ফাত্ওয়া নং - 45545
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য ।
যদি কোনো ব্যক্তি এক দেশে রমযান শুরু করার পর অন্য দেশে যায় যেখানে ‘ঈদুল ফিত্বর এক দিন দেরিতে আসে তাহলে সে সিয়াম পালন চালিয়ে যাবে যতদিন না দ্বিতীয় দেশের লোকেরা সিয়াম পালন শেষ করে।
শাইখ ইবনু বায-রাহিমাহুল্লাহ- এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল-
আমি পূর্ব এশিয়ার দেশ থেকে এসেছি যেখানে হিজরি মাস সউদি আরব এর চেয়ে একদিন দেরিতে শুরু হয়। রমযান মাসে আমি আমার দেশে যাব। আমি যদি সউদি আরবে সিয়াম পালন শুরু করি এবং আমার দেশে গিয়ে শেষ করি তাহলে আমার ৩১ দিন সাওম পালন করা হবে। আমাদের সিয়ামের ব্যাপারে হুকুম কি? আমি কতদিন সাওম পালন করব?
তিনি উত্তরে বলেন-
“আপনি যদি সউদি আরব বা অন্য কোন দেশে সিয়াম পালন শুরু করেন কিন্তু নিজের দেশে গিয়ে বাকিটা পালন করেন তাহলে আপনাদের দেশের লোকদের সাথেই সিয়াম ভঙ্গ করবেন যদিও বা তা ৩০ দিনের বেশি হয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
«الصوم يوم تصومون ، والفطر يوم تفطرون»
“সাওম হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে ) সাওম পালন কর, আর ‘ঈদুল ফিত্বর হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে ) সাওম ভঙ্গ কর[1]।”
কিন্তু আপনি যদি তা করতে গিয়ে ২৯ দিনের কম সাওম পালন করেন, তাহলে আপনাকে পরে এক দিন সাওম এর ক্বাদ্বা (কাযা) আদায় করে নিতে হবে; কারণ রমযান মাস ২৯ দিনের কম হতে পারে না।’
[মাজমূ‘ ফাত্ওয়া আশ-শাইখ ইবনি বায, (১৫/১৫৫)]
শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-‘উসাইমীন-রাহিমাহুল্লাহ-এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল-
এক মুসলিম দেশ থেকে যদি আরেক দেশে যাওয়া হয় যেখানে লোকজন প্রথম দেশের চেয়ে এক দিন দেরিতে রমযান আরম্ভ করেছে, তবে সিয়াম পালনের বিধান কি হবে যখন দ্বিতীয় দেশের লোকজনকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি সিয়াম পালন করতে হয়? এবং এর বিপরীত ক্ষেত্রে কী হবে?
তিনি উত্তরে বলেন :
“যদি কেউ এক মুসলিম দেশ থেকে আরেক মুসলিম দেশে ভ্রমণ করে এবং সেই দেশে রমযান দেরিতে শুরু হয়, তবে তিনি ওই দেশের লোকরা সিয়াম ভঙ্গ না করা পর্যন্ত সিয়াম পালন করে যাবেন কারণ সাওম হল সেদিন যেদিন লোকেরা (সকলে) সিয়াম পালন করে, আর ‘ঈদুল ফিত্বর হল সেদিন যেদিন লোকেরা (সকলে) ইফত্বার করে অর্থাৎ ঈদুল ফিতর পালন করে, আর ‘ঈদুল ’আদ্বহা (আযহা) হল সেদিন যেদিন লোকেরা পশু যবেহ করে।
সে এই কাজ করবে যদিও বা এজন্য তাকে এক বা এর বেশি দিন সিয়াম পালন করতে হয়।
এটি সেই পরিস্থিতির অনুরূপ যখন সে এমন দেশে যায় যেখানে সূর্যাস্ত দেরীতে হয়, তবে সে সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত সাওম পালন করবে যদিও বা এর ফলে দুই বা তিন বা ততোধিক ঘণ্টা স্বাভাবিক দিন (চব্বিশ ঘণ্টা) থেকে বেড়ে যায়।
একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে যদি সে এমন কোনো দেশে যায় যেখানে নতুন চাঁদ এখনও দেখা যায় নি, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাওম শুরু করতে বা ইফত্বার করতে নিষেধ করেছেন যতক্ষণ না আমরা তা দেখি। তিনি বলেছেন :
«صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته»
“তোমরা তা (নতুন চাঁদ) দেখে সাওম শুরু কর এবং তা (নতুন চাঁদ) দেখে ইফত্বার তথা সাওম সমাপ্ত কর।”
আর বিপরীত অবস্থার ক্ষেত্রে, যখন একজন ব্যক্তি এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায় যেখানে রমযান মাস প্রথম দেশের তুলনায় আগে শুরু হয়েছে, তবে তিনি তাদের সাথেই সাওম ভঙ্গ করবেন এবং যে কয়দিনের সাওম বাদ পড়েছে সেগুলো পরে ক্বাদ্বা’ (কাযা) করে নিবেন। যদি একদিন বাদ পড়ে, তবে একদিনের ক্বাদ্বা’ (কাযা) করবেন, যদি দুই দিন বাদ পড়ে, তবে দুই দিনের; তিনি ২৮ দিন পর সাওম ভঙ্গ করলে, তাহলে দুই দিনের কাযা করবেন; যদি উভয় দেশেই মাস ৩০ দিনে শেষ হয়, আর এক দিনের ক্বাদ্বা’ (কাযা) করবেন যদি উভয় দেশে বা যে কোন একটি দেশে ২৯ দিনে মাস শেষ হয়।”
[মাজমূ‘ ফাত্ওয়া আশ-শাইখ ইবনি ‘উসাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৪)]
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-উসাইমীনের কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়েছিল-
কেউ হয়ত বলবে যে, কেন আপনি বলছেন যে প্রথম ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি সাওম পালন করতে হবে এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সাওমে র ক্বাদ্বা’ (কাযা) পালন করতে হবে?
তিনি উত্তরে বলেন-
“দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সাওমের ক্বাদ্বা’ (কাযা) সাওম পালন করতে হবে কারণ মাস ২৯ দিনের কম হতে পারে না আর সে প্রথম ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি সাওম পালন করবে; কারণ তখনও নতুন চাঁদ দেখা যায় নি।
প্রথম ক্ষেত্রে আমরা তাকে বলব সাওম ভঙ্গ কর, যদিও তোমার ২৯ দিন পূর্ণ হয়নি; কারণ নতুন চাঁদ দেখা গিয়েছে আর নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার পর সাওম ভঙ্গ করা বাধ্যতামূলক, শাউওয়াল মাসের প্রথম দিন সাওম পালন করা নিষিদ্ধ। আর কেউ যদি ২৯ দিনের কম সাওম পালন করে থাকে, তাহলে তাকে ২৯ দিন পূরণ করতে হবে। এটি দ্বিতীয় অবস্থা হতে ভিন্ন; কারণ যে দেশে আসা হয়েছে সেখানে তখন রমযান চলছে, নতুন চাঁদ দেখা যায় নি। যেখানে এখনও রমযান চলছে সেখানে কিভাবে সাওম ভঙ্গ করা যেতে পারে? তাই আপনাকে সাওম পালন চালিয়ে যেতে হবে। আর যদি তাতে মাস বেড়ে যায়, তাহলে তা দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার মত।”
[মাজমূ‘ ফাত্ওয়া আশ-শাইখ ইবনি ‘উসাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৫)]
আরও দেখুন, (38101) নং প্রশ্নের উত্তর।
আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।