তারপর আসা যাক আমাদের পিতা-মাতার কথায়। আমাদের পিতামাতা হচ্ছে সন্তানদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক। ছোটকাল থেকে তারা সন্তানদের যে ধরণের শিক্ষা দেন সন্তানরা সেই শিক্ষাতেই বড় হয়ে ওঠে। সন্তানকে আদর্শ ও চরিত্রবান করতে গেলে মা-বাবাদের সেই ধরণের শিক্ষা দিতে হয়। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই একজন ছেলে/মেয়েকে নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ করতে পারে না। এজন্য পরিবারের বাবা-মায়ের ভূমিকা ব্যাপক এবং বাবা মায়েদের উচিত সন্তানকে ভালো লেখা পড়ার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়া। সে কোথায় যায়, কোনো বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করে এসব বিষয়ে আগ্রহ সহকারে খোঁজখবর নিতে হবে। মনে সবচেয়ে বড় কষ্ট পাই যখন দেখি, S.S.C এবং H.S.C তে A+ পাওয়া ছেলে পেলেগুলো পাড়ার মোড়ে সিগারেট ফুঁকছে কিংবা গার্লস স্কুলের সামনে অসহায়ভাবে দাড়িয়ে থাকছে এবং নানা রকম অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। তাই বাবা মাকে এইসব ব্যাপারে জরুরী ভূমিকা পালন করতে হবে।

পাশাপাশি বাসায় ইসলামী শিক্ষাদান করতে হবে কারণ মানুষের নৈতিক চরিত্র বিকাশের ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই। ‘তুমি ভালো রেজাল্ট করলেই তার সাত খুন মাফ’ অথবা ‘আমার দরকার ভালো রেজাল্ট, তারপর তুমি যা খুশী তাই কর আমার কোনো আপত্তি নেই’ সন্তানদের প্রতি এ ধরণের মনোভাব আজকাল পিতামাতার মধ্যে বেশী দেখা যাচ্ছে এ ধরনের মন মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। কোনটা সঠিক পথ আর কোনটা ভুল পথ সেটা স্পষ্ট করে সন্তানদের বোঝাতে হবে। কিন্তু বর্তমানে কিছু বাবা-মায়ের হয়ত ধারণা জন্মেছে সন্তান ভালো করে লেখাপড়া করলে, ভালো রেজাল্ট করলেই সে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু এই ধরণের ধারণা শুধু অমূলক নয় রীতিমত ভয়ংকরও বটে। আমার করুণা হয় ঐসব অভিভাবকদের প্রতি যারা তাদের মেয়েদের ওড়না ছাড়া টি-শার্ট, জিনসের প্যান্ট পরে বাইরে বের হতে দেয়। অবশ্য তাদের বাবা মাও যদি অমন চরিত্রের হয় তাহলে বলার কিছু থাকে না। কারণ, সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দিব কোথা। অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানদের উগ্র পোশাক পরতে দেয় তাহলে তাদেরকেই পস্তাতে হবে। আরব্য কবির একটি উক্তি মনে পড়ে যায়, তা হল- ‘ইন্নাকা লা-তাজনি মিনাশ শাওকিল ইনাব’ তুমি কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ থেকে কখনো আঙ্গুর ফল পাবে না। সারা দেশ নয়, শুধু ঢাকা শহরেই লাখ লাখ মা-বাবা রয়েছেন যারা তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।

অভিভাবকদের করনীয়

১- সালাতের তাকীদ দেয়া:-

অভিভাবকদের অবশ্যই তার সন্তানদের সালাতে যত্নবান হতে শেখাতে হবে। কারণ, সালাত মানুষকে ভালো হতে শেখায় খারাব বা মন্দ হতে বারণ করে। তবে এর জন্য জরুরী হলো মাতা-পিতা/অভিভাবক নিজেও সালাতে অভ্যস্ত হতে হবে। আর যদি তারা নিজেরাও সালাত আদায়কারী বা সালাতে যত্নবান না হন, তবে আমাদের আর বলার কিছুই থাকে না। কারণ, সর্ব জায়গায় ক্ষত মলম দিব কত। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে সালাত আদায়ের নির্দেশ দাও আর যখন তারা দশ বছর বয়সে পৌঁছে যাবে, তখন তোমরা তাদের সালাত আদায় না করার উপর প্রহার কর।”[1]

২-সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা:- সন্তানদের অবশ্যই ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও শিক্ষার পরিবেশ ইত্যাদি অবশ্যই বিবেচ্য। আপনার ছেলে কি নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে কিনা, কোন ধরনের শিক্ষকের নিকট থেকে সে শিক্ষা অর্জন করছে তার চরিত্র কি? আপনি যে স্কুল বা মাদ্রাসায় আপনার ছেলে পাঠাচ্ছেন সেখানকার পরিবেশ কি তা অবশ্যই আপনাকে বিবেচনায় আনতে হবে। আর যদি আপনি শুধু সার্টিফিকেট নির্ভর পড়া লেখায় বিশ্বাসী হয়ে থাকেন তাহলে তো কোনো কথাই না। মনে রাখবেন, কু-শিক্ষার চেয়ে অ-শিক্ষা ভালো। যে শিক্ষা একজন মানুষকে চরিত্রবান করে গড়ে তুলে না, যে শিক্ষা একজন মানুষকে মানবতা শেখায় না, সে শিক্ষাই কু-শিক্ষা। গুরুজনকে কিভাবে শ্রদ্ধা করতে হয় তার তালীম দেওয়া এবং সে ব্যাপারে তাদের উৎসাহ দেয়া সুশিক্ষা হিসেবে বিবেচ্য।

>
[1] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯৫।