সব প্রশংসা আল্লাহর, আমরা তাঁর প্রশংসা করছি, তারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি, তাঁর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি, তাঁর কাছে তাওবা করছি। তাঁর কাছে আমাদের অন্তরের সব কলুষ ও সব পাপ কাজ থেকে পানাহ চাই। তিনি যাকে হিদায়াত দান করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না, আর তিনি যাকে পথ-ভ্রষ্ট করেন কেউ তাকে হিদায়াত দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন, যাতে তা সব দ্বীনের উপর বিজয় লাভ করে। তিনি তাঁর রিসালাহ (দাওয়াত) পৌঁছে দিয়েছেন, আমানত আদায় করেছেন, উম্মতকে উপদেশ দিয়েছেন, আল্লাহর পথে যথাযথ প্রচেষ্টা করেছেন। তাঁর উম্মতকে সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণের উপর রেখে গেছেন, যার দিবারাত্রি সমানভাবে উজ্জল, একমাত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত ছাড়া কেউ সে পথ থেকে সরে যায় না। তাই আল্লাহর সালাত ও সালাম তাঁর উপর, তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীগণ ও কিয়ামত পর্যন্ত একনিষ্ঠার সাথে যারা তাঁর অনুসরণ করবে সকলের উপর বর্ষিত হোক। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাকে ও আপনাদেরকে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব কাজে তাঁর অনুসারী করেন, তিনি যেন তাঁর নবী (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) দলের অন্তর্ভুক্ত করে আমাদেরকে মৃত্যু দান করেন, তাঁর উম্মতের কাতারে যেন হাশরের দিনে একত্রিত করেন, তাঁর শাফায়াতের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তিনি যেন আমাদেরকে চিরস্থায়ী জান্নাতে তাঁর সাথে ও সে সব নবী রাসূল, সিদ্দিকীন, শুহাদা ও সালেহীন বান্দাদের সাথে একত্রিত করেন যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

এখানে (বাদশা আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়, জেদ্দায়) আমার মুসলিম ভাই ও বোনদের সাথে মিলিত হতে পেরে আমি গৌরবান্বিত ও আনন্দবোধ করছি। এ দ্বীনের প্রচার কাজে আশা করছি অন্য স্থানেও আপনাদের সাথে মিলিত হবো। কেননা আল্লাহ তা‘আলা আলেমদের থেকে অঙ্গিকার নিয়েছেন যে, তাদেরকে যে ইলম দান করেছেন তা তারা মানুষের কাছে প্রচার করবে এবং তা গোপন করবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَإِذۡ أَخَذَ ٱللَّهُ مِيثَٰقَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ لَتُبَيِّنُنَّهُۥ لِلنَّاسِ وَلَا تَكۡتُمُونَهُۥ فَنَبَذُوهُ وَرَآءَ ظُهُورِهِمۡ وَٱشۡتَرَوۡاْ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلٗاۖ فَبِئۡسَ مَا يَشۡتَرُونَ ١٨٧ ﴾ [ال عمران: ١٨٧]

“আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ কিতাবপ্রাপ্তদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, ‘অবশ্যই তোমরা তা মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে এবং তা গোপন করবে না’। কিন্তু তারা তা তাদের পেছনে ফেলে দেয় এবং তা বিক্রি করে তুচ্ছ মূল্যে। অতএব তারা যা ক্রয় করে, তা কতইনা মন্দ!” [আলে ইমরান: ১৮৭]

আল্লাহর নেয়া এ অঙ্গিকার লিখিত ও মানুষের দৃশ্যমান কোন চুক্তিনামা নয়, বরং এটা এমন অঙ্গিকার যা আল্লাহ ঐ ব্যক্তি থেকে নিয়েছেন যাকে তিনি ইলম দান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা এ অঙ্গিকার নারী পুরুষ সকলের কাছ থেকেই নিয়েছেন। সুতরাং যার কাছে আল্লাহর শরী‘য়াতের ইলম আছে তাকে সে ইলম অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, সেটা যে স্থানেই হোক বা যে উপলক্ষ্যেই হোক।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা:

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো: “মহান আল্লাহ তা‘আলার পথের দা‘য়ীর পাথেয়”।

প্রত্যেক মুসলমানের পাথেয় হলো যা আল্লাহ কুরআনে বর্ণনা করেছেন তা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيۡرَ ٱلزَّادِ ٱلتَّقۡوَىٰۖ ١٩٧ ﴾ [البقرة: ١٩٧]

“এবং সম্বল গ্রহণ কর। নিশ্চয় উত্তম সম্বল হল তাকওয়া।” [সূরা আল-বাকারা: ১৯৭]

অতঃএব, প্রত্যেক মুসলমানের সম্বল হলো আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করা। এ তাকওয়া, তাকওয়া অবলম্বনকারীর প্রশংসা এবং সাওয়াবের কথা আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বার বার বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ ۞وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي ٱلسَّرَّآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٣٤ وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةً أَوۡ ظَلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ ذَكَرُواْ ٱللَّهَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ لِذُنُوبِهِمۡ وَمَن يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمۡ يُصِرُّواْ عَلَىٰ مَا فَعَلُواْ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ١٣٥ أُوْلَٰٓئِكَ جَزَآؤُهُم مَّغۡفِرَةٞ مِّن رَّبِّهِمۡ وَجَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَنِعۡمَ أَجۡرُ ٱلۡعَٰمِلِينَ ١٣٦ ﴾ [ال عمران: ١٣٣، ١٣٦]

“আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে ? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না। এরাই তারা, যাদের প্রতিদান তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতসমূহ যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর আমলকারীদের প্রতিদান কতই না উত্তম!” [আলে ইমরান: ১৩৩-১৩৬]

সম্মানিত ভাই ও বোনেরা:

আপনারা হয়ত বলবেন তাকওয়া কি?

জবাবে বলব: ত্বলক ইবন হাবীব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “তাকওয়া হলো আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী সাওয়াবের প্রত্যাশায় তাঁর অনুগত্যের কাজ করা”। এ বাক্যে তাকওয়া বলতে ইলম, আমল, সাওয়াব ও শাস্তির ভয়কে একত্রিত করা হয়েছে।

আমরা সকলেই জানি যে, মহান আল্লাহ তা‘আলার পথের দা‘য়ীদের প্রকাশ্য ও গোপনে তাকওয়ার এ গুণ অবলম্বন করা খুবই প্রয়োজন। আমি এখানে আল্লাহ তা‘আলার পথের দা‘য়ীদের আল্লাহর সাহায্য পাওয়া ও তাদের যে সব সম্বল সংগ্রহ করা উচিত সেসব বিষয়ে আলোচনা করব।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে