আমাদের বিষয় ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের বিষয়ের সাথে সম্পর্ক রাখে ঐ বিষয়টিও যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন:
«يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ: مُرُوا بِالْمَعْرُوفِ، وَانْهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَدْعُونِي فَلَا أُجِيبُكُمْ، وَتَسْأَلُونِي فَلَا أُعْطِيكُمْ، وَتَسْتَنْصِرُونِي، فَلَا أَنْصُرُكُمْ ».
“মহান আল্লাহ বলেন: হে মানবকুল, তোমরা আহ্বান করবে আর আমি তোমাদের আহ্বানে সাড়া দিবো না, তোমরা আমার কাছে চাইবে আমি তোমাদেরকে দিবো না, তোমরা আমার কাছে সাহায্য চাবে আর আমি তোমাদেরকে সাহায্য করবো না, তার আগেই তোমরা ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ কর।”[1]
হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসে অন্য শব্দে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ، وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ، أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْ عِنْدِهِ، ثُمَّ لَتَدْعُنَّهُ فَلَا يَسْتَجِيبُ لَكُمْ».
“শপথ তার যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা অবশ্যই ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ করবে, নতুবা আল্লাহ অবশ্যই তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর ‘আযাব প্রেরণ করবেন। অতঃপর তোমরা তাকে ডাকবে, কিন্তু তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন না।”[2]
সুতরাং ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ করা মহা গুরুত্বপূর্ণ কাজের অন্তর্ভুক্ত, যেমন পূর্বে তার আলোচনা অতিবাহিত হয়েছে। মুসনাদে ইমাম আহমাদ, আবু দাঊদ ও তিরমিযীতে আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ এর হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لَمَّا وَقَعَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ فِي المَعَاصِي فَنَهَتْهُمْ عُلَمَاؤُهُمْ فَلَمْ يَنْتَهُوا، فَجَالَسُوهُمْ فِي مَجَالِسِهِمْ وَوَاكَلُوهُمْ وَشَارَبُوهُمْ، فَضَرَبَ اللَّهُ قُلُوبَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ وَلَعَنَهُمْ ﴿عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُۥدَ وَعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَواْ وَّكَانُواْ يَعۡتَدُونَ﴾ [المائدة: ٧٨]».
“যখন বানী ইসরাঈল নাফরমানীতে বা আল্লাহ বিরোধী কাজে লিপ্ত হলো তখন তাদের আলিমগণ তাদেরকে বাধা দিলো, কিন্তু তারা তাদের বাধা মানলো না, তারপরও তারা তাদের সাথে চলাফেরা, খাওয়া দাওয়া ও পানাহার করতে থাকলো, আল্লাহ যখন তাদের মধ্যে এটি দেখলেন তখন তাদের পরস্পরের অন্তরে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিলেন, তারপর তাদের নবীগণ দাঊদ ও ঈসা ইবন মারইয়াম আলাইহিমাস সালামের ভাষায় তাদেরকে লা‘নত করলেন। কারণ, তারা নাফরমানী করেছিল ও সীমালঙ্গন করেছিল। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৬১][3]
এবং অন্য শব্দে বর্ণিত হয়েছে:
«إِنَّ أَوَّلَ مَا دَخَلَ النَّقْصُ عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ، كَانَ الرَّجُلُ يَلْقَى الرَّجُلَ، فَيَقُولُ: يَا هَذَا، اتَّقِ اللَّهَ وَدَعْ مَا تَصْنَعُ، فَإِنَّهُ لَا يَحِلُّ لَكَ، ثُمَّ يَلْقَاهُ مِنَ الْغَدِ، فَلَا يَمْنَعُهُ ذَلِكَ أَنْ يَكُونَ أَكِيلَهُ وَشَرِيبَهُ وَقَعِيدَهُ، فَلَمَّا فَعَلُوا ذَلِكَ ضَرَبَ اللَّهُ قُلُوبَ بَعْضِهِمْ بِبَعْضٍ ثم لعنهم».
“নিশ্চয় প্রথম যখন বনী ইসরাঈলের মাঝে ত্রুটি প্রবেশ করেছিল তখন এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করলে বলতো: হে অমুক! আল্লাহকে ভয় কর, আর যে অন্যায় করছো তা ছেড়ে দাও, তারপর সে যখন তার সাথে আবার সাক্ষাত করতো তখন তার মাঝে যে অন্যায় দেখেছিল তা তাকে তার খাওয়ার, পান করার ও বসার সাথী হওয়া হতে বাধা প্রদান করতো না। আল্লাহ যখন তাদের মধ্যে এটি দেখলেন তখন তাদের পরস্পরের অন্তরে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে দিলেন এবং তাদেরকে লা‘নত করলেন।”[4]
তাই আমাদের সতর্ক থাকা দরকার, যাতে যে বিপদ তাদের পৌঁছেছিল তা যেন আমাদের কাছে না পৌঁছে।
তাছাড়া কিছু হাদীসে এসেছে, নিশ্চয়ই এ ওয়াজিবটি পরিত্যাগ করা এবং এর (অর্থাৎ ন্যায় আদেশ ও অন্যায় নিষেধের ওয়াজিবটির) গুরুত্ব না দেওয়া দো‘আ গ্রহণ না হওয়া ও সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ; যেমন পূর্বে সেটার বর্ণনা অতিবাহিত হয়ে গেছে। নিঃসন্দেহে এটি মহাবিপদ। এ ওয়াজিবটি ছেড়ে দেওয়ার শাস্তিসমূহ হলো: মুসলিমদের অপমাণ হওয়া, তাদের দলে দলে বিভক্ত হওয়া, তাদের ওপর তাদের শত্রুদের বিজয়ী হওয়া ও তাদের দো‘আ গ্রহণ না হওয়া। আল্লাহর শক্তি ছাড়া কোনো শক্তি নেই আর তাঁর ওপর ভরসা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
>[2] মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৩৩০১।
[3] তিরমিযী, হাদীস নং ৩০৪৭।
[4] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৩৬।