সর্বনিম্ন হলো দুই রাকাত আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলের দ্বারা সর্বোচ্চ আট রাকাত প্রমাণিত হয় এবং তাঁর বাণী দ্বারা সর্বোচ্চ বারো রাকাত সাব্যস্ত হয়। নিম্নে রাকাত সম্পর্কিত হাদীস উল্লেখ করা হলো।

আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস দ্বারা দুই রাকাত, চার রাকাত, ছয় রাকাত, আট রাকাত ও বারো রাকাত পর্যন্ত সাব্যস্ত আছে। আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ‌্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ صَلَّى الضُّحَى رَكْعَتَيْنِ لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِينَ، وَمَنْ صَلَّى أَرْبَعًا كُتِبَ مِنَ الْعَابِدِينَ، وَمَنْ صَلَّى سِتًّا كُفِيَ ذَلِكَ الْيَوْمَ، وَمَنْ صَلَّى ثَمَانِيًا كَتَبَهُ اللَّهُ مِنَ الْقَانِتِينَ، وَمَنْ صَلَّى ثِنْتَيْ عَشْرَةَ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ».

“যে ব্যক্তি দুহার দু রাকাত সালাত আদায় করবে তাকে গাফেলীনদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে না। আর যে চার রাকাত আদায় করবে তার নাম আবেদীনদের সাথে লেখা হবে। যে ছয় রাকাত আদায় করবে তার জন্য পুরা দিন যথেষ্ট হবে। আর যে ব্যক্তি আট রাকাত আদায় করবে তার নাম কানেতীনের সাথে লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি বারো রাকাত আদায় করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন।”[1]

উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে আট রাকাত সালাতের বর্ণনা আছে। আবু মুররা রহ. থেকে বর্ণিত,

«أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ أُمَّ هَانِئٍ بِنْتَ أَبِي طَالِبٍ، تَقُولُ: ذَهَبْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفَتْحِ، فَوَجَدْتُهُ يَغْتَسِلُ، وَفَاطِمَةُ ابْنَتُهُ تَسْتُرُهُ بِثَوْبٍ، قَالَتْ: فَسَلَّمْتُ، فَقَالَ: «مَنْ هَذِهِ؟» قُلْتُ: أُمُّ هَانِئٍ بِنْتُ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ: «مَرْحَبًا بِأُمِّ هَانِئٍ»، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ غُسْلِهِ، قَامَ فَصَلَّى ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ مُلْتَحِفًا فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ، فَلَمَّا انْصَرَفَ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ زَعَمَ ابْنُ أُمِّي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ أَنَّهُ قَاتِلٌ رَجُلًا أَجَرْتُهُ، فُلَانُ ابْنُ هُبَيْرَةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَدْ أَجَرْنَا مَنْ أَجَرْتِ يَا أُمَّ هَانِئٍ قَالَتْ أُمُّ هَانِئٍ: وَذَلِكَ ضُحًى».

“তিনি উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বলতে শুনেছেন যে, আমি মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম এবং আমি তাঁকে গোসল করতে পেলাম। তাঁর কন্যা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা একটি কাপড় দিয়ে তাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। আমি সালাম করলাম! তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? আমি জবাব দিলাম, উম্মে হানী বিনত আবু তালিব। তিনি বললেন, মারহাবা হে উম্মে হানী! তারপর তিনি গোসল সেরে দাঁড়িয়ে আট রাকাত সালাত আদায় করলেন। তখন তিনি একই কাপড় জড়িয়ে ছিলেন। তিনি যখন সালাত শেষ করলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার সহোদর আলী ইবন আবু তালিব, হুরায়রার পূত্র অমুককে কতল করার সংকল্প করেছে, যাকে আমি নিরাপত্তা দিয়েছি। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মে হানী! তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছ আমিও তাকে নিরাপত্তা দিলাম। উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, এ ছিল দুহার (চাশত) সময়।”[2]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীস দ্বারা চার রাকাত সাব্যস্ত। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন,

«كَمْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي صَلَاةَ الضُّحَى؟ قَالَتْ: «أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ وَيَزِيدُ مَا شَاءَ».

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুহার সালাত কত রাকাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, চার রাকাত। ইচ্ছে হলে বেশিও পড়তেন।”[3]

আর আবূ যর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস দ্বারা দুই রাকাত সাব্যস্ত। আবূ যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: «يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلَامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى».

“তোমাদের কেউ যখন ভোরে উঠে, তখন তার প্রতিটি জোড়ার ওপর একটি সদকা রয়েছে। প্রতি সুবহানাল্লাহ সদকা, প্রতি আলহামদুলিল্লাহ সদকা, প্রতি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সদকা, প্রতি আল্লাহু আকবার সদকা, আমর বিল মা‘রুফ (সৎকাজের আদেশ) সদকা, নাহী আনিল মুনকার (অসৎকাজের নিষেধ) সদকা। অবশ্য চাশতের সময় দু-রাকাত সালাত আদায় করা এ সবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।”[4]

ইমাম আবূ জা‘ফর তাবারী, হালিমী, রূইয়ানী রহ. বলেছেন, দুহার সালাতের নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নেই। দুই রাকাত থেকে বারো রাকাত বা ততোধিক পড়া যায়। ইমাম ইরাকী তিরমিযীর ব্যাখ্যায় বলেছেন, সাহাবী ও তাবে‘ঈদের থেকে বারো রাকাতকে সীমাবদ্ধ করা হয় নি। ইমাম সুয়ূতী রহ. এ মত ব্যক্ত করেছেন।[5]

সাঈদ ইবন মানসূর রহ. হাসান রহ. থেকে বর্ণনা করেন,

«أَنَّهُ سُئِلَ: هَلْ كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يُصَلُّونَهَا؟ فَقَالَ: نَعَمْ، كَانَ مِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، وَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي أَرْبَعًا، وَمِنْهُمْ مَنْ يَمُدُّ إلَى نِصْفِ النَّهَارِ».

“তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ কি এ সালাত আদায় করেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তারা এ সালাত আদায় করেছেন। কেউ দু রাকাত, কেউ চার রাকাত, কেউ আবার দ্বিপ্রহর পর্যন্ত দীর্ঘ করতেন।”[6]

>
[1] কানজুল উম্মাল, ৭/৮০৯। ইমাম হাইসামী রহ. বলেছেন, হাদীসটি ইমাম তাবরানী মু’জামুল কাবীরে বর্ণনা করেছেন, তাতে মূসা ইবন ইয়াকুব আজ-জাম‘য়ী রয়েছেন, তাকে ইবন মা‘ঈন ও ইবন হিব্বান সিকাহ বলেছেন, আর ইবনুল মাদিনী ও অন্যরা তাকে দয়ীফ বলেছেন। অন্যান্য রাবীরা সিকাহ। মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ২/২৩৭।

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৬।

[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৯।

[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২০।

[5] নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।

[6] তানবীরুল হাওয়ালিক শরহে মুয়াত্তা মালিক, ১/১২৯। নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে