প্রিয় পাঠক! জেনে রাখুন যে, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে থাকার ব্যাপারে ওপরে যে কথা বললাম সে জাতীয় কথা আমি আমার কিছু ছাত্রকে উদ্দেশ্য করে এক মজলিসে বলেছিলাম। আমি বলেছিলাম যে: আমাদের আকীদা হলো, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক বান্দার সঙ্গে থাকার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার শানের জন্য উপযোগী কায়দায় সত্ত্বাগতভাবে প্রকৃত অর্থেই। আর এর দাবি হলো, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইলম, কুদরত, শ্রবণ, দর্শন, আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ দ্বারা সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। তিনি তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে থাকা থেকে পবিত্র। অথবা তারা যে স্থলে আছে সে স্থলে অবস্থান করা থেকেও তিনি পবিত্র। বরং আল্লাহ তা‘আলা হলেন তাঁর সত্তা ও গুণাবলিতে সর্বোচ্চ। তাঁর সর্বোচ্চতা তাঁর সত্তাগত গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত, যা কখনো তাঁর সত্তা থেকে আলাদা হয় না। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরশের ওপরে আছেন তাঁর শানের জন্য যেভাবে উপযোগী সেভাবে। আর এটা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তাঁর সৃষ্টির ‘সঙ্গে থাকা’র সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। কেননা,
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [الشورى: ١١]
‘আল্লাহ তা‘আলার মতো কোনো জিনিস নেই। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (আশ্-শূরা: ১১)
ওপরে আমি বলেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক বান্দার সঙ্গে থাকার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার শানের জন্য উপযোগী কায়দায় ‘সত্ত্বাগতভাবে ’প্রকৃত অর্থেই। এখানে ‘সত্তাগতভাবে’ বলার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘সঙ্গে থাকা’র প্রকৃত অর্থের প্রতি জোর দেওয়া।
আমি আমার কথা দ্বারা এটা বুঝাতে চাইনি যে, আল্লাহ তা‘আলা জমিনের ওপর তার সৃষ্টির সঙ্গে আছেন। এটা আমি কীভাবে বলতে পারি, আমি তো আমার ওই লেখাতেই বলেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে মিশ্রিত হওয়া থেকে পবিত্র। অথবা তাদের জায়গায় অবস্থান করা থেকে পবিত্র। আর আল্লাহ তা‘আলা তার সত্তা ও গুণাবলিতে সর্বোচ্চ এবং তাঁর সর্বোচ্চতা তাঁর সত্তাগত একটি গুণ, যা আল্লাহ থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হয় না। আমি সে লেখায় এটাও বলেছি যে: ‘আমরা মনে করি, যে ব্যক্তি ধারণা করবে আল্লাহ তা‘আলা সত্তাগতভাবে সকল জায়গায় বিরাজমান সে কাফের অথবা পথভ্রষ্ট, যদি এটা তার আকীদা হয়ে থাকে। আর যদি সে এ ধারণাকে সালাফ অথবা ইমামদের কারও সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তবে সে মিথ্যাবাদী।’
আর জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি, যে নাকি যথার্থরূপে আল্লাহ তা‘আলাকে কদর করে, তার পক্ষে এটা বলা সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা জমিনে তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে রয়েছেন। আমি আমার সকল বৈঠকে, অতীতে যেমনি বর্তমানেও তেমনি, এ কথাটি অস্বীকার করে আসছি। দো‘আ করি, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এবং আমার সকল মুসলিম ভাইকে দুনিয়া ও আখিরাতে সত্য-সঠিক কথার ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন।
আমি এ ব্যাপারে, পরবর্তীতে রিয়াদ থেকে ছাপা আদ-দাওয়া পত্রিকায় (সংখ্যা ৯১১, তারিখ ৪ মুহাররাম, ১৪০৪ হি.) একটি প্রবন্ধ লিখেছি যেখানে ইমাম ইবনে তাইমিয়া যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন সেটিকেই তাগিদ করে বলেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে থাকা সত্য এবং প্রকৃত অর্থেই এবং তা হুলুল এবং সৃষ্টির সঙ্গে মিশে থাকাকে দাবি করে না। আমি এখানে ‘সত্তাগতভাবে’ শব্দটিকে বাদ দেওয়া জরুরি মনে করেছি। আল্লাহ তা‘আলার ঊর্ধ্বাবস্থান এবং সৃষ্টির সঙ্গে থাকা, এ দুটি কীভাবে আমরা একত্র করব তা আমি সেখানে বর্ণনা করেছি।
জেনে রাখুন যে প্রত্যেক এমন শব্দ যা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক জমিনে অবস্থান অথবা সৃষ্টির সঙ্গে সংমিশ্রণকে আবশ্যক করে অথবা আল্লাহ তা‘আলার সর্বোচ্চ অবস্থানকে নাকচ করে দেয় অথবা আরশের ওপরে থাকাকে নাকচ করে দেয়, অথবা এমন কোনো বিষয়কে আবশ্যক করে যা আল্লাহ তা‘আলার জন্য উপযোগী নয়, তবে এমন শব্দ বাতিল বলে পরিগণিত হবে। এমন শব্দ যে উচ্চারণ করবে তাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে, সে যেই হোক না কেন এবং যেকোনো শব্দ দিয়েই সে তা প্রকাশ করে থাক না কেন।
আর প্রত্যেক এমন শব্দ যার দ্বারা এমন ধারণা সৃষ্টি হতে পারে যা আল্লাহর জন্য উপযোগী নয় - হোক তা সীমিত কিছু মানুষের কাছে - তবে তা বর্জন করা জরুরি। যাতে আল্লাহর ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করার সুযোগ না আসে। তবে আল্লাহ তা‘আলা নিজের জন্য তাঁর কিতাবে যা সাব্যস্ত করেছেন, অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানে যা সাব্যস্ত করেছেন, তা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা ওয়াজিব এবং যেসব ধারণা আল্লাহর জন্য উপযোগী নয় সেসব ধারণাও বাতিল করে দেওয়া ওয়াজিব।