সকল প্রশংসার হকদার একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার ইবাদত করার জন্য এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ, তার পরিবার, তার সকল সাথী ও তাদের অনুসারীদের ওপর।

অতঃপর আমরা সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, অর্থাৎ ইবাদত বলতে যা বুঝায় তার হকদার আল্লাহ তা‘আলা, আমরা বিনা মাধ্যমে সকল ইবাদত তাকে সোপর্দ করব, এটাই তাওহীদ। আমরা আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নবী ও রাসূল, অর্থাৎ ইবাদতের অর্থ, সময়, পরিমাণ, পদ্ধতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি যাবতীয় বিষয় আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে গ্রহণ করব, এটাই রিসালাতকে মেনে নেওয়া।

আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার নির্দেশ প্রদান করে বলেন:

﴿أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّمَا عَلَيۡهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيۡكُم مَّا حُمِّلۡتُمۡۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهۡتَدُواْ﴾ [النور: ٥٤]

“তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর। তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে সে শুধু তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য দায়ী এবং তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী। আর যদি তোমরা তার আনুগত্য কর তবে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৪]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে তবে অস্বীকারকারী ব্যতীত, সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করেন অস্বীকারকারী কে? তিনি বলেন: যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সেই অস্বীকারকারী”।[1]

হজ ইসলামের পঞ্চম রুকন ও মহান এক ইবাদত। আমরা যদি আল্লাহর জন্য হজ সম্পাদন করি তাওহীদের দাবি পূরণ হবে, আর হজের যাবতীয় আমল যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মোতাবেক আঞ্জাম দেই রিসালতের দাবি পূরণ হবে। বিদায় হজে সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে হজ পালন করেন, তবুও কারো থেকে ভুল সংঘটিত হয়, কেউ সমস্যার সম্মুখীন হলে তার শরাণাপন্ন হন। তিনি তাদেরকে যে সংশোধনী ও সমাধান দিয়েছেন এখানে তাই আমরা অনুবাদ করে পেশ করছি, যা সংগ্রহ করেছেন সাঈদ ইবন আব্দুল কাদির বাশানফার “আল-মুগনি ফি ফিকহিল হাজ ওয়াল উমরাহ” গ্রন্থের শেষে।

কারো জন্য ফাতওয়ার অনুবাদ যথেষ্ট, কিন্তু এমন অনেক রয়েছে যাদের জন্য অনুবাদ যথেষ্ট নয়, তাই অস্পষ্ট কতক বিষয় স্পষ্ট করার জন্য টিকার সাহায্য গ্রহণ করেছি, যা থেকে পাঠকবর্গ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন, ইনশাআল্লাহ। প্রশ্নোত্তর আকারে হওয়ায় সহজবোধ্য এবং অনায়াসে স্মৃতিতে ধারণযোগ্য হবে অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাতওয়ার পর ইমামদের মাযহাব ও মতবাদ জানার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত কি-না সেটা যাচাই করা। ইমামগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করেই ইমাম হয়েছেন, ইমামগণকে সম্মান করব, কিন্তু তারা ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, তাদের বিশুদ্ধটা গ্রহণ করব ও ভুলটা ত্যাগ করব এটাই কুরআন ও সুন্নাহর নীতি ও নির্দেশ। কোনো মাযহাব বা ইমামের কথায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাতওয়া ও আদর্শকে ত্যাগ করা সুন্নাহর সাথে বিদ্রোহ করার শামিল, যার পরিণতি ভয়াবহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾ [النور: ٦٣]

“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩]

বর্তমান আমাদের বিপর্যয় ও ফেতনার কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধাচরণ করা। অতএব নির্দিষ্ট ইমাম ও মাযহাবকে আদর্শ না মেনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শ মানাই মুক্তির একমাত্র পথ। কারণ, প্রত্যেক ইমাম বা মাযহাব কোনো না কোনো ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ বিচ্যুত হয়েছে, মুসলিম জাতি সেই ভুল ও বিচ্যুতি আঁকড়ে ধরেই একাধিক দল ও মাযহাবে বিভক্ত। ইমামগণ তাদের ইখলাস ও ইজতিহাদ দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হলে দু’টি সাওয়াব পান, অন্যথায় একটি সাওয়াব লাভ করেন। আমাদের চেষ্টা হবে তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত মানা ও আদবের সাথে ভুলটা প্রত্যাখ্যান করা, তবে আমরা সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবো। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।অনুবাদক

>
[1] সহীহ বুখারী
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে