হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
«يا ابن آدم، مرضت فلم تعدني»
হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে আসনি[1]। -আল হাদীস।
হাদীসটি ‘সদাচার, সম্পর্ক রক্ষা ও শিষ্টাচার’ অধ্যায়ের আওতাধীন রোগী দেখার ফজীলত অধ্যায়ে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
(আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন বলবেন: হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে আসনি। সে বলবে: হে আমার রব, আমি কীভাবে আপনাকে দেখতে যাব, আপনি তো রাব্বুল আলামীন? তিনি বলবেন: তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, কিন্তু তুমি তো তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে দেখতে যেতে তবে আমাকে তার কাছেই পেতে? হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে আমার রব, আমি আপনাকে কীভাবে খাওয়াব, আপনি তো সৃষ্টিকুলের রব? তিনি বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে খাবার দিতে তবে তা আমার কাছে পেতে? হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করতে দাওনি। সে বলল: হে আমার রব, আমি আপনাকে কীভাবে পানি পান করাব, আপনি তো রাব্বুল আলামীন? তিনি বলবেন: আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পানি পান করাওনি, তুমি যদি তাকে পানি পান করাতে তবে তা আমার কাছে পেতে?)
উত্তর:
এর উত্তর হলো, সালাফগণ নিজেদের খেয়ালখুশি মোতাবেক হাদীসটির অর্থে বিকৃতি সাধন না করেই হাদীসটিকে গ্রহণ করেছেন। সালাফগণ এ হাদীসটির ঠিক সে ব্যাখ্যাই দিয়েছেন যে ব্যাখ্যা হাদীসটির যিনি বক্তা তিনি দিয়েছেন। অতএব, ‘আমি অসুস্থ হয়েছিলাম’, ‘তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম’, আমি তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিলাম’, এ কথাগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল’, ‘যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল’, ‘আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিল’। অর্থাৎ বিষয়টি খুবই স্পষ্ট যে, এখানে উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদের মধ্যে কোনো বান্দার অসুস্থ হয়ে পড়া, আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদের মধ্যে কোনো বান্দার খাবার চাওয়া, আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদের মধ্যে কোনো বান্দার পানি পান করতে চাওয়া। আর এ ব্যাখ্যা যিনি দিয়েছেন তিনি খোদ ওই সত্তা যিনি এ কথাগুলো বলেছেন এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। অতএব আমরা যদি এখানে অসুস্থ হওয়া, খাবার চাওয়া, পানি পান করতে চাওয়া- যা আল্লাহর দিকে নিসবত করে উল্লেখ করা হয়েছে- তার ব্যাখ্যায় যদি বলি যে, এখানে মূলত, বান্দার অসুস্থতা, খাবার চাওয়া ও পানি পান করতে চাওয়াকে বুঝানো হয়েছে, তবে এতে বাণীর যে বাহ্যিক অর্থ তা থেকে সরে যাওয়া হবে না; কারণ যিনি এ বাণীগুলো বলেছেন, তিনি নিজে এসবের ব্যাখ্যা এভাবেই দিয়েছেন। যেমন নাকি তিনি শুরুতেই কথাগুলো এভাবেই বলেছেন। হ্যাঁ, আল্লাহ তা‘আলা নিজের দিকে সম্পৃক্ত করে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন মানুষকে আগ্রাহান্বিত ও উৎসাহিত করার উদ্দেশে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা এক আয়াতে বলেন:
﴿ مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ ﴾ [البقرة: ٢٤٥]
কে আছে, যে অল্লাহকে ঋণ দেবে? (সূরা আল বাকারা: ২: ২৪৫)
অতএব উক্ত হাদীসটি তাবিলপন্থীদের বিরুদ্ধে একটি বড় প্রমাণ; কেননা তাবিলপন্থীরা আল্লাহ তা‘আলার সিফাত সংবলিত বক্তব্যগুলোকে, কুরআন-সুন্নাহর কোনো প্রমাণ ব্যতীতই, বাহ্যিক অর্থ থেকে সরিয়ে নেয়। তারা কিছু অমূলক যুক্তি দাঁড় করিয়ে তাহরীফ তথা অর্থবিকৃতির আশ্রয় নেয়। কেননা সেসব বক্তব্যের উদ্দেশ্য বাহ্যিকভাবে যা বুঝা যায় তা না হয়ে যদি অন্যকোনো উদ্দেশ্য হতো - অর্থাৎ তারা যেভাবে দাবি করে সেভাবে হতো- তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা অথবা তাঁর রাসূল তা বর্ণনা করতেন। যদি সেসব বক্তব্যের বাহ্যিক অর্থ আল্লাহর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ হতো - যেমন তারা ধারণা করেছে -তবে নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা এবং তার রাসূল তা বর্ণনা করতেন যেভাবে উক্ত হাদীসে বর্ণনা করেছেন। যদি এসব বক্তব্যের বাহ্যিক অর্থ আল্লাহর জন্য উপযোগীভাবে নেওয়া আল্লাহর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ হতো, তাহলে বলতে হবে যে, কুরআন ও সুন্নাহয় আল্লাহ তা‘আলা এমন সব অগণিত গুণে নিজেকে গুনান্বিত করেছেন যা তাঁর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ। আর এটি কখনো সম্ভব হতে পারে না।
উল্লিখিত উদাহরণগুলোর মাধ্যমেই আমার বক্তব্য শেষ করতে চাই এ আশায় যে তা অন্যান্য ক্ষেত্রে পথনির্দেশিকার কাজ করবে। অন্যথায়, এক্ষেত্রে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের নীতি সুস্পষ্ট। অর্থাৎ সিফাত-বিষয়ক আয়াত ও হাদীসসমূহকে তার বাহ্যিক অর্থেই বহন করা, কোনো বিকৃতিসাধন, বাতিলকরণ, ধরনধারণ নির্ণয়করণ এবং উদাহরণ নির্ণয়করণ ব্যতীতই। সিফাত-বিষয়ক বক্তব্য সংক্রান্ত নীতিমালাসমূহে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব।
>