কুরআন যে কোন সময়ে শোনা যায় এবং কোন ব্যক্তি যদি যথাসময়ে কুরআন শোনে অতঃপর খবরের সময় কুরআনের সেন্টার বা চ্যানেল বন্ধ করে খবর শোনে---যেহেতু খবর নির্দিষ্ট সময়ে হয়, তাহলে তা কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর্যায় পড়বে না। ৬৯ (লাজনাহ দায়েমাহ)
মোটেই ঠিক নয়। কুরআন তিলাওয়াত হলে নিশ্চুপ শুনতে হবে। গল্প করলে কুরআন তিলাওয়াত বন্ধ করে দিতে হবে। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন, “যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ কর এবং নিশ্চুপ হয়ে থাক; যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়। (আরাফঃ ২০৪)
কোন বিষয়ে মতভেদ থাকলে অথবা একই সময়ে দুই আলেমের ভিন্নমুখী ফতোয়া হলে তাঁর ফতোয়া গ্রহণ করতে হবে যার ফতোয়া কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর বেশি নিকটবর্তী মনে করেন। যাকে ইলম ও তাকওয়া বেশি বড় মনে হয়। যেমন একই রোগের দুই ডাক্তারের দুই রকম চিকিৎসা পদ্ধতি ও রায় শোনেন, তাহলে যাকে আপনি বড় ও অভিজ্ঞ ডাক্তার মনে করেন, তাঁর চিকিৎসা ও পথ্য গ্রহণ করবেন।
যদি তুলনা করার উপায় না থাকে, তাহলে যার ফতোয়া মানার দিক থেকে সহজ, তাঁর ফতোয়া অনুযায়ী আমল করবেন। যেহেতু দ্বীন সহজ। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“আল্লাহ তোমাদের (জন্য যা) সহজ (তা) করতে চান, তিনি তোমাদের কষ্ট চান না। (বাকারাহঃ১৮৫)
“আল্লাহ তোমাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দিতে চান না।” ( মায়িদাহঃ ৬)
“তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠিনটা আরোপ করেননি।” (হাজ্জঃ ৭৮)
আর মহানবী (সঃ) বলেছেন, “সহজ কর, কঠিন করো না।”
আবারও বলি যে, এ হল সাধারণ মানুষের জন্য, যারা নিজে দলীল যাচাই-বাছাই করতে পারে না এবং দুই আলেমের মধ্যে পাথক্য নির্ণয়ও করতে পারে না। পক্ষান্তরে যাদের সে ক্ষমতা আছে [দলিল যাচায় বাছায় করা, পার্থক্য নির্ণয় করার], তাঁদের জন্য অনুসন্ধান চালিয়ে সঠিক সমাধান জেনে নেওয়া জরুরী। (ইবনে উষাইমীন)
এই শ্রেণীর মুসলিমরা সেই লোকেদের মতো, যাঁদের বিরুদ্ধে কুরআন বর্জন করার অভিযোগ রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন,
রাসুল বলে, “হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় তো এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করেছে।” (ফুরকানঃ৩০)
তাঁদের মধ্যে এমন লোকও থাকতে পারে, যাঁদের ব্যপারে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে, অবশ্যই তাঁর হবে সংকীর্ণতাময় জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামতের দ্বীন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।” (ত্বা-হাঃ১২৪)
“সেদিন আমি জাহান্নামকে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত করব সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের নিকট। যাঁদের চক্ষু ছিল আমার স্মরণ (কুরআন) এর ব্যপারে অন্ধ এবং যারা শুনতে ও ছিল অপারগ।” (কাহফঃ ১০০-১০১)
এদের মধ্যে অনেকে দুনিয়াদার, এরা পত্র-পত্রিকা পড়ে, গল্প-উপন্যাস পড়ে, কিন্তু কুরআন পড়ার সময় পায় না। এই শ্রেণীর লোকেদের থেকে বিমুখ হতে নির্দেশ রয়েছে,
“অতঃএব তাকে উপেক্ষা করে চল, যে আমার স্মরনে বিমুখ এবং যে শুধুই পার্থিব জীবনই কামনা করে। তাঁদের জ্ঞ্যানের দৌড় এই পর্যন্ত। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকই ভাল জানেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত এবং তিনিই ভাল জানেন কে সৎপথপ্রাপ্ত।” (নাজমঃ২৯-৩০)
অনেকে কুরআনকে কেবল তাবীয ও মৃতের আত্মার কল্যাণে ব্যবহার করে। অথচ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে জীবিত মানুষের আমল এর জন্য। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“ আমি এ কল্যাণময়য় গ্রন্থ তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তিগন গ্রহণ করে উপদেশ।” (স্বাদঃ ২৯)
“নিশ্চয় যারা আল্লাহ্র গ্রন্থ পাঠ করে, যথাযথভাবে নামায পড়ে, আমি তাঁদেরকে যে রুযী দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যাতে কখনোই লোকসান হবে না। এ জন্য যে, আল্লাহ তাঁদেরকে তাঁদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাঁদেরকে আরেও বেশি দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।” (ফাত্বিরঃ ২৯-৩০)
আর মহানবী (সঃ) বলেছেন, “তোমরা কুরআন পাঠ কর। কেননা তা কিয়ামত দিন তাঁর পাঠকারীদের জন্য সুপারিশকারীরূপে উপস্থিত হবে।” ৭১(মুসলিমঃ ৮০৪ নং)
“ যে ব্যাক্তি আল্লাহ্র কিতাব (কুরআন মজিদ)এর একটি বর্ণ পাঠ করবে, তাঁর একটি নেকী হবে। আর একটি নেকী, দশটি নেকীর সমান হবে। আমি বলছি না যে, ‘আলিফ-লাম-মিম’ একটি বর্ণ; বরং আলিফ একটি বর্ণ, লাম একটি বর্ণ এবং মিম একটি বর্ণ।” (অর্থাৎ তিনটি বর্ণ দ্বারা গঠিত ‘আলিফ-লাম-মিম’, যার নেকীর সংখ্যা হবে ত্রিশ।) ৭২ (তিরমিযী)
উম্মতের ইখতিলাফ রহমত নয়। বরং ইবনে মাসঊদ (রঃ) বলেছেন, “ইখতিলাফ খারাপ জিনিস।” (আবু দাঊদ ১৯৬০ নং) ইখতিলাফ হলে কিতাব ও সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা ওয়াজেব। আর সাহাবাদের ইখতিলাফ ইজতিহাদী। আর ইজতিহাদে ভুল করলেও একটি সওয়াব। কিন্তু ভুল তো ভুলই। সঠিকটা জানার পর আর ইজতিহাদী ভুল বা ইখতিলাফে পড়ে থাকা বৈধ নয়। পরন্ত ‘ইখতিলাফু উম্মাতী রাহমাহ’ হাদীস সহীহ নয়। ৭৩ (আলবানী)