আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে আল্লাহর ওয়াস্তে ও আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই ভালোবাসেন। তারা বিশ্বাস করেন যে, যারা তাদেরকে ভালোবাসবেন, তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবেন, তাদের অধিকার সংরক্ষণ করবেন ও তাদের মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হবেন তারাই সফলকামী দলের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আর যারা তাদেরকে অপছন্দ করবেন, তাদেরকে গাল-মন্দ করবেন, শত্রুদের দলে তাদেরকে সম্পৃক্ত করবেন ও তাদের মর্যাদার বিপরীত কিছু বলবেন তারা ধ্বংসপ্রাপ্তদের দলে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
এ কথার দলীল হলো আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠ ﴾ [الحشر: ١٠]
“যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন,
«آيَةُ الإِيمَانِ حُبُّ الأَنْصَارِ، وَآيَةُ النِّفَاقِ بُغْضُ الأَنْصَارِ».
“ঈমানের নিদর্শন হলো আনসারগণকে ভালোবাসা এবং মুনাফিকীর আলামত হলো আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা”।[1]
এখানে যেহেতু আনসারগণের ভালোবাসা প্রমাণিত হয়েছে, তাহলে মুহাজিরগণের প্রতি ভালোবাসা আরও অধিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। যেহেতু তারা সর্বদিক বিবেচনায় তাদের (আনসারদের) চেয়ে উত্তম। এছাড়া তারাও আল্লাহকে সাহায্য করেছেন যেমন আনসারগণ করেছেন; সেহেতু তারাও আনসার হিসেবে গণ্য। [2]
কুরআন ও হাদীসে আল্লাহর ওয়াস্তে কাউকে ভালোবাসার যেসব মর্যাদার কথা উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে ভালোবাসার দ্বারা যে কেউ সেসব মর্যাদার অন্তর্ভুক্ত হবে; যেহেতু তারা হলেন সর্বোত্তম মানুষ।
ইমাম ত্বহাবী রহ. তার আক্বীদার কিতাবে বলেছেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে ভালোবাসি, তাদের কাউকে ভালোবাসায় আমরা বাড়াবাড়ি করি না, আবার কারও থেকে ভালোবাসা ছিন্নও করি না (সবাইকে ভালোবাসি)। আমরা তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করি ও তাদেরকে ঘৃণা করি যারা সাহাবীগণের সাথে শত্রুতা-বিদ্বেষপোষণ করবে এবং তাদেরকে খারাপভাবে উল্লেখ করবে। সাহাবীগণকে ভালোবাসা দীন, ঈমান ও ইহসান। আর তাদেরকে অপছন্দ করা কুফুরী, নিফাকী, পাপ ও অবাধ্যতা।’[3]
ইমাম মালেক রহ. এর বাণীটি এখানে উল্লেখযোগ্য সবচেয়ে সুন্দর কথা। তিনি বলেছেন, ‘সালাফ তথা সৎপূর্বসূরীরা তাদের সন্তানদেরকে আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার ভালোবাসা শিক্ষা দিতেন, যেমনিভাবে তারা তাদের সন্তানদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন।’[4]
আবু নু‘আইম তার “হিলইয়া”[5] গ্রন্থে বিশর ইবন হারিস রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘আমার অন্তরে যে আমলটি সবচেয়ে বেশি মজবুত ও কার্যকর মনে হচ্ছে তা হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের ভালোবাসা’।আবু নু‘আইম তার “হিলইয়া”[6] গ্রন্থে শু‘আইব ইবন হারব রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘‘আসিম ইবন মুহাম্মাদের কাছে সুফইয়ান আস-সাওরী রহ. এর গুণাবলী বর্ণনা করা হলো। তারা তার পনেরোটি মানাক্বিব তথা উত্তম গুণ উল্লেখ করলেন। তখন ‘আসিম ইবন মুহাম্মাদ তাদেরকে বললেন, তোমরা কি তার গুণাবলী বর্ণনা করা সমাপ্ত করেছো? আমি তার এমন একটি গুণের কথা জানি যা তোমাদের বর্ণিত গুণাবলীর চেয়ে উত্তম। তা হলো, তার অন্তর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের ব্যাপারে পরিচ্ছন্ন ছিল।’ (দোষ-ত্রুটি বর্ণনা থেকে মুক্ত ছিলো।)
>[2] আল-জাওয়াবুস সহীহ, ২/২৬৭।
[3] আক্বীদাতুত ত্বহাবীয়া মা‘আ শরহে ইবন আবিল ‘ইয্য, পৃষ্ঠা ৪৬৭।
[4] শরহু উসূলে ই‘তিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, ৭/১২৪০, আসার নং ২৩২৫; তারিখু মাদিনাতি দিমাশক, ৪৪/৩৮৩; আল-হুজ্জাতু ফি বায়ানিল মাহাজ্জাহ, ২/৩৩৮।
[5] হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৮/৩৩৮।
[6] হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৮/৩৩৮।
উম্মতের মধ্যে সম্মান-মর্যাদা, সততা ও বিশুদ্ধতায় সাহাবীগণের মতো আর কেউ নেই।[1] এ ব্যাপারে মুসলিমদের মধ্যে অকাট্য ইজমা সংঘটিত হয়েছে। এ মতের সাথে কিছু বিদ‘আতীদের একমত না হওয়া ধর্তব্য হবে না।
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. তার ‘নুনিয়্যাহ’ কিতাবে বলেছেন, ‘যেহেতু আলেমগণ ঐকমত্য যে, সাহাবীগণ (নবীদের পরে) মানব জাতির মধ্যে সর্বোত্তম মানব। এটি অকাট্য ভাবে প্রমাণিত, এতে কারো কোনো মতানৈক্য নেই।’[2]
সাহাবীগণের মর্যাদার ব্যাপারে অসংখ্য দলীল-প্রমাণ রয়েছে। আল্লাহর কিতাব আল-কুরআন তাদের মহিমান্বিত প্রশংসা বর্ণনায় ভরপুর। যেহেতু আল্লাহ তাদের সততা, বিশুদ্ধ ঈমান, প্রকৃত ভালোবাসা, পরিপূর্ণ জ্ঞান, পরিপক্ক মতামত, পূর্ণাঙ্গ উপদেশ ও স্পষ্ট আমানত সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন।
তাদের ফযীলতের সেসব আয়াতের মধ্য থেকে নিম্নে কয়েকটি বর্ণনা করা হলো:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ١٠٠﴾ [التوبة: ١٠٠]
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য”। [আত-তাওবা, আয়াত: ১০০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلَّذِينَ ءَاوَواْ وَّنَصَرُوٓاْ أُوْلَٰٓئِكَ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖ﴾ [الانفال: ٧٢]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে আর যারা আশ্রয় দিয়েছে ও সহায়তা করেছে, তারা একে অপরের বন্ধু।” [সূরা আল- আনফাল, আয়াত: ৭২]
এ আয়াত থেকে পরবর্তী আয়াত পর্যন্ত আল্লাহ তাদের মর্যাদা বর্ণনা করে বলেছেন,
﴿وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَٰهَدُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلَّذِينَ ءَاوَواْ وَّنَصَرُوٓاْ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ حَقّٗاۚ لَّهُم مَّغۡفِرَةٞ وَرِزۡقٞ كَرِيمٞ٧٤﴾ [الانفال: ٧٤]
“আর যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যারা আশ্রয় দিয়েছে ও সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক।” [সূরা আল- আনফাল, আয়াত: ৭৪]
সাহাবীগণের মর্যাদা প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿لَّقَد تَّابَ ٱللَّهُ عَلَى ٱلنَّبِيِّ وَٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ ٱلۡعُسۡرَةِ مِنۢ بَعۡدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٖ مِّنۡهُمۡ ثُمَّ تَابَ عَلَيۡهِمۡۚ إِنَّهُۥ بِهِمۡ رَءُوفٞ رَّحِيمٞ١١٧﴾ [التوبة: ١١٧]
“অবশ্যই আল্লাহ নবী, মুহাজির ও আনসারদের তাওবা কবুল করলেন, যারা তার অনুসরণ করেছে সংকটপূর্ণ মুহূর্তে। তাদের মধ্যে এক দলের হৃদয় সত্যচ্যূত হওয়ার উপক্রম হবার পর। তারপর আল্লাহ তাদের তাওবা কবূল করলেন। নিশ্চয় তিনি তাদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু।” [আত-তাওবা, আয়াত: ১১৭]
আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে আরও বলেছেন,
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِۚ وَمَثَلُهُمۡ فِي ٱلۡإِنجِيلِ كَزَرۡعٍ أَخۡرَجَ شَطَۡٔهُۥ فََٔازَرَهُۥ فَٱسۡتَغۡلَظَ فَٱسۡتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِۦ يُعۡجِبُ ٱلزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ ٱلۡكُفَّارَۗ وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ مِنۡهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمَۢا٢٩﴾ [الفتح: ٢٩]
“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকূকারী, সাজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সাজদার চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজীলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার কঁচিপাতা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কাণ্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿يَوۡمَ لَا يُخۡزِي ٱللَّهُ ٱلنَّبِيَّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَهُۥۖ نُورُهُمۡ يَسۡعَىٰ بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَبِأَيۡمَٰنِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَتۡمِمۡ لَنَا نُورَنَا وَٱغۡفِرۡ لَنَآۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ٨﴾ [التحريم: ٨]
“সেদিন নবী ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের আলো তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবেন, হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।” [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ فِيكُمۡ رَسُولَ ٱللَّهِۚ لَوۡ يُطِيعُكُمۡ فِي كَثِيرٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡرِ لَعَنِتُّمۡ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ حَبَّبَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡإِيمَٰنَ وَزَيَّنَهُۥ فِي قُلُوبِكُمۡ وَكَرَّهَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡكُفۡرَ وَٱلۡفُسُوقَ وَٱلۡعِصۡيَانَۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلرَّٰشِدُونَ ٧ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَنِعۡمَةٗۚ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ٨﴾ [الحجرات: ٧، ٨]
“আর তোমরা জেনে রাখো যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন। তিনি যদি অধিকাংশ বিষয়ে তোমাদের কথা মেনে নিতেন, তাহলে তোমরা অবশ্যই কষ্টে পতিত হতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত করেছেন। আর তোমাদের কাছে কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে অপছন্দনীয় করে দিয়েছেন। তারাই তো সত্য পথপ্রাপ্ত। আল্লাহর পক্ষ থেকে করুণা ও নি‘আমত স্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ৭-৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿لَا يَسۡتَوِي مِنكُم مَّنۡ أَنفَقَ مِن قَبۡلِ ٱلۡفَتۡحِ وَقَٰتَلَۚ أُوْلَٰٓئِكَ أَعۡظَمُ دَرَجَةٗ مِّنَ ٱلَّذِينَ أَنفَقُواْ مِنۢ بَعۡدُ وَقَٰتَلُواْۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ١٠﴾ [الحديد: ١٠]
“তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে এবং যুদ্ধ করেছে তারা সমান নয়। তারা মর্যাদায় তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যারা পরে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে। তবে আল্লাহ প্রত্যেকের জন্যই কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আর তোমরা যা করো, সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবগত।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ১০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿قُلِ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ وَسَلَٰمٌ عَلَىٰ عِبَادِهِ ٱلَّذِينَ ٱصۡطَفَىٰٓۗ ءَآللَّهُ خَيۡرٌ ﴾ [النمل : 59]
“বলুন, সব প্রশংসাই আল্লাহর জন্য। আর শান্তি তাঁর বান্দাদের প্রতি যাদের তিনি মনোনীত করেছেন। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ”। [সূরা আন-নামাল, আয়াত: ৫৯]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও সাওরী রহ, এর মতে, ‘তারা হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা।’ [3]
আল্লাহ তা‘আলা সাহাবীগণের সম্পর্কে আরও বলেছেন,
﴿كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِۗ١١٠﴾ [ال عمران: ١١٠]
“তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০]
এ আয়াত দ্বারা সাহাবীগণের মর্যাদা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। এ আয়াত হয়ত তাদের কথাই নির্দিষ্টভাবে বুঝিয়েছে অথবা সর্বোত্তম উম্মত বলে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব উম্মতকে বুঝানো হয়েছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব উম্মত বুঝালে সাহাবীরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
এ ছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা তাদের মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন,
﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَٰكُمۡ أُمَّةٗ وَسَطٗا لِّتَكُونُواْ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ وَيَكُونَ ٱلرَّسُولُ عَلَيۡكُمۡ شَهِيدٗا١٤٣﴾ [البقرة: ١٤٣]
“আর এভাবেই আমরা তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের ওপর সাক্ষী হও এবং রাসূল সাক্ষী হন তোমাদের উপর।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪৩] পূর্বোক্ত আয়াতের মতোই উপরোক্ত আয়াতের দ্বারা দলীল দেওয়া হয়েছে; বরং কুরআন ও হাদীসের যত আয়াত ও হাদীস এ উম্মতের সম্মান ও মর্যাদা প্রমাণ করে তা সবই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে অন্তর্ভুক্ত করে।
অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদীস সাহাবীগণের মর্যাদার কথা বলেছে। তন্মধ্যে নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«النُّجُومُ أَمَنَةٌ لِلسَّمَاءِ، فَإِذَا ذَهَبَتِ النُّجُومُ أَتَى السَّمَاءَ مَا تُوعَدُ، وَأَنَا أَمَنَةٌ لِأَصْحَابِي، فَإِذَا ذَهَبْتُ أَتَى أَصْحَابِي مَا يُوعَدُونَ، وَأَصْحَابِي أَمَنَةٌ لِأُمَّتِي، فَإِذَا ذَهَبَ أَصْحَابِي أَتَى أُمَّتِي مَا يُوعَدُونَ».
“তারকারাজি আসমানের জন্য নিরাপত্তা রক্ষাকারী। যখন তারকারাজি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তখন আসমানের জন্য প্রতিশ্রুত বিপদ আসন্ন হবে (অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হবে)। আর আমি আমার সাহাবীগণের জন্য নিরাপত্তা প্রদানকারী স্বরূপ। যখন আমি বিদায় নেব তখন আমার সাহাবীগণের উপর প্রতিশ্রুত সময় উপস্থিত হবে (অর্থাৎ ফিতনা-ফাসাদ ও যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু হয়ে যাবে)। আর আমার সাহাবীগণ সমগ্র উম্মতের জন্য নিরাপত্তা প্রদানকারী স্বরূপ। যখন আমার সাহাবীগণ বিদায় হয়ে যাবে তখন আমার উম্মতের ওপর প্রতিশ্রুত সময় উপস্থিত হবে (অর্থাৎ কিয়ামতের আলামত প্রকাশ পাবে। যেমন, শির্ক, বিদ‘আত ছড়িয়ে পড়বে, ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে, শয়তানের শিং উদয় হবে, খ্রিস্টানদের রাজত্ব কায়েম হবে, মক্কা ও মদীনার অবমাননা করা হবে ইত্যাদি)।[4]
আবুল আব্বাস আল-কুরত্ববী রহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ যতদিন জমিনে জীবিত থাকবেন ততদিন জমিনে দীন কায়েম থাকবে, হক প্রকাশ্যে থাকবে, শত্রুর উপর বিজয় অর্জিত হবে। আর যখন তাঁর সাহাবীরা মারা যাবেন, তখন পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদ শুরু হবে, শত্রুর বিজয় অর্জিত হবে। এভাবেই দীন কমতে থাকবে। দীন কমতে কমতে এক সময় এমন অবস্থা হবে যে, জমিনে আল্লাহ, আল্লাহ বলার মতো কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। (আর তখনই কিয়ামত সংঘটিত হবে)। এ কথাই উপরোক্ত হাদীসে এ উম্মতের সাথে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত।’[5]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لاَ تَسُبُّوا أَصْحَابِي، فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ، ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ، وَلاَ نَصِيفَهُ».
“তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ করো না। তোমাদের কেউ যদি অহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর, তবে তাদের একমুদ বা অর্ধমুদ-এর সমপরিমাণেও পৌঁছুতে পারবে না।”[6]
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় শাওকানী রহ. খুব সুন্দর একটি মন্তব্য পেশ করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘পরবর্তী সাহাবীগণ যদি উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেও পূর্ববর্তী সাহাবীগণের এক মুদ বা অর্ধ মুদ পরিমাণ ব্যয়ের মত সাওয়াবের অধিকারী না হয়, তবে আমাদের পক্ষ থেকে উহুদ পরিমাণ দানও তাদের এক শষ্য পরিমাণ বা তার অর্ধেক ব্যয়ের কাছে পৌঁছুতে পারবে বলে আমি মনে করি না’।[7]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন,
«خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ».
“আমার যুগের লোকেরাই হচ্ছে সর্বোত্তম লোক, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী যুগের।”[8]
সাহাবীগণের সর্বোত্তম হওয়ার এ সাক্ষ্য ও বিবরণ স্বয়ং এমন এক মহান ব্যক্তি দিয়েছেন যিনি মনগড়া কোনো কথা বলেন না। তাহলে এর চেয়ে উত্তম সত্যায়ন আর কী হতে পারে?!
আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের মর্যাদা বর্ণনায় বলেছেন, (এ ধরণের বর্ণনা ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু [9] ও হাসান বসরী রহ.[10] এর থেকেও বর্ণিত আছে) ‘যে ব্যক্তি কারো অনুসরণ করতে চায় সে যেনো মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে; কেননা জীবিত ব্যক্তি কখনও ফিতনায় নিপতিত হওয়া থেকে নিরাপদ নয়। তারাই (অর্থাৎ সেসব মৃত ব্যক্তি) হচ্ছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ। আল্লাহর শপথ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ হচ্ছেন এ উম্মতের সর্বোত্তম মানুষ, অন্তরের দিক থেকে সর্বাধিক পবিত্র, গভীর ইলমের অধিকারী আর সবচেয়ে কম লৌকিকতা প্রদর্শনকারী। আল্লাহ তাদেরকে তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী হিসেবে ও তাঁর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচিত করেছেন। অতএব, তাদের সম্মান ও মর্যাদা জানো ও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করো, তাদের আখলাক ও দীনের যতটুকু সম্ভব আঁকড়ে ধরো; কেননা তারা সঠিক হিদায়াতের পথে ছিলেন।’[11]
আবু ‘উমার আদ-দানী রহ. বলেছেন, ‘সাহাবীরা উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম, সর্বাধিক নেককার ও তারা আল্লাহর নির্বাচিত ছিলেন। আল্লাহ তাদেরকে তাঁর অপরিসীম নি‘আমত দান করে সম্মানিত করেছেন এবং তাঁর অনুগ্রহ ও দয়ার দ্বারা তাদেরকে বিশেষায়িত করেছেন।’[12]
সাহাবীগণের সুন্দর গুণাবালী ও মর্যাদা সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে দেখলে বুঝতে পারবেন যে, তারা ইলম, ন্যায়পরায়ণতা, জিহাদ ও অন্যান্য সব কল্যাণকর কাজে সর্বাধিক অগ্রগামী ছিলেন। ফলে তারা তাদের পূর্ববর্তীদেরকে ছাড়িয়ে গেছেন আর পরবর্তীদেরকে হারিয়ে দিয়েছেন, অভীষ্ট লক্ষ্যে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন, সর্বোচ্চ সম্মান অর্জন করেছিলেন। তারাই ছিলেন আমাদের পর্যন্ত ইসলাম পৌঁছানোর এবং সব ধরণের কল্যাণ ও হিদায়াতের মাধ্যম। তাদের মাধ্যমেই আমরা সৌভাগ্য ও নাজাত লাভ করেছি। কিয়ামত পর্যন্ত উম্মত তাদের ইলম, ন্যায়পরায়ণতা ও জিহাদের অবশিষ্ট কল্যাণ প্রাপ্ত হবেন। তাদের মাধ্যম ব্যতীত কেউ কোনো কল্যাণকর ইলমপ্রাপ্ত হবে না। তাদের মাধ্যমেই আমরা ইলম পেয়েছি। তাদের জিহাদ ও বিজয় ব্যতীত আমরা পৃথিবীর বুকে নিরাপদে বসবাস করতে পারতাম না। ন্যায়পরায়ণ ও হিদায়াতের ওপর অধিষ্ঠিত কোনো ইমাম বা শাসক তাদের দ্বারা প্রাপ্ত মাধ্যম ব্যতীত শাসন কার্য পরিচালনা করতে পারতো না। তারাই তরবারীর দ্বারা দেশ জয় করেছেন, দৃঢ় ঈমানের দ্বারা মানুষের হৃদয় উন্মুক্ত করেছেন, ন্যায়পরায়ণতার দ্বারা দেশ আবাদ করেছেন এবং ইলম ও হিদায়াতের দ্বারা অন্তর জয় করেছেন। তাদের কৃত আমল ছাড়াও কিয়ামত পর্যন্ত উম্মতের আমলের একটি অংশ তারা প্রাপ্ত হবেন। অতএব, সে মহান আল্লাহর তাসবীহ বর্ণনা করছি যিনি তাঁর দয়ায় ও রহমতে যাকে ইচ্ছা তাকে নির্বাচিত করেন।[13]
ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. তাদের হকের ব্যাপারে কতই না সুন্দর কথা বলেছেন! তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিজ্ঞ ও সচেতনতার সাথে তাদের সীরাত (জীবনী পড়েন) দেখেন, আল্লাহ তাদেরকে যে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন তা অবলোকন করেন, তাহলে তিনি নিশ্চিত ভাবে জানতে পাবেন যে, নবী রাসূলদের পরে তারাই সর্বোত্তম সৃষ্টি, তাদের মতো পূর্বে কেউ ছিলেন না এবং পরবর্তীতেও কেউ আসবেন না। এ উম্মতের মধ্যে তারাই সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম যে উম্মতকে আল্লাহ সমস্ত উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা দান করেছেন।’[14]
তাদের এ সুমহান মর্যাদা ও সুউচ্চ পবিত্রতম সম্মানের কারণে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত সকল সাহাবীকে ন্যায়পরায়ণ মনে করেন, তারা কেউ মাজরূহ তথা দোষ-ত্রুটি যুক্ত নন। আল্লাহ তাদেরকে অপবাদ থেকে মুক্ত রেখেছেন এবং দোষ-ত্রুটি থেকে রক্ষা করেছেন। তারা সকলেই মুসলিমদের সম্মানিত ইমাম ও নেতা। আর আল্লাহ তাদেরকে নির্বাচন করেছেন ও তাদের পবিত্রতার সংবাদ সকলেরই জানা। তারা সর্বোত্তম যুগের মানুষ, সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ যাদেরকে তাঁর নবীর সাহচর্য ও সাহায্যের জন্য নির্বাচিত করে যাদের ওপর তিনি সন্তুষ্ট, এর চেয়ে উত্তম ন্যায়পরায়ণতার সাক্ষ্য হতে পারে না, এর চেয়ে উত্তম প্রশংসা হতে পারে না, আর এর চেয়ে পরিপূর্ণ ন্যায়পরায়ণতা সাব্যস্ত করার আর কী পন্থা হতে পারে?
ইবন আব্দুল বার রহ. বলেছেন, ‘সমস্ত সাহাবীগণের অবস্থা ও জীবন চরিত নিয়ে গবেষণা করে আহলে হক তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত ইজমা তথা ঐকমত্য হয়েছেন যে, তারা সকলেই ন্যায়পরায়ণ।’ [15] ‘তারা সকলেই সৎকাজ ও তাকওয়ার অধিকারী এবং সর্বাধিক যোগ্য ছিলেন, আর সব ভালো কাজের তারাই ছিলেন অগ্রগামী।’[16]
>[2] নুনিয়্যাতু ইবনুল কাইয়্যিম মা‘আ শারহিহা তাওদীহুল মাকাসিদ, লি ইবন ‘ঈসা, ২/৪৬১।
[3] তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ইবন কাসীর, ১০/৪১৮; ফাতহুল কাদীর, ৪/১৯৫।
[4] সহীহ মুসলিম, কিতাব, ফাযায়েলে সাহাবাহ, বাব, بَابُ بَيَانِ أَنَّ بَقَاءَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَانٌ لِأَصْحَابِهِ، وَبَقَاءَ أَصْحَابِهِ أَمَانٌ لِلْأُمَّةِ ৪/১৯৬১, হাদীস নং ২৫৩১।
[5] আল-মুফহিম, ৬/৪৮৫।
[6] সহীহ বুখারী, কিতাব: ফাযায়েলে সাহাবাহ, বাব: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে বাণী: আমি যদি কাউকে খলীল বানাতাম, ৩/১২, হাদীস নং ৩৬৭৩; সহীহ মুসলিম, কিতাব: ফাযায়েলে সাহাবাহ, বাব: সাহাবীদেরকে গাল-মন্দ করা হারাম, ৪/১৯৬৭-১৯৬৮, হাদীস নং ২৫৪১, হাদীসটি আবু সা‘ঈদ খুদুরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।
[7] ইরশাদুস সায়িল ইলা দালায়েলিল মাসায়েল মা‘আর রাসায়েলেস সালাফিয়া, পৃষ্ঠা ৪৫।
[8] সহীহ বুখারী, কিতাব: সাহাবীদের মর্যাদা, বাব: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ও তাদের সহচরদের (তাবেয়ী) মর্যাদা, যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য লাভ করেছেন বা মুসলিমদের মধ্যে যারা তাঁকে দেখেছেন তারাই তাঁর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত, ৩/৬, হাদীস নং ৩৬৫১; সহীহ মুসলিম, কিতাব: সাহাবীদের মর্যাদা, বাব: সাহাবী ও যারা তাদের পরবর্তীতে ও যারা তাদের পরবর্তীতে আসবেন তাদের মর্যাদা, ৪/১৯৬৩, হাদীস নং ২৫৩৩। হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।
[9] আবু নু‘আইম রহ. হিলইয়াতুল আওলিয়াতে ১/৩০৫ বর্ণনা করেছেন।
[10] ইবন আব্দুল বার জামে‘উ বায়ানিল ইলম ও ফাদলিহি ২/১৯৫ তে বর্ণনা করেছেন।
[11] ইবন আব্দুল বার জামে‘উ বায়ানিল ইলম ও ফাদলিহি ২/১৯৫-১৯৬ তে বর্ণনা করেছেন।
[12] আল-আরজুযাতুল মুনাব্বিহা ‘আলা আসমাইল কুররা ওয়ার রুওয়াত ওয়া উসূলিল কিরাআত, পৃষ্ঠা ১৮৯, কবিতা নং ৫৭১-৫৭২।
[13] ইবনুল কাইয়্যেম, তরীকুল হিজরাতাইন, পৃষ্ঠা ৬৪৮।
[14] মাজমু‘উল ফাতাওয়া, (আল-ওয়াসিতিয়্যাহ) ৩/১০৩।
[15] আল-ইসতী‘আব, ১/১৯।
[16] কাসীদাতু আবু মারওয়ান আব্দুল মালিক ইবন ইদরীস আল-জাযায়েরী ফিল আদাবি ওয়াস-সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৫৮, পংক্তি নং ১২৪।
কেননা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতে, সাহাবীগণ সাধারণ মর্যাদার ক্ষেত্রে সকলেই সমান, তবে মর্যাদার স্তরের বিবেচনায় তারা বিভিন্ন স্তরের। তাদের কিছু সংখ্যক অন্যদের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান, তবে এতে কাউকে অমর্যাদা করা যাবে না।
সাধারণভাবে সর্বোত্তম সাহাবী হলেন জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবী। আর তারা হলেন, চার খোলাফায়ে রাশেদীন; তথা আবু বকর, উমার, উসমান ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম এবং অবশিষ্ট ছয়জন সাহাবী। তাদের সমষ্টি ইবন আবু দাউদ তার ‘হায়িইয়্যাহ’ তে এভাবে উল্লেখ করেছেন,
سعيد وسعدٌ وابن عوف وطلحة
وعامرٌ فهر والزبير الممدح
অর্থাৎ সা‘ঈদ, সা‘দ, ইবন ‘আউফ, তালহা, ফিহরের ‘আমের ও প্রশংসিত যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম।[1]
জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত উক্ত দশজনের মধ্যে চার খলীফার মর্যাদা সবার উপরে। তারা চারজন আবার খিলাফতের ধারাবাহিকতা অনুসারে একে অন্যের চেয়ে মর্যাদাবান।[2]
কবি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল সাহাবী ও তাঁর পরিবারের মর্যাদা ও সুন্দর গুণাবলী ধারণ করো ও প্রচার করো। অন্তরের গভীরে তা স্থাপন করো, সমস্ত সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে আবু বকর ও উমারকে অগ্রাধিকার দাও, তাদের পরে উসমান অতঃপর যুদ্ধের ময়দানে বীর সেনানী আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু।[3]
নিঃসন্দেহে ইসলামে আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার মর্যাদা সবার উর্ধ্বে। এ উম্মতের নবীর পরে তাদের মর্যাদা; বরং সমস্ত নবীদের পরে সৃষ্টিকুলের মধ্যে তারা সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। তাদের দুজনের মধ্যে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবার শ্রেষ্ঠত্বে অগ্রগামী।
আহলে বাইতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইমাম আবু জা‘ফর আল-বাকির রহ. এর বাণীটি এখানে প্রণিধান যোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার মর্যাদা জানে না সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত সম্পর্কে অজ্ঞ।’[4]
শা‘বী রহ. বলেছেন, ‘আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে ভালোবাসা ও তাদের মর্যাদা জানা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।’[5]
আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার পরে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণের মর্যাদা, অতঃপর উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রগণকারীগণ, অতঃপর বাই‘আতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণের মর্যাদা।
এ ধারাবাহিকতা কতিপয় আলেম উল্লেখ করেছেন। যেমন, ইবন কাসীর রহ.[6], ইবনুস সালাহ [7] ও নাওয়াওয়ী রহ.[8]।
কতিপয় আলেম বাই‘আতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণকে উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের উপর প্রধান্য দিয়েছেন।[9] আবার কেউ কেউ উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের পরের স্তরে রেখেছেন আহযাবের যুদ্ধে অটলভাবে অংশগ্রহণকারীদেরকে, অতঃপর বাই‘আতে রিদওয়ানের সাহাবীগণকে।[10] আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত (সামষ্টিকভাবে) আনসারগণের ওপরে মর্যাদায় মুহাজিরগণকে অগ্রাধিকার দেন।[11] এমনিভাবে যারা আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাদেরকে যারা পরে ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাদের ওপরে অগ্রাধিকার দেন।
মহিলা সাহাবীগণের মধ্যে তিনজন সর্বোত্তম। তারা হলেন, খাদিজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা, ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ও ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা।
শাইখুল ইসলাম আবুল আব্বাস ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, ‘এ উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম নারী হচ্ছেন, খাদিজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ও ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা। তাদের একজনের ওপর আরেক জনের অগ্রাধিকারের ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য ও বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।’[12]
এখানে একট বিষয় উল্লেখ করা জরুরী যে, জমহুর আলেমদের ঐকমত্যে, সমস্ত সাহাবীরা তাদের পরে আগত সব লোকদের চেয়ে উত্তম।[13] এ ব্যাপারে কীভাবে মতানৈক্য বা সন্দেহ পোষণ করা সম্ভব! তারা তো এমন সৌভাগ্যবান যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হয়েছেন, তারা তো এমনই মর্যাদাবান ছিলেন যাদের সমকক্ষ কেউ হবেন না, যদিও সে উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তবুও তাদের একমুদ বা অর্ধমুদ-এর সমপরিমাণ সাওয়াবের কাছে পৌঁছুতে পারবে না। তদুপরি যদি তাদের সালাত, জিহাদ ও অন্যান্য আমলসমূহ হিসেব করা হয় তবে তাদের মর্যাদা কোন স্তরে গিয়ে ঠেকবে?
তাদের এ মর্যাদার ব্যাপারে কীভাবে কেউ মতানৈক্য করবে? তারা তো এমন লোক যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلرَّٰشِدُونَ٧﴾ [الحجرات: ٧]
“তারাই তো সত্য পথপ্রাপ্ত।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰ١٠﴾ [الحديد: ١٠]
“আর আল্লাহ তাদের প্রত্যেকের জন্যই কল্যাণের ওয়াদা করেছেন।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ১০]
তাদের মর্যাদার ব্যাপারে কীভাবে সন্দেহ পোষণ করা যায় যাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي».
“আমার যুগের লোকেরাই হচ্ছে সর্বোত্তম লোক।”[14]
মু‘আফি ইবন ‘ইমরান রহ. কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘উমার ইবন আব্দুল আযীয ও মু‘আবিয়া ইবন আবু সুফইয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মধ্যে মর্যাদার পার্থক্য কেমন? (অর্থাৎ কার মর্যাদা বেশি?) তিনি এ প্রশ্নের কারণে অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের সাথে কাউকে তুলনা করা যাবে না। আর মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী, তাঁর শশুরদিকের আত্মীয়, অহী লিখক এবং আল্লাহর অহীর আমীন তথা আমানতদার।’[15]
ইমাম আহমাদ রহ. কে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের সাথে কাউকে কী তুলনা করা যাবে? তিনি বললেন, মা‘আযাল্লাহ (আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কী উমার ইবন আব্দুল আযীয রহ. থেকে উত্তম? তিনি বললেন, অবশ্যই, অবশ্যই তিনি উত্তম; কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي».
“আমার যুগের লোকেরাই হচ্ছে সর্বোত্তম লোক।”[16] [17]
ইমাম আহমাদ রহ. আরও বলেছেন, ‘অতএব, তাদের মধ্যে যারা ক্ষণিকের জন্য হলেও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্য পেয়েছেন তারাও তাদের পরবর্তী যুগের লোকদের চেয়ে উত্তম; যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেন নি; যদিও তারা সব ধরণের আমল করে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করে (মারা যায়)।’[18]
প্রশ্ন: কেউ যদি এ প্রশ্ন করেন যে, তাহলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত বাণীর কী ব্যাখ্যা হবে? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«فَإِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ أَيَّامًا الصَّبْرُ فِيهِنَّ مِثْلُ قَبْضٍ عَلَى الْجَمْرِ، لِلْعَامِلِ فِيهِنَّ مِثْلُ أَجْرِ خَمْسِينَ رَجُلًا يَعْمَلُونَ مِثْلَ عَمَلِهِ. قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْهُمْ؟ قَالَ خمسين منكم».
“তোমাদের পরবর্তীতে এমন যুগ আসবে যে যুগে (দীনের উপর) ধৈর্য ধরে থাকা জ্বলন্ত অঙ্গার হাতে রাখার মত যন্ত্রণাদায়ক হবে। ঐ যুগে যে দীনের উপর আমল করবে তার প্রতিদান হবে তার মতো আমলকারী পঞ্চাশ লোকের অনুরূপ। একজন জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাদের পঞ্চাশ জনের মতো সাওয়াব হবে? তিনি বললেন: না, তোমাদের পঞ্চাশ জনের সমান তার সাওয়াব হবে।”[19]
জবাব: এ হাদীসে নির্দিষ্ট একটি ব্যাপারে মর্যাদার কথা বলা হয়েছে, সাধারণ মর্যাদার কথা বলা হয় নি। আর তা হলো, সে সময়ে ধৈর্য ধারণ করলে পঞ্চাশ জন সাহাবীগণের ধৈর্য ধারণের প্রতিদান পাবে। তাহলে এখানে একটি নির্দিষ্ট আমলের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে, সব কাজের মর্যাদা নয়। ইবন হাজার রহ. বলেছেন, ‘উপরোক্ত হাদীস “তোমাদের পঞ্চাশ জনের আমলের সমান তার সাওয়াব হবে।” এর ব্যাখ্যায় বলা যায়, হাদীসটি সাহাবী নয় এমন লোকদেরকে সাহাবীগণের উপর মর্যাদা দেওয়া বুঝায় না। কেননা শুধু প্রতিদান বেশি হওয়া সাধারণভাবে অধিক মর্যাদাবান হওয়া প্রমাণ করে না। তাছাড়া যে আমলের ব্যাপারে তুলনা করে প্রতিদানের কথা বলা হয় সেটি শুধু সে আমলের সাদৃশ প্রতিদানই পাওয়া যায়। অন্যদিকে সাহাবীরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দর্শন লাভে যে অতিরিক্ত মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন তাতে কেউ তাদের সমকক্ষ হবেন না।’[20]
[2] এ ব্যাপারটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের কাছে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত মতামত। দেখুন, মাজমু‘উল ফাতাওয়া, ৩/১৬২; আল-ইসতী‘আব, ৩/১১১৭-১১১৮।
[3] কাসীদাতু আবু মারওয়ান আব্দুল মালিক ইবন ইদরীস আল-জাযায়েরী ফিল আদাবি ওয়াস-সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৫৭, পংক্তি নং ১১৬-১১৮।
[4] আল-হুজ্জাতু ফি বায়ানিল মুহাজ্জাহ এবং শরহু ‘আকীদাতু আহলিস সুন্নাহ, ২/৩৫০।
[5] আল-হুজ্জাতু ফি বায়ানিল মুহাজ্জাহ এবং শরহু ‘আকীদাতু আহলিস সুন্নাহ, ২/৩৩৭।
[6] আল-বা‘ইসিল-হাসীস, পৃষ্ঠা ১৮৩।
[7] মুকাদ্দামাতু ইবনিস সালাহ, ১/২৬৪-২৬৫।
[8] আত-তাকরীব ওয়াত-তাইসীর লিমা‘রিফিতি সুন্নাতিল বাশীরিন নাযীর, পৃষ্ঠা ৯৩।
[9] যেমন, সাফারীনী রহ. তার ‘লাওয়ামি‘উল আনওয়ারিল বাহিয়্যাহ’ ২/৩৭১-৩৭২ তে উল্লেখ করেছেন।
[10] যেমন, হিকামী রহ. তার ‘মা‘আরিজুল কাবূল’ ২/৩৭১-৩৭২ এ উল্লেখ করেছেন।
[11] লাওয়ামি‘উল আনওয়ারিল বাহিয়্যাহ, ২/৩৭২।
[12] মাজমু‘উল ফাতাওয়া, ২/৪৮১।
[13] দেখুন, ফাতহুল বারী, ৭/৭।
[14] সহীহ বুখারী, কিতাব: সাহাবীদের মর্যাদা, বাব: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ও তাদের সহচরদের (তাবেয়ী) মর্যাদা, যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য লাভ করেছেন বা মুসলিমদের মধ্যে যারা তাঁকে দেখেছেন তারাই তাঁর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত, ৩/৬, হাদীস নং ৩৬৫১; সহীহ মুসলিম, কিতাব: সাহাবীদের মর্যাদা, বাব: সাহাবী ও যারা তাদের পরবর্তীতে ও যারা তাদের পরবর্তীতে আসবেন তাদের মর্যাদা, ৪/১৯৬৩, হাদীস নং ২৫৩৩। হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।
[15] দেখুন, তারিখু মাদীনাতি দিমাশ্ক, ৯/২০৮।
[16] সহীহ বুখারী, কিতাব: সাহাবীদের মর্যাদা, বাব: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ও তাদের সহচরদের (তাবেঈ) মর্যাদা, যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য লাভ করেছেন বা মুসলিমদের মধ্যে যারা তাঁকে দেখেছেন তারাই তাঁর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত, ৩/৬, হাদীস নং ৩৬৫১; সহীহ মুসলিম, কিতাব: সাহাবীদের মর্যাদা, বাব: সাহাবী ও যারা তাদের পরবর্তীতে ও যারা তাদের পরবর্তীতে আসবেন তাদের মর্যাদা, ৪/১৯৬৩, হাদীস নং ২৫৩৩। হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।
[17] দেখুন, খাল্লাল, আস-সুন্নাহ ২/৪৩৫।
[18] শরহু উসূলি ই‘তিকাদি আহলিস সুন্নাহ, লালকা’য়ী, ১/১৬০।
[19] তিরমিযী, কিতাব: তাফসীরুল কুরআন, বাব: সূরা আল-মায়েদা, ৫/২৫৭, হাদীস নং ৩০৫৮, তিনি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। আবু দাউদ, কিতাব: আল-মালাহিম, বাব: আল-আমরু ওয়ান নাহী, ৪/৩৩২, হাদীস নং ৪৩৪১; ইবন মাজাহ, পৃষ্ঠা ১৩৩১, হাদীস নং ৪০১৪; আলবানী রহ. হাদীসটি তার সিলসিলা আস-সাহিহাতে ১/৮৯২-৮৯৩, হাদীস নং ৪৯৪, এটিকে সহীহ বলেছেন।
জ্ঞাতব্য, এ হাদীসটির পুরো অংশকে আলবানী রহ. সহীহ বলেন নি; বরং তিনি বলেছেন, হাদীসটি দ‘ঈফ, তবে এর কিছু অংশ সহীহ। দেখুন মিশকাত, হাদীস নং ৫১৪৪; সহীহ আবু দাউদ, সংক্ষিপ্ত সনদে, হাদীস নং ১৮৪৪-২৩৭৫; সিলসিলা আস-সাহীহা, হাদীস নং ৫৯৪; দ‘ঈফুল জামে‘ আস-সাগীর, হাদীস নং ২৩৪৪।- অনুবাদক।
[20] ফাতহুল বারী, ৭/৭।
কবি বলেছেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো,
তাদের সবার সুন্দর ব্যাপার গুণগুলো প্রচার করো ও প্রসার করো।[1]
নিঃসন্দেহে তাদেরকে ভালোবাসাই তাদের সুন্দর আখলাকসমূহ প্রচার করা। যার অন্তর তাদের ভালোবাসায় সিক্ত ও ভরপুর, সে তাদের প্রশংসা ও সুনাম প্রচারে নিবেদিত ও অটল থাকবে।
এ ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত সকলেই একমত এবং তাদের কিতাবসমূহে এ ব্যাপারে তাদের আক্বীদা লিপিবদ্ধ করেছেন। যেমন, ইমাম মুযানী রহ. বলেছেন, ‘তাদের মর্যাদার কথা প্রচার করা হবে এবং তাদেরকে সুন্দর কাজসমূহের মাধ্যমে স্মরণ করা হবে (প্রচার করা হবে)’।[2]
ইবন আবি যামানীন রহ. বলেছেন, ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মত হচ্ছে, সকলে যেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে ভালোবাসায় বিশ্বাস করে এবং তাদের সুন্দর কাজসমূহ ও তাদের মর্যাদার প্রচার-প্রসার করে।’[3]ইবন আবি দাউদ বলেছেন, ‘সকল সাহাবীর ব্যাপারে উত্তম কথা বলো; তাদের ব্যাপারে কোনো অপবাদ দিও না, যা তাদেরকে দোষযুক্ত ও নিন্দিত করে।’[4]
>[2] শরহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৮৭।
[3] উসূলুস সুন্নাহ, ইবন আবু যামানীন, পৃষ্ঠা ২৬৩।
[4] মানযুমাতু ইবন আবু দাউদ ‘আল-হায়িইয়্যাহ’ মা‘আ শরহিহা ‘আত-তুহফাতুস সানিয়্যাহ’ পৃষ্ঠা ১০, লেখক, আব্দুর রায্যাক আল-বদর।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বিশ্বাস করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব সাহাবী (সমষ্টিগতভাবে) জান্নাতী।[1]
আল-কুরআনের অনেক আয়াত রয়েছে যা এ ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠﴾ [التوبة: ١٠٠]
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰ١٠﴾ [الحديد: ١٠]
“আর আল্লাহ তাদের প্রত্যেকের জন্যই কল্যাণের ওয়াদা করেছেন।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ১০]
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত কুরআন ও সুন্নায় নির্দিষ্টভাবে যাদের ব্যাপারে জান্নাতের সুসংবাদ এসেছে, যেমন সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবী, আব্দুল্লাহ ইবন সালাম[2], কায়েস ইবন সাবিত[3], ‘উকাশা ইবন মিহসান[4], এ ছাড়াও অন্যান্য বহু সাহাবী যাদের ব্যাপারে জান্নাতের সুসংবাদ এসেছে তাদের সবার ব্যাপারে তারা জান্নাত লাভের সাক্ষ্য দেন।[5]আবু উসমান আস-সাবূনী রহ. বলেছেন, ‘যে সব সাহাবীগণের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাত লাভের সাক্ষ্য দিয়েছেন, মুহাদ্দিসগণও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর সত্যায়ন ও তাঁর ওয়াদার সত্যতার কারণে তাদের জান্নাত লাভের সাক্ষ্য প্রদান করেন। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে না জানলে জানাতেন না। আল্লাহ তা‘আলা গায়েবের যে সংবাদ তাঁর রাসূলকে জানাতে চেয়েছেন তা তিনি তাকে জানিয়েছেন। [6]
>[2] যেমন, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮১২, সা‘দ ইবন আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস।
[3] যেমন, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৬১৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৯, আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস।
[4] যেমন, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭৪, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস।
[5] শাইখ আব্দুল আযীয আস-সালমান তার ‘কাওয়াশিফুল জালিয়্যাহ ‘আন মা‘আনিল ওয়াসিত্বিয়্যাহ’ (পৃষ্ঠা ৬৮৯-৬৯৪) কিতাবে একচল্লিশ জন সাহাবীদের জান্নাতের সুসংবাদের প্রমাণ পেশ করেছেন।
[6] আক্বীদাতুস সালাফ ওয়া আসহাবুল হাদীস, পৃষ্ঠা ২৮৭; মাজমু‘উল ফাতাওয়া (আল-ওয়াসিত্বিয়্যাহ) ৩/১৫৩।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত এ ব্যাপারে একমত যে, সাহাবীগণের প্রশংসা করা, তাদের জন্য ইসতিগফার করা, তাদের জন্য রহমতের দো‘আ করা এবং তাদের নাম শুনে রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম বলা ওয়াজিব।[1]
মুসলিমের অন্তর যখন মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) ভালোবাসা ও সম্মানে পরিপূর্ণ হয়, তখন তাদের মুখের ভাষায় তাদের জন্য দো‘আ প্রকাশ পায় এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করে।
ইবনুল মুবারক রহ. বলেছেন, ‘আমি সর্বদা তাদের (সাহাবীগণের) জন্য মাগফিরাত কামনা করি, যেভাবে আমি প্রকাশ্যে ও গোপনে তাদের জন্য মাগফিরাত কামনায় আদিষ্ট।’[2]
এমনকি তাদের জন্য ‘রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম’ বলে দো‘আ করা ‘উরফী ইজমা তথা আহলে ইলম এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।[3]
সাহাবীগণের কারো নাম উল্লেখ করা হলেই ‘রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ বলে তার সাথে যুক্ত করে তার জন্য দো‘আ করা হয়। এ ব্যাপারে মুসলিমগণ একমত। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি তাদের ওপর রাযী ও সন্তুষ্ট হয়েছেন,
﴿رَضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ٢﴾ [المجادلة: ٢٢]
“আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।” [সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ২২]
শাওকানী রহ. বলেছেন, ‘এ উম্মতের পূর্বের ও পরের জমহুর মুসলিমের মাঝে এ ব্যাপারটি প্রচলিত হয়ে আসছে যে, তারা সাহাবীগণের নাম উল্লেখ করেই তাদের জন্য “রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু” বলে দো‘আ করেন, তাদের পরে আগত মুসলিমগণ তাদের পূর্বে আগত সাহাবীগণের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করে ‘রাহিমাহুল্লাহ’ বলেন, আল্লাহর মাগফিরাত ও ক্ষমার দো‘আ করেন, যেভাবে আল্লাহ আমাদেরকে বলার নির্দেশ দিয়েছেন।’ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ١٠﴾ [الحشر: ١٠]
“আর যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না।” [সূরা : আল-হাশর: ১০]
>[2] দিওয়ানু ইবনুল মুবারক, পৃষ্ঠা ২১, তাহকীক, সা‘দ আল-ফাক্বী।
[3] দেখুন, সিলসিলাতুল আহাদীসুদ দ‘ঈফা, আলবানী রহ., ১১/৭৭০। উল্লেখ্য যে, এখানে ‘উরফী তাখাসসুস তথা আলিমদের খাস পরিভাষা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এ ব্যাপারে আহলে ইলম ও মুসলিমগণ একমত হয়েছেন, যা সকলের কাছেই পরিচিত ও জানা। অন্যদিকে ‘রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ অন্যদের ব্যাপারেও বলা জায়েয। দেখুন, আল-মাজমু‘, ইমাম ইমাম নাওয়াওয়ী রহ., ৬/১৭২।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত শরী‘আত অনুমোদিত পদ্ধতিতে মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী। তারা অতি বাড়াবাড়ি, কট্টরতা, ছাড়াছাড়ি ও নানা দলে বিভক্ত হওয়া থেকে সর্বোচ্চ দূরে অবস্থানকারী মানুষ। এ কারণেই তারা বিশ্বাস করেন যে, সাহাবীগণের উচ্চ মর্যাদা হওয়া মানে এটা নয় যে, তারা গুনাহ থেকে মুক্ত; তাদের ন্যায়পরায়ণতা সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি তাদের ভুল-ত্রুটিতে পতিত হওয়ার সাথে সাংঘর্ষিক নয়।
তা সত্ত্বেও তাদের ভুল-ত্রুটিগুলো অন্যদের ভুলের সাথে তুলনা করা যাবে না। তাদের ও অন্যদের জীবন চরিত যারা জানেন তারা এ দুয়ের মধ্যকার পার্থক্য ভালোভাবেই বুঝতে পারেন।
তাছাড়া তাদের মধ্যকার যেসব ভুল বা অপরাধ ধারণা করা হয়ে থাকে তার অধিকাংশই বাড়তি কিংবা কমতি বর্ণনা থেকে মুক্ত নয় অথবা এসব বর্ণনা সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন। বরং এসব বর্ণনার অধিকাংশই অনুরূপ।[1] সুতরাং নির্দ্বিধায় এসব বর্ণনা প্রত্যাখাত ও নিক্ষিপ্ত।
আবার কিছু বর্ণনার সূত্র সঠিক হলেও সে সব বর্ণনার সুন্দর ব্যাখ্যার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সুন্দর ব্যাখ্যাটি নির্দিষ্টভাবে ধর্তব্য হবে।
যেহেতু মুসলিম ব্যক্তিকে অন্যান্য সাধারণ মুসলিমের ব্যাপারে সুন্দর ধারণা পোষণ করতে আদেশ করা হয়েছে, তাহলে মুমিনদের সর্বোত্তম ও নেতৃবর্গের ব্যাপারে (সাহাবীগণের ব্যাপারে) তাদের কীরূপ ধারণা পোষণ করা উচিৎ একটু চিন্তা করে দেখুন।
দুর্বলতম ঈমানের অধিকারীগণও তাদের ব্যাপারে এ ধারণা করবে যে, তাদের থেকে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে তা তাদের নিজস্ব গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা অথবা ভুল ও অসচেতনা বশত: হয়েছে অথবা সেটি তাদের ইজতিহাদ ছিল, যাতে ব্যক্তি সঠিকতায় পৌঁছলে দুটি সাওয়াব আর ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হলে একটি সাওয়াবের অধিকারী হয়। [2]
যা হোক, তাদের থেকে যে সব ভুল-ত্রুটি ও গুনাহ সংঘটিত হয়েছে তা পাঁচ ভাগে সীমাবদ্ধ:[3]
প্রথমত: সেসব ভুলের ব্যাপারে তারা তাওবা করেছেন। আর একথা কারোই অজানা নয় যে, ভুল-ত্রুটির ব্যাপারে সাহাবীরা সবচেয়ে দ্রুত তাওবাকারী। আর সকলেই জানে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ».
“গুনাহ থেকে তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য।”[4]
আর আল্লাহর কাছে অন্যদের তুলনায় তাদের উচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের কারণে তাদের তাওবা সবচেয়ে বেশি কবুল হওয়ার যোগ্য।
দ্বিতীয়ত: তাদের অপরিসীম সৎকাজের কারণে তাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। সৎকাজসমূহ গুনাহসমূহকে মোচন করে দেয়। সাহাবীগণের সৎকাজসমূহের (পূর্বে যা আলোচনা করা হয়েছে) পরিমাণ অনেক বেশি ও এর প্রতিদানও অনেক বড়। এ ব্যাপারে আগে আলোচনা করা হয়েছে।
তৃতীয়ত: ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জিহাদে শরিক হওয়ার কারণে তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপারে বলেছেন,
«مَا يُدْرِيكَ، لَعَلَّ اللَّهَ اطَّلَعَ عَلَى أَهْلِ بَدْرٍ فَقَالَ: اعْمَلُوا مَا شِئْتُمْ».
“তুমি জান কি? অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা আহলে বদর সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত রয়েছেন এবং তাদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘তোমরা যেমন ইচ্ছা আমল করো।”[5]
চতুর্থত: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশের কারণে তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তাঁর শাফা‘আত তাওহীদবাদিরা প্রাপ্ত হবেন, যারা আল্লাহর সাথে কোনো কিছু শির্ক করেন না,[6] তাহলে যারা সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ তাওহীদবাদি এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাধিক নিকটবর্তী লোক তাদের ব্যাপারে আপনার ধারণা কীরূপ হতে পারে?। নিঃসন্দেহে তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ প্রাপ্তিতে সর্বোত্তম ও সর্বাধিক অগ্রগামী মানুষ।
পঞ্চমত: দুনিয়াতে তারা যেসব বালা-মুসিবত ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন সে কারণে তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। আর শরী‘আতের নিয়মানুযায়ী বালা-মুসিবত গুনাহ মোচনকারী।
উপরোক্ত আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা বর্ণনা করা যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের ব্যাপারে তাদের অন্তর ও মুখের ভাষা পবিত্র ও নিরাপদ রাখতে হবে।[7] সুতরাং এখানে একটি বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে সাব্যস্ত হচ্ছে যে, মুসলিমের অন্তর ও তার মুখের ভাষা সাহাবীগণের মধ্যকার সংঘটিত ব্যাপারে সমালোচনা ও নিন্দা করা থেকে মুক্ত ও পবিত্র থাকবে। যার অন্তর কলুষিত সে ব্যতীত এ সরল সঠিক পথ থেকে কেউ বিমূখ হয় না।
সুফইয়ান ইবন ‘উয়াইনা রহ. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের কোনো ব্যাপারে মুখ খুলবে (সমালোচনা করবে) সে প্রবৃত্তি পূজারীদের অন্তর্ভুক্ত’।[8] ইমাম আহমাদ রহ. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীর ব্যাপারে সমালোচনা করবে, অথবা তাদের কোনো ঘটনার কারণে তাদের কাউকে অপছন্দ করবে অথবা দোষ-ত্রুটি ও অসৌজন্যতার সাথে তাদের কারো নাম উল্লেখ করবে, সে ব্যক্তি বিদ‘আতী; যতক্ষণ না সে সাহাবীদের সকলের জন্য আল্লাহর রহমতের দো‘আ না করবে। আর এর মাধ্যমে তার অন্তর তাদের (সাহাবীগণের) ব্যাপারে পবিত্র ও নিরাপদ হবে।’[9]
>[2] মাজমু‘উল ফাতাওয়া (‘আল-ওয়াসিতিয়্যাহ’), ৩/১৫৫।
[3] শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. পূর্বোক্ত কিতাবে এ পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্তাকারে ইঙ্গিত করেছেন।
[4] ইবন মাজাহ মারফু‘ সূত্রে তার সুনানে বর্ণনা করেছেন, ২/১৪১৯, হাদীস নং ৪২৫০, হাদীসটি ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। ইবন হাজার আসকালানী রহ. ফাতহুল বারী ১৩/৪৭১ এ হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
[5] সহীহ বুখারী, কিতাব: ফাদায়েলুল জিহাদ ওয়াস সিয়ার, বাব: আল-জাসূস, ২/৩৬০, হাদীস নং ৩০০৭; সহীহ মুসলিম, কিতাব : ফাদায়েলুস সাহাবাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম, বাব : ফাদায়েলু আহলি বদর, ৪/১৯৪১, হাদীস নং ৩৪৯৪, হাদীসটি আলী ইবন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।
[6] যেমন, সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে এ ব্যাপারে হাদীস বর্ণিত আছে। সহীহ মুসলিম, ১/১৮৯, হাদীস নং ১৯৯।
[7] মাজমু‘উল ফাতাওয়া ‘আল-ওয়াসিতিয়্যাহ’, ৩/১৫২।
[8] শরহিস সুন্নাহ, বারবাহারী, পৃষ্ঠা ৭৫।
[9] শরহি উসূলি ‘ইতিকাদি আহলিস সুন্নাহ, লালকায়ী, ১/১৬৯।
সাহাবীগণের মধ্যে যে সব ফিতনা, জিহাদ, ঝগড়া-ঝাটি ও বিতর্ক সংঘটিত হয়েছিল সে ব্যাপারে প্রত্যেক মুমিনের উচিৎ সেসব ব্যাপার থেকে মুখ ফিরিয়ে নীরব থাকা, এড়িয়ে যাওয়া ও সেগুলো নিয়ে বেশি মাতামাতি না করা।
কবির ভাষায়,
‘তাদের মধ্যে যা ঘটেছিল সে ব্যাপারে আমরা নীরব থাকব,
ইজতিহাদের সাওয়াব তাদের জন্য আমরা সাব্যস্ত করব।’[1]
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের কিতাবসমূহে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের মধ্যকার সংঘটিত বিরোধপূর্ণ ব্যাপারে অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হতে নিষেধ করা হয়েছে। সাথে সাথে এ বিশ্বাস রাখার কথা বলা হয়েছে যে, এগুলো ছিলো তাদের ইজতিহাদ, যাতে ভুল হলে ব্যক্তি একটি সাওয়াব আর সঠিক হলে দু’টি সাওয়াবের অধিকারী হয়।
কবি বলেছেন,
‘বাস্তব কথা হলো সাহাবীগণের মধ্যাকার ঘটিত ফিতনার ব্যাপারে নীরব থাকা,
কেননা এ সব কিছু ছিলো তাদের ইজতিহাদ।’ [2]
বস্তুত নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয় আমাদেরকে উক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিচ্ছে। তা হলো:
প্রথমত: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ মান্য করা ও সে অনুযায়ী আমল করা। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«وَإِذَا ذُكِرَ أَصْحَابِي فَأَمْسِكُوا».
“যখন তোমাদের সম্মুখে আমার সাহাবীগণের ব্যাপারে কোনো সমালোচনা করা হবে তখন তোমরা সমালোচনা থেকে বিরত থাকবে।”[3]
দ্বিতীয়ত: এ সব ব্যাপার নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় কোনো ফায়েদা নেই, ইলমী দিকেও কোনো উপকার লাভ হয় না, আমলের বিবেচনায়ও কোনো উপকার অর্জিত হয় না। আর ব্যক্তির সুন্দর ইসলাম হচ্ছে অনর্থক বিষয় পরিহার করা।[4] কেননা সাহাবীগণের মধ্যে যে সব যুদ্ধ ও ফিতনা সংঘটিত হয়েছিল তা মূলত তাদের ইজতিহাদ থেকেই উৎসারিত হয়েছিলো। প্রত্যেকেই তাদের মতানুযায়ী হকের উপরে ছিলো এবং সত্যের বিজয় করতে লড়েছেন। এতে তারা কেউ কারো ওপর হিংসা-হানাহানি, প্রতিশোধ বা সম্মানহানী করতে লড়েন নি। এর উপমা এমন যে, বিচারক কাউকে আদব শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রহার করেছে। সে সব ঘটনার পরে তাদের মধ্যকার বিদ্বেষ দূর হয়ে গেছে বলেই ধারণা করা উচিৎ। তাদের পরে যারা এসেছে তাদের সাথে এসব ঘটনার কী সম্পর্ক? তারা তো এ ঘটনার ব্যাপারে ‘বানিজ্য কাফেলাও নন, যুদ্ধে আগত বাহিনীও নন’।[5]
এ ব্যাপারে উমার ইবন আব্দুল আযীয রহ. এর কথাটি সর্বাধিক সুন্দর। তিনি বলেছেন, ‘সে রক্তপাত থেকে আল্লাহ আমাদের হাতকে পবিত্র রেখেছেন। অতএব, আমি আমার যবানকে (মুখের ভাষাকে) এ ব্যাপারে সমালোচনা করে রঙিন করতে (কলুষিত করতে) চাই না।’ [6]
তৃতীয়ত: এ সব বিষয়ে গভীর আলোচনা কেউ করলে তা সে ব্যক্তিকে নিন্দনীয় পরিণামে নিয়ে যায়। ফলে দৃঢ় হওয়ার পরও তার পদস্খলন ঘটে। এতে তার অন্তরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীর ব্যাপারে খারাপ ধারণা জন্মায়। এ হচ্ছে এক মহা বিপর্যয়। এর চেয়ে মারাত্মক সঙ্কট আর কী হতে পারে? আর কোনো খারাপ পরিণতির পন্থা শুরু থেকেই বন্ধ করে দেওয়া ইসলামী শরী‘আতের অন্যতম একটি মূলনীতি।
বারবাহারী রহ. বলেছেন, ‘সাহাবীগণের কোনো প্রকার পদস্খলন, তাদের কোনো যুদ্ধ, আর যে বিষয়ের জ্ঞান তোমার কাছে অনুপস্থিত, সেসবের কোনো কিছুই আলোচনা করবে না। এ সব দোষ-ত্রুটি কেউ বর্ণনা করলেও শুনবে না। কেননা এসব ব্যাপার শুনলে ব্যক্তির অন্তরে তাদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা জন্মাতে পারে।’[7]
কবি বলেছেন,
তাদের মধ্যকার সংঘটিত ব্যাপারে সমালোচনা থেকে সাবধান থাকো, যা তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে। কেননা সেগুলো তাদের ইজতিহাদ থেকে নির্গত হয়েছে, এর মাধ্যমে তুমি নিজেকে নিরাপদ রাখ; যে কেউ তাদেরকে পরিত্যাগ করবে আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন।’[8]
চতুর্থত: মিথ্যাবাদি, মুনাফিক ও বিদ‘আতীরা এসব ব্যাপারে অনেক বানোয়াট তথ্য ও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে।
তাহলে আপনি সেসব ব্যাপারে কীভাবে বিশুদ্ধ হুকুম দিবেন, যে সব বর্ণনার অধিকাংশই মিথ্যাবাদী ও দুর্বল লোকদের মাধ্যমে এসেছে?
যেহেতু ইতিহাসের গ্রন্থই সাহাবীগণের মধ্যকার সংঘটিত ফিতনা বর্ণনার উৎস। আর এ কথা সকলেরই জানা যে, ইতিহাসের কিতাব ভালো-মন্দ, সহীহ-দুর্বল সব ধরণের ঘটনাই বর্ণনা করে থাকে। আর তাদের অভ্যাস হচ্ছে মানুষের কাছে যা কিছু পায় তা বিচার বিবেচনা ছাড়াই যোগ করে দেয়া। তাহলে এ ধরণের স্পর্শকাতর ঘটনায় কীভাবে প্রবৃত্তি পূজারীদের লালসার শিকার হওয়া তথ্যে বিশ্বাস করা যেতে পারে?
এ ছাড়া যে সামান্য কিছু বর্ণনা সহীহ সূত্রে এসেছে তা তাদের সম্মান ও মর্যাদা অনুযায়ী ব্যাখ্যা করা যায়। ইতোপূর্বে সে ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।
ইবন দাক্বীক আল-‘ঈদ রহ. বলেছেন, ‘সাহাবীগণের মধ্যকার সংঘটিত বিভেদসমূহ সম্পর্কে যে সব বর্ণনা এসেছে আর তাতে তারা বিভিন্ন ধরনের মত দিয়েছে, সেসব বর্ণনার অধিকাংশই বাতিল ও মিথ্যা। এগুলোর দিকে তাকানোই যাবে না। আর যে সব ঘটনা সহীহ সেগুলোকে আমরা তাদের মর্যাদা অনুযায়ী সুন্দর ব্যাখ্যা করব। কেননা তাদের ব্যাপারে আল্লাহর প্রশংসা এ সব ঘটনার আগেই সন্দেহাতীতভাবে বর্ণিত হয়েছে। পক্ষান্তরে তাদের ব্যাপারে পরবর্তীতে যে সব ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলোতে ব্যাখ্যার অবকাশ রয়েছে। আর নিয়ম হচ্ছে যে, সন্দেহযুক্ত ও ধারণানির্ভর কিছু দ্বারা অকাট্য ও সঠিকভাবে জ্ঞাত বিষয়কে বাতিল করা যায় না।’[9]
পঞ্চমত: তাদের মধ্যে যা সংঘটিত হয়েছিল সেগুলোর বাস্তবতা জানা কষ্টসাধ্য; কেননা সে সময়টি ছিলো ফিতনা ও যুদ্ধ-বিগ্রহের সময়। এ ধরণের অবস্থায় যে কোনো ব্যাপার ভালো-মন্দে মিশ্রিত হয়ে যায় এবং সঠিক ব্যাপার হুবহু জানা যায় না। অতএব, এ ধরণের ব্যাপার সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। সুতরাং যে ব্যক্তি তার দীনের ব্যাপারে দোষ-ত্রুটি মুক্ত থাকতে চায় সে যেন এ সব বিষয়ের সমালোচনায় নিজেকে নিমজ্জিত করা থেকে দূরে রাখে; বরং তাদের ভালোবাসা দ্বারা যেন তার অন্তর পরিপূর্ণ করে নেয়, তাদের পক্ষ থেকে ওযর (ই‘তিযার) পেশ করে এবং তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে। রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম (আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট হোন)।
>[2] আল-জাওয়াহিরুল ফারীদাহ ফি তাহকীকিল আক্বীদাহ, পৃষ্ঠা ৪৩, পংক্তি ২৩৯।
[3] আল-‘মুজামুল-কাবীর, তাবরানী, ২/৯৬, হাদীস নং ১৪২৭, ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস; ইরাকী রহ. ইহইয়া উলুমুদ্দীনে (১/৫০, মুদ্রণ: আস-সাকাফাহ আল-ইসলামিয়া) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন; সিলসিলাতুস সহীহাহ, ১/৫৭, হাদীস নং ৩৪।
[4] ইমাম আহমাদ রহ. তার মুসনাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, ২/৩৫২, হাদীস নং ১৭৩৭। এ হাদীসটি সাব্যস্ত হওয়ার ব্যাপারে অনেক দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। হাদীসটির হুকুমের ব্যাপারে সবচেয়ে সুন্দর কথা একত্রিত করেছেন ইবন রজব হাম্বলী রহ. তার ‘জামে‘উল ‘উলুম ওয়াল হিকাম’ ১/১১৩ কিতাবে।
[5] তাহির ইবন ‘আশূর, আত-তাহরীর ওয়াত-তানওয়ীর, ২৮/৯৮।
[6] আবু নু‘আইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৯/১১৪।
[7] শরহিস সুন্নাহ, বারবাহারী, পৃষ্ঠা ১১২-১১৩; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ১০/৯২।
[8] আদ-দুররাতুল মুদিয়্যাহ -মা‘আ শারহেহা লাওয়ামি‘উল আনওয়ার, ২/৩৮৫।
[9] মুল্লা ‘আলী কারী রহ. তার ‘শরহুল ফিকহিল আকবর’ কিতাবে পৃষ্ঠা ১০২ এ উল্লেখ করেছেন।
এটি তাদের প্রতি ভালোবাসার আরেকটি প্রকার ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সত্যবাদী হওয়ার প্রমাণ। রাদিয়াল্লাহু আনহুম।
কবি বলেছেন,
‘আহলে বাইত তথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার ও সমস্ত সাহাবীগণের থেকে আমরা অপবাদ প্রতিহত করব, তাদের সকলকে ভালোবাসায় আমরা বিশ্বাস করব।’[1]
ইমাম ত্বাহাবী রহ. বলেছেন, ‘আর আমরা তাদেরকে অপছন্দ করব, যারা সাহাবীগণকে অপছন্দ করে এবং অকল্যাণের সাথে তাদেরকে স্মরণ করে।’[2]
এ কথার দলীল হলো নিম্নোক্ত হাদীস। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«أَوْثَقُ عُرَى الْإِيمَانِ الْحَبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ».
“ঈমানের সবচেয়ে মজবুত রশি হচ্ছে কাউকে আল্লাহ ওয়াস্তে ভালোবাসা আবার কাউকে আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করা।”[3]
নিঃসন্দেহে আল্লাহর জন্য কাউকে ঘৃণা করার সর্বাধিক উপযুক্ত ক্ষেত্র হলো তাদেরকে ঘৃণা করা যারা সাহাবীগণকে অপবাদ দেয়। রাদিয়াল্লাহু আনহুম। অন্যদিকে সাহাবীগণের শত্রুদের প্রতিহত করা, তাদের বিরুদ্ধে আনিত অপবাদের জবাব দেওয়া, তাদের বিরুদ্ধে আনিত দ্বিধা-সংশয়ের নিরসন করা আল্লাহর রাস্তায় সর্বোত্তম জিহাদের অন্যতম।
>[2] প্রাগুক্ত।
[3] মু‘জামুল কাবীর, তাবরানী, ১/৩৭২-৩৭৩, হাদীস নং ৬২৪। আলবানী রহ. হাদীসটির অনেক সনদের সমন্বয়ে ‘সিলসিলাতুস সাহীহা’ ২/৬৯৮ তে হাসান বলেছেন, হাদীস নং ৯৯৮।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পদ্ধতি নিম্নোক্ত এ মূল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত যে, ‘সর্বোত্তম ইলম তা হলো যা সাহাবীগণের ইলম অনুসরণ করে অর্জিত হয়েছে, আর সর্বোত্তম আমল হলো তা যা সাহাবীগণের আমল অনুসরণ করে করা হয়েছে। তারা মনে করেন, সাহাবীগণ সব ফযীলত ও মর্যাদার ক্ষেত্রে সবার উপরে।’[1]
কবি বলেছেন,
‘দীনের ব্যাপারে তাদের (সাহাবীগণের) অনুসরণ করা ফরয (অত্যাবশ্যকীয়), অতএব, তাদের অনুসরণ করো, আর অনুসরণ করো কুরআনের আয়াত ও সূরার।’ [2]
ইমাম আহমাদ রহ. বলেছেন, ‘সুন্নাতের উসূল বা মূলনীতি হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ যা আমল করেছেন তা আঁকড়ে ধরা এবং তাদের অনুসরণ করা।’[3]
ন্যায়পরায়ণ ইমাম উমার ইবন আব্দুল আযীয রহ. বলেছেন, ‘সাহাবীগণ তাদের নিজেদের ব্যাপারে যে সব বিষয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন তুমিও সে সব বিষয়ে নিজেকে সন্তুষ্ট রাখো অর্থাৎ তাদের পথ অনুসরণ করো। কেননা তারা দীনের গভীর ইলম অনুযায়ীই কোনো অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং দিব্যদৃষ্টি দ্বারাই কোনো কাজ করা থেকে বিরত থেকেছেন।’[4]
আর আল্লাহ তা‘আলা শ্রেষ্ঠতম সাহাবীগণের অনুসরণ করার ব্যাপারে লোকদের প্রশংসা করে বলেছেন,
﴿وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠﴾ [التوبة: ١٠٠]
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০০]
আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে অনুসরণ করতে আরও বলেছেন,
﴿وَٱتَّبِعۡ سَبِيلَ مَنۡ أَنَابَ إِلَيَّۚ ١٥﴾ [لقمان: ١٥]
“আর অনুসরণ কর তার পথ, যে আমার অভিমুখী হয়।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ১৫] নিঃসন্দেহে নবীদের পরে তারা এ গুণের বেশি হকদার ছিলেন (অর্থাৎ নবীদের পরে তারাই সবেচেয়ে বেশি আল্লাহ অভিমূখী লোক ছিলেন)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ١١٩﴾ [التوبة: ١١٩]
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১৯] দাহহাক রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘তোমরা আবু বকর, উমার ও এতদোভয়ের সাথীদের (সাহাবীগণের) সাথে থাকো।’[5]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন নাজাতপ্রাপ্ত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দলটির বর্ণনা জিজ্ঞেস করা হলো তখন তিনি বললেন,
«مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي».
“আমি এবং আমার সাহাবীরা যার উপর প্রতিষ্ঠিত।”[6]
হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘হে কারীগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের (সাহাবীগণের) পথে চলো, নিঃসন্দেহে তোমরা যদি তাদের পথ অনুসরণ করো তাহলে তোমরা মহা সফলকাম হবে, আর যদি তাদের পথ থেকে সামান্য পরিমাণ এদিক সেদিক চলে যাও তবে তোমরা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় নিপতিত হবে।’[7]
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবীগণের পথে চলা হলো হিদায়াত এবং এ পথই নাজাতের।
ইবন কাসীর রহ. এর নিম্নোক্ত আয়াতের সুন্দর তাফসীর দ্বারা আমার আলোচনা শেষ করব, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَوۡ كَانَ خَيۡرٗا مَّا سَبَقُونَآ إِلَيۡهِۚ١١﴾ [الاحقاف: ١١]
“আর যারা কুফুরী করেছে তারা যারা ঈমান এনেছে তাদের সম্পর্কে বলে, ‘যদি এটা ভালো হতো তবে তারা আমাদের থেকে অগ্রণী হতে পারত না’।” [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ১১] তিনি বলেছেন, ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বলেন যে, যে সব কাজ ও তথা সাহাবীগণের থেকে সাব্যস্ত নয় তা বিদ‘আত। কেননা কাজটি ভালো হলে সাহাবীগণ আমাদের থেকে অগ্রণী হতেন। কেননা এমন কোনো উত্তম কাজ ছিলো না যে কাজে তারা দ্রুত অগ্রণী ছিলেন না।’[8]
পরিশেষে বলব, উপরোক্ত দশটি অধিকার হলো উম্মতে মুহাম্মাদীর ওপর সম্মানিত সাহাবীগণের অধিকার। এ অধিকারের ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত একমত ও এগুলো তাদের সর্বসম্মত আক্বীদা। আমি নিম্নোক্ত দুটি পংক্তিতে এগুলো একত্রিত করেছি:
واذكر بخير، ترض، وقل عادي عدوهمُ
أحبب، عدالة، والتفضيل بينهم
فيما جرى، ومساوٍ واقتدي بهمو
واشهد لهم بجنانٍ لا تخض أبدا
ভালোবাসো, ন্যায়পরায়ণ বলো, সম্মানের স্তর মানো, উত্তমভাবে স্মরণ করো, রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম বলো, তাদের শত্রুদের শত্রু বলো, তাদের ব্যাপারে জান্নাতের সাক্ষ্য দাও, তাদের মধ্যকার বিবাদের ব্যাপারে গবেষণায় নিমজ্জিত হয়ো না, তারা সকলেই সমভাবে হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত মানো, আর তাদেরকে যথাযথ অনুসরণ করে চলো। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত। আল্লাহর সালাত, সালাম ও বরকত তার বান্দা ও রাসূল আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজন, তাঁর সাহাবী ও তাঁকে নিষ্ঠার সাথে অনুসরণকারীদের ওপর বর্ষিত হোক।
>[2] দীওয়ানে ইবন মুশাররফ, পৃষ্ঠা ২৩।
[3] উসূলুস সুন্নাহ, -আব্দূস ইবন মালিকের বর্ণনা- পৃষ্ঠা ২৫; ইমাম আহমাদ রহ. থেকে লালকায়ীও শরহু উসূলি ই‘তিকাদি আহলিস সুন্নাহ, ১/১৫৬ তে বর্ণনা করেছেন।
[4] আবু দাউদ, ১৬/৫, হাদীস নং ৪৬১২; আলবানী রহ সহীহ সুনানে আবু দাউদে ৩/১২১-১২২, হাদীস নং ৪৬১২ তে হাদীসটিকে সহীহ মাকতূ‘ বলেছেন।
[5] তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৭/৩১৪।
[6] তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান, বাব: এ উম্মতের বিভক্তি সম্পর্কে, ৫/২৬, হাদীস নং ২৬৪১, ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি মুফাসসর ও গরীব, বর্ণনার এ সূত্র ব্যতীত অন্য কোনো সূত্রে জানা যায় নি। আলবানী রহ. সহীহুত তিরমিযীতে ৩/৫৪, হাদীস নং ২৬৪১ হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
[7] ইবন আব্দুল বার তার জামে‘উ বায়ানিল ইলম ওয়াফাদলিহি, ২/৯৪৭ তে বর্ণনা করেছেন। আসারটি কাছাকাছি শব্দে সহীহ বুখারীতে ১৩/১২ রয়েছে।
[8] তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ১৩/১২।