আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে আল্লাহর ওয়াস্তে ও আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই ভালোবাসেন। তারা বিশ্বাস করেন যে, যারা তাদেরকে ভালোবাসবেন, তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবেন, তাদের অধিকার সংরক্ষণ করবেন ও তাদের মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হবেন তারাই সফলকামী দলের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আর যারা তাদেরকে অপছন্দ করবেন, তাদেরকে গাল-মন্দ করবেন, শত্রুদের দলে তাদেরকে সম্পৃক্ত করবেন ও তাদের মর্যাদার বিপরীত কিছু বলবেন তারা ধ্বংসপ্রাপ্তদের দলে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
এ কথার দলীল হলো আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠ ﴾ [الحشر: ١٠]
“যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন,
«آيَةُ الإِيمَانِ حُبُّ الأَنْصَارِ، وَآيَةُ النِّفَاقِ بُغْضُ الأَنْصَارِ».
“ঈমানের নিদর্শন হলো আনসারগণকে ভালোবাসা এবং মুনাফিকীর আলামত হলো আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা”।[1]
এখানে যেহেতু আনসারগণের ভালোবাসা প্রমাণিত হয়েছে, তাহলে মুহাজিরগণের প্রতি ভালোবাসা আরও অধিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। যেহেতু তারা সর্বদিক বিবেচনায় তাদের (আনসারদের) চেয়ে উত্তম। এছাড়া তারাও আল্লাহকে সাহায্য করেছেন যেমন আনসারগণ করেছেন; সেহেতু তারাও আনসার হিসেবে গণ্য। [2]
কুরআন ও হাদীসে আল্লাহর ওয়াস্তে কাউকে ভালোবাসার যেসব মর্যাদার কথা উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে ভালোবাসার দ্বারা যে কেউ সেসব মর্যাদার অন্তর্ভুক্ত হবে; যেহেতু তারা হলেন সর্বোত্তম মানুষ।
ইমাম ত্বহাবী রহ. তার আক্বীদার কিতাবে বলেছেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে ভালোবাসি, তাদের কাউকে ভালোবাসায় আমরা বাড়াবাড়ি করি না, আবার কারও থেকে ভালোবাসা ছিন্নও করি না (সবাইকে ভালোবাসি)। আমরা তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করি ও তাদেরকে ঘৃণা করি যারা সাহাবীগণের সাথে শত্রুতা-বিদ্বেষপোষণ করবে এবং তাদেরকে খারাপভাবে উল্লেখ করবে। সাহাবীগণকে ভালোবাসা দীন, ঈমান ও ইহসান। আর তাদেরকে অপছন্দ করা কুফুরী, নিফাকী, পাপ ও অবাধ্যতা।’[3]
ইমাম মালেক রহ. এর বাণীটি এখানে উল্লেখযোগ্য সবচেয়ে সুন্দর কথা। তিনি বলেছেন, ‘সালাফ তথা সৎপূর্বসূরীরা তাদের সন্তানদেরকে আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার ভালোবাসা শিক্ষা দিতেন, যেমনিভাবে তারা তাদের সন্তানদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন।’[4]
আবু নু‘আইম তার “হিলইয়া”[5] গ্রন্থে বিশর ইবন হারিস রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘আমার অন্তরে যে আমলটি সবচেয়ে বেশি মজবুত ও কার্যকর মনে হচ্ছে তা হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের ভালোবাসা’।আবু নু‘আইম তার “হিলইয়া”[6] গ্রন্থে শু‘আইব ইবন হারব রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘‘আসিম ইবন মুহাম্মাদের কাছে সুফইয়ান আস-সাওরী রহ. এর গুণাবলী বর্ণনা করা হলো। তারা তার পনেরোটি মানাক্বিব তথা উত্তম গুণ উল্লেখ করলেন। তখন ‘আসিম ইবন মুহাম্মাদ তাদেরকে বললেন, তোমরা কি তার গুণাবলী বর্ণনা করা সমাপ্ত করেছো? আমি তার এমন একটি গুণের কথা জানি যা তোমাদের বর্ণিত গুণাবলীর চেয়ে উত্তম। তা হলো, তার অন্তর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের ব্যাপারে পরিচ্ছন্ন ছিল।’ (দোষ-ত্রুটি বর্ণনা থেকে মুক্ত ছিলো।)
>[2] আল-জাওয়াবুস সহীহ, ২/২৬৭।
[3] আক্বীদাতুত ত্বহাবীয়া মা‘আ শরহে ইবন আবিল ‘ইয্য, পৃষ্ঠা ৪৬৭।
[4] শরহু উসূলে ই‘তিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, ৭/১২৪০, আসার নং ২৩২৫; তারিখু মাদিনাতি দিমাশক, ৪৪/৩৮৩; আল-হুজ্জাতু ফি বায়ানিল মাহাজ্জাহ, ২/৩৩৮।
[5] হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৮/৩৩৮।
[6] হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৮/৩৩৮।