রাসূলের ইত্তেবার বাস্তবায়নের শর্তসমূহ

হে মুসলিম ভাইয়েরা! একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা তোমাদের অবশ্যই জানতে হবে। আর তা হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আমল শরী‘আতের ছয়টি বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে আমলের মধ্যে রাসূলের অনুকরণ ও অনুসরণ করা বাস্তবায়িত হবে না।

এক- “কারণে মিল থাকা” সুতরাং আল্লাহর ইবাদাত যদি এমন কোনো কারণে করা হয় যে কারণটি শরী‘আত অনুমোদিত নয়। এ ধরনের ইবাদাত হবে বিদ‘আত এবং তার আমলটি হবে প্রত্যাখ্যাত। যেমন, কতক লোক রজবের সাতাশ তারিখ রাতে ইবাদাত-বন্দেগী ও সালাত আদায় করে। তাদের দলীল হলো: এ রাতে আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলকে আসমানে তুলে নিয়ে যান এবং এ রাতে রাসূলের মি‘রাজ সংঘটিত হয়। তাহাজ্জুদ যদিও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত কিন্তু যখন তা এ কারণের সাথে সম্পৃক্ত হলো তখনই তা শরী‘আত অনুমোদিত না হয়ে বিদ‘আতে পরিণত হলো। কারণ, এ ইবাদতটিকে এমন একটি উপলক্ষকে সামনে রেখে সে করেছে, যা শরী‘আতে উপলক্ষ্য হিসেবে প্রমাণিত নয়। এ বিষয়টি (ইবাদতের কারণটি শরী‘আত সম্মত হওয়া) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দ্বারা অনেক আমল যেগুলোকে সুন্নাত মনে করা হয় অথচ তা সুন্নাত নয় সেগুলো বিদ‘আত হিসেবে চিহ্নিত হবে।

দুই- “প্রকারের দিকে থেকে মিল থাকা” সুতরাং ইবাদাতটি প্রকারের দিক থেকে শরী‘আত অনুযায়ী হতে হবে। তাই যদি কোনো লোক আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় এমন কোনো ইবাদাত করে শরীয়তে যে প্রকারের ইবাদাত পাওয়া যায় না, তা অগ্রহণযোগ্য হবে। যেমন,

কোনো ব্যক্তি ঘোড়া দিয়ে কুরবানী করলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। কারণ, সে কুরবানীর পশুর প্রকার নির্ধারণ বিষয়ে শরী‘আতের বিরোধিতা করেছে। শরী‘আত অনুমোদিত চতুষ্পদ জন্তু গরু, ছাগল ও উট সে কুরবানী করে নি।

তিন- “পরিমাণে মিল থাকা”। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি চায় যে, কোনো এক ওয়াক্ত ফরয সালাত বাড়াবে আমরা তাকে বলব, এটি একটি নব আবিষ্কৃত বিদ‘আত, এটি অগ্রহণযোগ্য। কারণ, তা পরিমাণের ক্ষেত্রে শরী‘আতের নির্ধারিত সংখ্যার সম্পূর্ণ বিরোধী। যদি বিষয়টি এমনই হয় তাহলে যদি কোনো ব্যক্তি যোহরের সালাত চার রাকা‘আতের জায়গায় পাঁচ রাকা‘আত পড়ে তাহলে তার সালাত সবার ঐকমত্যে বাতিল হওয়া, তার সালাত শুদ্ধ না হওয়া সহজেই অনুমেয়।

চার- “ধরন-পদ্ধতিতে মিল থাকা”। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি অযু করতে গিয়ে শুরুতে পা ধোয়া আরম্ভ করল, তারপর মাথা মাসেহ করল, তারপর দুই হাত ধৌত করল এবং তারপর চেহারা ধৌত করল, আমরা বলব, তার অযু অবশ্যই বাতিল। কারণ, তার অযু ধরন ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে শরী‘আত অনুমোদিত পদ্ধতির পরিপন্থী।

পাঁচ- “সময়-কালের সাথে মিল থাকা”। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি যিলহজ মাসের শুরুতে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী শুদ্ধ হবে না। কারণ, তার কুরবানী শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের বিপরীত হয়েছে। আমি শুনেছি অনেক মানুষ রমযান মাসে ছাগল জবেহ করে। জবেহ করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করাই তার উদ্দেশ্য। কিন্তু তার এ আমল এ পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ বিদ‘আত। কারণ, জবেহ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ কেবল কুরবানী, হাদী বা আকীকার মাধ্যমেই সম্ভব। তাই রমযান মাসে জবেহ করা দ্বারা কুরবানীর ঈদের দিন জবেহ করার মত ছাওয়াব পাওয়া যাবে এ ধরনের বিশ্বাস করা বা সাওয়াবের আশা রাখা সম্পূর্ণ বিদ‘আত। তবে মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে রমযান মাসে জবেহ করা সম্পূর্ণ বৈধ।

ছয়- “স্থানের সাথে মিল থাকা”। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি মসজিদের বাইরে ই‘তিকাফ করে, তার ই‘তিকাফ সহীহ হবে না। কারণ, ই‘তিকাফ শুধু মসজিদেই হয়ে থাকে। যদি কোনো মহিলা বলে আমি ঘরে সালাত আদায়ের স্থানে ই‘তিকাফ করব, তার ই‘তিকাফ শুদ্ধ হবে না। কারণ, ই‘তিকাফের স্থানের নির্ধারণের ক্ষেত্রে শরী‘আত পরিপন্থী কাজ করেছে।

এর আরও দৃষ্টান্ত- কোনো ব্যক্তি তাওয়াফ করতে গিয়ে দেখে মাতাফে জায়গা নেই। তার আশপাশে মানুষের ভিড়। তখন সে নিরুপায় হয়ে মসজিদের চার পাশে তাওয়াফ করা আরম্ভ করল। তার তাওয়াফ করা কোনো ক্রমেই শুদ্ধ হবে না। কারণ, তাওয়াফের স্থান হলো আল্লাহর ঘর। আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে বলেন,

﴿وَطَهِّرۡ بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡقَآئِمِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ٢٦﴾ [الحج : ٢٦]

“এবং আমার ঘরকে পাক সাফ রাখবে তাওয়াফকারী, রুকূ-সিজদা ও দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীর জন্য’’।[1]

>
[1] সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ২৬