আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা মেহমানদারিতে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কিয়ামত অবধি তাদের মেহমানদারির দৃষ্টান্ত কেউ উপস্থাপন করতে পারবে না। তারা শুধু মেহমানদারিই করেন নি, একজন ভাই তার অপর ভাইয়ের জন্য জীবনকে উৎসর্গ কোনো প্রকার কুণ্ঠাবোধ করেন নি। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদীসটি তাদের মেহমানদারির একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أن رجلا أتى النبى صلى الله عليه وسلم فبعث إلى نسائه، فقلن: ما عندنا إلا الماء ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من يضم (أو يضيف) هذا ؟ فقال رجل من الأنصار : أنا ، فانطلق به إلى إمرأته فقال : أكرمى ضيف رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت: ما عندنا إلا قوت الصبيان، فقال : هيئ طعامك، فأصلحت سراجها، ونومت صبيانها، ثم قامت كأنها تصلح سراجها فأطفأته، وجعلا يريانه أنهما يأكلان، وباتا طاويين فلما أصبح غدا إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : لقد عجب الله من صنيعكما بضيفكما الليلة، وأنزل الله تعالى ﴿وَيُؤۡثِرُونَ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ وَلَوۡ كَانَ بِهِمۡ خَصَاصَةٞۚ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ﴾ [الحشر: ٩]».
“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসলে আল্লাহর রাসূল তার স্ত্রীদের নিকট তার আগমনের খবর পাঠালে, তারা বললেন, আমাদের নিকট শুধু পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা কে আছ লোকটিকে সাথে নিয়ে যাবে বা মেহমানদারি করবে? তখন একজন আনসারী সাহাবী বলল, আমি প্রস্তুত। সাহাবী লোকটিকে বাড়ীতে নিয়ে স্ত্রীকে বলল, আল্লাহর রাসূলের মেহমানের মেহমানদারি কর। স্ত্রী বলল, আমাদের ঘরে কেবল বাচ্চাদের খাওয়ার ছাড়া আর কোনো খাওয়ার নেই। সাহাবী বলল, তুমি খাওয়ার প্রস্তুত কর। স্ত্রী বাতি জ্বালাল এবং বাচ্চাদের ঘুম বানিয়ে দিল। তারা বাতি নিভিয়ে দিয়ে ঠিক করার ভান করল এবং তারা দুইজন খাওয়ারের অভিনয় করল, যাতে মেহমান মনে করে তারাও খাচ্ছে। তারা দুইজন না খেয়ে রাত যাপন করল। সকাল বেলা যখন তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, গত রাতে তোমরা দুইজন মেহমানের সাথে যে ব্যবহার দেখিয়েছ, তাতে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের দুই জনের কর্মে খুশি হয়ে গেছেন। অতঃপর এ আয়াত নাযিল করেন,
﴿وَيُؤۡثِرُونَ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ وَلَوۡ كَانَ بِهِمۡ خَصَاصَةٞۚ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ﴾ [الحشر: ٩]
“এবং অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৯][1]
মুহাম্মাদ ইবন সীরিন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ أَهْلُ الصُّفَّةِ إِذَا أَمْسَوُا انْطَلَقَ الرَّجُلُ بِالرَّجُلِ، وَالرَّجُلُ بِالرَّجُلَيْنِ، وَالرَّجُلُ بِالْخَمْسَةِ، فَأَمَّا سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ فَإِنَّهُ كَانَ يَنْطَلِقُ بِثَمَانِينَ كُلَّ لَيْلَةٍ »
“যখন রাত হত, সুফ্ফাবাসীদের মেহমানদারি করার উদ্দেশ্যে সাহাবীগণ বাড়ি নিয়ে যেত। কেউ দু’জন কেউ তিনজন আবার কেউ পাঁচজন সাতজন করে নিয়ে যেত। আর সা‘আদ ইবন উবাদাহ প্রতি রাতে আশিজন লোককে মেহমানদারির উদ্দেশ্যে বাড়ি নিয়ে যেত”।[2]
শাকীক আল-বালখী রহ. বলেন, আমার নিকট মেহমানের চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোনো কিছুই নেই। কারণ, তার ব্যয়ের ভার আল্লাহর ওপর আর প্রশংসা আমার।
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমার নিকট আমার ভাইদেরকে ভালো খাওয়ারের দস্তরখানে একত্র করা কোনো গোলামকে মুক্ত করা হতেও উত্তম। সাহাবীগণ আরও বলতেন, খাওয়ারের উদ্দেশ্যে একত্র হওয়া উত্তম চরিত্র।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,
«أَحَبُّ الطَّعَامِ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مَا كَثُرَتْ عَلَيْهِ الْأَيْدِي»
“সবচেয়ে প্রিয় খাবার আল্লাহর নিকট ঐ খাবার যে খাবারে হাতের সংখ্যা বেশি”।[3] মনে রাখবে, খাবার দ্বারা উদ্দেশ্য শুধু খাওয়া বা পেট ভরা নয়। বরং উদ্দেশ্য হলো খাবারের দস্তরখানে একাধিক মানুষ একত্র হওয়া দ্বারা তাদের পরস্পরের মধ্যে মহব্বত ও ভালোবাসা লাভ হওয়া। যেমন, ইসলামী শরী‘য়াহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে গিয়ে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জামা‘আতে সালাত আদায়কে অধিক সাওয়াব বলে ঘোষণা দিয়েছেন, যাতে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও মহব্বত সৃষ্টি হয়। সুতরাং খাবারের মজলিস বা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া দ্বারাও একে অপরের থেকে ইসলামী শিষ্টাচারগুলো জানা ও অবলোকন সুযোগ হয় এবং একে অপর সম্পর্কে জানার, দেখা সাক্ষাতের সুযোগ হয়।
[2] ইবন আবিদ দুনিয়ার মেহমানের মেহমানদারি, হাদীস নং ২০।
[3] ইবন আবিদ দুনিয়ার মেহমানের মেহমানদারি, হাদীস নং ৪৯্