যাকাতের পঞ্চম হকদার:
গোলাম মুক্ত করা: আরবি رقاب শব্দটি বহুবচন, একবচন رقبة যার অর্থ দাস-দাসী। আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী "وفي الرقاب" দ্বারা উদ্দেশ্য দাস-দাসীকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করা। আয়াতের উদ্দেশ্য দাস-দাসীকে সম্পদ দেওয়া নয়, বরং তাদেরকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করা উদ্দেশ্য। এই খাত নিম্নের বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন,
১. চুক্তিবদ্ধ দাস-দাসী: যেসব দাস-দাসী নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কিস্তি হিসেবে পরিশোধ করার শর্তে নিজেদেরকে তাদের মনিব থেকে খরিদ করে নিয়েছে, তাদের কিস্তি পরিশোধ করার জন্য যাকাত দিয়ে সাহায্য করা বৈধ। যাকাতের অর্থ তাদেরকে অথবা তাদের পক্ষ থেকে মনিবকে সরাসরি দেওয়া বৈধ। তাদের জানা জরুরি নয়, দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়াই যথেষ্ট।
২. দাস-দাসী খরিদ করে মুক্ত করা وفي الرقاب এর অন্তর্ভুক্ত।
৩. বিশুদ্ধ মত মোতাবেক মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করার জন্য যাকাত থেকে ব্যয় করা যাবে, যারা শত্রুদের হাতে বন্দী। কারণ, দাস মুক্ত করার জন্য যদি যাকাত বৈধ হয়, মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করার জন্য যাকাত বৈধ হবে বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, তাদের মুসিবত বড়।
যাকাতের ষষ্ঠ হকদার:
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি: আরবী غارمون বহুবচন, একবচন হচ্ছে غارم অর্থাৎ ঋণগ্রস্ত মুসলিম। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি দু’প্রকার:
এক. মানুষের মাঝে সুসম্পর্ক পুণঃপ্রতিষ্ঠার জন্য খরচ করে যিনি ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। যেমন কেউ বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ঝগড়া বিবাদের মীমাংসার জন্য নিজের জিম্মাদারীতে কিছু সম্পদের দায়িত্ব গ্রহণ করে যাতে সম্পদ প্রদান করতে হয়। যেমন এক পক্ষকে কিছু টাকা দিয়ে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়া। অথবা যদি এমন কোনো নগদ টাকা ব্যয় করে খাবারের আয়োজন করে যাতে উভয় বিবদমান পক্ষকে নিমন্ত্রণ করে তাদের মাঝে মীমাংসা করার ব্যবস্থা করা হয়। অথবা উভয় বিবদমান গোষ্ঠীর জন্য হাদীয়া ক্রয় ও তা প্রদানের মাধ্যমে সম্প্রীতির ব্যবস্থা করে দেওয়া। সুতরাং যারা এ কাজ করার জন্য ঋণ করবে তারা ধনী হলেও তাদেরকে যাকাতের সম্পদ দেওয়া যাবে এ কাজকে যথাযথভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য।
দুই. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি: অর্থাৎ যে নিজের প্রয়োজনে ঋণ করেছে, যেমন অভাব অথবা চিকিৎসা অথবা পোশাক-পরিচ্ছদ অথবা বিবাহ অথবা ঘরের আসবাব-পত্র কেনার জন্য ঋণ করেছে, (পুরনো ফার্নিচার নতুন করার জন্য ঋণ করলে এই খাতের অন্তর্ভুক্ত হবে না)। অনুরূপ যার সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে সেও এই খাতের অন্তর্ভুক্ত, যেমন অগ্নিকাণ্ড অথবা জলোচ্ছ্বাস অথবা মাটিতে ধসে যাওয়া ইত্যাদি। এই খাতের জন্য কয়েকটি শর্ত:
১. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ঋণ পরিশোধ করতে সামর্থ্য নয়, যদিও তার নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনীয় সম্পদ তার রয়েছে। অথবা তার ব্যবসা রয়েছে, যার উপার্জন দিয়ে তার ও পরিবারের খরচ মিটে, কিন্তু জরুরি প্রয়োজন শেষে ঋণ পরিশোধ করার কোনও অর্থ থাকে না, এরূপ ব্যক্তিদের ঋণ যাকাতের অর্থ থেকে পরিশোধ করা বৈধ। যদি সে ঋণের একাংশ পরিশোধ করতে সক্ষম হয় অবশিষ্টাংশ ঋণ পরিশোধ করার জন্য তাকে যাকাত দিবে।
২. বৈধ কাজে ঋণীরাই যাকাতের হকদার, যে পাপের কাজে ঋণী হবে সে যাকাত পাবে না। যদি সে তওবা করে এবং সত্যিকার তাওবার আলামত তার ভেতর স্পষ্ট হয়, তবে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। অনুরূপ কেউ যদি বৈধ কাজে ইসরাফ করে অর্থাৎ প্রয়োজনের বেশি খরচ করে ঋণগ্রস্ত হয় তাকেও যাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ ٣١﴾ [الأعراف: 31]
“খাও এবং পান কর, তবে অপচয় কর না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]
জ্ঞাতব্য যে, ঋণের টাকা ঋণগ্রস্ত অথবা পাওনাদার যাকেই দিবে যাকাত আদায় হবে। যদি আশঙ্কা হয়, ঋণগ্রস্ত ঋণ পরিশোধ না করে যাকাতের টাকা নষ্ট করে ফেলবে, তাহলে সরাসরি পাওনাদারকে দেওয়াই উত্তম।