আল্লাহ সুবহানাহু বর্ণনা করেছেন যে, ন্যায়ের আদেশকারী ও অন্যায়ের নিষেধকারী, সালাত প্রতিষ্ঠাকারী, যাকাত আদায়কারী, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যকারী এরাই দয়া পাওয়ার হক্বদার। যেমন, আল্লাহ বলেছেন:
﴿أُوْلَٰٓئِكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُۗ ﴾ [التوبة: ٧١]
“এদের উপরই আল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি দয়া করবেন।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৭১]
এটি প্রমাণ করে যে, শুধু আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর শারী‘আতের অনুসরণের দ্বারাই রহমাত-দয়া অর্জন করা যায়। আর এর মধ্যে অন্যতম হলো ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ।
আশা আকাঙ্খা, নসবনামা-বংশ মর্যাদা যেমন কুরাইশ বা বনী হাশিম ও অমুক বংশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দ্বারা, পদসমূহ দ্বারা যেমন রাজা হওয়া বা প্রজাতন্ত্রের প্রধান হওয়া বা মন্ত্রী হওয়া বা এ ছাড়া আরো অন্যান্য পদের দ্বারাও রহমত-দয়া অর্জন করা যায় না। মালামাল ব্যবসা-বাণিজ্য অধিক কারখানা থাকা, এ ছাড়া মানুষের অন্যান্য কর্মের দ্বারাও রহমত-দয়া অর্জন করা যায় না। শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য এবং তাঁর শারী‘আতের অনুসরণের মাধ্যমেই দয়া অর্জন করা যায়।
আর এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো ন্যায়ের আদেশ দেওয়া ও অন্যায়ের নিষেধ করা, সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা এবং প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করা। সুতরাং এরাই দয়া পাবার হকদার এবং প্রকৃতপক্ষে এরাই আল্লাহর দয়ার প্রত্যাশী এবং এরাই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁকে কদর ও সম্মান করে। সুতরাং সে কত বড় যালিম যে তাঁর আদেশ মানে না এবং তাঁর নিষেধে পতিত হয় যদিও সে দাবি করে যে, সে তাঁকে ভয় পায় ও তাঁর দয়ার আশা করে। আর যে শুধু তাঁর আদেশ প্রতিষ্ঠা করে, তাঁর শরী‘আতের অনুসরণ করে, তাঁর রাস্তায় জিহাদ করে এবং ন্যায়ের আদেশ করে ও অন্যায়ের নিষেধ করে সেই সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে সম্মান করে, তাঁকে ভয় পায় ও তাঁর দয়ার প্রত্যাশা করে। যেমন, আল্লাহ বলেছেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَٱلَّذِينَ هَاجَرُواْ وَجَٰهَدُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أُوْلَٰٓئِكَ يَرۡجُونَ رَحۡمَتَ ٱللَّهِۚ﴾ [البقرة: ٢١٨]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, যারা হিজরত করেছে এবং যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে এরাই আল্লাহর রাহমাতের আশা করে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১৮]
অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে তাঁর রহমতের প্রত্যাশী বানিয়েছেন যখন তারা ঈমান এনেছে, জিহাদ করেছে ও হিজরত করেছে তাদের ঈমান, হিজরত ও জিহাদ করার কারণে, তিনি বলেন নি যে, নিশ্চয় যারা প্রাসাদ তৈরি করেছে বা যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য মহত্ব বা বেশি হয়েছে বা যাদের কর্ম ভিন্ন ভিন্ন হয়েছে বা যাদের বংশ মর্যাদা উচূঁ হয়েছে তারাই আল্লাহর রহমত পাবে, বরং তিনি বলেছেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَٱلَّذِينَ هَاجَرُواْ وَجَٰهَدُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أُوْلَٰٓئِكَ يَرۡجُونَ رَحۡمَتَ ٱللَّهِۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٢١٨﴾ [البقرة: ٢١٨]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, যারা হিজরত করেছে এবং যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে এরাই আল্লাহর রাহমাতের আশা করে, আর আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১৮]
সুতরাং দয়ার প্রত্যাশা ও ‘আযাবের ভয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের মাধ্যমে হয়। ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ আল্লাহর আনুগত্যের অন্তর্ভুক্ত।