নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে নারী শিক্ষা

শিক্ষা গ্রহণ সকল নরনারীর অবশ্যই কর্তব্য। ইসলামের প্রথম যুগে মাদ্রাসা ও উচ্চ বিদ্যালয়ে মেয়েরাও অধ্যয়ন করতেন। মসজিদে স্ত্রী পুরুষ একই সঙ্গে নামায পড়তেন। তখনও অবস্থাসম্পন্ন লোকেরা গৃহ শিক্ষক নিযুক্ত করে মেয়েদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতেন। অথচ অজ্ঞতার যুগে নারীদের হেয় প্রতিপন্ন করা হত। তাই লেখাপড়া শেখানো ছিল কল্পনাতীত।[1]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী-পুরুষের জন্য শিক্ষা ফরয ঘোষণা করেন। তিনি পুরুষদের যেভাবে তালিম দিতেন মহিলাদেরও অনুরূপভাবে শিক্ষা দিতেন। তিনি বিভিন্ন হাদীসে জ্ঞান অন্বেষণে উৎসাহ প্রদান করেছেন। তিনি মহিলাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জন্য একটি সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। এ সময় তিনি কেবল তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতেন। ঈদের সময় দেখা যেত তিনি পুরুষদের সামনে ভাষণ শেষ করে নারীদের সমাবেশে চলে যেতেন এবং সেখানে বক্তব্য রাখতেন।[2]

নারীদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য তিনি অভিভাবকদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছেন। শুধু আযাদ মহিলাই নয় ঘরের দাসী বাদীদেরও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করেননি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَمَنْ عَالَ ثَلَاثَ بَنَاتٍ أَوْ مِثْلَهُنَّ مِنَ الْأَخَوَاتِ فَأَدَّبَهُنَّ وَرَحِمَهُنَّ حَتَّى يُغْنِيَهُنَّ اللَّهُ أَوْجَبَ اللَّهُ لَهُ الْجَنَّةَ» . فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ الله واثنتين؟ قَالَ: «واثنتين»

“যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তান বা তিনটি বোনকে লালন-পালন করবে এবং তাদেরকে ভদ্রতা, শিষ্টাচার, উত্তম চালচলন ও আচার ব্যবহার শিক্ষা দিয়ে সাবলম্বী হতে সাহায্য করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেবেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কেউ যদি দুজনের জন্য এরূপ করে? তিনি বললেন, দু’জনের জন্য এরূপ করলেও হবে।[3]”

পুরুষদের শিক্ষার পাশাপাশি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী শিক্ষারও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি সপ্তাহের একটি বিশেষ দিনে নারীদের নিকট বক্তৃতা করতেন এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতেন। সম্ভ্রান্ত মহিলাদের তো কথাই নেই। এমনকি দাসীদেরকেও শিক্ষা দান করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন।’’[4]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে যে সমস্ত জ্ঞান চর্চার মজলিস অনুষ্ঠিত হতো মহিলারা অদূরে পর্দার অন্তরালে উপস্থিত থেকে তার উপকার লাভ করতেন। ইসলাম সম্পর্কে নির্ভুল জ্ঞান অর্জনই ছিল এসব মজলিসে তাদের উপস্থিত হওয়ার উদ্দেশ্য। অনেক মহিলা ছিলেন, যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখে কুরআন পাঠ শুনেই তা মুখস্থ করে ফেলতেন। কোনো সময়ে যদি তিনি মনে করতেন যে, মহিলারা তার কথা ঠিকমত শুনতে পাননি, তা হলে তিনি পুনরাবৃত্তি করতেন।[5]

আল্-কুরআনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিশেষভাবে ঘরের মহিলাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষ সমাজকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামী সমাজের মহিলারা দ্বীন সম্পর্কে জরুরী জ্ঞান লাভ করুক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছিল বাসনা এবং চেষ্টা। কেবল নীতিগত জ্ঞান শিক্ষা দেয়াই লক্ষ্য ছিল না। সেই সঙ্গে বিভিন্ন কারিগরী শিক্ষা দেয়াও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ জন্য কেবল উপদেশ দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি, আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছিলেন। পিতামাতা বা স্বামী যদি পারিবারিক পরিবেশে জরুরী দীনি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা না করে, তা হলে ঘরের বাইরে গিয়েও সেই জ্ঞান লাভের সুযোগ মহিলাদের দিতে হবে, এই হচ্ছে ইসলামী আইনের বিধান। দীনি জ্ঞান লাভের জন্য নারীকে সুযোগ-সুবিধা দিতে গোটা সমাজই দায়িত্বশীল। এ পথে কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা হলে তা দূর করতে হবে সমাজকেই। শুধু কিতাবী বিদ্যাই নারীদের জন্য যথেষ্ট নয়, তাদের চিন্তা-শক্তির উৎকর্ষ সাধন এবং অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে চিন্তা ও গবেষণার মাধমে নব-নব সত্য তত্ত্ব উদ্ঘাটনের জন্য তাদের মানসিক শক্তির বিকাশ সাধনের ব্যবস্থা করাও ইসলামী সমাজের কর্তব্য।[6]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর জন্য শিক্ষাকে সীমিত করে দেননি। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিয়েছেনঃ

﴿ وَٱلرَّٰسِخُونَ فِي ٱلۡعِلۡمِ يَقُولُونَ ءَامَنَّا بِهِۦ كُلّٞ مِّنۡ عِندِ رَبِّنَاۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٧ ﴾ [ال عمران: ٧ ]

‘‘যারা জ্ঞানী ও বিদ্যান তারা বলেন, আমরা এর (কুরআন) প্রতি ঈমান এনেছি এবং কেবল বিবেক সম্পন্ন লোকেরাই (কোনো জিনিস থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।’’[7]

সুতরাং আল্-কুরআনকে বুঝবার জন্যও ইসলামের অনুসারীদের বিদ্যা ও জ্ঞানার্জন করতে হবে। এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী পুরুষের ক্ষেত্রে পার্থক্য করেন নি। এতে প্রতীয়মান হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী শিক্ষার উপর অসাধারণ গুরুত্বারোপ করেছেন।[8]

মহান আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদেরকে জ্ঞান চর্চার নির্দেশ দান করে বলেন,

﴿ وَٱذۡكُرۡنَ مَا يُتۡلَىٰ فِي بُيُوتِكُنَّ مِنۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ وَٱلۡحِكۡمَةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا ٣٤ ﴾ [الاحزاب: ٣٤]

‘‘আর তোমাদের ঘরে আল্লাহর যে আয়াতসমূহ ও হিকতম পঠিত হয়- তা তোমরা স্মরণ রেখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।’’[9]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে নারী সমাজের মধ্যে ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে অবগত হওয়ার এমন অদম্য আকাঙ্খা ও উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছিল যে, সেজন্য তারা দিনরাত সবসময় ব্যতিব্যস্ত থাকতো। জ্ঞান আহরণের পথে কোনো বাধা ও প্রতিবন্ধকতা তাদেরকে নিরাশ ও ভগ্নোৎসাহ করতে পারতো না। আনসারী মহিলাদের সম্পর্কে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেনঃ

نعم النساء نساء الأنصار لم يكن يمنعنهن الحياء ان يتفقهن في الدين

‘‘আনসারী মহিলারা কতই না ভাল! দীনের বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান লাভের ক্ষেত্রে লজ্জা-শরম তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি।’’[10]

ইসলামের শিক্ষা সম্পর্কে সে যুগের মহিলারা কত গভীর ও সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিয়ে অধ্যয়ন করতেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর নিম্নের উক্তি হতেই তা বোঝা যায়ঃ

‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে কুরআন মাজীদের কোনো আয়াত নাযিল হলে, আমরা তার শব্দগুলো হুবহু মুখস্থ না করলেও তার হালাল-হারাম এবং আদেশ-নিষেধগুলো স্মৃতিপটে গেঁথে নিতাম।’’[11]

ইবাদত এবং জ্ঞান চর্চার মজলিসে নারীরা বিশেষ উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সাথে অংশগ্রহণ করতো। খাওলা বিনতে কায়েস আল্-জুহানিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুউচ্চ কণ্ঠের উল্লেখ করে বলেছেনঃ

كنت اسمع خطبة رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم الجمعة وأنا في موخر النساء.

‘‘জুম‘আর দিনে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খুতবা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে শুনতে পেতাম। অথচ আমি মেয়েদের সর্বশেষ কাতারে থাকতাম।’’[12]

হারিসা ইবনু নু‘মানের এক কন্যা বর্ণনা করেছেনঃ

«ما حفظت "ق" إلا من في رسول الله صلى الله عليه وسلم»

‘‘আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখ থেকে শুনেই সূরা কাফ মুখস্থ করেছিলাম। তিনি প্রত্যেক জুম‘আর খুতবাতে এটি পড়তেন।’’[13]

মেয়েদের উপদেশ ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও বিশেষ লক্ষ্য রাখতেন। যদি কোনো সময় তিনি বুঝতে পারতেন যে, মেয়েরা তার বক্তব্য ঠিকমত শুনতে পায় নি, তাহলে তিনি তাদের কাছে গিয়ে পুনরায় তা বলে দিতেন। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এক ঈদের দিনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন,

«فظن أنه لم يسمع النساء فوعظهن وأمرهن بالصدقة»

‘‘তিনি মনে করলেন যে, তাঁর কথা মেয়েদের কাছে পৌঁছাতে পারেন নি। তাই পুনরায় তিনি তাদেরকে নসীহত করলেন। তাদের সাদকা দেয়ার জন্য আদেশ দিলেন।’’[14]

ইসলাম জ্ঞানান্বেষণের জন্য নারীদের মনে অত্যন্ত গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল। তাদের এই জ্ঞান-পিপাসা নিবারণের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণ ব্যবস্থা ছাড়াও মাঝে মধ্যে তাদের জন্য অতিরিক্ত সুযোগ করে দিতেন। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে,

‘‘মহিলারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললো, আপনার কাছে পুরুষরা এত ভিড় লাগিয়ে থাকে যে, অনেক সময় আমাদের পক্ষে আপনার কথা শুনা সম্ভবই হয় না। অতএব আমাদের জন্য আপনি আলাদা একটি দিন ধার্য করে দিন। একথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিলেন। সেই দিন তিনি তাদের কাছে গিয়ে উপদেশ দিতেন এবং সৎকাজের নির্দেশ দান করতেন।’’[15]

মালিক ইবনে হুয়াইরিস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা কয়েকজন যুবক দীন সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান করলাম। যখন তিনি বুঝতে পারলেন যে, আমরা বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছি, তখন তিনি বললেনঃ‘‘তোমরা তোমাদের স্ত্রী-পুত্রের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের কাছেই অবস্থান কর। তাদেরকে দীন সম্পর্কে শিক্ষা দাও এবং তা মেনে চলার নির্দেশ দাও।’’[16]

>
[1] প্রাগুক্ত, পৃ. ২৬।

[2] ড. মোঃ আজহার আলী, পূর্বোক্ত, পৃ. ২৬।

[3] শারহুস সুন্নাহ, হাদীস নং ৩৪৫৭।

[4] আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল, কিতাবুল ইলম, পূর্বোক্ত, পৃ. ২০।

[5] মুহাম্মদ আব্দুর রহীম, নারী, (ঢাকা, সিন্দাবাদ প্রকাশনী, ২য় সংস্কার ১৯৮৮), পৃ. ৫০-৫১।

[6] প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৩।

[7] সূরা আলে ইমরান : ৭।

[8] ইউ.এ.বি. রাজিয়া আক্তার বানু, সংবিধান ও ধর্মে বাংলাদেশে মুসলিম নারীর অধিকার ও মর্যাদা : একটি পর্যালোচনা, ঢাকা, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইট পত্রিকা, দ্বাদশ খণ্ড, ২য় সংখ্যা, ডিসেম্বর ১৯৯৪, পৃ. ৫৮।

[9] আল্-কুরআন, সূরা আহযাব : ৩৪।

[10] মুসলিম, সহীহ্ মুসলিম, ১ম খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৬১।

[11] ইবন আবদি রাব্বিহি, আল্-ইকদুল ফরীদ, ১ম খণ্ড, কায়রোঃ মাতবাআতু লাজনাতিত্ তা’লীক, ১৯৬৫, পৃ. ২৭৬।

[12] ইবন সা‘দ, আত্-তাবাকাত, ৮ম খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ২১৭।

[13] .মুসলিম, সহীহ্ মুসলিম, ২য় খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৯৫।

[14] .বুখারী, সহীহুল বুখারী, ১ম খণ্ড, কিতাবুল ইলম, প্রাগুক্ত, পৃ. ২০; মুহাম্মদ জামালুদ্দীন, মুসলিম নারীর পোষাক ও কর্ম, ঢাকাঃ এশা রাহনুমা, সাইন্স ল্যাবরেটরী, ১৯৯৮, পৃ. ৭২-৭৬।

[15] .বুখারী, সহীহুল বুখারী, প্রাগুক্ত, পৃ. ২০।

[16] .বুখারী, সহীহুল বুখারী, ১ম খণ্ড, কিতাবুল আযান, প্রাগুক্ত, পৃ. ৮৮।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরবর্তীকালে সাহাবীগণ ব্যক্তিগতভাবে নারীদের চিন্তা ও কর্মের সংশোধনের জন্য ব্যাপক চেষ্টা-সাধনা করেছেন। একইভাবে তাঁরা সমাজ সংস্কারের যে চেষ্টা-সাধনা করতেন তাতেও পুরুষদের সাথে নারীরাও অন্তর্ভুক্ত থাকত। আয়েযা নাম্নী এক মহিলা সাহাবী আব্দুল্লাহ্ ইব্নে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর বক্তৃতার উল্লেখ করে বলেছেন,

‘‘আমি আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে নারী ও পুরুষের উদ্দেশ্যে এই বলে নসীহত করতে দেখেছি যে, নারী পুরুষ নির্বিশেষে তোমাদের মধ্যে থেকে যেই ফিতনার যুগের মুখোমুখী হবে সে যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাদের কর্মপন্থা দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করে।’’[1]

ফলে পূর্বে যে নারীরা জ্ঞান ও সংস্কৃতির সাথে একেবারেই অপরিচিত ছিল এখন তারা তার রক্ষক হয়ে দাঁড়ালো। চিন্তা ও সাহিত্যের জগতে যাদের কোনো অস্তিত্বই অনুভূত হতো না, এখন তারা জ্ঞান ও হিদায়াতের প্রদীপরূপে আত্মপ্রকাশ করলো।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞান সম্পর্কে তাঁর ছাত্র উরওয়া ইবন্ যুবায়র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন,

‘‘আমি কুরআন, ইসলামের ফরযসমূহ, হালাল ও হারাম, কাব্য ও সাহিত্য, আরবদের ইতিহাস ও নসবনামা বিষয়ক জ্ঞানের ক্ষেত্রে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর চেয়ে অধিক জ্ঞানী লোক আর দেখি নি। ।[2]

আরবী কাব্য ও কবিতায় উরওয়া ইবন্ যুবায়র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর বেশ দখল ছিল। এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রশংসা করা হলে তিনি বলতেন, কাব্য বিষয়ে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা -এর জ্ঞানের সাথে আমার জ্ঞানের কোনো তুলনাই চলে না। তিনি তো কথায় কথায় কবিতা থেকে প্রমাণ পেশ করতেন।[3]

মূসা ইবন্ তালহা বলেনঃ

‘‘আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর চেয়ে অধিক বাগ্মী ও শুদ্ধভাষী আর কাউকে দেখি নি।’’[4]

লোকেরা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর কাব্য ও সাহিত্য বিষয়ে জ্ঞানের তুলনায় চিকিৎসা বিষয়ক অধিক জ্ঞান দেখে বিস্মিত হতো। ইবনে আবী মূলায়কা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-কে বললেন, আমরা আপনার কবিত্ব ও বাগ্মীতা দেখে চমৎকৃত হই না। কারণ আপনি আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর কন্যা। আর আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর বাগ্মীতা সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু আপনি চিকিৎসা বিদ্যা কিভাবে শিখেছেন? আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লে বাইরে থেকে আগত প্রতিনিধিদল তাঁর চিকিৎসা করতো। আমি সেগুলো মনে রাখতাম।[5]

ফারায়েযের অংক শাস্ত্রে তিনি এমন জ্ঞানের অধিকারিণী ছিলেন যে, বড় বড় সাহাবীগণ পর্যন্ত উত্তরাধিকার বিষয়ক মাসআলা-মাসায়েল তাঁর নিকট থেকে জেনে নিতেন।[6]

‘আমরাহ্ বিনতে আব্দুর রহমানও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর একজন ছাত্রী ছিলেন। ইবনে ইমাদ হাম্বলী নিম্নোক্ত ভাষায় তার কথা উল্লেখ করেছেনঃ

‘‘আমরাহ্‌ বিনতে আব্দির রহমান আনসারী বিজ্ঞ ফিকহবিদ ছিলেন। তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর কোলে লালিত-পালিত হয়েছিলেন। অতএব, তাঁর নিকট থেকে তিনি সর্বাপেক্ষা বেশি সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি নির্ভরযোগ্য এবং মজবুত স্মৃতিশক্তি ও ধারণ ক্ষমতার অধিকারিণী ছিলেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ সর্বদা গৃহীত হতো।[7]

ইবন্ হিব্বান (র.) তাঁর সম্পর্কে লিখেছেনঃ‘‘তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত ছিলেন।’’[8]

>
[1] .দারেমী, সুনান, প্রাগুক্ত, পৃ. ৮২।

[2] .হাফিজ যাহাবী, তাযকিরাতুল হুফফাজ, ১ম খণ্ড, বৈরুতঃ দারু ইহ্ইয়ায়িত্ তুরাসিল আরাবী, তা. বি., পৃ.২৭।

[3] জালালুদ্দীন উমরী, ইসলামী সমাজে নারী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১০৩।

[4] ইবনে হাজার আল্-আসকালানী, আল্ ইসাবা ফী তামীযিস্ সাহাবা, ৪র্থ খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৬০।

[5] হাকেম, মুসতাদরাক, ৪র্থ খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ১১।

[6] তদেব।

[7] .ইবনে ইমাদ হাম্বলী, শাজারাতুয্ যাহাব, ১ম খণ্ড, বৈরুতঃ আল্-মাকতাবাতুত্ তিজারী, তা. বি. পৃ. ১১৪।

[8] ইবনে হাজার আল্-আসকালানী, তাহযীবুত্ তাহযীব, ১২শ খণ্ড, বৈরুতঃ দারু ইহইয়ায়িত্ তুরাসিল আরাবী, তা. বি. পৃ. ১২৯।

 তাবেয়ীদের যুগে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ্ কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (র.) ইমাম যুহরীকে বললেনঃ আমি তোমার মধ্যে জ্ঞান পিপাসা লক্ষ্য করছি। আমি কি তোমাকে জ্ঞানে পরিপূর্ণ একটি পাত্র দেখিয়ে দেব না? যুহরী বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন, ‘আমরাহ্ বিনতে আব্দুর রহমানের মজলিস কখনো ছেড়ে থেকো না। কারণ, তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর কোলে লালিত-পালিত। অতএব, তিনি তাঁর জ্ঞানের পূর্ণ উত্তরাধিকারিণী। ইমাম যুহরী (র.) বললেন, তাঁর পরামর্শ অনুসারে আমি ‘আমরাহ্ বিনতে আব্দুর রহমানের খিদমতে হাজির হলে জানতে পারলাম, প্রকৃতই তিনি জ্ঞানের অফুরন্ত ভাণ্ডার।[1]

হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী (র.) উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সম্পর্কে লিখেছেনঃ

‘‘উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা পরিপক্ক বুদ্ধি ও সঠিক সিদ্ধান্তের অধিকারিণী ছিলেন।’’[2]

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর কন্যা যায়নাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সম্পর্কে ইবনু আব্দিল বার (র.) বলেনঃ

‘‘তিনি তাঁর যুগের সর্বাপেক্ষা বড় ফকীহদের অন্যতম ছিলেন।’’[3]

আবূ রাফে‘ সায়িগ (র.) বলেনঃ

كنت إذا ذكرت امرأة فقيهة بالمدينة ذكرت زينب بنت أبي سلمة.

‘‘যখনই আমি ফিকহ্ শাস্ত্রে অভিজ্ঞ মদীনার কোনো মহিলার কথা স্মরণ করি, তখনই যায়নাব বিনতে আবূ সালামার কথা মনে পড়ে যায়।’’[4]

উম্মুল হাসান নামে উম্মে সালামার একজন দাসী ছিলেন। তিনি এতই যোগ্যতার অধিকারিণী ছিলেন যে, মেয়েদের মধ্যে নিয়মিত দ্বীনের প্রচার ও ওয়াজ নসীহত করতেন।’’[5]

উম্মূল মু’মিনীন সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সম্পর্কে ইমাম নববী (র.) বলেন:

كانت عاقلة من عقلاء النساء

‘‘তিনি ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানবতী ও বুদ্ধি বিবেচনার অধিকারিণী মহিলাদের একজন।’’[6]

আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর স্ত্রী উম্মুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর জ্ঞান ও মর্যাদা এত উচ্চ পর্যায়ের ছিল যে, ইমাম বুখারী (র.) তাঁর আমলকে সহীহ্ বুখারী গ্রন্থে প্রমাণ ও উদাহরণ হিসেবে পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন:

كانت أم الدرداء تجلس في صلاتها جلسة الرجل وكانت فقيهة

‘‘উম্মুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা একজন ফকীহ্ মহিলা ছিলেন। তিনি নামাযে পুরুষের মত করে বসতেন। তাঁর এই আমল দলীল হিসেবে গণ্য।’’[7]

‘‘তিনি বিবেক-বুদ্ধি, মর্যাদা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার অধিকারিণী মহিলাদের মধ্যে গণ্য হতেন। এছাড়া তিনি ছিলেন ইবাদতগুজার এবং মুত্তাকী।’’[8]

‘‘তাঁর জ্ঞান, বিবেক, বুদ্ধিমত্তা ও মর্যাদা সম্পর্কে সবাই একমত।’’[9]

ফাতিমা বিনতে কায়েস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারিণী ছিলেন। একটি ফিকহী মাসআলার ব্যাপারে তিনি দীর্ঘদিন পর্যন্ত উমর এবং আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর সাথে বিতর্ক চালিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা তাঁর মতের পরিবর্তন ঘটাতে পারেন নি। এ কারণেই মুসলিম উম্মাহ অনেক বড় বড় ইমাম তাঁর সিদ্ধান্তকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাঁর সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম নববী (র.) লিখেছেন,

كانت من المهاجرات الأول ذات عقل وافر وكمال.

‘‘তিনি প্রথম যুগে হিজরতকারিণীদের একজন। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও পূর্ণতার অধিকারিণী ছিলেন।’’[10]

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর মা উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ছিলেন অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন একজন মহিলা সাহাবী। হাফিয ইবনে হাজার (র.) তাঁর মর্যাদা সম্পর্কে বলেন,

‘‘তাঁর মর্যাদা এবং গুণাবলী অনেক এবং সর্বজনবিদিত।’’[11]

তাঁর সম্পর্কে ইমাম নববী (র.) বলেন:

كانت من فاضلات الصحابيات .

‘‘তিনি ছিলেন জ্ঞান ও মর্যাদার অধিকারিণী মহিলা সাহাবীদের একজন।’’[12]

উম্মে আতিয়্যাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন একজন মহিলা সাহাবী ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে ইমাম নববী (র.) লিখেছেন:

وهي من فاضلات الصحابيات والغازيات مع رسول الله صلى الله عليه وسلم.

‘‘তিনি উচ্চ মর্যাদা ও জ্ঞানের অধিকারিণী মহিলা সাহাবীদের একজন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জিহাদেও শরীক হয়েছেন।’’[13]

হাফসা বিনতে সিরীন উম্মে আতিয়্যা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর একজন ছাত্রী ছিলেন। বার বছর বয়সেই তিনি কুরআন মাজীদ শিক্ষা করেন। তিনি বসরার বাসিন্দা ছিলেন। বসরার বিখ্যাত কাযী ও ফকীহ্ ইয়াস ইবনু মু‘আবিয়া তাঁর সম্পর্কে বলেন,

ما أدركت أحدا أفضِّلُ على حفصة.

‘‘আমি এমন কোনো লোক দেখি নি, যাকে হাফসা বিনতে সিরীনের উপর মর্যাদা দিতে পারি।’’[14]

তাবিয়ীদের ইমাম সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব তাঁর এক ছাত্রের সাথে নিজের মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ের পরদিনই তিনি তার উস্তাদ ইমাম সাঈদের মজলিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন তাঁর স্ত্রী ইমাম সাঈদের কন্যা বললেন:

اجلس أعلمك علم سعيد.

‘‘আপনি বসুন। ইমাম সাঈদ আপনাকে যা শেখাবেন তা আমি আপনাকে শিখিয়ে দিব।’’[15]

ইমাম মালিক (র.)-এর নিকট তাঁর ছাত্ররা মুয়াত্তা অধ্যয়নকালে কোথাও কোনো ভুল করে ফেললে ইমাম সাহেবের কন্যা ঘরের ভেতর থেকে দরজায় করাঘাত করতেন। নিজের কন্যা সম্পর্কে ইমাম মালিক (র.)-এর এতটা আস্থা ছিল যে, দরজায় তাঁর করাঘাত শুনলেই তিনি ছাত্রদের বলতেন:

ارجع فالغلط معك.

‘‘তুমি আবার পড়। তোমার কোথাও ভুল হয়েছে।’’[16]

একবার আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একটি মাসআলা বর্ণনা করলেন। তখন উম্মে ইয়া‘কুব নাম্নী বানী আসাদ গোত্রের এক মহিলা তাঁর কাছে এসে বললেনঃ‘‘আমি পূর্ণ কুরআন পড়েছি। কিন্তু আপনি যে মাসআলা বর্ণনা করলেন তা কোথাও পাইনি।’’[17]

[1] হাফিজ যাহাবী, তাযকিরাতুল হুফ্‌ফায, প্রাগুক্ত, পৃ. ১০৬।

[2] ইবনে হাজার আল্-আসকালানী, আল্-ইসাবা ফী তামীযি্ সাহাবা, ৪র্থ খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৫৯।

[3] ইবনে আব্দিল বার, আল্ ইসতিয়াব ফী আসমাইল আসহাব, তাযকিরাত যায়নাব বিনতে আবূ সালামা, ৪র্থ খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৮৫৫।

[4] ইবনে সা‘দ, আত্-তাবাকাত, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৫০।

[5] ইবনে হাজার আল্-আসকালানী, আল্-ইসাবা, প্রাগুক্ত, ৩১৭।

[6] ইমাম নববী, তাহযীবুল আসমা ওয়াস্ সিফাত, ২য় খণ্ড, মিশরঃ ইদারাতুত্ তারআতিল মুনীরয়্যাহ্, তা. বি. পৃ. ৩৪৯।

[7] বুখারী, সহীহুল বুখারী, ১ম খণ্ড, কিতাবুল আযান, প্রাগুক্ত, পৃ. ১১৪।

[8] ইবন আব্দিল বার, আল ইসতিয়ার ফী আসমাইল আসহাব, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৯৫৫।

[9] ইমাম নববী, তাহযীবুল আসমা ওয়াস্ সিফাত, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৬০।

[10] প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৫৩।

[11] ইবনে হাজার আল্-আসকালানী, তাহযীবুত্ তাহযীব, ১২শ খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৭২।

[12] ইমাম নববী, তাহযীবুল আসমা ওয়াস্ সিফাত, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৬৩।

[13] প্রাগুক্ত, পৃ. ৩২৪।

[14] ইবনে হাজার আল্-আসকালানী, তাহযীবুত্ তাহযীব, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪০৯-৪১০।

[15] ইবনুল হাজ্জ, আল্-মাদখাল, ১ম খণ্ড, বৈরুতঃ দারুল ফিকর, তা. বি., পৃ. ২১৫।

[16] তদেব।

[17] মুসলিম, সহীহ্ মুসলিম, ৩য় খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬৭৮।

উমাইয়া যুগে নারী শিক্ষার প্রতি যথোপযুক্ত দৃষ্টি প্রদান করা হতো। মুসায়েব এর স্ত্রী আয়েশা বিনতে সালেহ জোতির্বিদ্যা ও আরবের ইতিহাস সম্পর্কে এতখানি জ্ঞান লাভ করেন যে, একবার হিশাম ইবনে আব্দুল মালিক তার জ্ঞানের গভীরতায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে এক লাখ দিরহাম পুরস্কার দিয়েছিলেন। তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী সাবিনা বিনতে হুসাইন কবিতা ও সাহিত্যের এক উঁচু দরের সমালোচক ছিলেন যে, ফারাযদাকের মত কবিও তাঁর প্রশংসা করেছিলেন। আব্দুল আযীয ইবনে মারওয়ানের কন্যা এবং ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিকের জ্ঞান প্রীতির কারণে তাঁদের বাড়িতে জ্ঞানী গুনী, কবি, সাহিত্যিক এবং ফকীহের আনাগোণা লেগেই থাকতো। আব্বাসীয় যুগের প্রথম দিকে নারীগণ সমাজে পুরুষের ন্যায় স্বাধীনতা ভোগ করতেন এবং রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে নারীদের প্রভূত প্রভাব ছিল। আবুল আব্বাস আস্ সাফফাহ এর স্ত্রী উম্মে সালমা, মাহদী মহিয়সী খায়জুরান, মাহদীর কন্যা উলাইয়া, হারুন-অর-রশীদের মহিয়সী জুবায়দা প্রমুখ নারী রাজকার্যে যথেষ্ট কর্তৃত্ব খাটাতেন। হারুনের মহিয়সী জুবায়দা উচ্চ গুণ সম্পন্না কবি ছিলেন। মামুনের মহিয়সী বুরান ছিলেন সে যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখিকা। আব্বাসীয় আমলে ছেলেমেয়েদের লালন-পালন ও শিক্ষা দানের দায়িত্ব জননীদের উপর ন্যস্ত ছিল। মহিলাগণ সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করতেন।[1]

>
[1] প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে