নাস্তিক্যবাদ একজন মানুষের জীবনে যেসব অভিশাপ আর সর্বনাশ ডেকে আনে তার ভেতরে সবার প্রথমেই আসে মানুষের মানসিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও পেরেশানী, মনের চাঞ্চল্য ও অস্থিরতা। প্রত্যেকটি মানুষের ভেতরে সহজাতভাবে কিছু প্রশ্ন জাগবে এটাই স্বাভাবিক? কেন আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে? কে আমাকে সৃষ্টি করেছেন? আর আমি যাব-ই বা কোথায়? এটা ঠিক যে যান্ত্রিক জীবনের অবিরাম ঘূর্ণন মানুষকে অধিকাংশ সময়ই এসব প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা-ভাবনার সময় দেয় না। কিন্তু তারপরেও কখনো কখনো মানুষ জীবনে চলার পথে ধাক্কা খেয়ে নিজের অজান্তেই এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে থাকে। বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ আর রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে কিংবা বন্ধু-বান্ধব ও কাছের মানুষ হারিয়ে হঠাৎ মানুষের মনখানি ব্যাকুল ও উদাস হয়ে ওঠে। এভাবে ছন্দময় জীবনে হঠাৎ যখন ছন্দপতন ঘটে, তখন মানুষ নিজের অস্তিত্ব ও গন্তব্য নিয়ে চিন্তা-ফিকির করতে বাধ্য হয়। কিন্তু আল্লাহর স্তিঅস্তিত্বে অস্বীকারের তথাকথিত নড়বড়ে ভিত্তির ওপর গড়ে ওঠা নাস্তিক্যবাদ যেহেতু এসব প্রশ্ন ও তার জবাব সম্পর্কে নিতান্তই অজ্ঞ, সেহেতু এটা কোনো দিনও মানুষকে এসব প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে সক্ষম হয় না। ফলে জীবনের এসব প্রশ্ন মানুষের মনে ধাঁধা হয়ে ভয়-ভীতি ও পেরেশানীর জন্ম দেয়। এটা সর্বদাই তার বিবেককে যন্ত্রণার আগুনে জ্বালাতে থাকে।
একসময় পৃথিবীর মানুষ দৈনন্দিন কাজ-কর্মের বিরতিতে আকাশ-পাহাড়, সাগর-নদী আর বন-বনানী নিয়ে মেতে উঠতো। ফুলের বাগান আর ফুলের সঙ্গে সখ্যতা গড়তো। বনের পাখির সঙ্গে গান গাইতো। প্রাকৃতিক এসব সৌন্দর্য কখনো কখনো তাকে নিজ স্রষ্টা আর রবের পরিচয় পেতে সাহায্য করতো। এগুলোর পরশ পেয়ে এক সময় সে আপন প্রভুর সান্নিধ্যের শিহরণে ধন্য হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আজ মানুষের পুরো সমাজ ও আশপাশের সবকিছুই যান্ত্রিকতায় পরিণত হয়েছে। আজ মানুষ তার চারপাশের যেদিকেই তাকায় আকাশচুম্বী দালান-কোঠা, যানবাহনের কান-ফাটা চেঁচামেচি ছাড়া কিছুই দেখতে ও শুনতে পায় না। সড়কের চোখ ধাঁধানো আলোকমালা তার মনের আভাটুকু কখন কেড়ে নিয়ে গেছে তা সে নিজেও জানে না। আর এভাবেই সে তার রব সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার প্রাকৃতিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে তার পেরেশানী কেবল বাড়তেই থাকে।
প্রাচীন কালের সমাজ ব্যবস্থায়ও ছিল সহজতা আর সারল্যের এক অনুপম সৌন্দর্যের শোভা। সেখানে পরস্পরের সাহায্য-সহযোগিতা ছিল সুন্দর সমাজের একটি অনস্বীকার্য উপাদান। বিপদ-আপদে একে অপরের কাছে ছুটে আসা, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, সুখ ও দুঃখকে পরস্পর ভাগাভাগি করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বেঁচে থাকা ছিল সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের জীবনের বাস্তব চিত্র। কিন্তু আধুনিক সমাজে মানুষ নিজের দুঃখের কাহিনী শোনানোর জন্য কাউকে খুঁজে পায় না। নিজের অস্থিরতার কথাগুলো বলার জন্য কোনো সুহৃদ দেখতে পায় না। জীবন পথে চলতে গিয়ে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে কেউ যে তাকে হাত ধরে উঠাবে এমন কোনো আশার আলো তার চোখে পড়ে না। আর সেকারণেই ভবিষ্যৎ নিয়ে তার এতটা ভয়, এতটা অনাস্থা। সেই ধারাবাহিকতায় সমাজের সবগুলো মানুষ কেবল নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন-নিয়ে দুই হাত ভরে ধন-সম্পদ উপার্জনের জন্য ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়ে। এখানে বোঝার চেষ্টা করুন, যদি এই অবস্থায় মানুষ আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করতো, তবে সে ভবিষ্যতের জন্য এতটা পেরেশান আর ব্যাকুল হয়ে উঠতো না। কারণ সে আল্লাহর ওপর ভরসা করে স্বাভাবিক গতিতেই পথ চলতো। আর এই বিশাল সমস্যার সমাধানও হয়ে যেতো অতি সহজে। কিন্তু নাস্তিক্যবাদ এই সমস্যার কোনো সমাধানই দিতে পারেনি। কারণ এর মতে, মানুষই তো তার সবকিছুর স্রষ্টা। সুতরাং এসব সমস্যার সমাধানও তাকেই বের করতে হবে। আর এভাবেই সমাজের প্রত্যেকটি মানুষই ব্যক্তিচিন্তায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে চরম স্বার্থপর।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এক অজানা ভীতি ও শঙ্কা আর মানসিক পেরেশানী ও অস্থিরতার অনিবার্য পরিণতি এই যে, সমাজের মানুষগুলো সতত আত্মচিন্তামগ্ন ও চরম স্বার্থপর হয়ে পড়বে। অন্যের চিন্তা-ভাবনা বাদ দিয়ে সদা-সর্বদা নিজের স্বার্থসিদ্ধির চিন্তাই হবে তার দিন-রাতের সাধনা। কারণ ধর্ম মানুষকে সব সময় অন্যের জন্য নিজের সাধ্যমতো ব্যয় করতে উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহর রিযামন্দি লাভ করতে হলে পরের কল্যাণে পূর্ণ নিবেদিত হতে হবে- এমন দীক্ষা দেয়। কিন্তু অপরের কল্যাণকামিতা, দয়া ও মমতা প্রদর্শন আর পরহিতব্রতের উৎসমূল সেই ধর্মই যখন মানুষের জীবন থেকে বিদায় নেয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার জায়গা এসে দখল করে ব্যক্তিচিন্তা ও আত্মপরায়ণতা। সেকারণেই নাস্তিক্যবাদী সমাজে আমরা দেখতে পাই, সেখানে কেউ কারও সাহায্যে এগিয়ে আসে না। দরিদ্র ও গরীব মানুষের প্রতি কেউ সহমর্মিতা ও মমত্ববোধ দেখায় না। এভাবে একসময় স্বার্থপরায়ণতার পরিধি বাড়তে থাকে। মানুষ স্বীয় আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এমনকি স্ত্রী-পরিবার ও বাবা-মাকেও ভুলে যায়। পরের মঙ্গলের জন্য সে কেবল তখনই চিন্তা করে, যখন সেটা তার স্বার্থসিদ্ধির ক্ষেত্রেও কাজে আসে। স্বার্থপরতার এই সয়লাবের ক্ষেত্রে মানুষকে আরও সামনে ঠেলে দেয় পার্থিব ভোগ-বিলাসের প্রতি তার বিশ্বাস ও চিন্তাধারা। নাস্তিক্যবাদী সমাজ ব্যবস্থায় যেহেতু জীবনের সবধরনের বিলাস-ব্যসনকে হালাল ঘোষণা করা হয়েছে, সে কারণে মানুষ সেসব ভোগে নিজেকে জড়িয়ে নিতে স্বার্থচিন্তা বাদ দিয়ে আর কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করে না। কারণ সে খুব ভালো করেই জানে, পরের জন্য চিন্তা এ ক্ষেত্রে তার কোনোই উপকারে আসবে না। আর এভাবেই গোটা বিশ্বে এ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের চেয়েও দ্রুত গতিতে।
নাস্তিক্যবাদ মানুষের মন ও মননকে সঠিক ও সুস্থভাবে প্রতিপালন করে না। তাকে ভালো ও সৌন্দর্যের দীক্ষা দেয় না। কোনো দিনও তাকে তার রবের ভয় দেখায় না, যিনি নিরন্তর তাকে দেখে চলেছেন। তার প্রতিটি কর্মকাণ্ডের বিন্দু-বিসর্গ সম্পর্কেও পূর্ণ অবগত রয়েছেন। একারণেই একজন নাস্তিক রূঢ়-স্বভাব ও অনুভূতিহীন হয়ে বেড়ে ওঠে। ফলে তার গোটা জীবনটা হয়ে ওঠে নিয়ন্ত্রণশূন্য ও লাগামহীন। অন্যায় ও অপরাধ থেকে তাকে ফিরিয়ে রাখার মতো কোনো বস্তু তার ভেতরে থাকে না। ন্যায় ও সততার প্রতি তাকে কোনো কিছু উদ্বুদ্ধ করে না। বরং এর বিপরীতে নাস্তিক্যবাদ তার কানে কানে প্ররোচিত করে যে, এ পৃথিবীতে তুমি এভাবেই হঠাৎ করে চলে এসেছো। তোমাকে কেউ সৃষ্টি করেনি অথবা তুমি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছো। আর পৃথিবীতে তুমিও লাখো প্রাণীর মতো একটি প্রাণী। ফলে তার ভেতরে ধীরে ধীরে জন্তু-জানোয়ারের গুণাবলী বেড়ে উঠতে থাকে। ওভাবেই সে নিজেকে প্রকাশ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। কিন্তু কখনো কখনো যদি সমাজ কিংবা পরিস্থিতি তার স্বার্থসিদ্ধির পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, তখন সে সেই কাঁটা উপড়ে ফেলতে বিভিন্ন কলা-কৌশল কিংবা জোর-জবরদস্তিতার আশ্রয় নেয়। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তাকে পূর্ণরূপে লাগাম পরানোর মতো কেউই থাকে না। কারণ সে কোনো রবকে ভয় করে না। কারও কাছে জবাবদিহির কোনো চিন্তা করে না। তাহলে তার আর দুশ্চিন্তার জায়গাটা কোথায়? হাঁ, কখনো কখনো সামাজিক নিয়ম-নীতি কিংবা মানবীয় আইন-কানুন তার স্বার্থ হাসিলের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বর্তমান সমাজ-ব্যবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন এমন যে কারও কাছে স্পষ্ট যে, সেই প্রতিকূলতা দূর করতে তার খুব বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয় না। আবার কখনো কখনো মানবিক প্রবৃত্তি কিংবা মানুষের সহজাত বিবেকবোধ তার অনুভূতিতে নাড়া দেওয়ার চেষ্টা করে, ভেতর হতে তাকে অপরাধ থেকে ফেরানোর জন্য কখনো কখনো ডাক দিয়ে যায়, কিন্তু বাস্তবে এগুলো কি তাকে তার পথ থেকে ফিরাতে পারে? আসল কথা হলো, নিরন্তর ধাবমান জীবন চাকার গড়গড় ঘূর্ণনের মাঝে বিবেকবোধ আর হৃদয়ের গভীর থেকে ভেসে আসা অনুচ্চকিত সেই আওয়াজ নিমেষেই বাতাসে মিলিয়ে যায়।
মানব জীবনে নাস্তিক্যবাদের এই প্রভাবটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। কারণ আজ আমাদের গোটা পৃথিবীটা অপরাধ আর অন্যায়ে ভরপুর একটি পৃথিবীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিটিদিনই সংবাদপত্র আর রেডিও-টিভিতে জঘন্যতম অন্যায়-অপরাধের এমনসব খবর প্রচারিত হচ্ছে, যা ভাবতে গেলেও গা শিউরে ওঠে। চরম সহিংসতা, বিকৃত যৌনাচার, মানুষের রক্তপান, অপরকে নির্যাতনের মাধ্যমে স্বাদ গ্রহণ আর স্বগোত্রীয় মানুষের কলজে-ছেঁড়া আর্তনাদের সামনে বিকৃত অট্টহাসির মতো পশুত্বের অস্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ আজকের মানব সমাজের প্রতিদিনকার স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুরি-ডাকাতি আর হত্যা-লুণ্ঠন দিনে দিনে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। ১৯৭৭ সালে নিউইয়র্কের এক রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনার কথাই ধরুন। সকালে পৃথিবী আবিষ্কার করলো, হাজার হাজার ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক আর দোকান-পাট সম্পূর্ণ লুট হয়ে গেছে। আর এই সংঘবদ্ধ চুরিতে সমাজের সব বয়সের সব ধরনের পেশার মানুষ যুক্ত ছিল। মোটকথা- যে যেখানে যা কিছু পেয়েছে সেটাই নিয়ে গেছে। এমনকি পুলিশ বাহিনী- যাদেরকে মানুষের জান-মাল সুরক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে- সেই রক্ষকরাও ভক্ষকের ভূমিকা নিয়ে ইচ্ছেমতো এই চুরির উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কোনোভাবে সপ্তাহব্যাপী এখানে বিদ্যুৎ না থাকতো, আর সেনাবাহিনীও এখানে কোনো রকমের ভূমিকা না নিতো, তবে এক সপ্তাহ পরে গোটা শহরসুদ্ধ লুট হয়ে যেতো। সুতরাং যদি বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকট ইত্যাদিতে কিংবা যুদ্ধঘন পরিস্থিতিতে এই সমাজের একে অপরকে খেয়েও ফেলে- তবে তাতে আশ্চর্যের কী আছে? মূলত এসবকিছুই নাস্তিক্যবাদের অনিবার্য ফলাফল।
নাস্তিক্যবাদ মানুষের সামাজিক জীবনে ধ্বংসের কুঠার হয়ে গোড়া কেটে দিয়েছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা থেকে দূরত্ব কেবলমাত্র মানুষের ব্যক্তিজীবনেই প্রভাব ফেলে না; বরং স্বাভাবিকভাবেই সেই প্রভাব বিস্তৃত হয় তার সামাজিক জীবনে এবং সেটাকে গুঁড়িয়ে দেয়। একটি সুন্দর মানব সমাজের অবকাঠামো তৈরি হওয়ার জন্য শর্ত হলো সেখানে লাগানো ইটগুলো হতে হবে সুন্দর ও ভালো। যদি ভিত্তিমূলই ভালো না হয়, ভবনের মূল উপকরণই যদি সুস্থিত ও মজবুত না হয় আর পরবর্তীতে সেই ভবন গড়ে উঠতে না উঠতেই কাত হয়ে পড়ে, তবে তাতে বিস্ময়ের কী থাকে?
মানবীয় সমাজ ব্যবস্থার প্রধান উপাদান হচ্ছে পরিবার। আর সেই কারণে যখন সুন্দর ও সুস্থ মানবতা নষ্ট হয়ে যায়, তখন পারিবারিক বন্ধনও অসুস্থ ও অসুন্দর হয়ে পড়ে। একটি পরিবারের প্রধান পুরুষ স্বামীর স্বভাব নষ্ট হলে সেই নষ্টামি স্ত্রী পর্যন্ত এবং সেখান থেকে সন্তানদের প্রতি গড়ানোই স্বাভাবিক। একইভাবে পরিবারের স্ত্রীর ভেতর যদি আল্লাহর ভয় না থাকে, নিজের কাজকর্মে তাকে মনে না রাখে, তবে এর প্রভাব অনিবার্যভাবেই স্বামী-সন্তানদের ওপর পড়ে। আর এভাবেই একজন মন্দ মানুষের কারণে একসময় গোটা পরিবার নষ্ট হয়ে পড়ে। নাস্তিক্যবাদ ঠিক সেই ধ্বংসের কাজটাই করেছে নিপুণভাবে। আর সে কারণেই বর্তমান নাস্তিক্যবাদী সমাজে আমরা এমন কোনো পরিবারের সন্ধান পাই না যার সবগুলো অঙ্গ সঠিক ও সুস্থভাবে কাজ করছে। যেই পরিবারের সকল সদস্যের মাঝে সুন্দর ও সুষম ভারসাম্য রয়েছে। আর যখন সুষম পরিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে একটি অসুস্থ পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের তাৎপর্যও হারিয়ে যায়। তাৎপর্যহীন সেই সম্পর্কের ভেতরে তখন থাকে কেবল স্বার্থসিদ্ধি আর ভোগ-সম্ভোগের গরজ। সেখানে পরস্পরের প্রতি নিষ্ঠা, নিখাঁদ ভালোবাসা কিংবা ত্যাগ ও কুরবানীর ছিঁটেফোঁটাও থাকে না। পরিবারের কল্যাণ্যের জন্য একজন স্বামী কিংবা বাবা যে নিজের সকল স্বার্থ ও সাধকে কুরবানী দিয়ে দিতে পারেন, একজন নিষ্ঠাবান স্ত্রী যে কখনো জীবনের চক্রাবর্তে কেবল ভালোবাসার তাগিদে একজন হতদরিদ্র, অসুস্থ ও সাধারণ স্বামীর ঘর করতে পারেন, সয়ে যেতে পারেন সন্তানদের প্রতিপালনসহ জীবন-যুদ্ধের সবধরনের সংগ্রাম ও সাধনা- এগুলো একটি নাস্তিক্যবাদী পরিবারে কল্পনাও করা যায় না। পরকালের হিসাব-নিকাশ আর ভালো-মন্দ পরিণতিতে অবিশ্বাসী একটি পরিবারের ভেতরে কখনো ত্যাগ-তিতিক্ষার মন-মানসিকতা সৃষ্টি হতে পারে না। কারণ তখন কুরবানী করে কী লাভ- এই প্রশ্নের কোনো জবাব পাওয়া যায় না। একইভাবে সন্তানদের কথাও ধরুন। আল্লাহ তা‘আলায় বিশ্বাসী একজন সন্তান জানে, তার পিতা-মাতার বার্ধক্য কিংবা দুরবস্থায় তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সে আদিষ্ট। কিন্তু সে যদি আল্লাহ তাআলার ওপরই বিশ্বাস না করে, তবে এত কষ্ট সে কোনো দিনও করতে যাবে না। ব্যক্তিস্বার্থ কাজ না করলে মাতা-পিতার দিকে ফিরেও তাকাবে না। এভাবেই নাস্তিক্যবাদের প্রাদুর্ভাবের মধ্য দিয়ে পরিবারিক বন্ধনে মূল যেই সুতোখানি থাকে সেটাই ছিঁড়ে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে।
নাস্তিক্যবাদ পারিবারিক বন্ধনের এতখানি ক্ষতি করেও নিরস্ত থাকেনি; বরং এটা আরও সামনে এগিয়ে গিয়ে সর্বনাশের এমন সবদিক উন্মোচিত করেছে যা ভাবতেও অবাক লাগে। জীবনের ভোগ-বিলাস পূর্ণ মাত্রায় আস্বাদন করতে গিয়ে, কামচরিত্র পূরণের পথে দৌড়াতে গিয়ে একজন অবিশ্বাসী মানুষের কাছে বৈবাহিক ও পারিবারিক বন্ধন ধরে রাখার বিষয়টিও বোকামি ও নির্বুদ্ধিতা বলে মনে হয়। কখনো কখনো তাই পুরুষরা ভাবতে থাকে যে, পরিবারের সবগুলো সন্তান তার ঔরসেই যে হয়েছে এমনটি নাও হতে পারে। একইভাবে পরিবারের সন্তানরা ভাবতে থাকে, তাদের সবাই একজন পিতার ঔরসে নাও হতে পারে। আর এভাবেই একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবারের সদস্যদের এক ও অভিন্নপ্রাণ হওয়ার নান্দনিক অনুভূতি সবার মাঝখান থেকে হারিয়ে যায়। শারীরিক ভোগ-সম্ভোগের সুযোগ পেলেও, দৈহিক সুখে শিহরিত হয়ে উঠলেও তারা চিরদিনের জন্য বঞ্চিত থাকে মনের সুখ আর হৃদয়ের প্রশান্তি থেকে। কারণ তাদের সম্পর্ক থাকে তখন কেবল পশুর সম্পর্কের মতোই। যার কারণে তালাক ও বিচ্ছেদ, ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হওয়া, এমনকি নিজের জীবন সঙ্গীর সঙ্গে খেয়ানতের মতো সর্বনাশা ঘটনাগুলোও অতি সহজেই প্রাত্যাহিক ঘটনার মতো সেখানে ঘটে থাকে। পিতা তার মেয়ের সঙ্গে ছেলেবন্ধুদের দেখে তাকে স্বাধীনতার প্রতি আরও উদ্বুদ্ধ করেন। ছেলের সঙ্গে তার মেয়েবন্ধুদের দেখেও না দেখার ভান করেন। কারণ নাস্তিক্যবাদ তাদের শিক্ষা দিয়েছে, প্রত্যেকে তার নিজের ইচ্ছানুযায়ী জীবন চালাবে। প্রত্যেকে তার নিজের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। সুতরাং অপরে কী করছে- সেটা দেখার দায়িত্ব তার নয়। আর এভাবেই পরিবারিক ব্যবস্থাকে সে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।
আমরা আগেই বলে এসেছি, পরিবার হলো সমাজ ব্যবস্থার মৌলিক উপকরণ। সুতরাং পরিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংসের ফলে সমাজ ব্যবস্থায়ও যে ধ্বংস ও বিলুপ্তি নেমে আসবে সেটা বলাই বাহুল্য। কেননা একটি পরিবার প্রতিনিয়ত সমাজকে নতুন নতুন সদস্য সরবরাহ করে। সুতরাং পরিবার যদি সমাজের কাছে নষ্ট ও বিপথগামী সদস্য সরবরাহ করে, তবে সন্দেহ নেই একসময় পুরো সমাজ নষ্ট ও বিপথগামী হয়ে পড়বে। একটি সামাজিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিই হয়ে থাকেন কোনো অফিসের সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা, হাসপাতালের চিকিৎসক, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কিংবা শিল্প-কারখানার কর্মচারী। আর তাই সর্বত্রই এই মানুষটিকে তার আশ-পাশের মানুষের সঙ্গে সেভাবেই আচার-আচরণ করতে হয় যা ছোটবেলা থেকে তার পরিবার তাকে শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং ছোট বেলা থেকে পরিবারে সে যদি কেবল ব্যক্তিচিন্তা আর স্বার্থপরতা শিখে থাকে তবে সমাজেও তো সে ঠিক একইরূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। ফলে গোটা সমাজটাই হয়ে পড়বে স্বার্থপর ও আত্মপরায়ণ সমাজ। পরস্পরের ভালোবাসা ও সহমর্মিতার অনুভূতি, জনহিতৈষী মনোভাব, অপরের কল্যাণে নিজের স্বার্থকে কুরবান করে দেওয়ার মানসিকতা সেই পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে অবলুপ্ত হয়ে যাবে। সরকারি অফিস-আদালত, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো পরিণত হবে কেবল স্বার্থসিদ্ধি ও ব্যক্তিগত গরজ পূরণের বাহন হিসেবে। সমাজের প্রত্যেকটি মানুষই খুঁজতে থাকবে দুর্নীতি আর অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে উদ্দেশ্য হাসিলের নতুন নতুন পন্থা ও পদ্ধতি। আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘুষ-উৎকোচ গ্রহণ আর রাষ্ট্রের সম্পদ নিজের বাপের রেখে যাওয়া মীরাস মনে করে চোখ বন্ধ করে গিলতে থাকবে।
নাস্তিক্যবাদের প্রভাবে আমাদের আধুনিক মানব সমাজ ‘পশু’ সমাজের সঙ্গেই অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে গেছে। যেখানের প্রত্যেকেই একে অপরকে শিকারের নেশায় সারাক্ষণ ওত পেতে থাকে। আর সে কারণে যেখানকার দুর্বলরা চায় সবলদের চোখ এড়িয়ে থাকতে। আর সবলরা চায় কলে-কৌশলে দুর্বলদের ঘাড় মটকাতে।
আজকের পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন, অপরাধ সেখানে একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটা সেখানে মানুষের দৈনন্দিন গতানুগতিক আচারের অপরিহার্য অনুসঙ্গে রূপ নিয়েছে। সেকারণে, ব্যভিচার ও বিকৃত যৌনাচারের দরজা ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত থাকার পরেও সেখানে নারী অপহরণের হার রীতিমতো ভীতিকর। কর্মসংস্থানের প্রচুর সুযোগ-সুবিধা আর ক্ষেত্র থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন বয়সের ও বিভিন্ন পেশার মানুষ কর্তৃক চুরি-ডাকাতি আর সশস্ত্র ছিনতাই অহরহই ঘটছে। শহরগুলোতে শত শত অপরাধ সংঘটন আজ নিতান্তই একটা স্বাভাবিক চিত্র হয়ে গেছে।
এভাবেই আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ ও ভীতি থেকে উদাসীন নাস্তিক্যবাদী একটি সমাজ কখনো সুস্থ ও সবল সমাজ হিসেবে পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতে পারে না; বরং সেটা পরিণত হয় একটি অন্যায়, অশ্লীলতা, পাপাচার আর নীতিহীনতার ভাঁগাড়ে। অন্যায়-অপরাধ, জুলুম-নির্যাতন, আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্বার্থসিদ্ধি, অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে কাঙিক্ষত বস্তু অর্জন ইত্যাদি তখন হয়ে পড়ে সেটার নিত্য-নৈমিত্তিক চিত্র। সেখানে সবলরা দুর্বলদের ওপর জুলুম করে। আর দুর্বলরা সবলদের জুলুম থেকে বাঁচার জন্য মুনাফেকির আশ্রয় নেয়। আর এগুলোই তখন পরিণত হয় সেই সমাজের মানুষের আচার-আচরণের মূলনীতি আর অলিখিত সংবিধানে।
নাস্তিক্যবাদের প্রভাব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বিশ্ব রাজনীতি ও বিভিন্ন দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে। কারণ যেই নাস্তিক্যবাদ ও বস্তুবাদী স্বভাব-চরিত্র একজন মানুষের হৃদয়কে কঠোরতা, রূঢ়তা আর আত্মপরায়ণতায় ভরপুর রাখে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এটা তাকে কঠোরতা ও স্বার্থপরতার পথে ঠেলে দেয়। আর সে কারণেই আমরা পৃথিবীর বড় বড় সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে সবসময়ই দেখি নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতর কলা-কৌশল আর টাল-বাহানার আশ্রয় নিতে। উদ্দেশ্য থাকে, দুর্বল জাতিগুলোর গলায় গোলামির জিঞ্জির পরিয়ে দেওয়া, ছলে-বলে দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর ধন-সম্পদ বাগিয়ে নেওয়া। এই নাস্তিক্যবাদ ও বস্তুবাদী রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে আরব ও ইসলামী বিশ্ব। কারণ, যখনই কোনো আরব কিংবা মুসলিম রাষ্ট্র নিজেদের হৃত অধিকার ফেরত চায়, তখনই তাদের সামরিক আগ্রাসনের নগ্ন হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। বরং আরও আগে বেড়ে বলা যায়, যখন আমাদের কোনো রাষ্ট্র নিজের সীমানার ভেতরে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে আলোর পথে হাঁটার পরিকল্পনা করে, তখনই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো বিভিন্ন খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে তার পথ আগলে দাঁড়ায়। পশ্চাৎপদ ও প্রগতিবিরোধী, অন্যায় ও বর্বর, জালেম ও অসহিষ্ণুসহ বিভিন্ন অপবাদ আর কলঙ্কের কালিমা লেপন করা হয় আমাদের পবিত্র ধর্মের সুশুভ্র অঙ্গে। ইসলামী বিশ্বের বিরুদ্ধে এই নাস্তিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তাদের মনে যে কতটা ঘৃণা ও বিদ্বেষ লালন করে এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ বোধহয় ‘তেল’। যখন ইসলামী বিশ্ব এই তেলের ন্যায্য দাম পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে আবেদন করেছিল, তখন তথাকথিত এসব আন্তর্জাতিক মোড়ল আমাদের ‘বিশ্ব অর্থনীতি ও সভ্যতা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। কারণ শুধু একটিই, আমরা কেন আমাদের ন্যায্য অধিকার চাইতে গিয়েছিলাম? বরং এসব সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বারবার হাঁক-ডাক ছেড়েছে, যদি তাদের কাছে তেল রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয় কিংবা তেলের মূল্য বৃদ্ধি পায়, তবে প্রয়োজনে তারা আমাদের তেলের খনি দখল করে আমাদেরই এর থেকে মাহরূম রাখবে।
এভাবেই আজ গোটা পৃথিবী সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর আন্তর্জাতিক বস্তুবাদ ও স্বার্থপরতার আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। একের পর এক তারা দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে দখল করে সেগুলোর ধন-সম্পদ লুট করছে। সেখানকার অধিবাসীদের গলায় গোলামির জিঞ্জির পরিয়েছে। আর সেগুলোকে ঠেলে দিয়েছে ভেদাভেদ, বিশৃঙ্খলা, অস্থিরতা আর দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দিকে।
বিশ্ব রাজনীতির কর্ণধারগণ যদি আল্লাহ তাআলার একত্ববাদে বিশ্বাসী হতেন, মহান স্রষ্টার ভয় যদি তাদের হৃদয়ে সদা-সর্বদা জাগরূক থাকতো, তবে এই পৃথিবীটা আজ এতটা অশান্ত থাকত না। জাতিতে জাতিতে থাকতো ভ্রাতৃত্ববোধ আর পরস্পরের সহমর্মিতা ও ভালোবাসার সুনিবিড় বন্ধন। দুর্বলদের সহায়তা, দরিদ্রদের অনুগ্রহ আর মজলুমের মমত্ববোধ- এসবই হতো বিশ্ব রাজনীতির মূল নীতিমালা।
কিন্তু এর চেয়েও বেশি ভয় আর আতঙ্কের বিষয় হলো আধুনিক যুদ্ধের হাতিয়ার ও সমরাস্ত্র আবিষ্কার। কারণ নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য কখন যে এই নাস্তিক্যবাদী ও স্বার্থপর রাষ্ট্রগুলো গোটা পৃথিবীটা ধ্বংস করে দেয়- সেটা সম্ভবত কেউ-ই বলতে পারবে না।
ছোট ও দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংস করার জন্য আজ বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যেসব পন্থা-পদ্ধতি এখতিয়ার করছে, তাতে কেউ বিস্মিত না হয়ে পারবে না। সমরাস্ত্রের পরিবর্তে আজ তারা ব্যবহার করছে মাদক, মিথ্যা প্রচারণা, নারী ও বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের হাতিয়ার। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য হিতকর সবকিছুই তাই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চক্ষুশূল।
এভাবেই নাস্তিক্যবাদ ও মহান আল্লাহ থেকে দূরাবস্থান একটি সুন্দর মানব সমাজকে পরিণত করে জুলুম-নির্যাতন, অন্যায়-অনাচার, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-হানাহানিপূর্ণ একটি ঘৃণ্য সমাজে। ফুল ও পাখির গান নয়; সর্বদা সে সমাজে বয়ে চলে ধ্বংস আর বিনাশের তুফান। সেখানে মাদকের ভেতরে মানুষ বুঁদ হয়ে থাকে। ফুলে ওঠা আরক্তিম কামার্ত চোখে কামের নেশা দেখতে পায় পৃথিবীর সবকিছুতে। এভাবে নাস্তিক্যবাদের ভিত্তির ওপর গড়ে ওঠা বিশ্ব রাজনীতি একজন মানুষকে বানিয়ে ফেলে চরম স্বার্থপর ও আত্মপরায়ণ। সে কেবল এই দুনিয়ার জন্যই বেঁচে থাকে। তার সামনে উপস্থিত দিনটিকেই পূর্ণ ভোগ করতে ভালোবাসে। ফলে সে মেশিনের মতো অহর্নিশ ঘুরতে থাকে। তার জীবন ভরে ওঠে হতাশা, বিশৃঙ্খলা আর অপরাধের অভিশাপে।