তারা হলো ইয়াহূদী ও খৃষ্টান সম্প্রদায়, তারা কাফির, তা সত্ত্বেও আল্লাহ তাদের ব্যাপারে বলেন:
﴿وَلَا تُجَٰدِلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ إِلَّا بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ إِلَّا ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنۡهُمۡۖ ﴾ [العنكبوت: ٤٦]
“তোমরা কেবল উত্তম পন্থার মাধ্যমেই আহলে কিতাবদের সাথে তর্ক কর। তবে তাদের মধ্যে যারা যালিম অত্যাচারি তাদের সাথে উত্তম পন্থা ছাড়াও তর্ক করতে পার।” [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৪৬]
“তাদের মধ্যে যারা যুলম করবে, সীমালঙ্ঘন করবে ও মন্দ কথা বলবে তাদের সাথে উত্তম পন্থা ছাড়া অন্য চিকিৎসা বা অন্য পন্থা ব্যবহার করবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ وَجَزَٰٓؤُاْ سَيِّئَةٖ سَيِّئَةٞ مِّثۡلُهَاۖ﴾ [الشورى: ٤٠]
“আর মন্দের প্রতিদান অনুরূপ মন্দই হয়ে থাকে।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৪০]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন:
﴿فَمَنِ ٱعۡتَدَىٰ عَلَيۡكُمۡ فَٱعۡتَدُواْ عَلَيۡهِ بِمِثۡلِ مَا ٱعۡتَدَىٰ عَلَيۡكُمۡۚ﴾ [البقرة: ١٩٤]
“যে তোমাদের ওপর যুলুম করবে তোমরাও তার ওপর যুলুম কর সে পরিমাণ, যে পরিমাণ তোমাদের ওপর যুলুম করেছে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৯৪]
তবে ক্ষেত্র যেহেতু শিক্ষা, আহ্বান ও সত্য প্রকাশের ক্ষেত্র, তাই উত্তম পন্থাতেই হওয়া ভালো। কারণ, এটি কল্যাণের নিকটবর্তী।
সুফইয়ান আস সাওরী রহ. বলেছেন: ন্যায়ের আদেশকারী ও অন্যায়ের নিষেধকারীর জন্য সে যে ব্যাপারে আহ্বান করবে ও যা হতে নিষেধ করবে সে ব্যাপারে নম্র ভদ্র কোমল হওয়া উচিত, যে ব্যাপারে সে আহ্বান করবে ও যা থেকে সে নিষেধ করবে সে ব্যাপারে তাকে ন্যায়পরায়ণ হওয়া উচিৎ ও যে ব্যাপারে সে আহ্বান করবে ও যা হতে সে নিষেধ করবে সে ব্যাপারে তাকে জ্ঞানী হওয়া উচিত।
আর এটিই সালাফ রহ.-র কথার অর্থ যে, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও সম্যক জ্ঞানসহ নম্রতা ইখতিয়ার করা। শুধু ইলম-জ্ঞান দ্বারাই ন্যায়ের আদেশ দিবে ও অন্যায়ের নিষেধ করবে মুর্খতার দ্বারা নয়। এটিসহ সে যার দিকে (মানুষকে) আহ্বান করবে তার প্রতি নম্র ও আমলকারী আর যা থেকে (মানুষকে) নিষেধ করবে তা বর্জনকারী হবে; যাতে তার অনুসরণ করা যায়।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَا مِنْ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلَّا كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ، وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ، ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ، وَيَفْعَلُونَ مَا لَا يُؤْمَرُونَ، فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الْإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ».
“আমার পূর্বে যে উম্মাতের কাছেই আল্লাহ নবী পাঠিয়েছিলেন তারই নিজ উম্মাতের মধ্য হতে সাহায্যকারী ও সাথী ছিল যারা তার সুন্নতকে গ্রহণ করতো ও তার আদেশের অনুসরণ করতো। আর তাদের (নবীদের) পর অনেক উত্তরসূরীদের জন্ম হবে তারা যা করবে না তা বলবে, যার আদেশ দিবে তা করবে না। সুতরাং যে তাদের বিরুদ্ধে হাত দিয়ে জিহাদ করবে সে মুমিন, আর যে তাদের বিরুদ্ধে মুখ দিয়ে জিহাদ করবে সেও মুমিন এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে অন্তর দিয়ে জিহাদ করবে সেও মুমিন তবে এর পর ঈমানের আর কোনো অংশ নেই।”[1]
এ হাদীসটি পূর্বে বর্ণিত আবু সা‘ঈদের হাদীসের মতো, যার মাঝে (অন্যায়কে) হাত, মুখ ও অন্তর দিয়ে অস্বীকার করার কথা রয়েছে। সুতরাং অসৎ উত্তরসূরী যারা নবীগণের পর জন্ম নিবে এটি তাদের বিধান তাদের উম্মাতের মাঝে, (তাদেরকে) ন্যায়ের আদেশ দেওয়া হবে, অন্যায় থেকে নিষেধ করা হবে, আল্লাহর বিধান শিক্ষা দেওয়া হবে এবং এ ব্যাপারে তাদের সাথে জিহাদ করা হবে, হাত, মুখ ও অন্তর এর মাধ্যমে।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মাতের মাঝেও অনুরূপ আলিম, শাসক নির্ধারিত গোষ্ঠী ও ফকিহদের ওপর ওয়াজিব যে, তারা জনগণের কাছে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দান, ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ, মুর্খদেরকে শিক্ষা দান পথভ্রষ্টদেরকে দিকনির্দেশনা, হদ ও শর‘ঈ শাস্তি প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালাবে, যাতে মানুষ ঠিক হয়ে যায় ও হককে গ্রহণ করে এবং তাদের ওপর শর‘ঈ হদ (শাস্তি) প্রতিষ্ঠা করবে আর আল্লাহ যা হারাম করেছেন তাতে পতিত হওয়া হতে বাধা দিবে, যাতে তাদের কিছু সংখ্যক লোক অপর কিছু সংখ্যক লোকের ওপর যুলম না করে, আরো যাতে আল্লাহর সম্মান নষ্ট না করে।
আল-খালীফাতুর রাশেদ উসমান ইবন আফফান থেকে প্রমাণিত, তিনি বলেছেন:
«إن الله ليزع بالسلطان مالا يزع بالقرآن»
“নিশ্চয় আল্লাহ শাসক দ্বারা এমন কিছু বাধা প্রদান করেন তা কুরআন দ্বারা হয় না।” আর তা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও বর্ণিত হয়েছে। আর এটা সত্য যে, অনেক মানুষ আছে, আপনি যদি তার নিকট (কুরআনের) সবটি আয়াতসহ উপস্থিত হন তাও সে তা পালন করবে না, কিন্তু যখন তার কাছে শাসকের পক্ষ থেকে মারপিট, বন্দি ও অনুরূপ শাস্তি নিয়ে বাধা উপস্থিত হয় তখন সে তার অনুগত হয় এবং বাতিলকে ছেড়ে দেয়। (এটা) কেন? কারণ, তার অন্তর অসুস্থ্য। আরো কারণ হলো যে, সে দুর্বল ঈমানের অধিকারী বা তার মাঝে ঈমানই নাই। এ জন্যই সে আয়াত ও হাদীসসমূহের দ্বারা প্রভাবিত হয় না। কিন্তু যখন তাকে শাসকের ভয় দেখানো হয় তখন সে কেঁপে উঠে ও নিজ সীমায় দাঁড়িয়ে যায়। তাই শাসকের বাধা প্রদানকারীর এক বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। আল্লাহ এ জন্যেই তাঁর বান্দাদের জন্য কিসাস, হুদূদ ও শাস্তির বিধান প্রবর্তন করেছেন; কারণ এটি তাদেরকে বাতিল ও সকল প্রকার যুলুম থেকে বিরত রাখবে। কারণ, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা হক প্রতিষ্ঠা করবেন। তাই শাসকদের ওপর ওয়াজিব এটিকে প্রতিষ্ঠা করা, (তাদের ওপর আরো ওয়াজিব হলো) যারা এটিকে প্রতিষ্ঠা করবে তাদেরকে সাহায্য করা, লোকদের প্রতি লক্ষ্য রাখা, তাদের ওপর হক্বের প্রতি আমল করাকে বাধ্য করে দেওয়া, তাদেরকে তাদের সীমানায় রুখে রাখা; যাতে তারা ধ্বংস না হয়ে যায়, বাতিলের স্রোতের সাথে যেন তারা ভেসে না যায় এবং তারা যেন আমাদের বিরুদ্ধে শয়তান ও তার সৈন্যদের সাহায্যকারী না হয়ে যায়।
তৃতীয় স্তর:
মুমিন ব্যক্তি যখন (অন্যায়কে) হাত ও মুখ দিয়ে বাধা দিতে অপারগ হবে তখন সে অন্তর দিয়ে বাধা দেওয়ার দিকে অগ্রসর হবে। অন্যায়কে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে ও তার সাথে বিদ্বেষ রাখবে, আর অন্যায়কারীদের সঙ্গী-সাথী হবে না। আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, কিছু লোক তাঁকে বলেছিল:
«هَلَكْتُ إِنْ لَمْ آمُرْ بِالْمَعْرُوفِ , وَلَمْ أَنْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ , فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ: «هَلَكْتَ إِنْ لَمْ يَعْرِفْ قَلْبُكَ الْمَعْرُوفَ , وَيُنْكِرِ الْمُنْكَرَ».
“আমি যদি ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ না করি তবে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো, তখন আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বলেছিলেন যে, তোমার অন্তর যদি ন্যায় জানতে না পারে অন্যায়কে অস্বীকার না করে তবে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।”[2]
>[2] ইবন ওয়াদ্দাহ, হাদীস নং ২৭১।