সূর্য যখন এক বর্শা পরিমাণ উপরে উঠে তখন এ সালাতের সময় শুরু হয়। আর সূর্য হেলে গেলে সময় শেষ হয়। তবে মুস্তাহাব হলো সূর্য আকাশে এমনভাবে উদিত হয় যখন উষ্ণতা প্রখর হয়। যেহেতু হাদীসে এসেছে,
কাসিম আশ-শায়বানী রহ. থেকে বর্ণিত যে,
«أَنَّ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ، رَأَى قَوْمًا يُصَلُّونَ مِنَ الضُّحَى، فَقَالَ: أَمَا لَقَدْ عَلِمُوا أَنَّ الصَّلَاةَ فِي غَيْرِ هَذِهِ السَّاعَةِ أَفْضَلُ، إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ حِينَ تَرْمَضُ الْفِصَالُ».
“যায়দ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একদল লোককে ‘দুহার সালাত আদায় করতে দেখে বললেন, ওহে! এরা তো জানে না যে, এ সময় ছাড়া অন্য সময় সালাত আদায় করাই বেশি ফযীলতের। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর দিকে ধাবিত অনুগত প্রেমিকদের সালাতের ওয়াক্ত উট শাবকের পায়ে গরম সেকা লাগার সময় হয়ে থাকে।”[1]
যায়িদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَهْلِ قُبَاءَ وَهُمْ يُصَلُّونَ، فَقَالَ: «صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ إِذَا رَمِضَتِ الْفِصَالُ».
“রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবা বাসীদের ওখানে গেলেন, তখন তারা সালাত আদায় করছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, আল্লাহ প্রেমিকদের সালাতের সময় হল যখন উট শাবকের পায়ে উত্তাপ লাগে (অর্থাৎ মাটি গরম হয়ে যায়)।”[2]
আসেম ইবন দমরা আস-সালূলী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سَأَلْنَا عَلِيًّا، عَنْ تَطَوُّعِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّهَارِ فَقَالَ: إِنَّكُمْ لَا تُطِيقُونَهُ، فَقُلْنَا: أَخْبِرْنَا بِهِ نَأْخُذْ مِنْهُ مَا اسْتَطَعْنَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «إِذَا صَلَّى الْفَجْرَ يُمْهِلُ، حَتَّى إِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ مِنْ هَاهُنَا يَعْنِي مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ بِمِقْدَارِهَا مِنْ صَلَاةِ الْعَصْرِ مِنْ هَاهُنَا يَعْنِي مِنْ قِبَلِ الْمَغْرِبِ قَامَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ يُمْهِلُ حَتَّى إِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ مِنْ هَاهُنَا، يَعْنِي مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مِقْدَارَهَا مِنْ صَلَاةِ الظُّهْرِ مِنْ هَاهُنَا قَامَ فَصَلَّى أَرْبَعًا، وَأَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا، وَأَرْبَعًا قَبْلَ الْعَصْرِ، يَفْصِلُ بَيْنَ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ بِالتَّسْلِيمِ عَلَى الْمَلَائِكَةِ الْمُقَرَّبِينَ وَالنَّبِيِّينَ، وَمَنْ تَبِعَهُمْ مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُؤْمِنِينَ» قَالَ عَلِيٌّ: فَتِلْكَ سِتَّ عَشْرَةَ رَكْعَةً، تَطَوُّعُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّهَارِ، وَقَلَّ مَنْ يُدَاوِمُ عَلَيْهَا، قَالَ وَكِيعٌ: زَادَ فِيهِ أَبِي: فَقَالَ حَبِيبُ بْنُ أَبِي ثَابِتٍ يَا أَبَا إِسْحَاقَ مَا أُحِبُّ أَنَّ لِي بِحَدِيثِكَ هَذَا مِلْءَ مَسْجِدِكَ هَذَا ذَهَبًا».
“আমরা ‘আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিনের বেলার নফল সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তোমরা তা করতে সমর্থ নও। আমরা বললাম, আপনি আমাদের সেই সম্পর্কে অবহিত করুন, আমরা তা থেকে আমাদের সাধ্যমত গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত পড়ার পর কিছুক্ষণ অবসর থাকতেন। অবশেষে সূর্য আসরের সময় পশ্চিমাকাশে যত উপরে থাকে, পূর্বাকাশে ঠিক ততটা উপরে উঠলে তিনি দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন অতঃপর অবসর থাকতেন। অবশেষে পশ্চিম আকাশে সূর্য যতটা উপরে থাকলে যোহরের সালাতের ওয়াক্ত থাকে, পূর্বাকাশে সূর্য ঠিক ততখানি উপরে উঠলে তিনি চার রাকাত সালাত আদায় করতেন। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পর তিনি যোহরের (ফরয) সালাতের পূর্বে চার রাকাত এবং পরে দুই রাকাত পড়তেন। তিনি আসরের পূর্বেও দুই সালামে চার রাকাত সালাত আদায় করতেন এবং তার মাঝখানে নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশতাগণ, আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং তাদের অনুগত মুমিন মুসলিমদের জন্য শান্তি ও স্বস্তি কামনা করতেন (তাশাহহুদ পড়তেন)। ‘আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এই হলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিনের বেলার ষোলো রাকাত নফল সালাত। খুব কম লোকই তার ওপর স্থায়ীভাবে আমল করতে পারে। ওয়াকী রহ. বলেন, আমার পিতা এতে আরো বলেছেন, হাবীব ইবন আবূ সাবিত রহ. বলেছেন, হে আবূ ইসহাক! আপনার এই হাদীসের পরিবর্তে এই মসজিদে ভর্তি সোনা আমার মালিকানাভুক্ত হলে তাও আমার প্রিয় হতো না।”[3]এ হাদীসে সূর্য ঢলে পড়লে চার রাকাত সালাতের কথা বলা হয়েছে। ইমাম ইরাকী রহ. বলেছেন, এটা যোহরের চার রাকাত সুন্নাত সালাত নয়; বরং আলেমগণ একে দুহা আল-কুবরার সালাত বলেছেন। আর সূর্য আকাশে এক বর্শা পরিমাণ উদিত হলে দুই রাকাত সালাতকে দুহা আস-সুগরার সালাত বলেছেন।[4]
>[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৮।
[3] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৬১, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
[4] নাইলুল আওতার, ৩/৮২।