যাকাতের সপ্তম হকদার:

ফী সাবীল্লিাহ বা আল্লাহর রাস্তার যাত্রীগণ: আল্লাহর রাস্তা দ্বারা উদ্দেশ্য জিহাদ। অতএব, মুজাহিদ ও মুজাহিদদের অস্ত্র-শস্ত্রের জন্য যাকাত খরচ করবে, যদিও তারা ধনী হয়। অতএব, গোলাবারুদ ও অস্ত্র-শস্ত্র খরিদ করা, যুদ্ধের বিমান ঘাটি তৈরি করা, শত্রুদের সন্ধান দাতার বেতন ইত্যাদি এই খাতের অন্তর্ভুক্ত। এটি শাফেঈ, মালেকী ও হাম্বলীদের মাযহাব, তবে শাফেঈ ও হাম্বলীগণ শর্ত করেছেন: মুজাহিদদের স্বেচ্ছাসেবক হওয়া জরুরি, অর্থাৎ যাদের জন্য সরকারি বেতন-ভাতা বরাদ্দ নেই। আর হানাফীরা في سبيل الله এর ক্ষেত্রে অনেক ব্যাপকতা আরোপ করেছে, তাদের নিকট কল্যাণকর প্রত্যেক খাতে যাকাত ব্যবহার করা বৈধ, তাদের মাযহাবটি খুব দুর্বল। অধিকাংশ আলিমের মাযহাব-ই বিশুদ্ধ।

আরেকটি প্রসঙ্গ: ইবন উমার ও ইবন আব্বাস এবং ইমাম আহমদ, হাসান, ইসহাক ও শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া প্রমুখগণ বলেন: হজ এই খাতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, হজ আল্লাহর রাস্তায় এক প্রকার জিহাদ, যেমন হাদীসে প্রমাণিত:

«أفضلَ الجهاد حَجٌّ مبرور».

“সর্বোত্তম জিহাদ মাবরুর হজ”।[1]

ইবন তাইমিয়াহ রহ. বলেছেন: “যে ব্যক্তি ইসলামের ফরয হজ করে নি অভাবের কারণে, তাকে হজ করার পরিমাণ যাকাত দেওয়া বৈধ”।

‘ফি সাবিলিল্লাহ’ যেহেতু বিশুদ্ধ মতে কেবল আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকেই বুঝায়, সেহেতু মসজিদ তৈরি, রাস্তা সংস্কার ও কিতাব ছাপানোর জন্য যাকাত খরচ করা বৈধ নয়, বরং তার জন্য অন্যান্য খাত থেকে খরচ করবে, যেমন ওয়াকফ, হেবা, ওসিয়ত ও সদকা ইত্যাদি।

যাকাতের অষ্টম হকদার:

ইবনুস সাবিল বা মুসাফির: ইবনুস সাবিল অর্থ মুসাফির, অর্থাৎ যার রাহ খরচ নেই। রাহ খরচ হারিয়ে গেছে অথবা ফুরিয়ে গেছে অথবা কোনও বিপদের কারণে তার অর্থ প্রয়োজন। এরূপ ব্যক্তিকে সফর পূর্ণ করে দেশে ফিরার জন্য যাকাত দেওয়া বৈধ, যদিও সে নিজ দেশে ধনী।

নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষণীয়:

১. যাকাতের হকদার হওয়ার জন্য মুসাফিরের সফর শর‘ঈ অথবা বৈধ হওয়া জরুরি, যদি পাপের সফর হয়, যাকাতের হকদার হবে না, যদি তাওবা করে অবশিষ্ট সফরের জন্য প্রয়োজন মোতাবেক তাকে যাকাত দেওয়া বৈধ। কারণ, তাওবা ঘোষণার পর থেকে তার সফর বৈধ।

২. সফরের ইচ্ছা পোষণকারীকে যাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে কি না, আহলে ইলমগণ দ্বিমত পোষণ করেছেন। যেমন, কেউ কাজের সন্ধানে অথবা বৈধ কারণে সফর করতে চায়, কিন্তু তার অর্থ নেই। শাফে‘ঈ মতাবলম্বীরা বলেন তাকে যাকাত দেওয়া বৈধ, অন্যান্য আলিমগণ বলেন: তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না, কারণ ‘ইবনে সাবিল’ বা মুসাফির ভিনদেশী ব্যতীত কাউকে বুঝায় না। এটি বিশুদ্ধ মত। এখানে একটি কথা বলা যায়, ফকীর ও মিসকীনদের অংশ থেকে তাকে যাকাত দেওয়া বৈধ, যদি সে গরীব হয়, যা যাকাতের একটি খাত।

৩. বিশুদ্ধ মতে ইবন সাবিল বা মুসাফিরকে যদি ঋণ দেওয়ার মতো লোক থাকে, তবুও তাকে যাকাত দেওয়া বৈধ, তার জন্যও যাকাত নেওয়া বৈধ, যদি আগেই ঋণ নিয়ে নেয়, যাকাত নিয়ে সে তার ঋণ পরিশোধ করবে।

জরুরি জ্ঞাতব্য:

যেসব মুসলিম অত্যাচারী শাসকের ভয় বা কোনও কারণে নিজ দেশ থেকে অপর দেশে শরণার্থী হয়, তাদেরকে যাকাত দিয়ে সাহায্য করা জরুরি, যদি তাদের প্রয়োজন হয়। তারা ফকীর-মিসকিন বা ইবন সাবিল বা ঋণগ্রস্ত ইত্যাদি খাতের অন্তর্ভুক্ত।

">
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫২০।