১. ২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য ও অনুসরণ করা

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা একের পর এক ধারাবাহিকভাবে তাঁর রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন, যাতে তাঁরা পথহারা মানুষদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে নিয়ে যেতে পারেন। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের অনুসরণ করাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ﴾ [النساء: ٦٤]

“আল্লাহর অনুমতিক্রমে কেবলমাত্র আনুগত্য করার জন্যই আমরা রাসূলদের প্রেরণ করেছি।”[1]

আর নবী-রাসূল প্রেরণের ধারাবহিকতায় নবীদের মাঝ থেকে আমাদের জন্য বরাদ্ধ হয়েছেন মুহাম্মাদ ইবন আবদিল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যেমনিভাবে উম্মাতগণের মধ্য থেকে আমরা হলাম তাঁর ভাগের উম্মাত; এই জন্য তাঁর আনুগত্য করা ছাড়া আর কোনো আনুগত্যই শুদ্ধ হবে না। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে আল-কুরআনুল কারীম অনেকভাবে বক্তব্য পেশ করেছে, যেগুলোকে সুস্পষ্ট আয়াত বলে গণ্য করা হয়:

(ক) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনার আবশ্যকতা নিয়ে বর্ণিত আয়াত:

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

فَ‍َٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِيِّ ٱلۡأُمِّيِّ ٱلَّذِي يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ

“কাজেই তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূল উম্মী নবীর প্রতি, যিনি আল্লাহ্ ও তাঁর বাণীসমূহে ঈমান রাখেন। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।”[2]

আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার বিষয়টির সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য ও অনুসরণ করার বিষয়টিকে; সুতরাং জানা গেল যে, ব্যক্তির সকল অবস্থায় এই শর্তটি পূরণ করা আবশ্যক।

(খ) যে আয়াত প্রমাণ করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা মানে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করা; কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা ছাড়া আল্লাহর আনুগত্য হয় না:

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ

“কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল।”[3]

(গ) যে আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করার নির্দেশের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার বিষয়টিকে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে:

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীলদের।”[4]

(ঘ) যেসব আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার বিষয়টিকে আল্লাহর বন্দাগণের জন্য তাঁর রহমত পাওয়ার উপলক্ষ্য বানিয়ে দেওয়া হয়েছে:

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ

“আর তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা কৃপা লাভ করতে পার।”[5] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন:

وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ

“আর তোমরা রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমাদের উপর রহম করা হয়।”[6]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُۗ

“আর তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; তারাই, যাদেরকে আল্লাহ্ অচিরেই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[7]

(ঙ) যে আয়াত হেদায়াতের বিষয়টিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার শর্তের সাথে সংযুক্ত করেছে:

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّمَا عَلَيۡهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيۡكُم مَّا حُمِّلۡتُمۡۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهۡتَدُواْۚ وَمَا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ ٥٤ ﴾ [النور: ٥٤]

“বলুন, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর।’ তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তিনিই দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী; আর তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, মূলত: রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।”[8]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের বিষয়টি তখনই প্রকৃত রূপে ফুটে উঠবে, যখন মুসলিম ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকে হুবহু প্রাধান্য দিবে; কেননা, সে নিশ্চিতভাবে জানে যে, আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মানব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত (তার জন্ম থেকে কবরে মাটি চাপা দেওয়া পর্যন্ত) ছোট ও বড় সকল বিষয়কে নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছে।

সুতরাং যে ব্যক্তি এই কাজটি করবে, সে যেন গুনাহ্ মাফ ও পাপ মোচনের সুসংবাদ গ্রহণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ

“বলুন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[9]

আর যখন একদল জিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শুনতে পায় এবং জানতে পারে যে, তাঁর অনুসরণ করা গুনাহ্ মাফের উপায়, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে ফিরে যায়। আল-কুরআনের ভাষায়:

يَٰقَوۡمَنَآ أَجِيبُواْ دَاعِيَ ٱللَّهِ وَءَامِنُواْ بِهِۦ يَغۡفِرۡ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمۡ وَيُجِرۡكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ

“হে আমাদের সম্প্রদায়! আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তাঁর উপর ঈমান আন, তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে তোমাদেরকে রক্ষা করবেন।”[10]

আর এই জন্যই খাঁটি মুমিনদেরকে দেখা যায়— তারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা ও মিনতি করে, যাতে তিনি তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন, পাপসমূহ মোচন করে দেন এবং সর্বোত্তমভাবে মৃত্যু তথা জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটান; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ رَّبَّنَآ إِنَّنَا سَمِعۡنَا مُنَادِيٗا يُنَادِي لِلۡإِيمَٰنِ أَنۡ ءَامِنُواْ بِرَبِّكُمۡ فَ‍َٔامَنَّاۚ رَبَّنَا فَٱغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرۡ عَنَّا سَيِّ‍َٔاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ ٱلۡأَبۡرَارِ ١٩٣ ﴾ [ال عمران: ١٩٣]

“হে আমাদের রব! আমরা এক আহ্বায়ককে ঈমানের দিকে আহ্বান করতে শুনেছি, ‘তোমরা তোমাদের রবের উপর ঈমান আন।’ কাজেই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব! আপনি আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করুন, আমাদের মন্দ কাজগুলো দূরীভূত করুন এবং আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের সহগামী করে মৃত্যু দিন।”[11]

আর এই ধরনের অসীলা করাটা শরী‘য়তসম্মত অসীলার এক প্রকার; কেননা, সে সৎকাজ দ্বারা অসীলা করেছে।অতএব, হে আমাদের রব! তোমার নবীর প্রতি আমাদের ভালবাসা এবং কথায় ও কাজে তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করার কারণে আপনি আমাদের অন্তরকে আপনার দীনের উপর অটল রাখুন; আর আপনি এক মুহূর্তের জন্যেও আমাদেরকে আমাদের নিজেদের দায়িত্বে ছেড়ে দিবেন না; আর আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক। অতএব কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।

>
[1] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৪

[2] সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৮

[3] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০

[4] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯

[5] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩২

[6] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৬

[7] সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৭১

[8] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৪

[9] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১

[10] সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ৩১

[11] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯৩