বর্তমান যুগে ইমাম ও মুক্তাদির মাঝে ক্বিরাত খাটো ও লম্বা হওয়া নিয়ে মুসলিম বিশ্বের যে কোনো এলাকায় দ্বন্দ্ব-বিরোধ সর্বদা লেগেই থাকে। তাই এর আমূল নিরসন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত দিয়েই করতে হবে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্বিরাতই হবে খাটো ক্বিরাতের মানদন্ড। তবে কখনো কখনো কোনো ব্যাপক প্রয়োজনের কথা খেয়াল রেখে ক্বিরাতকে আরো খাটো করা যায়। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কখনো কখনো করেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা ইমামদেরকে ক্বিরাত খাটো করতেই আদেশ করতেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামইরশাদ করেন:
«إِذَا أَمَّ أَحَدُكُمْ النَّاسَ فَلْيُخَفِّفْ، فَإِنَّ فِيهِمْ الصَّغِيرَ، وَالْكَبِيرَ، وَالضَّعِيفَ وَالـْمَرِيضَ، فَإِذَا صَلَّى وَحْدَهُ فَلْيُصَلِّ كَيْفَ شَاءَ».
“তোমাদের কেউ মানুষের ইমামতি করলে সে যেন খাটো ক্বিরাত পড়ে। কারণ, মানুষের মধ্যে ছোট-বড়ো, দুর্বল ও অসুস্থ সবই রয়েছে। তবে সে যদি একা সালাত পড়ে তাহলে সে নিজ ইচ্ছা মাফিক ক্বিরাত পড়বে”।[1]
ক্বিরাত খাটো করার সর্ব প্রথম নির্দেশ আসে মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ব্যাপারে। কারণ, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে সালাত আদায় করতেন। অতঃপর তিনি নিজ সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে তাদের ইমামতি করতেন। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে ইশার সালাত পড়েছেন। তখন ইশার সালাত হতো প্রায় সূর্য ডুবার দু’ তিন ঘন্টা পর। অতঃপর তিনি নিজ সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে সূরা বাক্বারাহ দিয়ে তাদের ইমামতি শুরু করলেন। এ দিকে জনৈক ব্যক্তি তা সহ্য করতে না পেরে তাঁর পেছন ছেড়ে একাকী সালাত পড়ে চলে গেলো। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু কে তা জানানো হলে তিনি তাকে মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করলেন। লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ব্যাপারটি জানালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
«أَتُرِيدُ أَنْ تَكُونَ فَتَّانًا يَا مُعَاذُ!، إِذَا أَمَمْتَ النَّاسَ فَاقْرَأْ بِالشَّمْسِ وَضُحَاهَا، وَسَبِّحْ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى، وَاقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ، وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى».
“হে মু‘আয! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টি কারতে চাও। যখন তুমি মানুষের ইমামতি করবে তখন “ওয়াশ-শামসি ওয়াদ্বোহাহা”, “সাব্বিহিস্মা রাব্বিকাল-আ‘লা”, ‘ইক্বরা’ বিস্মি রাব্বিকা” ও “ওয়াল্লাইলি ইযা ইয়াগ্শা” পড়বে”।[2]
এ দিকে আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ بِالتَّخْفِيفِ وَيَؤُمُّنَا بِالصَّافَّاتِ».
“রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ক্বিরাত খাটো করতে আদেশ করতেন অথচ এ দিকে তিনি সূরা স্বাফ্ফাত দিয়ে আমাদের ইমামতি করতেন”।[3]
এ থেকে বুঝা যায়, সূরা সাফ্ফাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৃষ্টিতে খাটো সূরা। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, যেন নাহ্ল, ইউসুফ ও তাওবাহ এর মতো বড়ো সূরা পড়া না হয়।
অন্য দিকে আবু বার্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الْفَجْرِ مَا بَيْنَ السِّتِّينَ إِلَى الْمِائَةِ ايَةً».
“রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে (মাঝারি পর্যায়ের) ষাট থেকে এক শত আয়াত পর্যন্ত পড়তেন”।[4]
মাঝারি পর্যায়ের ষাট থেকে এক শত আয়াতের সূরা যেমন: আহযাব, ফুরক্বান, নামল, ‘আনকাবূত ইত্যাদি। এগুলো হচ্ছে ফজরের সালাতের স্বাভাবিক ক্বিরাত। অতএব, কেউ যদি ফজরের সালাতে সূরা ক্বাফ থেকে সূরা মুর্সালাত পর্যন্ত যে কোনো সূরা পড়ে তখন সে বড়ো সূরা পড়েছে বলে তার সাথে কোনো ধরণের উচ্চবাচ্যই করা যাবে না। কারণ, এগুলো হচ্ছে মাঝারি পর্যায়ের ক্বিরাত, যা খাটো সূরা বলেই বিবেচিত।
>[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৫।
[3] আহমদ ২/২৬, ৪০, ১৫৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৮২৭; ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৬০৬।
[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬১।