আল্লাহ তা‘আলা অপর এক আয়াতে সফলতা লাভের বিষয়টিকে কল্যাণের দিকে আহ্বানকারী, ন্যায়ের আদেশকারী ও অন্যায়ের নিষেধকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছেন। যেমন, তিনি বলেছেন:
﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤﴾ [ال عمران: ١٠٤]
“তোমাদের মধ্যে একটি দল হোক যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, ন্যায়ের আদেশ দিবে ও অন্যায়ের নিষেধ করবে এবং তারাই সফল। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪]
আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যারাই নিম্নের গুণে গুণাম্বিত: যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করে, ন্যায়ের আদেশ দেয় ও অন্যায়ের নিষেধ করে, এরাই সফল। এর অর্থ হলো এরাই পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ কামিয়াব ও সফল, যদিও এদের ছাড়া মুমিনদের অন্যরাও সফল ইসলামী ওযর থাকার কারণে এ গুণের কোনো একটি গুণ না থাকলেও। কিন্তু পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গরূপে তারাই সফল যারা কল্যাণের দিকে (মানুষকে) আহ্বান করে, ন্যায়ের আদেশ করে ও দ্রুত তা পালন করে এবং অন্যায়ের নিষেধ করে ও তা থেকে বিরত থাকে।
তবে যারা ন্যায়ের আদেশ করবে ও অন্যায়ের নিষেধ করবে অন্য উদ্দেশ্যেসমূহের কারণে, যেমন লোক দেখানোর জন্যে, লোক শুনানোর জন্যে বা পার্থিব কোনো স্বার্থ অর্জনের জন্যে বা আরো অন্যান্য কারণে ন্যায় সম্পাদন করা থেকে বিরত থাকবে ও অন্যায় সম্পাদন করবে, পরিণামে তারা সবচেয়ে জঘন্য ও খারাপ লোক। যেমন সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, উসামা ইবন যায়েদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন:
«يؤتى بِالرَّجُلِ يَوْمَ القِيَامَةِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ، فَتَنْدَلِقُ أَقْتَابُهُ فِي النَّارِ، فَيَدُورُ كَمَا يَدُورُ الحِمَارُ بِرَحَاهُ، فَيَجْتَمِعُ أَهْلُ النَّارِ عَلَيْهِ فَيَقُولُونَ: أَيْ فُلاَنُ مَا شَأْنُكَ؟ أَلَيْسَ كُنْتَ تَأْمُرُنَا بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَانَا عَنِ المُنْكَرِ؟ قَالَ: كُنْتُ آمُرُكُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَلاَ آتِيهِ، وَأَنْهَاكُمْ عَنِ المُنْكَرِ وَآتِيهِ»
“কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, ফলে তার পেটের নাড়ী-ভুঁড়ি ঝুলে যাবে এবং সে জাহান্নামে পেষণযন্ত্রের চার পাশে গাঁধা ঘুরার মত ঘুরতে থাকবে, আর জাহান্নামবাসীরা তার কাছে জমা হবে, তারা (তাকে) বলবে, হে অমুক! তোমার কী হয়েছে? তুমি কি ন্যায়ের আদেশ দিতে না ও অন্যায়ের নিষেধ করতে না? বর্ণনাকারী বলেন: সে তাদেরকে বলবে: হ্যাঁ আমি তোমাদেরকে ন্যায়ের আদেশ দিতাম, কিন্তু আমি নিজে পালন করতাম না। আর আমি অন্যায়ের নিষেধ করতাম, কিন্তু নিজে অন্যায় করতাম।”
এটি তার অবস্থা যার কথা তার কাজের বিপরীত হবে। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই! তার দ্বারা জাহান্নাম প্রজ্জলিত করা হবে, আর সকল সৃষ্টিজীবের সামনে তাকে অপমান করা হবে, জাহান্নামীরা তার দিকে তাকাবে ও আশ্চর্য হবে ও বলবে কিভাবে একে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে? সে জাহান্নামে পেষণযন্ত্রের চার পাশে গাঁধা ঘুরার মত ঘুরতে থাকবে, তার পেটের নাড়ী-ভূঁড়ি ঝুলে যাবে, সে তা টানতে থাকবে, (এটি) কেন? কারণ সে ন্যায়ের আদেশ করতো, কিন্তু সে তা পালন করতো না এবং অন্যায়ের নিষেধ করতো, কিন্তু সে নিজে অন্যায় করতো।
সুতরাং এর দ্বারা বুঝা গেল যে, ন্যায় সম্পাদন সহ তার আদেশ করা আর অন্যায় বর্জনসহ তা থেকে (মানুষকে) নিষেধ করাই আয়াত ও হাদীসের ভাষ্যের উদ্দেশ্য। আর এটিই সকল মুসলিমের ওপর ওয়াজিব। এ মহা ওয়াজিবের বিষয়টিকেই আল্লাহ তাঁর কুরআনে কারীমে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন, তা পালনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন, তা বর্জন করা হতে সতর্ক করেছেন, আর তা পরিত্যাগকারীকে লা‘নত করেছেন। সুতরাং সকল মুসলিমের ওপর রবের আনুগত্য, তাঁর আদেশ পালন ও তাঁর শাস্তি হতে সতর্কতা অবলম্বনার্থে এর কদর করা, একে দ্রুত বাস্তবায়ন করা এবং একে নিজেদের জন্যে অপরিহার্য মনে করা ওয়াজিব।