعَلُ ذَلِكَ فِى السُّجُوْدِ فَمَا زَالَتْ تِلْكَ صلَاتُهُ حَتَّى لَقِىَ اللهَ تَعَالَى.

ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) যখন ছালাত শুরু করতেন, যখন রুকূতে যেতেন এবং যখন রুকূ হতে মাথা উত্তোলন করতেন, তখন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। সিজদার সময় তিনি এমনটি করতেন না। আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত তাঁর ছালাত সর্বদা এরূপই ছিল।[1]

عَنْ أَبِىْ حُمَيْدِ السَّاعِدِىِّ قَالَ فِىْ عَشَرَةٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ أَنَا أَعْلَمُكُمْ بِصَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ قَالُوْا فَاعْرِضْ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاة يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ثُمَّ يُكَبِّرُ ثُمَّ يَقْرَأُ ثُمَّ يُكَبِّرُ وَيَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ثُمَّ يَرْكَعُ وَيَضَعُ رَاحَتَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ ثُمَّ يَعْتَدِلُ فَلَا يُصَبِّي رَأْسَهُ وَلَا يُقْنِعُ ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ فَيَقُوْلُ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ثُمَّ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ مُعْتَدِلًا ثُمَّ يَقُوْلُ اللهُ أَكْبَرُ ثُمَّ يَهْوِىْ إِلَى الْأَرْضِ سَاجِدًا فَيُجَافِىْ يَدَيْهِ عَن جَنْبَيْهِ وَيَفْتَحُ أَصَابِعَ رِجْلَيْهِ ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ وَيُثْنِىْ رِجْلَهُ الْيُسْرَى فَيَقْعُدُ عَلَيْهَا ثُمَّ يَعْتَدِلُ حَتَّى يَرْجِعَ كُلَّ عَظْمٍ إِلَى مَوْضِعِهِ مُعْتَدِلًا ثُمَّ يَسْجُدُ ثُمَّ يَقُوْلُ اللهُ أَكْبَرُ وَيَرْفَعُ وَيَثْنِىْ رِجْلَهُ الْيُسْرَى فَيَقْعُدُ عَلَيْهَا ثُمَّ يَعْتَدِلُ حَتَّى يَرْجِعَ كُلُّ عَظْمٍ إِلَى مَوْضِعِهِ ثُمَّ يَنْهَضُ ثُمَّ يَصْنَعُ فِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ إِذَا قَامَ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ كَمَا كَبَّرَ عِنْدَ افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ ثُمَّ يَصْنَعُ ذَلِكَ فِي بَقِيَّةِ صَلَاتِهِ حَتَّى إِذَا كَانَتِ السَّجْدَةُ الَّتِىْ فِيهَا التَّسْلِيْمُ أَخَّرَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَقَعَدَ مُتَوَرِّكًا عَلَى شِقِّهِ الْأَيْسَرِ ثُمَّ سَلَّمَ. قَالُوْا صَدَقْتَ هَكَذَا كَانَ يُصَلِّىْ.

আবু হুমাইদ সায়েদী (রাঃ) একদা রাসূল (ছাঃ)-এর দশ জন ছাহাবীর কাছে বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত সম্পর্কে আপনাদের অপেক্ষা অধিক অবগত। তাঁরা বললেন, তাহলে আমাদের কাছে পেশ করুন। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছালাতের জন্য দাঁড়াতেন, তখন দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন এবং তাকবীর বলতেন। তারপর ক্বিরাআত পড়তেন। অতঃপর তাকবীর বলতেন এবং কাঁধ বরাবর দুই হাত উঠাতেন। অতঃপর রুকূ করতেন এবং দুই হাতের তালু দুই হাঁটুর উপরে রাখতেন। এ সময় পিঠ সোজা রাখতেন। অতঃপর রুকূ করতেন ও ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সিজদার জন্য যমীনের দিকে ঝুঁকে সিজদা করতেন। এ সময় দুই হাত দুই পার্শ্ব হতে পৃথক রাখতেন এবং দুই পায়ের আঙ্গুলসমূহ ক্বিবলার দিকে মুড়িয়ে দিতেন। তারপর বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতেন। অতঃপর তিনি সোজা হয়ে বসতেন, যাতে প্রত্যেক হাড় নিজ নিজ জায়গায় ফিরে যায়। অতঃপর (দ্বিতীয়) সিজদা করতেন। তারপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে মাথা উঠাতেন এবং বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতেন। এমনভাবে বসতেন, যাতে সমস্ত হাড় নিজ জায়গায় ফিরে যায়।

অতঃপর দ্বিতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। দ্বিতীয় রাক‘আতেও অনুরূপ করতেন। অতঃপর যখন দুই রাক‘আতের পর দাঁড়াতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন, যেমন প্রথম তাকবীরের সময় করেছিলেন। অবশিষ্ট ছালাতেও তিনি অনুরূপ করতেন। অবশেষে যখন শেষ রাক‘আতে পৌঁছতেন, তখন বাম পা ডান দিকে বের করে দিতেন এবং বাম নিতম্বের উপর বসতেন। অতঃপর সালাম ফিরাতেন। তখন উক্ত ছাহাবীরা বললেন, আপনি সত্যিই বলেছেন। রাসূল (ছাঃ) এভাবেই ছালাত আদায় করতেন।[2]

সুধী পাঠক! রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর ছাহাবীরা কিভাবে ছালাত আদায় করতেন, তার বাস্তব চিত্র উক্ত হাদীছে ফুটে উঠেছে। তাহলে মানসূখ কাহিনী কোথায় পাওয়া গেল?

عَنِ الْحَسَنِ قَالَ كَانَ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ يَرْفَعُوْنَ أَيْدِيَهُمْ إِذَا رَكَعُوْا وَإِذَا رَفَعُوْا رُءُوْسَهُمْ مِنَ الرُّكُوْعِ كَأَنَّمَا أَيْدِيْهُمْ مَرَاوِحُ.

হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ যখন রুকূ করতেন এবং যখন রুকূ হতে তাদের মাথা উঠাতেন, তখন তারা রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। তাদের হাতগুলো তখন পাখার মত মনে হত।[3]

عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ رَفْعِ الْيَدَيْنِ فِى الصَّلاَةِ فَقَالَ هُوَ شَىْءٌ يُزَيِّنُ بِهِ الرَّجُلُ صَلاَتَهُ كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ يَرْفَعُوْنَ أَيْدِيَهُمْ فِى الاِفْتِتَاحِ وَعِنْدَ الرُّكُوْعِ وَإِذَا رَفَعُوْا رُءُوْسَهُمْ.

সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাঃ)-কে ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এটা এমন একটি কর্ম যার দ্বারা মুছল্লী তার ছালাতকে সৌন্দর্যপূর্ণ করে। রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ ছালাত শুরু করার সময়, রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে মাথা উঠানোর সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[4]

সুধী পাঠক! ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার হুকুম যদি রহিতই হবে, তবে উক্ত হাদীছগুলো কী প্রমাণ করে?

[1]. বায়হাক্বী, ইবনু হাজার আসক্বালানী, তালখীছুল হাবীর ১/৫৩৯ পৃঃ, হা/৩২৭; আদ-দিরায়াহ ফী তাখরীজি আহাদীছিল হিদায়াহ ১/১৫৩ পৃঃ; নাছবুর রাইয়াহ ১/৪১০; সিরাজুদ্দীন আল-মিছরী (মৃঃ ৮০৪), আল-বাদরুল মুনীর ফী তাখরীজিল আহাদীছ ওয়াল আছার ৩/৪৫৯ পৃঃ; তাহক্বীক্ব মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ ১/১৮৩ পৃঃ-এর টীকা দ্রঃ; সনদ ছহীহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪-এর আলোচনা দ্রঃ।

[2]. আবুদাঊদ হা/৭৩০, ১/১০৬ পৃঃ, ‘ছালাত শুরু করা’ অনুচ্ছেদ; ইবনু হিববান হা/১৮৬৪; তিরমিযী হা/৩০৪, ১/৬৭ পৃঃ, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ; ইবনু মাজাহ হা/১০৬১, পৃঃ ৭৪ ও ৮৬২, ৮৬৩, পৃঃ ৬২; সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৮০১ ও ৭৯২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৪৫, ২/২৫৭ পৃঃ, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ।

[3]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২৬২৬; সনদ ছহীহ, দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪-এর ব্যাখ্যা।

[4]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২৬২৭; সনদ ছহীহ সনদ ছহীহ, দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪-এর ব্যাখ্যা।